অধমের যে একটু বলতেই হয়....

ইফতেখায়রুল ইসলাম
 | প্রকাশিত : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৫:০৩

নশ্বর এই দুনিয়ায় মানুষ অবিনশ্বর নয়! প্রতি ধর্মেই মানুষের এই অবিনশ্বর না থাকার বিষয়ে সুস্পষ্ট বলা আছে। পবিত্র মক্কায় মসজিদ আল হারামে যখন হাজিগণ শহীদ হন তখন একশ্রেণির লোক চরম আনন্দে ভেসে গিয়ে বলতে থাকেন, আপনাদের আল্লাহ তাঁদের বাঁচালো না? ধর্ম পছন্দ করেন না ভালো কথা কিন্তু মানুষের মৃত্যুতে এই নোংরা উল্লাস যারা প্রকাশ করেছিলেন, তাদের প্রতি ধিক্কার জানানোর ভাষাও জানা ছিল না!

একইভাবে নারায়ণগঞ্জের মসজিদের ঘটনায় অনেককেই বলতে দেখেছি, আল্লাহর ঘর আল্লাহ বাঁচালেন না? হে জ্ঞানী ভাইয়েরা ঘটনা ছাড়া মৃত্যু কীভাবে সম্ভব? সবাই কি নিজের বিছানায় শুয়ে মৃত্যুবরণ করতে চান? মৃত্যুর নিয়ম কি আপনারা নিজেরাই বানাবেন? সেটা পারলে নিজেদের তো অবিনশ্বরই বানিয়ে ফেলতেন!

আমি আস্তিকতা, নাস্তিকতা এবং অন্য কোনো ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করে কোনো কথা বলি না! কারও বিশ্বাস আমার পছন্দ না হলে আমি এড়িয়ে যাই এবং একইভাবে বিশ্বাস করি মুসলিম হিসেবে মহান আল্লাহর প্রতি আমার ও আমাদের অনেকের যে বিশ্বাস সেটি নিয়ে কেউ খিস্তি খেউড় করবে না! কিন্তু বিধি বাম, ইসলাম ধর্ম নিয়ে প্যাঁচাতে না পারলে অনেকের পেটের ভাত হজম হয় না! বলি কি, এই ধর্মে আপনার বিশ্বাস নেই তা ঠিক আছে, সেটা নিয়ে আপনার প্যাঁচানোর কি আছে? বিভিন্ন ধর্মের অগভীর চিন্তার ধারক যারা তাদের সাথে তর্কে গিয়ে খুব জাতে উঠা যায় বুঝি?

আপনি সারাজীবন কাল্পনিক দৈত্যের মতো বেঁচে থাকেন। কিন্তু অন্যের ধর্ম ও বিশ্বাস নিয়ে প্যাঁচানো একটু কমিয়ে দেন!

আপনি যা বিশ্বাস করেন সেটিকে প্রামাণ্য ধরে অন্যের ওপর না চাপিয়ে দিয়ে নিজের বিশ্বাসে অনড় থাকুন, আপনাকে কেউ মানা করবে না ভাই। অন্যকে শুধু তাচ্ছিল্য করবেন না দয়া করে! নিজেকে তথাকথিত মুক্ত চিন্তক ও প্রগতিশীল মনে করা এই আপনার জানা উচিত মুক্ত চিন্তা ও প্রগতিশীলতা মানে এই নয় যে, আপনি আপনার জ্ঞান-গরিমা দিয়ে অন্যকে তুচ্ছ করবেন বরং ব্যক্তি মানুষকে অথবা সমষ্টিগত কাউকে তুচ্ছ না করে জ্ঞানের পথে আহ্বানের প্রচেষ্টাকেই সহজ ভাষায় বলা হয় প্রগতিশীলতা! প্রগতিশীলতার নামে ব্লেইম গেইম যিনি খেলেন তাকে দেখে প্রকৃত প্রগতিশীলগণ মিটি মিটি হাসেন! প্রগতিশীলতার নামে অনেকের মাঝেই ইসলাম ধর্মের বিষয়ে বাড়াবাড়ি করে এক ধরনের প্রতিক্রিয়াশীলতাই দেখতে পাই। এমন নয় যে তিনি বা তারা খুব জেনে-বুঝে কাজগুলো করছেন আবার কে জানে হয়তো জেনে-বুঝেই করছেন!

সমাজ, ধর্ম, বর্ণ, গোত্রের নামে ঘৃণা ছড়িয়ে কেউ কেউ নিজেকে চরম মুক্ত চিন্তক বলে দাবি করেন! মজার বিষয় তাদের সেই ধারণাকে যুক্তির নিরিখে কেউ কুঠারাঘাত করলে তারা তখন যুক্তিহীন বাকযুদ্ধে লিপ্ত হন! তখন আবার যুক্তি, জ্ঞান-গরিমার কোনো পাত্তা নেই! আহা! আমাদের মুক্ত চিন্তার ধারকের কি অসাধারণ রূপ বদল!

মজার বিষয় হলো, যারা এই তাচ্ছিল্য করেন তারা প্রায়ই ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে জানেন কম, এ রকম লোকজনের কিছু মন্তব্যকে ঘিরে প্রচুর মজা নেন; এটা যে তাদের নিজেদের সুপিরিয়র কমপ্লিকেসির ফলাফল সেটা অবচেতন মনেও স্মরণে আনেন না তারা! আপনি বড় হতে হলে হন ভাই, আপনাকে কেউ না করেনি! কিন্তু অন্যকে ছোট করে বড় হওয়ার যে মানসিকতা সেটি থেকে আপনিও তো দূরে নন মহাশয়! তো এই যে ধর্ম-কর্ম মানা লোকজন নিয়ে আপনার যে অ্যালার্জি, তাতে আপনার বিচক্ষণতা কোথায় গেল হে মানব? ধরুন যারা না জেনেই নিজ বিশ্বাসের ওপর ভর করেই চলছেন তাদেরকে আহত করে আপনার লাভ কোথায়? নিজেকে প্রগতিশীল বুঝাতে হলে ইসলাম ধর্মকে একটু খাটো করে দেখাতেই হয় বুঝি?

প্রকৃত প্রগতিশীল এভাবে ভাবেন না, তাদের আপনাদের মতো ঠুনকো তাচ্ছিল্যের সহায়তা দরকার পড়ে না! যারা প্রকৃত মুক্ত চিন্তক ও প্রগতিশীলতার প্রতীক, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং প্রকৃত প্রগতিশীলগণ নিজেরা, নব্য প্রগতিশীলদের প্রকৃত প্রগতিশীলতার বিষয়ে ধারণা দেবেন এটাও প্রত্যাশা!

নিজের বোধ-বিশ্বাস ঠিক রেখে অন্যের বিশ্বাসে আঘাত করার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসুন, তাতে উভয় পাশেই শান্তি! আর যারা ইসলাম ধর্মকে মানেন তারা দয়া করে ইসলামকে একটু জানার চেষ্টা করে তারপর কথা বলেন (অত প্রাজ্ঞ না হলেও নিজের ধর্ম নিয়ে একটু হলেও জানার চেষ্টা আমাদের অনেকেরই আছে)।

আমাদের দেশে আসলে আমরা ধর্ম মানি অনেক, কিন্তু জানি অনেক অনেক কম। সেটা সকল ধর্মের মানুষের ক্ষেত্রেই সত্যি! একজন মুসলিম ও ইসলাম ধর্মের অনুসারী হিসেবে নিজ ধর্মের প্রকৃত এসেন্স বুকে ধারণ করেই আমাদের এগিয়ে চলা উচিত।

লেখক: অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার, পল্লবী জোন গোয়েন্দা বিভাগ (ডিএমপি)

ঢাকাটাইমস/১৫সেপ্টেম্বর/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :