পরিসংখ্যান স্বস্তির হলেও অবস্থা হাল ছাড়ার নয়

প্রকাশ | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৮:১৯

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস

অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও মহামারি করোনায় প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃত্যুর খবর মিলছে। তবে নমুনা পরীক্ষা ও শনাক্তের দিক দিয়ে আগস্ট মাসের থেকে সেপ্টেম্বর মাসের এখন পর্যন্ত বেশ উন্নতি হয়েছে। অন্যদিকে আক্রান্ত রোগীদের সুস্থতার হারও আগের থেকে বেড়েছে। তবে এখনই পরিস্থিতি ভালো এমনটা বলতে নারাজ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, করোনাভাইরাস নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব ও স্বাস্থ্যবিধি না মানায় সামনে আরো বাড়তে পারে আক্রান্ত ও মৃত্যু। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা ঢাকা টাইমসকে, ‘পরিসংখ্যানের দিক চিন্তা করলে এটি আমাদের জন্য স্বস্তির। তবে এখনই হাল ছেড়ে দেয়ার সুযোগ নেই। বরং কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।’

আগস্টের ৩ থেকে ৯ তারিখ পর্যন্ত এক সপ্তাহের পরিসংখ্যান বলছে, এই সময়ে সারাদেশে ৫৯ হাজার ৮৬৪ টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে করোনা শনাক্ত করা হয় ১৬ হাজার ৪৪৫ জনের। এই সময়ে মারা যান ২শ ৪৫ জন। আর সুস্থ হয়ে ওঠেন ১১ হাজার ৫৩১জন।

অন্যদিকে সেপ্টেম্বরের ৩ থেকে ৯ তারিখ পর্যন্ত সাতদিনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আগস্টের একই সময়ের থেকে প্রায় দ্বিগুন পরীক্ষা করা হয়। এই সময়ে নমুনা পরীক্ষা হয় ৯৬ হাজার ৮৩৬টি। আর করোনা শনাক্ত হয় ১১ হাজার ৯৫৯ জনের।  চলতি মাসের এই এক সপ্তাহে মারা গেছেন ২৪২জন। আর সুস্থ হয়েছেন ১৬ হাজার ৭৯৩ জন। সে হিসেবে আগস্টে নমুনা পরীক্ষা অনুযায়ী শনাক্তের হার ছিল ২৭ দশমিক ৪৭ ভাগ। অন্যদিকে চলতি মাসে শনাক্তের হার ১১ দশমিক ৩৫ ভাগ।

চীনের উহার থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনায় দেশে প্রথম শনাক্তের ঘোষণা আসে গত ৮ মার্চ। আর করোনায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ১৮ মার্চ। শুরুতে নমুনা পরীক্ষা, শনাক্ত ও মৃত্যুর হার কম থাকলেও ধীরে ধীরে এ সংখ্যা বাড়তে থাকে। ফলে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। সরকারের পক্ষ থেকে লকডাউন ঘোষণাসহ নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়। তবে কিছুদিন পর ধীরে ধীরে ধীরে খুলে দেয়া হয় সব কিছু। স্বাভাবিক হতে শুরু করে অফিস-আদালত। স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রেও দেখা দিয়েছে অনীহা। ফলে ক্রমেই আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত করোনায় দেশে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৬৩৪ জনে। আর মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৩ লাখ ৩২ হাজার ৯৭০ জনে পৌঁছেছে। আর একই সময়ে সুস্থ হয়েছেন আরও ২ হাজার ৭৪৬ জন। এ নিয়ে দেশে মোট সুস্থ ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৩৩ হাজার ৫৫০ জনে। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার এখন পর্যন্ত ৭০ দশমিক ১৪ শতাংশ।

তবে শনাক্ত ও মৃত্যুর বর্তমান হার করোনা সংক্রমণের নিম্ন¥মুখী কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, সংক্রমণের গতি নিম্নমুখী না হলেও এখন ফ্ল্যাট কার্ভে (সহনশীল অবস্থায়) এসেছে। জুলাইয়ের মাঝামাঝি সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি ছিল, এরপর সেটা ক্রমে একটু একটু করে কমে। কেউ কেউ বলেন এখন হার নিম্নমুখী, আমি এখনো নিম্নমুখী বলবো না।

এই পরিস্থিতি ধরে রাখার জন্য কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে বলে তিনি মনে করেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানাও মনে করেন পরিসংখ্যানের দিক চিন্তা করলে এটি তাদের জন্য স্বস্তির। তবে এখনই হাল ছেড়ে দেয়ার সুযোগ নেই। বরং কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। যাদের দীর্ঘদিনের অসুস্থতা আছে তাদের কোনো ধরণের করোনার লক্ষণ দেখা দিলেই হাসপাতালে চলে আসতে হবে।

ঢাকা টাইমসকে নাসিমা বলেন, ‘পরিসংখ্যান বিবেচনায় নিলে তুলনামূলক ভালো বলা যায়। কিন্তু উপসর্গহীন, কমিউনিটি ট্রান্সমিউশন আছে। আমাদের পাশের দেশ ভারতে আক্রান্ত অনেকে বেশি হচ্ছে। তাই সবদিক খেয়াল করে আমাদের কঠোরভাবে স্বাস্থবিধি মানতে হবে। কারণ প্রত্যেক দিনই মৃত্যু বাড়ছে। আমরা মৃত্যু কমাতে পারিনি এটাই টেনশনের বিষয়। আগে মানুষ হাসপাতালে আসত শেষ বেলায়।’

যাদের দীর্ঘদিনের ব্যাধি রয়েছে তাদের যে কোনো লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত হাসপাতালে আসার তাগিদ দিয়ে নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘যখন শনাক্তের হার ৫ ভাগের নীচে আসবে। তখন পরিস্থিতি ভালো বলা যেতে পারে। কাজেই একমাত্র প্রতিরোধের উপায় হলো স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা। তবে মানুষের মধ্যে আতঙ্কটা কমে গেছে। করোনা হলেও মারা যাবে সেই ভীতি এখন আর নেই।’

(ঢাকাটাইমস/১১সেপ্টেম্বর/ডিএম)