গাছ কাটা নিয়ে বেসরকারি সংস্থা-বনবিভাগের বিরোধ

প্রকাশ | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৫:০০ | আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৫:৪১

ইকরামুল আলম, ভোলা

ভোলা-বরিশাল-লক্ষ্মীপুর মহাসড়কে বর্গা নিয়ে ‘ভোলা সমাজ উন্নয়ন সংস্থা’র রোপণ করা গাছ কাটতে বাধা দিচ্ছে উপকূলীয় বনবিভাগ। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে চলছে উত্তেজনা। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালেও কোনো সমাধান পায়নি বলে জানান ভোলা সমাজ উন্নয়ন সংস্থা ‘র সদস্যরা।

তারা জানান, মহামান্য সুপ্রিমকোর্ট থেকে ভোলা সমাজ উন্নয়ন সংস্থাকে গাছ কাটার অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু তারা গাছ কাটার প্রস্তুতি হিসেবে গত রবিবার নাম্বারিং করতে গেলে বনবিভাগ বাধা দেয় এবং মামলা-মোকদ্দমাসহ বিভিন্ন হুমকি দেয় সংস্থার কর্মকর্তাদের। তাই, গাছ কাটতে পারছে না সংস্থাটি। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সুষ্ঠু সমাধান চান সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক।

রবিবার লিখিত অভিযোগে সংস্থার নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন জানান, ২০১১ সালের ১৬ আগস্ট যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সড়ক ও জনপথের ভোলা নির্বাহী প্রকৌশলীর থেকে একটি লিখিত চুক্তি হয় সংস্থাটির। এ চুক্তির মাধ্যমে ৪১ সাল পর্যন্ত ভোলা-বরিশাল-লক্ষ্মীপুর মহাসড়কের ১৮ কিলোমিটার রাস্তার দুই পাশের জায়গা বর্গা নেয় তারা। এরপর সরকারি নিয়ম অনুযায়ী রাস্তার দুই পাশে বিভিন্ন ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছ রোপণ করে তারা।  এই গাছ বড় হলে বিক্রি করে এলাকার হতদরিদ্র মানুষ উপকৃত হওয়ার কথা। কিন্তু এসব গাছ বড় হওয়ার পর এগুলোতে দৃষ্টি পড়ে বনবিভাগের। সংস্থার রোপণ করা গাছ বনবিভাগ তাদের বলে দাবি করছে।

তিনি আরও জানান, বিষয়টি সমাধানের জন্য উভয় পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করা হয়েছিল। পরে জেলা প্রশাসক বনবিভাগ, সড়ক ও জনপথ এবং ভোলা সমাজ উন্নয়ন সংস্থাকে নিয়ে সমাধানে বসেন। এসময় জেলা প্রশাসক বনবিভাগকে একটা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বনায়নের মালিকানার প্রমাণপত্রের কাগজ দেখাতে বলেন। কিন্তু কয়েক দিন যেতে না যেতেই সমস্যার সমাধান না করে বনবিভাগ গাছ বিক্রির জন্য নাম্বারিং ও টেন্ডার আহ্বান করলে সংস্থার পক্ষ থেকে আপত্তি করা হয়। এরপর আবার জেলা প্রশাসকের দপ্তরে বিষয়টি সুরাহার জন্য উভয় পক্ষ নিয়ে সভা হয়।

সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হতেই বনবিভাগ খামখেয়ালিভাবে গাছ কাটার জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করে। ঠিকাদার হঠাৎ করে ওই গাছ কাটতে এলে সংস্থার পক্ষ থেকে মহামান্য হাইকোর্টে রিট পিটিশন করা হয়।

বিষয়টি আমলে নিয়ে গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও জহিরুল হকের হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ রিট পিটিশনের শুনানি সম্পন্ন করেন। শুনানি শেষে বনবিভাগের দেওয়া টেন্ডারসহ এ সংক্রান্ত সকল কার্যক্রমের উপর স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়।

পরবর্তীতে বনবিভাগ বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করলে আপিল বিভাগ আবেদনটি নিষ্পত্তি করে ভোলা সমাজ উন্নয়ন সংস্থার পক্ষে রায় দিয়ে তাদের এক মাসের মধ্যে গাছ কাটার নির্দেশ দেয়। সে অনুযায়ী ভোলা সমাজ উন্নয়ন সংস্থার কর্তৃপক্ষ রবিবার তাদের রোপণকৃত গাছে নাম্বারিং করতে যায়। এসময় বনবিভাগ ও তাদের ঠিকাদার ঘটনাস্থলে গিয়ে গাছে নাম্বারিং কাজে বাধা দেয়। এছাড়া সংস্থার কর্মকর্তা ও শ্রমিকদের গাছের কাছে না যাওয়ার জন্য হুমকি দেয়। এমনকি তারা সংস্থার লোকদের মামলা-মোকাদ্দমার হুমকিও দেয়। এসময় সংস্থার লোকজন ঘটনাস্থল থেকে চলে যেতে বাধ্য হয়।

নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিমকোর্টের রায় থাকা সত্ত্বেও দেশের একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান ওই রায়কে উপেক্ষা করে কিভাবে আমাদের হুমকি ও মামলার ভয়ভীতি দেখায়? গাছগুলো সুষ্ঠুভাবে কেটে বিক্রি করে যাতে চুক্তি অনুযায়ী বিভিন্ন সংস্থাসহ হতদরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করতে পারি, সেজন্য জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারের মাধ্যমে যথাযথ সমাধান আশা করছি।’

এদিকে ভোলা বনবিভাগের সদর রেঞ্জের কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সরকারি নিয়মে এগুলো টেন্ডার দিয়েছি। সে অনুযায়ী ঠিকাদারকে ওয়ার্ক অর্ডারও দিয়েছি। পরে ভোলা সমাজ উন্নয়ন সংস্থা আদালতে মামলা করে। বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। আদালত থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

(ঢাকাটাইমস/১৪সেপ্টেম্বর/পিএল)