বাংলাদেশের টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও নারী উদ্যোক্তা

অনুসা চৌধুরী
 | প্রকাশিত : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৪:৫০

বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এনডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তোরণ ঘটেছে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন নীতি সংক্রান্ত কমিটি (সিডিপি) গত ১৫ মার্চ ২০১৮ এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়। এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের জন্য মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ সূচক এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক- এই তিন সূচকের যেকোনো দু’টি অর্জনের শর্ত থাকলেও বাংলাদেশ তিনটি সূচকের মানদণ্ডেই উন্নীত হয়েছে।

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে আজকের এই উত্তরণ যেখানে রয়েছে এক বন্ধুর পথ পাড়ি দেওয়ার ইতিহাস। সরকারের রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের একটি বড় অর্জন। এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাহসী এবং অগ্রগতিশীল উন্নয়ন কৌশল গ্রহণের ফলে, যা সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কাঠামোগত রূপান্তর ও উল্লেখযোগ্য সামাজিক অগ্রগতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে দ্রুত উন্নয়নের পথে এসেছে। বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ, ২০৪১ সালের মধ্যে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের রিপোর্ট অনুসারে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে দৃঢ় প্রত্যয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের রিপোর্ট অনুসারে ২০২০ সালে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে পৌঁছাবে। এর মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে দ্রুত প্রবৃদ্ধির দেশ হবে বাংলাদেশ। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিশু মৃত্যুরোধ ও গড় আয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জনের প্রশংসা করা হয়েছে এই রিপোর্টে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের পরিবারে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ ও ভূমিকার প্রশংসা করেছেন অর্থনীতিবিদগণ। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনসহ অনেক অর্থনীতিবিদই বাংলাদেশের এই অর্জনের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বেশি। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এই উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে এদেশের নারীরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। নারীদের অর্থনীতিতে আরও ব্যাপকহারে সম্পৃক্তকরণের জন্য সরকার নানামুখী কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকতে ও বেকার সমস্যা নিরসনে আত্মকর্মসংস্থানের কোনো বিকল্প নেই। সরকার বেকার যুব সম্প্রদায়ের আত্মকর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা হিসাবে গড়ে তুলতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, কর্মমুখী শিক্ষা ও তরুণদের সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করছে। বলা হয়ে থাকে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা হলো অর্থনীতির মেরুদণ্ড। তারা দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রেখে চলেছে। ইতিবাচক সামাজিক পরিবর্তনে নারী উদ্যোক্তাদের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। বেশিরভাগ নারী উদ্যোক্তাই উদ্ভাবক ও জীবনের শিক্ষা থেকে সকল প্রতিকূলতা দূরীকরণে সংকল্পবদ্ধ। তাদের সাফল্যের পরিধি গৃহস্থালী সঞ্চয় বৃদ্ধি, শিশু স্বাস্থ্য ও শিক্ষার বিনিয়োগ থেকে শুরু করে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং জিডিপি উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছে।

আমাদের দেশে প্রতিবছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে বের হচ্ছে। দেশে চাকরির বাজার অত্যন্ত সীমিত তথা দেশের বেকারত্বের উচ্চহার হওয়ায় চাকরি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে তারা হতাশ হচ্ছে। এসব চাকরি প্রত্যাশীদের একটা বড় অংশ নারী যাদের মধ্যে রয়েছে উদ্ভাবনী শক্তি, আত্মপ্রত্যয় ও জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অদ্যম বাসনা। তাই উদ্যোক্তা হিসেবে এদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে দেশের বেকার সমস্যা সমাধান যেমন হবে তেমনি এসব নারীরা নিজের, পরিবারের, সমাজের তথা দেশের জন্য সম্পদ হিসেবে পরিগণিত হবে এবং দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

