করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশের সফলতার নেপথ্যে

প্রকাশ | ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৪:১২

ড. মো. আওলাদ হোসেন

একবিংশ শতকে সারাবিশ্বের ২১৩টি দেশে নির্মম তাণ্ডব চালাচ্ছে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)। এ পর্যন্ত বিশ্বে প্রায় ৯ লক্ষ মানুষ মারা গেছে (০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০)। বিশ্বের শক্তিশালী, প্রযুক্তিতে উন্নত এবং ধনাঢ্য দেশগুলোও এই ভাইরাসের হানায় মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন দেশ করোনা নিয়ন্ত্রনে মরিয়া হয়ে নানা ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কিন্তু সেভাবে সাফল্য পায়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় ফোর্বস ম্যাগাজিন করোনা মোকাবেলায় বিশ্বের দুইশতাধিক দেশের মধ্যে বাংলাদেশসহ ৭টি দেশের গৃহিত পদক্ষেপের প্রশংসা করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের প্রশংসা করে লেখা হয়েছে, প্রায় ১৬ কোটিরও বেশি মানুষের বসবাস বাংলাদেশে। সেখানে দুর্যোগ কোন নতুন ঘটনা নয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, বিশ্বশান্তির অগ্রদূত শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা মোকাবেলায়ও দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এছাড়া  দক্ষতার সঙ্গে সংকট মোকাবেলা তাঁর জন্য নতুন কিছু নয়। তার এই তড়িৎ সিদ্ধান্তের প্রশংসা করে ‘ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরাম’ বিষয়টিকে `প্রশংসনীয়` বলে উল্লেখ করেছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দুরদর্শিতা বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক বিশ্বে সুউচ্চ মর্যাদার আসনে নিয়ে গেছে। সারা বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্রনেতারা তাঁর কাজের ভূয়সী প্রশংসা করছেন। নেতৃত্ব, গুণে ও সততায় তিনি আজ সারা বিশ্বে সমাদৃত। দুর্দমনীয় অসীম সাহসে করোনা মোকাবেলা করে পেয়েছেন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।

বাংলাদেশে দীর্ঘতম সময় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ফেব্রুয়ারির শুরুতেই চীনে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের দেশে ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। মার্চের শুরুতে ( ৮ মার্চ ২০২০) প্রথম সংক্রমণের বিষয়টি নিশ্চিত হবার পরপরই মুজিব জন্মশতবর্ষের মূল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান স্থগিত করেন, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেন এবং কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনলাইনে কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দেন। তিনি দেশের সকল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে করোনা রোগী শনাক্ত করতে স্ক্রিনিংয়ের জন্য মেশিন ব্যবহার করার নির্দেশ দেন, যেখানে এ পর্যন্ত ৬ লাখ ৫০ হাজার মানুষকে পরীক্ষা করা হয়েছে, তন্মধ্যে ৩৭ হাজার মানুষকে দ্রুত কোয়ারেন্টাইনে প্রেরণ করা হয়েছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলমান সংকট মোকাবেলায় দিন-রাত নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। করোনা সংক্রমনের প্রথম থেকেই তিনি শক্ত হাতে দৈনিক ১৮-২০ ঘন্টা নির্ঘুম অক্লান্ত পরিশ্রম করে করোনা’র লাগাম টেনে ধরার কারনেই করোনা’র সংক্রমন জ্যামিতিক হারে বাড়তে পারেনি। দেশি বিদেশি সংবাদ মাধ্যমসহ বিভিন্ন তথ্য উপাত্তে প্রকাশিত হয়েছে, বর্তমান বৈশ্বিক মহামারীতে পৃথিবীর আর কোন রাষ্ট্রনেতাকে এভাবে জনগণের কথা বলতে ও শক্তি সাহস জোগাতে দেখা যায়নি।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাই একমাত্র রাষ্ট্রপ্রধান, যিনি বলেছেন- ‘একদিকে যেমন করোনা মোকাবেলা করবো, পাশাপাশি দেশের মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা নিশ্চিত করবো। তারা যেন কষ্ট না পায় সেজন্য যা যা করণীয় করে যাবো। আমি তো এখানে বেঁচে থাকার জন্য আসিনি। আমি তো জীবনটা বাংলার মানুষের জন্য বিলিয়ে দিতে এসেছি, এটাতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ভয়ের কী আছে? করোনাভাইরাসেও মরতে পারি, গুলি খেয়েও মরতে পারি, অসুস্থ হয়েও মরতে পারি এমনকি এখানে কথা বলতে বলতেও মরতে পারি। মরতে তো একদিন হবেই। এই মৃত্যু যখন অবধারিত, সেটাতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কখনো ভয় পাবো না। আল্লাহ জীবন দিয়েছেন, একদিন সে জীবন নিয়ে যাবেন। আর আল্লাহ মানুষকে কিছু কাজ দেন, সেই কাজটুকু যখন পর্যন্ত শেষ না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত হয়তো আমি কাজ করে যাব। যখন কাজ শেষ হয়ে যাবে, সময় শেষ হবে। তখন আমি চলে যাবো। তাই এ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই।’

