করোনাকালে দাঁতের সমস্যায় ভেষজ সমাধান

স্বাস্থ্য ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১১:৫৮ | প্রকাশিত : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১১:৪৮

দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম আমরা বুঝি না। উজ্জ্বল ও সুস্থ দাঁত যেমন চেহারায় সুন্দর ঝলক নিয়ে আসে, তেমনই দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ্যও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক সময়ে যত্নের অভাবে দাঁতে আক্রমণ করে রোগ-জীবাণু ও বিভিন্ন রকমের অসুখ। মাড়ির ইনফেকশন, দাঁত হলুদ হয়ে যাওয়ার সমস্যা তৈরি হয় অযত্ন ও খারাপ অভ্যাস এর অন্যতম কারণ।

করোনার ভয়ে মানুষ এতদিন হাসপাতাল বিমুখ হয়ে পড়েছে। মুখ ও দাঁতের বড় সমস্যাতেও টুকটাক ওষুধ, মাউথওয়াশ, গরম সেঁক, লবঙ্গ-তেল ইত্যাদির সাহায্যে দিন কাটাচ্ছেন মানুষ। কারণ একটাই, ভাইরাস ঢোকে নাক-মুখ দিয়ে, আর সেই মুখেই যদি যন্ত্রপাতি দিয়ে খোঁচাখুঁচি হয়, ডাক্তার-নার্স ঝুঁকে থাকেন মুখের উপর, ভাইরাস ঢোকার আশঙ্কা তো প্রতিপদে।

করোনা’র সংক্রমণ প্রতিরোধের অংশ হিসেবে জরুরি ও মারাত্মক কোনো মুখ ও দাঁতের সমস্যা ব্যতীত অন্য কোনো সমস্যার ক্ষেত্রে ডেন্টাল সার্জনরা সরাসরি চিকিৎসা নেয়া থেকে রোগীদের নিরুৎসাহিত করেছেন। ডেন্টাল সার্জন ও ডেন্টাল স্টাফরা রোগীর সবচেয়ে বেশি কাছাকাছি থেকে চিকিৎসা প্রদান করে থাকেন বিধায় করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি।

আবার দন্ত চিকিৎসা পদ্ধতির বেশিরভাগই এরোসেল জেনারেট করে থাকে। যেহেতু করোনা ভাইরাস ড্রপলেটের মাধ্যমে ছড়ায় তাই ডেন্টাল চেম্বারের আবদ্ধ পরিবেশে করোনা আক্রান্ত কারো থেকে জীবাণুটি বায়ুতে এবং সংস্পর্শে আসা কোনো বস্তু ও ব্যক্তি থেকে যে কাউকে সংক্রমিত করতে পারে। আর এর মাধ্যমে ডেন্টাল সার্জন, তার ডেন্টাল অফিসের স্টাফ, রোগী, রোগীর স্বজন -সবাই স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারেন।

দাঁতের স্নায়ুর প্রদাহ থেকে তীব্র ব্যথা অনুভব, হঠাৎ আঘাত প্রাপ্ত হয়ে দাঁত ভেঙ্গে বা পড়ে যাওয়া ও রক্তপাত, দাঁতের বা মুখের কোনো ইনফেকশন থেকে তীব্র ব্যথা ও মুখ ফুলে যাওয়া, মাঁড়ি বা মুখের কোনো অংশ থেকে ক্রমাগত রক্তপাতসহ যেকোন প্রকার মারাত্মক ঘা বা ক্ষত সৃষ্টি হওয়াকে বোঝায়। এরকম কোনো সমস্যা যদি কারো দেখা দেয়, তাহলে তৎক্ষণাৎ নিকটস্থ ডেন্টাল সার্জনের পরামর্শের জন্য শরণাপন্ন হতে হবে ও প্রয়োজনে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।

সাধারণত খুব দাঁত ব্যথা হলে প্যারাসিটামল ৬৫০ খেতে পারেন। ক্লোরহেক্সিডিন মাউথওয়াশ ব্যবহার করুন দিনে দু-বার।

রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্ট করার পর দাঁতে যে ক্রাউন বসানো হয়, তা ঢিলে হয়ে গেলে খুলে ফেরার চেষ্টা করুন। না হলে গলায় চলে যেতে পারে। ওই দাঁতে খাবার চেবাবেন না।

নকল দাঁত ঢিলে হয়ে গেলে খুলে ক্লোরহেক্সিডিন মাউথওয়াশে ডুবিয়ে রাখুন। না হলে খোঁচা লেগে গাল কাটতে পারে। এরকম ক্ষত থেকেই পরে ক্যানসারের আশঙ্কা বাড়ে।

যারা ব্র্যাকেট পরেন, বেশ কিছুদিন ডাক্তার না দেখালে তাঁদেরও গাল-মাড়ি কাটে। তখন মেডিক্যাল ওয়্যাক্স লাগিয়ে অবস্থা সামলাতে হয়।

মুখে ঘা হলে বিড়ি-সিগারেট-গুটখা-মৌড়ির-সুপুরি, ঝাল, মশলা খাওয়া বন্ধ করুন।

মুখের ভেতরের পুরনো সেলাইয়ে ব্যথা হলে ক্লোরহেক্সিডিন মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করুন দিনে দু-বার। অ্যান্টিসেপটিক মলম লাগান ডাক্তারের কথামতো।

