ভারতে সমকামী দুই নারী পুলিশের জন্য সশস্ত্র পাহারা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১০:১১

ভারতীয় আইনে দেশটিতে সমকামিতা এখন আর অপরাধ নয়। কিন্তু এ ব্যাপারে বহু বছরের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি তো আর রাতারাতি বদলে যাবার নয়। যে কারণে পরিবারের হুমকির মুখে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হলেন সমকামী দুই নারী পুলিশ সদস্য।

পায়াল ও কাঞ্চন পুলিশের চাকরিতে যোগ দেয়ার আগে প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েছিলেন। এসময় তারা প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন এবং তাদের এই সম্পর্ক নানা রকমের বাধা বিপত্তির মুখে পড়ে। নিজেদের পরিবারের কাছ থেকেও নানা ধরনের হুমকি আসে। বিবিসির গুজরাটি বিভাগের ভারগাভ পারিখ তাদের সেই অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন।

পায়াল ও কাঞ্চনের (তাদের আসল নাম নয়) প্রথম দেখা হয় ২০১৭ সালে। তারা দুজনেই পুলিশ হতে চেয়েছিলেন। এজন্যে তারা যোগ দিয়েছিলেন পুলিশের প্রশিক্ষণ শিবিরে। তাদের যখন প্রথম সাক্ষাৎ হয় তারা ভাবতেও পারেননি যে একে অপরের প্রেমে পড়ে যাবেন।

ভারতীয় আইনে সমকামিতা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত ছিল। কিন্তু পায়াল ও কাঞ্চনের দেখা হওয়ার এক বছর পর অর্থাৎ ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয় যে সমকামিতা কোনো অপরাধ নয়। কিন্তু আইনের পরিবর্তন হলেও সমকামী সম্পর্কের প্রতি ভারতীয় সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি তো আর বদল হয়নি। সমাজে এধরনের সম্পর্ক গ্রহণযোগ্য নয়।

তাদের দুজনের বয়স ২৪। পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটে তারা একসঙ্গে বসবাস করছেন ২০১৮ সাল থেকে। এর মধ্যে তাদের এই সম্পর্ক গত মাসে আবার আলোচনায় আসে যখন তারা জীবনের নিরাপত্তার ব্যাপারে হাই কোর্টে হাজির হয়েছিলেন।

পায়াল ও কাঞ্চন পুলিশের নিরাপত্তা চেয়ে আদালতের কাছে আবেদন করেন।

পায়াল বলেন, আমাদের পরিবারই আমাদের সম্পর্কের বিরুদ্ধে। তারা আমাদের হুমকি দিচ্ছে।

আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত তাদেরকে সশস্ত্র পুলিশ দিয়ে নিরাপত্তা প্রদানের আদেশ দেয়।

পরিবারের সম্মান রক্ষার্থের নামে পরিবারেরই কোন সদস্যের হাতে আরেক সদস্য হত্যার ঘটনা ভারতের মতো দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে খুব একটা অস্বাভাবিক ঘটনা নয়।

এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ভারতে পরিবারের ইচ্ছার বাইরে কাউকে বিয়ে করা কিম্বা পছন্দের বাইরে গিয়ে কারো সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ানোর কারণে প্রতি বছর কয়েকশো মানুষকে হত্যা করা হয়।

পায়াল ও কাঞ্চন গুজরাটের দুটো প্রত্যন্ত গ্রামে বড় হয়েছেন যেখানে সমাজ এখনও রক্ষণশীল ও পুরুষতান্ত্রিক। তারা দুজনেই বলেছেন এই মানসিকতা ভেঙে দেওয়ার লক্ষ্যে সমস্ত বাধা বিপত্তি ডিঙ্গিয়ে তারা পুলিশের মতো একটি বাহিনীতে যোগ দিতে চেয়েছিলেন যেখানে পুরুষের আধিপত্য।

তারা বলেছেন, ২০১৭ সালে তারা যখন পুলিশ বাহিনীতে প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েছিলেন তখন প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে হওয়ার কারণে বাহিনীর কেউ তাদের সঙ্গে ঠিক মতো কথা বলতো না। বাকি সদস্যরা এসেছিল বড় বড় শহর থেকে। শুরু থেকেই তারা দুজনে বাকিদের থেকে আলাদা হয়ে পড়েন।

প্রশিক্ষণের সময় এই দুই নারীকে একটি ঘরে থাকতে দেয়া হয়েছিল। সারা দিনের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর সন্ধ্যার সময় তারা দিনে যা যা হয়েছে সেসব নিয়ে আলাপ করতেন। এই আলোচনা খুব দ্রুতই তাদের নিজেদের জীবন ও পরিবারের গল্পে গিয়ে পৌঁছায় এক সময় তাদের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব তৈরি হয়ে যায়।

পায়ারের ভাষায়-কাঞ্চন যদি আমার কাপড় ধোয় তো আমি ওর জন্য রান্না করি। সময়ের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরো গভীর হলো। প্রশিক্ষণ শেষ হলেও আমরা যাতে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারি সেজন্য আমরা ফোন নম্বর বিনিময় করি।