করোনার কারণে সারা বিশ্বের অর্থনীতি বিপর্যস্ত, সেই ঢেউ বাংলাদেশেও লেগেছে। করোনা সংক্রমণ রোধে জারিকৃত লকডাউনে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ, গার্মেন্টসের অর্ডার বাতিল হওয়ার খবর, শ্রমিকদের চাকরি হারানোর ভয়, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ। এমনি সময়ে চারিদিকে যখন অস্থিরতা ও হাহাকার বিরাজ করছিল তখনই দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা একজন দক্ষ রাষ্ট্রনায়কের মত ঘোষণা করলেন ১ লক্ষ ২ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকার ১৯টি প্রণোদনা প্যাকেজ। পরবর্তীতে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সেবা খাতের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকা, এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ। এ ছাড়াও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, পল্লী সহায়ক ফাউন্ডেশনকে ২ হাজার কোটি টাকার তহবিল প্রদানের নির্দেশ দেন। গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা, কৃষি খাতে সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনার ফলে স্বস্তি ফিরে এসেছে ব্যবসায়ী, ক্ষুদ্র-মাঝারী উদ্যোক্তা, কৃষক, শ্রমিকসহ  সাধারণ মানুষের মধ্যে।

করোনাকালে প্রাথমিক পর্যায়ে করোনা পরীক্ষার একটি মাত্র পিসিয়ার ল্যাব ছিল। পরবর্তিতে করোনা পরীক্ষার জন্য আরও ৬৮টি ল্যাব প্রস্তুত করা হয়েছে এবং সকল হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মানুষের চাহিদা মেটাতে জরুরি ভিত্তিতে দুহাজার ডাক্তার ও ছয় হাজার নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং আরো দুই হাজার ডাক্তার, পাঁচ হাজার নার্স ও পাঁচ হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট নিয়োগের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায় রয়েছে। বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে ৪২ হাজার কোটি টাকারও বেশি বরাদ্দ করা হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় আরো ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

মানুষের জীবন বাঁচানোর পাশাপাশি জীবিকা নিশ্চিতকরণের জন্য নিম্নবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্তের প্রায় ৫ কোটি লোককে রেশনের আওতায় এনে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রায় ১ কোটিরও বেশি পরিবারকে ত্রাণ দেয়া হয়েছে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রতি পরিবারকে ২৫০০ টাকা করে ৫০ লক্ষ পরিবারকে এককালীন নগদ অর্থ পাঠানো হয়েছে। নন-এমপিওভুক্ত ৮১ হাজার শিক্ষক, ২৫ হাজার কর্মচারী ও ৪৬ হাজার গ্রাম পুলিশদের মাঝে নগদ অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে। একজন মানুষকেও যাতে না খেয়ে থাকতে না হয়, সে জন্য সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বাজেটে সর্বাধিক  ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা করোনা মোকাবেলায় এ পর্যন্ত মোট ৭৪টি নির্দেশনা দিয়েছেন। ২০০৮ সালে তাঁর ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ এর সুবিধা নিয়ে ভিডিও কনফারেন্স এর মাধ্যমে দেশের প্রতিটি জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন। দেশের নিম্ন আয়ের ৫০ হাজার পরিবারকে তিনি ঈদ উপহার পৌঁছে দিয়েছেন।

করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ভাসমান মানুষ, রিক্সাওয়ালা, দিনমজুর, দুস্থদের খাদ্য সহযোগীতার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ঢাকা মহনগর (উত্তর-দক্ষিণ) এর প্রতিটি ওয়ার্ডে জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ১৪০০ পরিবারকে পর্যাপ্ত পরিমান ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। এরপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণভান্ডার থেকে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে প্রতি ওয়ার্ডে আরও ১২০০ পরিবারের জন্য ত্রাণ  দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এর সভানেত্রী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে, সারাদেশে  প্রতিটি গ্রাম, ওয়ার্ড, ইউনিয়নসমূহে এবং ঢাকা মহানগরের প্রতিটি ওয়ার্ডে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ নিজস্ব অর্থায়নে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্যদ্রব্য পৌছে দিয়েছেন।

অর্থনীতিবিদগণ বলেছেন, করোনার মহামারী বা এই ধরনের সংকটের পর সাধারনত যে কোন দেশে প্রথমেই খাদ্য সংকট দেখা দেয়। ডব্লিউএফপি অনুমান করে বলেছে, করোনা প্রতিরোধে লকডাউনের কারণে শুধু শিল্প নয়, কৃষিতেও উৎপাদন কম হবে, ফলে বিশ্বে ৩ কোটি মানুষ অনাহারে মারা যেতে পারে।

কৃষির ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ায় ডব্লিউএফপিএর ভবিষ্যত বানী ভুল প্রমাণিত করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসের সাথে ঘোষণা করেছেন, ‘করোনা ও বন্যা যাই হোক না কেন, বাংলাদেশে খাদ্য সংকট হবে না’। তাঁর কথাই এ পর্যন্ত সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে।

করোনা সংকটে লকডাউনের কারণে যোগাযোগ বন্ধ থাকায় কৃষকের ধান কাটতে শ্রমিকের অভাব দেখা দেয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নির্দেশে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিটি ইউনিট ধান কেটে কৃষকের বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছে। ছাত্রলীগের পাশাপাশি যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষকলীগ এমনকি আওয়ামী লীগও ধান কাটার কাজে অংশ নিয়েছে।

করোনা মোকাবেলায় বাংলাদেশের লড়াইটা অন্য দেশগুলোর থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখানে বিশাল জনগোষ্ঠীকে সীমিত সম্পদ নিয়ে লড়তে হচ্ছে। বাংলাদেশের বিশাল জনগোষ্ঠী শ্রমজীবী। আমাদের দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউন হলে লক্ষ লক্ষ লোক কর্মহীন হয়ে পড়বে, না খেয়ে মারা যাবে। অসহায় মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল জননেত্রী শেখ হাসিনার লড়াইটা সে জন্যই অন্য রাষ্ট্রপ্রধানদের তুলনায় অনেক বেশি। মানবতার জননী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুরু থেকেই জীবন ও জীবিকা দুটোর ওপরই গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি একদিকে যেমন করোনা আক্রান্ত মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য নানামূখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন, অন্যদিকে আবার বিশাল জনগোষ্ঠী, যারা দিন আনে দিন খায় তাদের খাদ্যের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। অর্থনীতির চাকাকেও গতিশীল রেখেছেন।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে নিয়মিত দাপ্তরিক কাজের পাশাপাশি দুর্গত মানুষের খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা প্রদানের বিষয়টি সরাসরি মনিটরিং করছেন। তিনি নিজেই ১০টি বিভাগ ও ৬৪টি জেলার সাথে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দলীয় নেতাকর্মী, মাঠ প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। দলমত নির্বিশেষে সঠিক তালিকা তৈরি করে প্রকৃত অসহায় মানুষের কাছে সরকারের সহযোগিতা পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর নেতা। তাই তিনি ভিডিও কনফারেন্স এর মাধ্যমে একাধিক আন্তর্জাতিক ফোরামেও অংশ নিয়েছেন। সার্ক নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় করোনা মোকাবেলায় সার্ক তহবিল গঠনের প্রস্তাব দেন, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে দারিদ্র্য ও বৈষম্য দূর করতে পাঁচ দ্রফা প্রস্তাবনা পেশ করেছেন যা সর্বত্র প্রশংসিত হয়েছে। যুক্তরাজ্যে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল বৈশ্বিক টিকা সম্মেলনে যোগ দিয়ে ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের জন্য ‘গ্লোবাল সিটিজেন’ তহবিলে ৫০ হাজার ডলার প্রদানের ঘোষণা আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার সঠিক সময়ে বাস্তবমুখী পদক্ষেপের কারণে পৃথিবীর যেকোন দেশের থেকে বাংলাদেশে করোনায় মৃত্যুহার সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বেলজিয়ামে মৃত্যুহার ১৫.৯ শতাংশ, ফ্রান্স ১৪.৯ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ১৪ শতাংশ, নেদারল্যান্ড ১২.২, স্পেন ১১.৪ শতাংশ, ইতালি ১৪.৫ শতাংশ, কানাডা ৮.২ শতাংশ, সুইডেন ৮.১, চীন ৫.৫ শতাংশ, জাপান ৫.৩ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্র ৫ শতাংশ, ভারত ৩.০৮ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়া ১.৪ শতাংশ আর বাংলাদেশে ১.৩ (বর্তমানে ১.২৫) শতাংশ। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্য এটা স্বস্তির খবর। দেশরত্ন শেখ হাসিনার সঠিক ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেয়ার ফলেই এটা সম্ভব হয়েছে।

