গর্ভাবস্থায় পুষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় খাবার
গর্ভাবস্থা যদিও একজন মহিলার জীবনের সবচেয়ে সুখী পর্যায়গুলোর মধ্যে একটি, এটি এক গুচ্ছ মানসিক, শারীরবৃত্তিয় চাপ প্রয়োগ করতে পারে। গর্ভবতী মহিলাদের তাই তাদের জীবনের এই পর্যায়ে নিজেদের যত্ন নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
গর্ভের সন্তান পুষ্টি পায় তার মায়ের কাছ থেকে। অনাগত সন্তান আর মায়ের ভবিষ্যৎ সুস্থতাও অনেক ক্ষেত্রে গর্ভবতী মায়ের খাবার কেমন তার ওপর নির্ভর করে। অনেক মা দ্বিধায় ভোগেন কী খাওয়া উচিত, কী উচিত নয়। অনেকে উদ্বগ্ন থাকেন বাড়তি ওজন নিয়েও। প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিটি নারীর দৈনিক ২১শ’ ৬০ কিলোক্যালরি খাদ্যের প্রয়োজন হলেও একজন গর্ভবতীর প্রয়োজন তারচেয়ে ৩৫০ কিলোক্যালরি খাদ্যের। তা না হলে শিশু অপুষ্টিতে ভোগে ও কম ওজন নিয়ে শিশু জন্মায়। গর্ভবতী মায়ের খাবার এবং কোন খাবার গর্ভের সন্তান ও মায়ের জন্য প্রয়োজন তা আলোচনা করো হলো।
একজন গর্ভবতী মায়ের আহার এমন হওয়া উচিত যাতে ভ্রূণের বৃদ্ধি, মায়ের স্বাস্থ্য রক্ষা, প্রসবের সময় মায়ের শারীরিক শক্তি ও বাচ্চাকে স্তন্যপান করানোর মতো যথেষ্ট দুধ হয়। ভ্রূণের বৃদ্ধির জন্য প্রোটিন-সমৃদ্ধ আহার দরকার। যদি সম্ভব হয়, তবে গর্ভবতী মায়ের যথেষ্ট পরিমাণ দুধ, ডিম, মাছ ও পোলট্রিজাত পণ্য ও মাংস খাওয়া উচিত। যদি তিনি নিরামিষাশী হন, তবে নানান শস্য, প্রচুর ডাল ও বাদাম খাওয়া উচিত৷
শরীরে রক্তাল্পতা কমানোর জন্য ও ভ্রূণের রক্ত তৈরির জন্য লোহা (আয়রন) খুব গুরুত্বপূর্ণ।এ জন্য গর্ভবতী মহিলার চিনির বদলে গুড়, জোয়ার বা বাজরা দিয়ে তৈরি খাবার, তিল ও যথেষ্ট পরিমাণ গাঢ় সবুজ শাকসব্জি খাওয়া উচিত৷ মেটে ও যকৃতেও প্রচুর আয়রন আছে।যদি তিনি নিরামিষাশী হন, তবে নানান শস্য, প্রচুর ডাল ও বাদাম খাওয়া উচিত৷
যত্ন, খাদ্য এবং পুষ্টি বিষয়ে, গর্ভাবস্থায় কোন খাবার খেতে হবে তা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। গর্ভবতী মহিলাদের নিজেদের এবং তাদের শিশুদের উভয়ের পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে উভয়ের জন্যই জন্য খেতে হবে।এই সময়কালে শরীরটি অনেকগুলি শারীরিক এবং হরমোনজনিত ওঠানামার মধ্য দিয়ে যায় এবং তাই বর্ধিত চাহিদাগুলি আরও ভালভাবে পরিচালনা করার জন্য সঠিক খাবারের প্রয়োজন।
একটি স্বাস্থ্যকর, সুষম ডায়েট অনুযায়ী খাওয়া মা এবং শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি সরবরাহ করে। মায়ের খাওয়া খাদ্য হ'ল শিশুর পুষ্টির প্রধান উত্স ,সেইজন্যই মায়ের পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়া অত্যন্ত জরুরি।
পুষ্টি বৃদ্ধি
গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুকে সহায়তা করার জন্য প্রয়োজন কিছু প্রয়োজনীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস এবং ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টস । ভিটামিন এবং খনিজ, কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং ওমেগা ৩ এর মতো উপাদানগুলি সঠিক পরিমাণে মাকে গর্ভাবস্থায় বর্ধিত পুষ্টির চাহিদা মেটাতে সহায়তা করে। মুরগীর মাংস ,মাছ , টাটকা ফল, সবজি এবং চর্বিযুক্ত প্রোটিন খাবারগুলি এইসময় খাওয়া উচিত ,যা পুষ্টি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
প্রোটিন
শিশুর দেহে টিস্যু এবং অঙ্গগুলির যথাযথ বৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য, প্রোটিনজাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি । প্রোটিন দেহে রক্ত সরবরাহ বাড়ায়, ভ্রূণকে নিয়মিত রক্ত সরবরাহ করতে সাহায্য করে । কিছু স্বাস্থ্যকর প্রোটিন খাবারের মধ্যে রয়েছে মুরগীর মাংস , সালমন, বাদাম, মাখন, পনির এবং মটরশুটি ইত্যাদি ।
ক্যালসিয়াম
এখানে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে , দেখার হাড়গুলি মজবুত করতে এবং শরীরের তরল জাতীয় অর্থাৎ রক্ত,জল ইত্যাদি ঠিকঠাক সরবরাহে ক্যালসিয়াম অপরিহার্য। গর্ভবস্থায় এই ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার খাওয়া মা-শিশু দুজনের জন্যই অপরিহার্য। দুধ, দই, পনির, সবুজ পাতাযুক্ত শাকসব্জী,মাছ এবং সামুদ্রিক খাবার যেমন সালমন, চিংড়ি এবং ক্যাটফিশ ভাল পরিমাণে ক্যালসিয়াম সরবরাহ করতে পারে। এছাড়াও অনেক খাবারে ক্যালসিয়াম মজুত আছে।
আয়রন
গর্ভকালীন অবস্থায় এই জাতীয় খাদ্য শরীরের জন্য কার্যকরী। আয়রন রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং মা এবং শিশুর উভয়কেই পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ করতে সহায়তা করে । সবুজ পাতাযুক্ত শাকসব্জী, সাইট্রাস ফল, হাঁস-মুরগির ডিম এই জাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমানে আয়রন মেলে।
ফোলেট
এই ফোলেটকে অনেকে আবার ফোলিক অ্যাসিড নামেও চেনে। শিশুদেহের বিকাশে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। শিশুর মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ড সঠিক গঠনের জন্য এর ভূমিকা আছে। এই ফোলেট বা ফোলিক অ্যাসিড বাদাম, শুকনো মটরশুটি এবং মুসুর ডাল , ডিম, বাদাম এবং মাখন জাতীয় খাবারে পাওয়া যায়। তাই গর্ভবস্থায় এই জাতীয় খাবারগুলি খেতে হয়।
(ঢাকাটাইমস/১২ সেপ্টেম্বর/আরজেড/এজেড)