উদ্যোক্তার ধারণাটি প্রথমে এক্ষেত্রে স্পষ্টকরণ জরুরি। উদ্যোক্তা হচ্ছে একটি সমষ্টিগত ধারণা যা দ্বারা জ্ঞান, দক্ষতা এবং ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে একটি লাভজনক ব্যবসা পরিচালনা করা। উদ্যোক্তা বড় বড় ঝুঁকি মোকাবেলা করে সেই সাথে বিরাট সম্ভাবনা, চ্যালেঞ্জ, নতুন ও পুরাতন ধারণা থেকে পরিকল্পনা তৈরি করে থাকে যা আর্থিক প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক উন্নয়ন ঘটায়। যেকোন দেশের বা অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি অর্জন, প্রান্তিক ক্ষমতায়ন, ব্যক্তি এবং সমাজ উন্নয়নে উদ্যোক্তা ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। সফল উদ্যোক্তাতে উন্নীত করার জন্য স্থানিক সাংগঠনিক কাঠামো, নিয়ন্ত্রক সংস্থা, আর্থিক এবং পেশাদারি অবকাঠামো প্রয়োজন। একটি উদ্যোক্তা বান্ধব পরিবেশ কিছু সমমনা ব্যবসায়ী থাকতে পারে, যারা অভিন্ন লক্ষ্যে কাজ করবে।

ব্যবসায়িক উন্নয়নে সমন্বিতভাবে অর্থনীতি, আইনি সহায়তা, বাজার কৌশল প্রণয়ন, তথ্য ব্যবস্থাপনা, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা, উৎপাদন এবং বিপণন কাজে একে অপরের সহায়তা করবে।

একজন উদ্যোক্তা পরিবর্তনের এজেন্ট। তিনি এমন একজন ব্যক্তি যিনি নতুন ধারণা তৈরি বা আবিষ্কার করেন অথবা অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক বিবেচনায় একটি নতুন সংগঠন তৈরি করে। একজন উদ্যোক্তার মূল বৈশিষ্ট্য উদ্যোগ গ্রহণ, পণ্যের মান তৈরি, নতুন সম্ভাবনা উদ্ভাবন, সম্পদের সীমাবদ্ধতা এবং সম্ভাব্য ঝুঁকি অনুমান করা।

একজন সফল উদ্যোক্তার ব্যক্তিগত গুণাবলী

কৌতুহল এবং সৃজনশীলতা

আত্মবিশ্বাস

নেতৃত্ব

ঝুঁকি গ্রহণের ইচ্ছা ও সাহস

কার্যকরী যোগাযোগ দক্ষতা

সহযোগিতা এবং সহযোগিতায় উৎসাহ

সম্ভাব্যতা চিহ্নিতকরণ

উদ্ভাবনী মানসিকতা

প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে সংকল্পবদ্ধ

এ ধরণের গুণাবলী একজন উদ্যোক্তাকে তার কর্মজীবনে চলার সময় তার পেশার যেকোনো পর্যায়ে সহায়তা করতে পারে। আমাদের দেশের নারী উদ্যোক্তারা প্রাকৃতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার মাধ্যমে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করছে যা প্রশংসার দাবিদার। প্রাথমিকভাবে নারী উদ্যোক্তাদের জেন্ডার সম্পর্কিত সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় যা চিহ্নিত করা এবং মোকাবেলা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

সাম্প্রতিককালে বিশ্বব্যাপী একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, উন্নয়নশীল দেশে নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে অধিকাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নারী উদ্যোক্তাদের উপর জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের প্রতিবেদনে দেখা যায় যে, বিশ্বব্যাপী ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের এক তৃতীয়াংশ নারী উদ্যোক্তাদের দ্বারা পরিচালিত হয়। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বেশিরভাগ নারী উদ্যোক্তাই ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের সাথে জড়িত।

দারিদ্রতা হ্রাস এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের মূল চালিকাশক্তি হলো নারীর ক্ষমতায়নের প্রসার। গবেষণায় দেখা গেছে যে, পুরুষদের প্রতি ডলারে ৩০ থেকে ৪০ সেন্টের বিপরীতে নারীরা প্রতি ডলারে ৯০ সেন্ট বিনিয়োগ করে তাদের পরিবারের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মত গঠনমূলক কর্মকাণ্ডে। বিশ্বব্যাপী কর্মসংস্থান এবং উদ্যোক্তা কার্যক্রম অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং উন্নয়নের প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে স্বীকৃত। অতএব, নারীদের ক্ষমতায়ন করা খুবই প্রয়োজন। কেননা দেশের জনসংখ্যার অর্ধেকই হলো নারী, তাই তাদেরকে পেশাদার কর্মজীবনের বিকল্প হিসেবে উদ্যোক্তা হিসেবে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সৃজনশীলভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিকভাবে ক্ষমতায়নে নারী উদ্যোক্তাদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা উদ্যোক্তাদের বহুমুখী প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে।