প্রশিক্ষণ শেষে কাকতালীয়-ভাবে একই শহরে তাদের পোস্টিং হলো। তারা দুজনেই তখন পুলিশের একটি কোয়ার্টারে একই কক্ষে থাকার সিদ্ধান্ত নিলেন।

কাঞ্চন বলেন, পায়ালের যদি নাইট ডিউটি থাকতো, আমি বাড়ির কাজ সামলাতাম। আর আমাকে যদি রাতে কাজ করতে হতো, পায়াল বাড়ির সব কাজ করতো। আমাদের কাজ নিয়ে আমরা খুব খুশি ছিলাম। সময় যতোই গড়াতে লাগলো আমাদের জীবনও একে অপরের সঙ্গে আরো বেশি করে জড়িয়ে পড়লো। এই সময়টাতেই তারা প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।

২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর। নব বর্ষের আগের মুহূর্তে, ঘড়িতে রাত ১২টা বাজার আগে আমরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরি। সেটাই বোধ হয় ছিল প্রথমবারের মতো জড়িয়ে ধরা এবং তখন আমাদের একেবারে ভিন্ন ধরনের অনুভূতি হয়, বলেন কাঞ্চন।

এর পরই দুটো পরিবারের দিক থেকেই তাদের বিয়ের ব্যাপারে কথা উঠতে শুরু করে। কাঞ্চনের পরিবার তার জন্য উপযোগী একজন পাত্র খুঁজে বের করতে লেগে যায়। এসময় তারা দুজনেই পরিবারের চাপ এড়িয়ে চলতে সক্ষম হয়।

এক পর্যায়ে পুলিশ কোয়ার্টারে থাকা তাদের সহকর্মীরা তাদের সম্পর্কের ব্যাপারে জানতে পারে। পায়াল ও কাঞ্চন তখন একথা তাদের পরিবারকেও জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়। তারা একেবারে ভেঙে পড়লো, বলেন পায়াল।

এই দুই নারী বলেন, তারপর থেকে পরিবার তাদের উপর সর্বক্ষণ নজর রাখতে শুরু করে। তারা কী করে, কোথায় যায় এসবের খোঁজ খবর নিতে থাকে। কিন্তু এবছরের শুরুর দিকে পরিস্থিতি আসলেই খারাপ দিকে মোড় নেয়।

পায়াল বলেন, একদিনের ঘটনা, আমরা যখন ডিউটিতে ছিলাম তখন আমার পরিবার আমার কাজের জায়গায় চলে আসে। রাস্তার মাঝখানে তারা আমাদের গাড়ি থামিয়ে শাসাতে থাকে। তারা একবার পুলিশ কোয়ার্টারেও আসে। আমাদের নাম ধরে গালি গালাজ করতে থাকে।

তিনি বলেন, এই ঘটনার অল্প কিছু দিন পরে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়। তখনই আমরা নিরাপত্তার জন্য আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই।

তাদের পক্ষে দেয়া আদালতের রায়ে তারা খুশি। তারা বলছেন, এর ফলে তারা এখন নিজেদের ভবিষ্যতের ব্যাপারে কিছু চিন্তা ভাবনা করার সময় পাচ্ছেন।

কাঞ্চন বলেন, করোনাভাইরাসের মহামারি শেষ হয়ে গেলে আমরা হানিমুনে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে যেতে চাই। এই দম্পতি ভবিষ্যতে একটি শিশু দত্তক নেয়ার ব্যাপারেও আগ্রহী।

ভারতে সমকামিতা আর অবৈধ না হলেও সমকামী নারী পুরুষের বিয়ের ব্যাপারে এখনও সেরকম কোনো ব্যবস্থা নেই। তাদের অধিকার এবং শিশু দত্তক নেওয়ার বিষয়েও স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই। তবে কাঞ্চন ও পায়াল বেশ আশাবাদী।

পায়াল বলেন, আমাদের বয়স এখন মাত্র ২৪। আমরা এখন কিছু অর্থ সঞ্চয় করতে চাই ও একটি শিশুকে দত্তক নিতেই চাই। তাকে ভালো শিক্ষা দিয়ে গড়ে তুলতে চাই একজন সফল মানুষ হিসেবে। সূত্র: বিবিসি

(ঢাকাটাইমস/১৪ সেপ্টেম্বর/কেআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ

কলকাতা হাইকোর্টের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ মমতার

ভারী বৃষ্টিপাতে ক্ষতিগ্রস্ত কারাগার, পালালো শতাধিক বন্দি 

ভারতে লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় পর্বে ১৩ রাজ্যের ৮৮ আসনে ভোটগ্রহণ শুক্রবার

ইরানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করতে চায় আর্জেন্টিনা, কিন্তু কেন?

স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ, দায়িত্বপালন থেকে বিরত থাকবেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী 

ইউক্রেনকে গোপনে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

ইসরায়েল-ইরান সংঘাত: সিরিয়া কি নতুন যুদ্ধক্ষেত্র হবে?

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিবে জ্যামাইকা

পাকিস্তানের পর এবার শ্রীলঙ্কা সফরে ইরানের প্রেসিডেন্ট

বিরল সফরে ইরানে উত্তর কোরিয়ার প্রতিনিধিদল

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :