রোগ নিয়াময়ে শজিনা পাতার বিস্ময়কর গুণাগুণ

প্রকাশ | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৯:৪০ | আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১১:২৩

স্বাস্থ্য ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

আমাদের দেশে অত্যন্ত পরিচিত খাদ্য শজিনা পাতা। আমরা অনেকেই শজিনা সবজি হিসেবে খাই। গাছটার বৈজ্ঞানিক নাম মরিঙ্গা ওলিফেরা। চার হাজার বছর ধরে রন্ধন এবং নানা চিকিৎসায় এ গাছের ব্যবহার হয়ে আসছে। প্রায় ৩০০ রকমের অসুখের চিকিৎসা হয় এই গাছ দিয়ে। দক্ষিণ এশিয়ায় বহু বছর ধরে বাড়ির আনাচে-কানাচে, বনে-জঙ্গলে, পুকুরের ধারে এই গাছ দেখা যায়।

বিজ্ঞানীরা মনে করেন শজিনার পাতা পুষ্টিগুণের আঁধার। নিরামিষভোগীরা শজিনার পাতা থেকে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হতে পারেন। শজিনা পাতা ও শজিনাতে প্রচুর আঁশ আছে, যা খাদ্যনালি ও অন্ত্রের পরিপাকতন্ত্রকে পরিষ্কার করে। বিশেষ করে তৈলাক্ত অনেক খাবার আমরা খাই, যার তেল রক্তনালিতে আটকে থাকে। সেগুলো বের করতে শজিনা সাহায্য করে। শজিনার মধ্যে আইসোথিয়োকাইনেটস নামের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আছে, যা গ্যাস্ট্রিক, আলসার এবং গ্যাস্ট্রিকজনিত ক্যানসার ঠেকাতে সহায়তা করে।

সম্প্রতি সেনেগাল, মালির মতো আফ্রিকান দেশগুলোতে এর চাষ হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে। চাষও খুব সহজ। গাছের একটা ডাল পুঁতে দিলেই হলো। এই গাছ বাড়েও খুব দ্রুত। দুই তিন বছরে ফুল দেয়। এর ফুল, পাতা, ফল সব কিছুই সুস্বাদু।

পরিমাণের ভিত্তিতে তুলনা করলে একই ওজনের শজিনা পাতায় কমলা লেবুর ৭ গুণ ভিটামিন-সি, দুধের ৪ গুণ ক্যালসিয়াম এবং দুই গুণ আমিষ, গাজরের ৪ গুণ ভিটামিন-এ, কলার ৩ গুণ পটাশিয়াম বিদ্যমান।

বিজ্ঞানীরা আরও বলেন, শজিনা পাতায় ৪২% আমিষ, ১২৫% ক্যালসিয়াম, ৬১% ম্যাগনসিয়াম, ৪১% পটাশিয়াম, ৭১% লৌহ, ২৭২% ভিটামিন-এ এবং ২২% ভিটামিন-সি সহ দেহের আবশ্যকীয় বহু পুষ্টি উপাদান থাকে। ফলে এটি অন্ধত্ব, রক্তস্বল্পতাসহ বিভিন্ন ভিটামিন ঘাটতিজনিত রোগের বিরুদ্ধে বিশেষ হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে।

এক টেবিল চামচ শুকনা শজিনা পাতার গুঁড়া থেকে ১-২ বছর বয়সী শিশুদের অত্যাবশ্যকীয় ১৪% আমিষ, ৪০% ক্যালসিয়াম ও ২৩% লৌহ  ও ভিটামিন-এ সরবরাহ হয়ে থাকে। দৈনিক ৬ চামচ শজনে পাতার গুঁড়া একটি গর্ভবতী বা স্তন্যদাত্রী মায়ের চাহিদার সবটুকু ক্যালসিয়াম ও আয়রন সরবরাহ করতে সক্ষম।

 

শজিনা পাতার স্বাস্থ্য উপকারিতা

 

শজিনা পাতায় প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক থাকে এবং পালংশাকের চেয়ে তিন গুণ বেশি আয়রণ বিদ্যমান, যা অ্যানিমিয়া দূরীকরণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

শজিনা শরীরে কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও অন্যতম অবদান রাখে। মানুষের শরীরের প্রায় ২০% প্রোটিন যার গাঠনিক একক হলো অ্যামিনো অ্যাসিড। শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মেটাবোলিজম এবং অন্যান্য শারীরবৃত্ত্বীয় কার্যাবলী পরিপূর্ণরূপে সম্পাদনে অ্যামিনো অ্যাসিড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। মানুষের শরীরের যে ৯ টি অ্যামিনো অ্যাসিড খাদ্যের মাধ্যমে সরবরাহ করতে হয়, তার সবগুলোই এই মরিঙ্গার মধ্যে বিদ্যমান।

শজিনা পাতা শরীরে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ডায়াবেটিসের মতো কঠিন রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে।

নিয়মিত দৈনিক সেবন শরীরের ডিফেন্স মেকানিজমকে আরও শক্তিশালী করে এবং ‘ইমিউনিটি স্টিমুল্যান্ট’ হওয়ার দরুন এটি ‘এইডস’ আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

