রাজশাহীতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নির্মিত হচ্ছে ভবন

ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী
 | প্রকাশিত : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২২:৩৯

রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দুটি ভবন গড়ে তোলা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাজশাহী মহানগরীর মহিষবাথান এলাকায় মোস্তাফিজুর রহমান ও শাহানাজ পারভীন নামের দুজন ভবন দুটি নির্মাণ করছেন। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরও অভিযোগকারী কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না।

অভিযোগকারীর নাম মোহাম্মদ হাতেম। তিনি আমেরিকা প্রবাসী। ১৯৯৯ সালে হাতেম আলীর জমি দখল করে হেয়ারিং রাস্তা করে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক)। এর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন মোহাম্মদ হাতেম। মামলায় রাসিক ও মোহাম্মদ হোসেন রমজান নামে এক ব্যক্তিকে বিবাদী করা হয়। তখন সিটি করপোরেশনের তৎকালীন কর্মকর্তারা আদালতে গিয়ে বলেন, তারা রাস্তাটি প্রত্যাহার করলেন। জমি মোহাম্মদ হাতেমেরই থাকল।

কিন্তু এর বিরুদ্ধে রমজান উচ্চ আদালতে যান। সেই থেকে মামলাটি চলছে। এখন রাস্তার উত্তর দিকে জমির মালিকরা প্লট আকারে জমি বিক্রি করছেন। সেখানে গড়ে উঠছে একাধিক ভবন। এ নিয়ে মোহাম্মদ হাতেমের পক্ষ থেকে আরডিএতে অভিযোগ করা হয়।

আবেদনে বলা হয়, দুটি ভবন নির্মাণ করা হলেও চলাচলের সরকারি রাস্তা নেই। যে রাস্তা আছে সেটি তার ব্যক্তিগত সম্পত্তি। তাই এই জমি নিয়ে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত যেন নতুন কোনো ভবনের অনুমোদন না দেয়া হয়। তাই আরডিএ কোনো অনুমোদন দেয়নি। কিন্তু ইতোমধ্যে দুটি ভবন গড়ে তোলা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মোহাম্মদ হাতেমের পক্ষ থেকে আরডিএতে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি অভিযোগ দেয়া হয়। এরপর গত ১৫ জুন আরডিএ একটি চিঠি দিয়ে ভবন মালিক মোস্তাফিজুর রহমান ও শাহানাজ পারভীনকে তাদের ভবন ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয়। কিন্তু ভবন ভাঙা হয়নি। একটি ভবনের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। আরেকটির কাজ চলমান রয়েছে।

অনুমোদন না থাকায় আরডিএ ভবন দুটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ না দেয়ার জন্য নর্দান ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডকে (নেসকো) চিঠি দিয়েছে। কিন্তু ভবন দুটি বিদ্যুৎ সংযোগও পেয়েছে।

মোহাম্মদ হাতেম বলছেন, ভবন দুটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে গেলে তার মামলা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

আমেরিকা থেকে মুঠোফোনে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে যোগাযোগ করে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, মহিষবাথান মহল্লায় তার জমির দাগ নম্বর ৫৬। আর ৫৭ নম্বর দাগের প্লট বিক্রি করা হচ্ছে। এই দাগেই গড়ে তোলা হচ্ছে একাধিক ভবন। কিন্তু ৫৭ নম্বর দাগে যেতে হলে তার ব্যক্তিগত জমির ওপর দিয়েই যেতে হবে। এখন যে রাস্তা দিয়ে চলাচল করা হয় সেটি তার পৈত্রিক সম্পত্তি। এই রাস্তাটা নিয়ে মামলা চলমান রয়েছে। এখন ৫৭ দাগে ভবন গড়ে উঠলে তার মামলা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সেজন্য মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত যেন ভবন গড়ে না ওঠে। তিনি সেই আবেদনই আরডিএ’তে জানিয়েছেন। আরডিএ ভবন ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে ভবন না ভেঙে নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে তিনি জেনেছেন।

মোহাম্মদ হাতেম বলেন, আরডিএতে অভিযোগ দেয়ার পর দুই পক্ষকে ডাকা হয়। তার প্রতিনিধি নির্ধারিত দিনে শুনানির জন্য আরডিএ কার্যালয়ে উপস্থিত হন। কিন্তু ভবন মালিক মোস্তাফিজুর রহমান ও শাহানাজ পারভীন যাননি। সে কারণে আরডিএ নির্মাণ কাজ বন্ধ করে ভবন ভাঙার নির্দেশ দেয়। কাজ বন্ধ করে দেয়ার জন্য রাজপাড়া থানা পুলিশকেও নির্দেশনা দেয় আরডিএ। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে পুলিশ কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

বাধ্য হয়ে সম্প্রতি তিনি দেশে এসেছিলেন। কিন্তু থানা পুলিশ বা অন্য কোথাও সহযোগিতা পাননি। পরে তিনি আমেরিকা ফিরে যান। হাতেম বলেন, তার সঙ্গে যিনি মামলায় লড়ছেন তিনি একজন আইনজীবী। তার নাম মোহাম্মদ হোসেন রমজান। তিনি নানা ফন্দি-ফিকিরে মামলার বিচারকাজ বিলম্বিত করাচ্ছেন। এর ফলে ২০ বছর ধরে মামলা ঝুলছে। আর গড়ে উঠছে অবৈধ ভবন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আরডিএ’র জোন-১ এর অথরাইজড অফিসার মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিষয়টি তার মনে আছে। দুটি ভবন গড়ে উঠেছে অবৈধভাবে। সেগুলো ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যতটুকু নির্মাণ হয়েছে তা যদি ভবন মালিকরা যদি না ভাঙেন তাহলে আরডিএ ভাঙবে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে তাদের কাজ থেমে আছে। তিনি বলেন, ওখানে স্বীকৃত কোনো রাস্তা নেই। তাই নতুন কোনো ভবনের নকশার অনুমোদন দেয়া হচ্ছে না।

(ঢাকাটাইমস/৯সেপ্টেম্বর/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :