নারীত্ব মেনে পুরুষের পাশাপাশি গন্তব্যে পৌঁছানোই হলো সফলতা

প্রকাশ | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৪:৩২

আতিক খান

নারীবাদের সাথে পোশাকের সম্পর্ক খুবই কম৷ পোশাক নির্ধারিত হয় ধর্ম, পারিবারিক সংস্কৃতি আর সমাজব্যবস্থার ওপর। কক্সবাজার বিচে বিদেশি নারীরা বিকিনি পরে হাঁটলেও খুব বেশি মানুষ বিস্মিত হবে না, অনেকে তাকাবেও না। কিন্তু বাঙালি মুসলিম মেয়ে হলে পরদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ারও সম্ভাবনা থাকবে।

এর সঙ্গে মানুষের চিন্তা-ভাবনা, প্রত্যাশা, ধর্মের প্রভাবসহ আরও অনেক কারণ জড়িত থাকতে পারে। সাধারণত বাংলাদেশের পুরুষরা তাদের নারীদের ঢেকে রাখতে এবং শালীন পোশাকে দেখতে পছন্দ করে। মা, বোন, বউ বা মেয়ে শ্রেণির প্রিয় নারী চরিত্র হলে তো কথাই নেই। এজন্য এরা সাকিব আল হাসানের বউকেও পর্দা করার জন্য উপদেশ দিয়ে আসে।

এই তথাকথিত নেত্রীরা নারী শিক্ষার হার, যৌতুক প্রথা, কর্মক্ষেত্রে নারীদের নিরাপত্তা, কর্মজীবী নারীদের নিরাপদ আবাসন, পারিবারিক নির্যাতন, ধর্ষণ, যৌন হয়রানিসহ অনেক নারী উন্নয়ন সম্পর্কিত ইস্যু নিয়ে সে রকম উচ্চবাচ্য করে না। এদের দুনিয়ার মাথাব্যথা হিজাব, বোরকা, মেয়েদের যৌন স্বাধীনতা, পুরুষদের মতো পোশাক, চলাফেরা আর স্বাধীনচেতা জীবনযাপন ইত্যাদি ইস্যু নিয়ে।

এদের মস্তিষ্কে এটুকু ধরে না যে, কেউ ক্লিভেজ দেখালে, স্লিভলেস বা পিঠখোলা ব্লাউজ পরলে, দুই টান গাঁজা খেলে, দুই পেগ মদ গলাধঃকরণ করলে কিংবা দুই রাত স্লিপ ওভার করলেই তার জ্ঞান-বুদ্ধি বাড়ে না। হ্যাঁ, কিছু প্রাইভেট অফিসে এসবের প্রয়োগ করে দুশ্চরিত্র বসের সাথে ব্যক্তিগত ট্রিপে গিয়ে সাময়িক সুবিধা হয়তো পাওয়া যাবে, এতটুকুই৷

পোশাকের সাথে ক্যারিয়ারের যোগসূত্র থাকলে বাংলাদেশে সংক্ষিপ্ত পোশাকের মেয়েগুলোই একাডেমিক ক্যারিয়ারে শীর্ষে থাকত। আর বোরকা বা হিজাবী মেয়েগুলো ফেল করত। বাস্তব জীবনেও দেখা যায়, শালীন পোশাকে চলাফেরা করা নারীরাই ভালো মা হন, ভালো স্ত্রী হন এবং সন্তানের জন্য অধিক ত্যাগ স্বীকার করেন।

এরা বুঝে না যে, টিপ দুইটা দেয়া মানেই দুইটা একাডেমিক ডিগ্রি না।বয়ফ্রেন্ড ১০টা বদলানো মানেই পিএইচডি ডিগ্রি না। আর সংক্ষিপ্ত পোশাক মানেই নারী হিসেবে কোনো চরিত্রেরই সফলতা না।

এরা সম্ভবত কোনোদিন গুগল করেও দেখেনি যে, হিজাব আর বোরকা পরিধান করেই মুসলিম বিশ্বের অনেক নারী জীবন এবং ক্যারিয়ার দুটো ক্ষেত্রেই সফল হয়েছেন।

একজন উন্মুক্ত শরীরের নারী আর আবৃত শরীরের নারীকে পাশাপাশি যদি দাঁড় করান, অধিকাংশ মুসলিম পুরুষ কার প্রতি আগ্রহ দেখাবে জানেন? কেন আগ্রহ দেখাবে জানেন? এই দুটো প্রশ্নের উত্তর জানলে আর কোনো তর্কই থাকে না।

পুরুষদের মতো আচরণ করাটা নারী হিসেবে কোনো সফলতার মাপকাঠি হওয়া উচিত নয়, নিজের নারীত্ব স্বীকার করে নিয়ে পুরুষের পাশাপাশি হাত ধরে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছানোই হলো সফলতা।

লেখক: মেরিন অফিসার ও লেখক

ঢাকাটাইমস/১৫সেপ্টেম্বর/এসকেএস