শজিনা পাতা শরীরের হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে পুষ্টিবর্ধক হিসেবে কাজ করে।

শরীরের ওজন কমাতেও ব্যায়ামের পাশাপাশি এটি বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।

শজিনা পাতার এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। এটি যকৃৎ ও কিডনি সুস্থ রাখতে এবং রূপের সৌন্দর্যবর্ধক হিসেবেও কাজ করে থাকে।

শজনে-তে প্রায় ৯০টিরও বেশি এবং ৪৬ রকমের এন্টি-অক্সিডেন্ট বিদ্যমান।

শজনে পাতায় ৩৬টির মতো এন্টি-ইনফ্ল্যামমেটরি বৈশিষ্ট্য আছে। এছাড়াও এটি অকাল বার্ধক্যজনিত সমস্যা দূর করে এবং ক্যানসারের বিরুদ্ধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

 

শজিনার ঔষধি গুণাগুণ

 

আয়ুর্বেদিক শাস্ত্র মতে, শজিনা গাছ ৩০০ রকমের রোগ থেকে মানুষকে রক্ষা করে। শজিনার বাকল, শিকড়, ফুল, ফল, পাতা, বীজ এমনকি এর আঠাতেও ঔষধিগুণ আছে।

শরীর ব্যথা : শরীরের কোনো স্থানে ব্যথা হলে বা ফুলে গেলে শজিনার শিকড়ের প্রলেপ দিলে ব্যথা ও ফোলা সেরে যায়।

কান ব্যথা : শজিনার শিকড়ের রস কানে দিলে কানের ব্যথা সেরে যায়।

মাথা ব্যথা : শজিনার আঠা দুধের সাথে খেলে মাথা ব্যথা সেরে যায়। আঠা কপালে মালিশ করলে মাথা ব্যথা সেরে যায়।

ফোঁড়া সারায় : শজিনার আঠার প্রলেপ দিলে ফোঁড়া সেরে যায়।

মূত্রপাথরি ও হাঁপানি : শজিনা ফুলের রস দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে মূত্রপাথরি দূর হয়। ফুলের রস হাঁপানি রোগের বিশেষ উপকারী।

গ্যাস থেকে রক্ষা : শজিনা পাতার রসের সাথে লবণ মিশিয়ে খেতে দিলে বাচ্চাদের পেট জমা গ্যাস দূর হয়।

কুকুরের কামড়ে : শজিনা পাতা পেষণ করে তাতে রসুন, হলুদ, লবণ ও গোলমরিচ মিশিয়ে সেবন করলে কুকুরের বিষ ধ্বংস হয়।

জ্বর ও সর্দি : পাতার শাক খেলে যন্ত্রণাধায়ক জ্বর ও সর্দি দূর হয়।

বহুমূত্র রোগ : শজিনা পাতার রসে বহুমূত্র রোগ সারে।

কোষ্ঠকাঠিন্য ও দৃষ্টিশক্তি : শজিনার ফুল কোষ্ঠকাঠিন্য দোষ দূর করে এবং দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে।

শজিনা ফুল দুধের সাথে রান্না করে নিয়মিত খেলে কামশক্তির বৃদ্ধি ঘটে। এর চাটনি হজমশক্তি বৃদ্ধি করে।

গেঁটে বাত : শজিনার ফল নিয়মিত রান্না করে খেলে গেঁটে বাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

ক্রিমিনাশক ও টিটেনাস : শজিনার কচি ফল ক্রিমিনাশক, লিভার ও প্লীহাদোষ নিবারক, প্যারালাইসিস ও টিটেনাস রোগে হিতকর।

অবশতা, সায়াটিকা : শজিনার বীজের তেল মালিশ করলে বিভিন্ন বাত বেদনা, অবসতা, সায়াটিকা, বোধহীনতা ও চর্মরোগ দূর হয়।

পাতার রস হৃদরোগ চিকিৎসায় এবং রক্তের প্রবাহ বৃদ্ধিতে ব্যবহার হয়। পোকার কামড়ে এন্টিসেপ্টিক হিসেবে শজিনার রস ব্যবহার করা হয়। ক্ষতস্থান সারার জন্য শজিনা পাতার পেস্ট উপকারী।

শজিনা শরীরের প্রতিরোধক ব্যবস্থা শক্তিশালী করে। শরীর থেকে বিষাক্ত দ্রব্য, ভারী ধাতু অপসারণ এবং শরীরে রেডিয়েশন ও কেমোথেরাপি নিতে সহায়তা করে।

ইন্টেস্টাইন ও প্রোস্টেট সংক্রমণ : শজিনা বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করে।

শ্বাসকষ্ট, মাথা ধরা, মাইগ্রেন, আর্থাইটিস এবং চুলপড়া রোগের চিকিৎসায়ও শজিনা কার্যকর ভূমিকা রাখে।

(ঢাকাটাইমস/১৫ সেপ্টেম্বর/আরজেড/এজেড)