সরকারি চাকরিজীবী দুই ছেলের কাণ্ড

অসুস্থ বাবা-মার সম্পত্তি লিখে নিয়ে বাড়ি ছাড়ার চাপ

প্রকাশ | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২২:৫৯

ভোলা প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

অসুস্থ বাবা-মাকে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নিয়ে প্রতারণা করে সোয়া দুই একর সম্পত্তি লিখে নিয়েছেন সরকারি চাকরি করা দুই ছেলে। এখন বাবা-মাসহ অন্য ভাই-বোনদের বাড়ি ছাড়তে চাপ দিচ্ছেন তারা। গত ৯ জুলাই ভোলার চরসামাইয়া ইউনিয়নে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে এই প্রতারণামূলক রেজিস্ট্রির ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী মো. হোসেন মেম্বার লিখিত অভিযোগে এসব কথা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে তিনি মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

মো. হোসেন জানান, তিনি ও তার স্ত্রী দীর্ঘদিন যাবত অসুস্থতায় ভুগছেন। তার স্ত্রী দীর্ঘ চার বছর প্যারালাইসিস রোগী। নিজের ও স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য নিজের ভোগদখলীয় ২০ শতাংশ (নাল) জমি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। বিষয়টি জানতে পেরে তার দুই ছেলে ভোলার জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাড়িচালক মো. নুরনবী এবং মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের অফিস সহায়ক মো. সোহাগ প্রতারণার আশ্রয় নেয়। বাবার কাছ থেকে জমি কেনার প্রস্তাব দেন দুই ছেলে। সেই অনুযায়ী নুরনবী ও সোহাগের সঙ্গে ২০ শতাংশ জমি চার লাখ টাকায় বিক্রির মূল্য নির্ধারণ করেন বাবা মো. হোসেন।

ওই জমির দলিল নেয়ার জন্য নুরনবী ও সোহাগ অসুস্থ বাবা-মাকে ভোলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নেন। সেখানে তারা অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে ২০ শতাংশ জমির পরিবর্তে বসতবাড়ি, ঘর, বাগান, নাল ও পুকুরসহ প্রায় সোয়া দুই একর সম্পত্তি লিখে নেয়। শেষে ২০ হাজার টাকা দিয়ে বাবা-মাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।

বাড়িতে ফিরে মো. হোসেন জমি বিক্রির চার লাখ টাকার মধ্যে বাকি টাকা চাইলে ছেলে নুরনবী ও সোহাগ নানা অযুহাতে সময় ক্ষেপণ করেন। কিছুদিন পর সোহাগ ও নুরনবীর আচরণ সন্দেহজনক হলে মো. হোসেন খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, তার দুই ছেলে ২০ শতাংশ জমির পরিবর্তে বসতবাড়ি, ঘর, বাগান, নাল ও পুকুরসহ সর্বমোট ২ দশমিক ২৫ একর জমি প্রতারণা করে রেজিস্ট্রি করে লিখে নিয়েছে।

তাদের বৃদ্ধ বয়সে বাড়িতে থাকার একটু জমিও রাখেনি এই দুই ছেলে। প্রতারণার বিষয়টি জানাজানি হলে প্রতারক দুজন তাদের বাবা-মা ও বড়ভাই মো. ইয়াছিনকেও বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার জন্য হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছেন।

বড় এক ছেলে ও পাঁচ মেয়েকে বঞ্চিত করে দুই ছেলের এই প্রতারণা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেননা অসুস্থ বৃদ্ধ মো. হোসেন।  

কান্নাজড়িত কন্ঠে বৃদ্ধ হোসেন বলেন, আমার অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে নুরনবী ও সোহাগ প্রতারণা করে ২০ শতাংশ জমির পরিবতর্তে সোয়া দুই একর জমি দলিল রেজিস্ট্রি করে নিয়েছে। আমার অন্য সন্তানদেরকে বঞ্চিত করে যাতে সোহাগ ও নুরনবী জমি ভোগদখল করতে না পারে সেজন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মো. নুরনবী বলেন, আমরা দুই ভাই ২৬ বছর যাবত বাড়িতে যাই না। এই সুযোগে আমাদের বড়ভাই বাবার সব সম্পত্তি লুটপাট করে খায়। ভাইর অত্যাচারে আমার বাবা আমাদের কাছে জমি বিক্রি করতে আসেন। আমরা প্রথমে রাজি না হলে তিনি (বাবা) অন্যের কাছে জমি বিক্রি করে দিবেন বলে জানান। তাই আমরা বাবার সঙ্গে কথা বলে জমি কেনার জন্য রাজি হই। বাবা নিজেই আমাদেরকে এই জমির দলিল দেন। এখন তিনি বড় ভাইয়ের ইন্দনে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছেন। তবে কতো টাকার বিনিময় জমি কিনেছেন এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি নুরনবী।

আরেকজন অভিযুক্ত মো. সোহাগকে ফোন করে পাওয়া যায়নি।

(ঢাকাটাইমস/১৫সেপ্টেম্বর/কেএম)