বৈশ্বিক মহামারী মোকাবিলা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে দুরন্ত ও দুর্বার গতিতে। এই সংকট সময়েও অনেক ভালো খবর, বিশ্ব পরিমন্ডলে বাংলাদেশের মর্যাদা আরো উজ্জল থেকে উজ্জলতর হচ্ছে। গত ৩ মে ২০২০ বিশ্বখ্যাত অর্থনীতি বিষয়ক সাময়িকী দি ইকোনমিস্ট এক প্রতিবেদনে বলেছে, ৬৬টি দেশের উদীয়মান অর্থনীতির তালিকায় বাংলাদেশ থাকবে নবম স্থানে। যেখানে চীন ১০ম, ভারত ১৮শ, পাকিস্তান ৪৩ম তম স্থানে থাকবে। এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) একটি গবেষণায় মতামত দিয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় করোনা সংকটের মধ্যেও বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৭.৫ শতাংশ হবে। অন্যদিকে ভারতে ৫ শতাংশ, শ্রীলংকা ৪.৯ শতাংশ, আফগানিস্তানের ৩ শতাংশ মালদ্বীপ ৩.৭ শতাংশ এবং পাকিস্তানে ২ শতাংশ হতে পারে।

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে সারা পৃথিবীর অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশগুলোর অর্থনীতি ভয়াবহ বিপর্যস্ত হয়েছে। অথচ বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও রেমিট্যান্স আগের সব অর্জনকে হার মানিয়েছে। প্রথমবারের মতো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৬.১৬ বিলিয়ন (৩ হাজার ৬শ ১৬ কোটি) মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। করোনাকালে গত জুন মাসেই বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে ১৮৩ কোটি ৩০ লক্ষ ডলার। এর পূর্বে এক মাসে কখনো এই পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী একটি দেশের কাছে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ থাকলেই অর্থনীতি স্থিতিশীল আছে বলে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশ সরকারের তহবিলে বর্তমানে ৮ মাসেরও বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানোর বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ আছে।

সংকটে নেতৃত্বের পরীক্ষা হয়। করোনা সংকটে আবারও প্রমাণিত হল বাংলাদেশের নেতা একজনই, তিনি শেখ হাসিনা। দেশরত্ন শেখ হাসিনা জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ফজরের নামাজ ও কোরআন তেলাওয়াত দিয়ে দিন শুরু হয়, সারাদিন কাটে জনকল্যাণে কাজ করে।

করোনার করাল থাবায় সারা পৃথিবী যখন থমকে গেছে তখনও বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা থেমে নেই। সরকার ও দলের সমন্বয়ে দেশের প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত জনগণের মাঝে সুফল পৌঁছে যাচ্ছে। আজ সারা বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল। বাঙ্গালি জাতি বিশ্বাস করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কোন সংকটই বাংলাদেশকে দাবিয়ে রাখতে পারবে না। বাংলাদেশ বিজয়ী হবেই, ইনশাল্লাহ।

লেখক: রাজনৈতিক কর্মী