মাড়ি ফুলে গেলেও ক্লোরহেক্সিডিন মাউথওয়াশ ব্যবহার করুন দিনে।

এরপর সময়মতো ডাক্তার দেখিয়ে নিন। না হলে বিপদ হতে পারে।

দাঁতে সংক্রমণের ব্যথা মাউথওয়াশ ও ওষুধে কমে গেলেও চিকিৎসা করান। না হলে পরে সেই দাঁত তুলে ফেলতে হতে পারে। ক্ষতি হতে পারে দু-পাশের দাঁতেও। রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্ট হয়েছে যে দাঁতে, তার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।

মুখে ঘা হলে দিনের পর দিন ভিটামিন খেয়ে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করলে বিপদ আছে। বিশেষ করে যাঁদের তামাক বা অন্য কিছু চেবানোর অভ্যাস আছে। দাঁতের খোঁচায় মুখে ঘা হলেও এক ব্যাপার। ডাক্তারের কাছে গিয়ে দাঁতটা ঘষিয়ে নিন।

মাড়ি ফুলে ব্যথা হওয়া ভালো লক্ষণ নয়। ব্যথা কমে গেলেও রোগের কারণ খুঁজে চিকিৎসা করতে হবে।

দাঁত থেকে সমানে রক্ত পড়লে রক্ত বন্ধ করার ওষুধ খেয়ে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যান। চেম্বার খোলা না পেলে হাসপাতালের ইমারজেন্সিতে যেতে হতে পারে।

দাঁতের নিচের পাটিতে সংক্রমণের রেশে সেদিকের গলা ফুলতে শুরু করলে প্রাণ নিয়ে টানাটানি পড়তে পারে। দ্রুত ম্যাক্সিলোফেশিয়াল সার্জেনের শরণাপন্ন হন।

গ্যাসট্রিকের সমস্যা থাকলে মুখে দুর্গন্ধ হয়। ফলে দাঁতের হলুদাভ আবরণ আসে। নিয়মিত গ্যাসট্রিকে ঠোঁটের দুই কোণে কালো হয়ে যায়। এ জন্য প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণ পানি পান করুন।

অ্যালকোহল ও ধূমপানে দাঁত কালো হয়ে যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দাঁতের মাড়িও কালো হয়ে ফুলে যায়। মাড়ির রক্তবাহী শিরাগুলো মোটা দেখায়, যা সুন্দর হাসির জন্য হুমকিস্বরূপ। তাই অ্যালকোহল ও ধূমপান এড়িয়ে চলুন।

অনেকের দুটো দাঁতের মাঝে ফাঁকা স্থান বা ভাঙা দাঁত থাকে। কৃত্রিম উপায়ে চিকিৎসা সম্ভব, এ জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। প্রতি সপ্তাহে অন্তত একটা ভিটামিন-সি ট্যাবলেট খান।

পান, সুপারি, জর্দা বা গুল পরিহার করুন। এসবে আসক্তি থাকলে খাবার পরে দাঁত ব্রাশ করে ফেলুন। পানে চুনের পরিমাণ যত কম হয় ততই ভালো। মাত্রাতিরিক্ত চুন দাঁতের এনামেল ক্ষয় করে।

আঘাত লেগে দাঁত ভাঙলে ভাঙা দাঁত ঠান্ডা দুধে ডুবিয়ে খুব তাড়াতাড়ি সার্জেনের কাছে গেলে দাঁত আবার আগের মতো হয়ে যাবে।

দাতের যত্নে যে খাবারগুলো খাবেন

ব্যথানাশক, অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল হওয়ায় আয়ুর্বেদীয় চিকিৎসায় হলুদের ব্যবহার সার্বজনীনভাবে স্বীকৃত। দাঁতের ব্যথা কমাতেও এর জুড়ি নেই। এক কাপ গরম পানিতে হাফ চা চামচ হলুদের গুঁড়া, দুটি লবঙ্গ ও দুটি শুকনো পেয়ারা পাতা নিন। কুলকুচি করুন। মাড়ির ক্ষত ও দাঁতের ব্যথা সেরে যাবে।

লবণ-পানি মাড়ির ঘা সারিয়ে তোলে। এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে এক চামচ লবণ গুলিয়ে দিনে কয়েকবার কুলকুচি করুন। এই সহজ পদ্ধতিটি তাৎক্ষণিকভাবে দাঁতের ব্যথা ও শিরশিরে অনুভূতি দূর করতে দারুণভাবে কার্যকরী।

দাঁতের ব্যথায় লবঙ্গের ব্যবহার আদিকাল থেকে সুপরিচিত। এতে রয়েছে ইউজেনল নামক প্রদাহবিরোধী ও বেদনানাশক উপাদান। পিপারমিন্টেও রয়েছে ব্যথানাশক উপাদান যা দাঁতের সমস্যায় দ্রুত কাজ করে। লবঙ্গ বা পিপারমিন্টের কয়েক ফোঁটা তেল তুলায় নিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগান। ১৫-২০ মিনিট রাখুন।

আদা ও মরিচের পেস্ট তুলার সাহায্যে আক্রান্ত দাঁতে লাগান। তাপ উৎপাদনকারী এই মসলার পেস্ট দাঁতের কঠিনতর ব্যথা প্রতিহত করবে।

ফ্রিজে রাখা শসা, আলু বা বাঁধাকপি যেকোনো একটি মুখে ঢুকতে পারে এমন সাইজের টুকরো করে কাটুন। টুকরাটি আক্রান্ত দাঁতের ওপর রাখুন। ঠাণ্ডা ক্ষত প্রশমিত করবে ও ব্যথা কমাবে।

কাঁচা গাজর চিবিয়ে খেলে এর মধ্যে থাকা বিটা ক্যারোটিন দাঁত, চোখ, হাড়ের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে।

ভিটামিন 'এ' পরিপূর্ণ পালং শাক হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে।

ভিটামিন 'সি' থাকায় ক্যাপসিকাম দাঁত ও মাড়ির ইনফেকশন সারাতে পারে।

দাঁতের এনামেলের ক্ষয় রুখতে সাহায্য করে ব্রকোলি।

ভিটামিন 'সি' থাকায় ফুলকপি দাঁত ও মাড়ি সুস্থ রাখে।

ট্যানিন ও পলিফেনল থাকায় ফ্লুওরাইডের মাত্রা বাড়িয়ে দাঁতে এনামেলের ক্ষয় রোধ করে গ্রিন টি।

কমলা লেবুর মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন 'সি'। যা দাঁত, মাড়ি সুস্থ রাখে।

রসুনের অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি ভাইরাল, অ্যান্টি ফাংগাল গুণ মুখের ইনফেকশন দূর করতে সাহায্য করে।

দাঁত সুস্থ রাখায় দারচিনির সরাসরি ভূমিকা না থাকলেও প্রতিদিন আধ চামচ দারচিনি গুঁড়ো ডায়েটে থাকলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে যা মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছা কমায়। ফলে দাঁত ভাল থাকে।

মাছের মধ্যে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড ও ভিটামিন 'ডি' দাঁত সুস্থ রাখে।

দই ও পনিরে থাকা ভিটামিন 'ডি' দাঁত ও হাড়ের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে।

প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন 'সি' থাকায় আনারস দাঁত, মাড়িতে জমা ব্যাকটেরিয়া মোকাবিলায় যেমন সাহায্য করে, তেমনই ইনফেকশন দূরে রেখে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

আধা চামচ নারিকেল তেল এবং আধা চামচ লবঙ্গের গুঁড়া ভেষজ মিশ্রণ দাঁতের ব্যথা থেকে মুক্ত হতে পারেন। কারণ নারিকেল তেলের রয়েছে

অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য আর লবঙ্গের গুঁড়ায় রয়েছে ইউজিনল নামের একটি রাসায়নিক উপাদান যা ব্যথা উপশমে সাহায্য করে। একটি কাঁচের পাত্রে লবঙ্গের গুঁড়া এবং নারিকেল তেল ভাল করে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে টুথব্রাশের সাহায্যে দাঁত বা মাড়ির আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে নিন। দিনে অন্তত তিন থেকে চার বার এই মিশ্রণটি দাঁত বা মাড়ির আক্রান্ত স্থানে লাগালে দ্রুত ব্যথা কমে যাবে।

দাঁতের ব্যথা কমলেও তন্ত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না। কেননা দন্ত চিকিৎসকের নির্দেশ মেনে সঠিক পদ্ধতিতে দাঁতের যত্ন নিলে অনেক দিন ভাল থাকবেন। এছাড়া স্বাভাবিক অবস্থায়ও বছরে অন্তত দু’বার দন্ত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।

(ঢাকাটাইমস/১০ সেপ্টেম্বর/আরজেড/এজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

স্বাস্থ্য এর সর্বশেষ

বিদায়ী উপাচার্যের অনিয়ম-দুর্নীতির প্রশ্নে যা বললেন ডা. দীন মোহাম্মদ

বিএসএমএমইউতে নতুন উপাচার্যকে বরণ করতে ব্যাপক প্রস্তুতি  

অ্যানেস্থেসিয়ায় হ্যালোথেন ব্যবহার বন্ধ করতে বললো স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, কেন এ নির্দেশ?

হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায় বাদাম!

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ইনসাফ বারাকাহ হাসপাতালে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প

বিশ্ব যক্ষ্মা দিবসে জানুন সংক্রামক এ রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত

মৃগী রোগ সম্পর্কে কতটা জানেন? এর লক্ষণ আর চিকিৎসাই বা কী?

এক যুগ আগেই জানা যাবে আপনি মূত্রাশয়ের ক্যানসারে আক্রান্ত কি না

কীভাবে চিনবেন প্রাণঘাতী অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার? বাঁচতে হলে জানুন

মাথা ও ঘাড়ের ক্যানসার ধ্বংসের থেরাপি আবিষ্কার! দাবি বিশেষজ্ঞদের

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :