গণপূর্তের আলোচিত প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ

প্রকাশ | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২১:২১ | আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২১:৫০

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঢাকা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন আহম্মেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ দেয়া হয়েছে।

সোমবার গণপূর্ত ঠিকাদার সমিতির পক্ষে মো. মোশাররফ হোসেন এই অভিযোগ দাখিল করেন।

অভিযোগে মোশাররফ হোসেন বলেন, গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঢাকা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন আহম্মেদের অনিয়ম ও সীমাহীন দুর্নীতিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে গণপূর্তের সকল ঠিকাদার ব্যবসায়ী। পুরো অধিদপ্তরে তার পরিচিতি রয়েছে 'ফিফটিন পার্সেন্ট' নামে। বর্তমানে প্রতিটি প্রকল্প বাস্তবায়নে এই হারে কমিশন নিয়ে থাকেন তিনি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী ও গণপূর্তমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স নীতির কোনো তোয়াক্কা করেন না মোসলেহ উদ্দিন আহম্মেদ।

২০০২ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত জাতীয় সংসদ ভবনে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত ছিলেন মোসলেহ উদ্দিন আহম্মেদ। সেই সময় নিয়মবহির্ভূতভাবে সরকারি টাকা খরচ করে আলোচিত হন। তহবিল তছরুপের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে এবং সংসদীয় কমিটির তদন্তেও অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। পরে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার সুপারিশ করা হয়। কিন্তু সেই সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি।

কথিত যুবলীগ নেতা ও বিতর্কিত ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া শামীম (জি কে শামীম) সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য হিসেবে পরিচিত এই মোসলেহ উদ্দিন। বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে সংসদ ভবনের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় দায়িত্ব পালন এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করা মোসলেহ উদ্দিন তার ব্যক্তি জীবনে গড়েছেন অঢেল সম্পদের পাহাড়। ঘুষ-দুর্নীতির টাকায় অস্ট্রেলিয়া, কানাডায় কিনেছেন আলিশান বাড়ি, ঢাকা ও কুমিল্লায় একাধিক বাড়ি, ফ্ল্যাট, বিলাসবহুল গাড়ি এবং বিপুল পরিমাণ জমি রয়েছে তার। এছাড়া গত অক্টোবরে চট্টগ্রাম গণপূর্ত জোন থেকে তিন কোটি টাকা খরচ করে ঢাকা গণপূর্ত জোনে বদলি হয়ে আসেন মোসলেহ উদ্দিন।

বিসিএস ১৫তম ব্যাচের প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন ১৯৯৫ সালে গণপূর্ত অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী পদে যোগ দেন। উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হিসেবে ঢাকা শেরেবাংলা নগরে দায়িত্ব পালন করেছেন। নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার পর শেরেবাংলা নগর ও দীর্ঘ সময় প্রধান প্রকৌশলীর স্টাফ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে সমন্বয় বিভাগে ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে চট্রগাম জোনেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সব জায়গাতেই দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর নিকেতন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন জি কে শামীম। পরে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে জি কে শামীম যাদের নাম বলেছিলেন, তাদের মধ্যে মোসলেহ উদ্দিনের নাম ছিল। সেই সময় প্রথম সারির পত্রিকাতেও এই তথ্য প্রকাশিত হয়।

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, মোসলেহ উদ্দিন ছাত্রজীবনে ছাত্রদলের নেতা ছিলেন। বিএনপি ও চারদলীয় জোট সরকার আমলে তিনি বিএনপিপন্থী প্রকৌশলী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তবে সেসব ছাপিয়ে তিনি এখন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সমর্থক পরিচয়ে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে সবাইকে দাবিয়ে রাখেন। বর্তমানে তিনি গণপূর্তের রাজা বললেও ভুল হবে না। কেননা বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলমও তার অবৈধ অর্থের কাছে অসহায়। তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস হারিয়ে ফেলেছে সবাই। ইতিমধ্যে তিনি তার ক্ষমতা অসংখ্য নজির স্থাপন করেছেন। তার অবৈধ টাকার ক্ষমতার বলে যে কাউকে সহজেই ম্যানেজ করতে সক্ষম তিনি।

এই মোসলেহ উদ্দিনকে এর আগেও গত ১৩ জানুয়ারি তলবি নোটিশ পাঠিয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সে মামলাটিও দুদকে তদন্তাধীন রয়েছে। অষ্টম জাতীয় সংসদে অনিয়ম দুর্নীতি তদন্তে অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়াকে (ডেপুটি স্পিকার) প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল। ওই কমিটি গণপূর্ত বিভাগের তিন প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছিল ওই কমিটি কিন্তু সুপারিশ অনুযায়ী কোনো ব্যবস্থা নেয়নি গণপূর্ত অধিদপ্তর। তদন্ত কমিটির সুপারিশে সাবেক স্পিকার জমির উদ্দিন সরকার ও ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট আখতার হামিদ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে মামলা হলেও তিন প্রকৌশলী ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। এই তিন প্রকৌশলীর একজন হলেন- বর্তমান গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঢাকা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন আহম্মদ। এখন তিনি প্রধান প্রকৌশলীর পদ পেতেও মরিয়া হয়ে উঠেছেন বলেও কানাঘুষা চলছে।

এ ব্যাপারে কথা বলতে গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঢাকা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন আহম্মদের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তার নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

(ঢাকাটাইমস/১৪সেপ্টেম্বর/এসএস/জেবি)