বরিশালে লঞ্চের কেবিনে নারী খুন: অভিযুক্ত গ্রেপ্তার

প্রকাশ | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২০:২৭

বরিশাল ব্যুরো, বরিশাল

বরিশালে লঞ্চের কেবিনে স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন স্বামী। বুধবার বরিশাল মহানগর বিচারিক হাকিম আনিছুর রহমানের কাছে জবানবন্দি দেয় সে।

এর আগে মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এছাড়াও হত্যায় ব্যবহৃত নারীর ব্যবহৃত ওড়না, মোবাইল ফোন, লঞ্চে হত্যাকারীর পরিহিত শাটসহ বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছে পিবিআইর পুলিশ সুপার হুমায়ন কবির।

গ্রেপ্তার হত্যাকারী হলো- মনিরুজ্জামান চৌধুরী (৩৪)। তিনি গাজীপুরের কাপাসিয়া এলাকার আব্দুস শহীদের ছেলে। পেশায় শেয়ারিং রাইড চালক মনিরুজ্জামান মীরপুর-১ এর দারুস সালাম প্রিন্সিপাল আবুল কালাম রোডের সরকারি কোয়ার্টার এলাকায় বাস করতেন।

নগরীর রুপাতলীর উকিল বাড়ি সড়কে পিবিআইর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির জানান, গত ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা এমভি পারাবত-১১ লঞ্চ বরিশাল নৌ-বন্দরে ভিড়ে। পরে ওই লঞ্চের কেবিন থেকে অজ্ঞাত নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। নারীর সাথে থাকা ওড়না ও ব্যাগসহ অন্যান্য আলামত নিয়ে যাওয়ায় তাৎক্ষণিক পরিচয় উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। আঙ্গুলের ছাপ অনুযায়ী পরিচয় উদঘাটন করে তার স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করা হয়। মঙ্গলবার বিকালে হাসপাতাল মর্গের হিমঘরে শনাক্ত করে তার বাবা এবং ভাই। তাদের শনাক্ত অনুযায়ী নারী হলো- ঢাকার পল্লবী-২ নম্বর এলাকায় ভাড়াটিয়া  ও ফরিদপুরের ভাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা আব্দুল লতিফ মিয়ার কন্যা জান্নাতুল ফেরদৌস লাবনী (২৯)। দুই সন্তানের জননী লাবনীর স্বামী একজন ইলেক্ট্রিশিয়ান। বাবা ও মায়ের সাথে ঢাকার পল্লবী-২ নম্বর এলাকায় থাকত সে।

পুলিশ সুপার আরো জানান, লঞ্চ ঘাটে ভেড়ার পর কেবিনের দরজা খোলা রেখে সকল মালামাল নিয়ে হত্যাকারী কৌশলে লঞ্চ থেকে নেমে পালিয়ে ঢাকা যায়। সুরতহাল রিপোর্ট তৈরিসহ ও অন্যান্য আলামতেরভিত্তিতে বিষয়টি হত্যাকাণ্ড বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়ে তদন্ত শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট। পিবিআই তদন্তের প্রথমভাগেই নারীর ও হত্যাকারীর পরিচয় নিশ্চিত হয়। এক পর্যায়ে শনাক্ত হওয়া হত্যাকারীকে তথ্য প্রযুক্তির ও ঢাকা মেট্রো (উত্তর) পিবিআই সদস্যদের সহায়তায় মিরপুর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার হত্যাকারী মনিরুজ্জামান হত্যার কথা স্বীকার করে জানিয়েছে, তারা সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী। শেয়ারিং রাইড চালক মনিরুজ্জামানের এটি তৃতীয় বিয়ে। দুই সন্তানের জননী লাবনীর এটি দ্বিতীয় বিয়ে। তারা গোপনে বিয়ে বেড়াতে বের হয়েছে। লঞ্চের কেবিনে তাদের ঝগড়া হয়। ঝগড়ার এক পর্যায়ে ওড়না দিয়ে পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে লাবনীকে হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছে মনিরুজ্জামান। লঞ্চ পৌঁছুলে মনিরুজ্জামান কৌশলে পালিয়ে বাসযোগে ফিরে যায়।

পুলিশ সুপার বলেন, তারা বিয়ে করেছে কিনা ও হত্যার মূলরহস্য উদঘাটনে আরো সময় লাগবে। হত্যার ঘটনায় কোতয়ালি মডেল থানায় সদর নৌ-থানার এসআই অলক চৌধুরী বাদী হয়ে মামলা করেছে। মামলার আসামি হিসেবে মনিরুজ্জামানকে থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর নৌ-থানার ওসি আব্দুলাহ আল মামুন জানান, হত্যার কথা স্বীকার করে বরিশাল মহানগর বিচারিক হাকিমের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। জবানবন্দিতে জানিয়েছে- তারা গোপনে বিয়ে করেছে। তাই বেড়াতে লঞ্চে বরিশালের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। লঞ্চ থেকে নেমে দিবা সার্ভিসের গ্রীনলাইনের তাদের ঢাকা ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে লঞ্চে আসেনি বলে জানিয়েছে। তবে এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। হত্যার রহস্য উদঘাটনসহ ব্যাপক তদন্তের স্বার্থে রিমান্ডের আবেদনও করা হতে পারে বলে জানান তিনি।

(ঢাকাটাইমস/১৬সেপ্টেম্বর/এলএ)