প্রশাসনের ওপর হামলাকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখার কোনো অবকাশ নেই

মমিনুল ইসলাম
 | প্রকাশিত : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৩:০০

একবার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি ট্রাক রোডের পাশের দোকান চুরমার করে দিল। দোকানের এক ব্যক্তির শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল। এ প্রসঙ্গে একজন বলল এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। বললাম কী বলেন? রোড এক্সিডেন্ট তো নিয়মিত ঘটনা। বিচ্ছিন্ন ঘটনা হবে কেন?

সে বলল, আরে দেখতে পাচ্ছেন না লোকটির শরীর ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। যে ঘটনায় সবকিছু ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় তাকেই বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে। অ-আচ্ছা।

ঘোড়াঘাটের ইউএনও ওয়াহিদা খানম মারাত্মক হামলার শিকার হয়েছেন। হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে তার শরীর থ্যাঁতলে দেওয়া হয়েছে। তার বাবাও মারাত্মকভাবে জখম হয়েছেন। এটাকে কি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলব?

একটু আগে থেকে বলি। ১৯৮৯ সালে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের দিন চোখের সামনে একজন ইউএনওর ওপর বর্বর হামলা করতে দেখি। তিনি হাত জোড় করে অনুনয় করছিলেন, কিন্তু হামলাকারীরা তার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিল।

১৯৯৮-৯৯ সালে শ্রীপুরের ইউএনও ছিলেন হারুন-উর রশিদ। তার সাথে আমার খাতির ছিল। একদিন দেখি তার মনটা খুবই খারাপ। বিষয় কি? কিছু ক্ষমতাবান লোক তাকে এমন গালিগালাজ করেছে যা সহ্য করা সম্ভব না।

তিনি দুঃখ করে বললেন জীবনের সব পরীক্ষায় ফার্স্টক্লাস পেয়ে এসেছি। বসে আছি একটি উপজেলা পরিচালনার আসনে। কিন্তু আমার নিয়ন্ত্রণ আমার হাতে নেই। দুঃখ বলব কাকে?

২০০৪ সালে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ির ইউএনও ছিলেন মাহমুদ হাসান। তার বাসাতে বেড়াতে গেলাম। সেখান থেকে তার স্ত্রী শাহিনা হাসানের সাথে বেড়াতে গেলাম ভুরুঙ্গামারির ইউএনও নজরুল ইসলামের বাসায়।

নজরুল ইসলামের বাসায় প্রবেশের কয়েক মিনিটের মধ্যেই তার অফিসের লোকজন ছুটে এসে খবর দিল নজরুল ইসলামের ওপর আক্রমণ হয়েছে। বলে কী? দৌড়ে অফিসে গিয়ে দেখি রক্তাক্ত অবস্থায় নজরুল ইসলাম পড়ে আছেন। তাকে হাসাপাতালে নেওয়ার লোক পর্যন্ত নেই। আমি সাথে থেকে আমাদের গাড়িতে করে নজরুল ইসলামকে হাসপাতাল পর্যন্ত নিয়ে গেলাম।

বাংলাদেশের মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনের ওপর একটি স্টাডি আমার আছে। অনেক ইউএনও, ডিসির বেদনার কথা আমি জানি। এসব বেদনাকে বুঝে একটি নাটক লিখেছিলাম। নাটকের নাম ম্যাজিস্ট্রেট। জাহিদ হাসান অভিনয় করেছেন। বিটিভির বিশেষ চাঙ্কে প্রচার হয়েছে। এখন ইউটিউবে দেখতে পাবেন।

আধুনিক রাষ্ট্র মানেই বুরোক্রেসি। বুরোক্রেটরা যদি অনিপারদ হয়ে যায় তাহলে রাষ্ট্রও অনিরাপদ হবে। প্রশাসনের মধ্যে ভালো-মন্দ লোক আছেন। সৎ-অসৎ কর্মকর্তা আছেন। সেসব বিচ্ছিন্নভাবে চিন্তা করা যেতে পারে কিন্তু প্রশাসনের ওপর হামলাকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখার কোনো অবকাশ নেই। তাহলে রাষ্ট্র পঙ্গু হয়ে যাবে।

ওয়াহিদা আমার হৃদয়ের বোন। আমি আর ওয়াহিদা এক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি। এ কারণেই তার বেদনা আমি হৃদয়ের গভীরে অনুভব করছি। ওয়াহিদা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০২-০৩ ব্যাচের বাংলা সাহিত্যে পড়েছেন। তার হাজব্যান্ডও রাবিয়ান। এখন পীরগঞ্জের ইউএনও। রাবিয়ান হিসেবে এই দম্পতি আমার আপনজন। তাদের যেকোনো অমঙ্গলের বিপক্ষে আর কল্যাণের পক্ষে আমি।

ওয়াহিদার ওপর আক্রমণকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করি। যারা একটি মেয়েকে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে এভাবে আক্রমণ করতে পারে, তাদের প্রতি যদি আইন সদয় হয় তাহলে সভ্যতা কলঙ্কিত হবে। ওয়াহিদা আল্লাহ তোমাকে সুস্থতা দান করুন। মনে সাহস রেখো বোনটি।

লেখক: শিক্ষক ও নির্মাতা

ঢাকাটাইমস/১০আগস্ট/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :