ইউএনওর ওপর হামলার মূল আসামি আসাদুল নাকি রবিউল?

প্রকাশ | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২০:৫৫

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর
আসাদুল হক ও রবিউল ইসলাম ফরাস (ফাইল ছবি)

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলাকারী মূল আসামি যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা আসাদুল হক নাকি ইউএনওর বাসার বরখাস্তকৃত মালি রবিউল ইসলাম ফরাস এটা নিয়ে দেখা দিয়েছে ধুম্রজাল। আসাদুল হক র‌্যাবের কাছে স্বীকারোক্তিতে নিছক চুরির ঘটনা দেখে ফেলায় হামলার কথা বললেও পুলিশ জানাচ্ছে, চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়ার ক্ষোভেই এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত হন রবিউল ইসলাম ফরাস। এবার তাকেই প্রধান আসামি হিসেবে বিবেচনা করছে পুলিশ।

দেশজুড়ে আলোচিত এই ঘটনায় প্রথম গ্রেপ্তার আসাদুলের স্বীকারোক্তি মতো র‌্যাব-১৩ ঘটনার দুদিন পর ৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় তাদের সদরদপ্তরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানায়, ইউএনও ওয়াহেদা খানমের ওপর হামলার ঘটনা নিছক চুরি থেকে। চুরি দেখে ফেলায় আসাদুল হক এবং তার অপর দুই সঙ্গী নবীরুল ইসলাম ও সান্টু কুমার এই ঘটনা ঘটিয়েছেন। স্বীকারোক্তি মতো ঘটনার সময় সিসিটিভি ফুটেজে পরিহিত আগন্তুকের লাল রঙের টিশার্ট আসাদুলের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় বলে জানায় র‌্যাব। তার স্বীকারোক্তি মতোই রংমিস্ত্রি নবীরুল ইসলাম এবং সান্টু কুমারকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

এই তিন আসামিকে আদালতের মাধ্যমে সাত দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। কিন্তু মামলার কোনো অগ্রগতি হয়নি। ফলে ঘটনায় জড়িত থাকা সন্দেহে কমপক্ষে ২০ জনকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে তাদের বেশিরভাগকেই ছেড়ে দেয়া হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ, চলনের গতি এবং চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্তের বিষয়ে সন্দেহের জালে পড়েন রবিউল ইসলাম ফরাস। তার বাড়ি দিনাজপুরের বিরল উপজেলা বিজোড়া ইউনিয়নের বিকোড়া গ্রামে। বাবার নাম খতিব উদ্দিন। বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার হওয়া রবিউল ইসলাম ফরাস ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। তার স্বীকারোক্তি মতো একটি পুকুর থেকে হামলার অস্ত্র হাতুড়ি এবং ব্যবহত মই উদ্ধার করা হয়েছে।

শনিবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে দিনাজপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রংপুর রেঞ্জের পুলিশের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য মামলাটি সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন। রবিউল ইসলাম ফরাসের গ্রেপ্তারের মাধ্যমে মামলাটির অগ্রগতিতে আশার আলো দেখছে পুলিশ। আইজিপির পরামর্শে পুলিশ এই মামলারটি অধিকতর গুরুত্ব দিয়েছে বলে জানান ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য।

ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য সাংবাদিকদের বলেন, ‘রবিউলের স্বীকারোক্তি মতে এই ঘটনাটি সে ঘটিয়েছে। তার কথা মতো হামলায় ব্যবহত হাতুড়ি ও মই উদ্ধারও হয়েছে। তাই আসামি রবিউলকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। যেহেতু এই মামলার বাদী ইউএনওর ভাই শেখ ফরিদ উদ্দিন নির্দিষ্ট আসামির নাম উল্লেখ করেননি একারণে মামলার প্রধান আসামি পরিবর্তন হওয়ারই সম্ভাবনা রয়েছে।’

শনিবার বিকালে রবিউল ইসলাম ফরাসকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট   ইসমাইল হোসেনের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির ওসি ইমাম আবু জাফর। শুনানি শেষে বিচারক ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে রবিউল ইসলাম ফরাস ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বাসভবনে ২০১৯ সালের শেষে অস্থায়ী মালি হিসেবে নিয়োগ পান। চার মাস আগে মালি রবিউল ইসলাম ফরাস ইউএনও ওয়াহিদার বাসা থেকে একটি লাগেজ তার কার্যালয়ে পৌঁছে দেয়ার সময় সেখান থেকে ৫০ হাজার টাকা খোয়া যায়। এই ঘটনাটি ইউএনও ওয়াহিদা জেলা প্রশাসককে জানালে জেলা প্রশাসক মালি রবিউল ইসলাম ফরাসকে সাময়িক বরখাস্ত করে জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। ফরাসের বাড়ি দিনাজপুরের বিরল উপজেলার বিজোড়া গ্রামে।

গত ২ সেপ্টেম্বর রাত আনুমানিক সাড়ে ৩টায় দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম এবং তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখের ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এঘটনায় আহত দুজনকেই রংপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে ইউএনও ওয়াহিদাকে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে করে নেয়া হয় ঢাকার নিউরোসাইন্স মেডিকেল হাসপাতালে। এরপর জরুরি ভিত্তিতে করা হয় অস্ত্রোপচার। এখনো তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন। তিনি শঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখ সুস্থ হলেও তার কোমরের নিচের অংশ এখনো অবশ রয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/১২সেপ্টেম্বর/জেবি)