উদ্যোক্তা নারীদেরকে সমাজে তাদের অবদান রাখতে সহায়তা করে। এটি তাদের সামাজিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্রিয়ভাবে সাহায্য করে সেই সাথে তাদের ব্যবসা বৃদ্ধির পাশাপাশি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ক্ষমতা প্রদান করে। গবেষণায় দেখা যায় যে নারীর জন্য অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ক্ষমতায়নের অন্যান্য স্তরের পথ তৈরি করে। যে সমাজে মহিলারা অবহেলিত সে সব সমাজে নারীদের নতুন কিছু করার বা নতুন ব্যবসা শুরু করার অসাধারণ সম্ভাবনার সূত্র হতে পারে। উদ্যোক্তা নারীকে সমাজে তার উদ্ভাবনীমূলক শক্তি এবং অঙ্গিকারকে উৎসাহ দিতে শুরু করে এবং অবশেষে তারা নিজের পরিবার, সমাজ ও সম্প্রদায়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশগ্রহণ করতে পারে। উদ্যোক্তা নারীকে সক্রিয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম করে তোলে। অনেক ক্ষেত্রে নারীরা তাদের নিজস্ব ব্যবসা শুরু করার পেছনের প্রেরণাগুলি পুরুষদের চেয়ে ভিন্নতর হয়।

অর্গানাইজেশন ফর ইকোনোমিক কর্পোরেশন এণ্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) এর নারী উদ্যোক্তা বিষয়ক প্রতিবেদন অনুযায়ী ‘নারীরা পুরুষের তুলনায় পারিবারিক ও সামাজিক ভারসাম্য বজায় রেখে তাদের উদ্যোগ শুরু করে। এই কারণে নারী তার কাজ ও পরিবার এর মধ্যে সমন্বয় করে নিজেকে স্বনির্ভর করে গড়ে তোলে।’

যেকোনো আর্থ-সামাজিক পটভূমি ও ভৌগলিক অবস্থানের নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যাপক বিনিয়োগ প্রক্রিয়া একটি বিরাট আবিষ্কার। বর্তমান তথ্য ও যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যাপক বিনিয়োগ প্রক্রিয়া সুবিধাজনক এবং জনপ্রিয়। বিভিন্ন অনলাইন ব্যাপক বিনিয়োগ (ক্রাউড ফান্ডিং) প্লাটফর্মের মাধ্যমে উদ্যোক্তারা বিশ্বব্যাপী তাদের উদ্যোগ সম্পর্কিত যোগাযোগ করতে পারে তেমনি তাদের উদ্যোগের ধারণাগুলি বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য আর্থিক অংশীদার বা বিনিয়োগকারী খুঁজে নিতে পারে। প্রচলিত অর্থসংস্থান যেমন: নিজস্ব তহবিল, আত্মীয়ের নিকট থেকে ঋণ গ্রহণ বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহণের চাইতে ব্যাপক বিনিয়োগ প্লাটফর্মের মাধ্যমে খুব দ্রুত একজন উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। যেহেতু নারীরা সাধারণত মূলধন সুরক্ষার ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থার মুখোমুখি হয় তাই ক্রাউড ফান্ডিং তাদেরকে সফল করতে সহায়তা করছে। বড় বড় আন্তর্জাতিক ক্রাউড ফান্ডিং সাইটগুলো পুরুষ উদ্যোক্তার চাইতে নারী উদ্যোক্তারা তহবিল সংগ্রহের ক্ষেত্রে অধিক সফল।

নারীদের উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে তাদের মধ্যে নিম্নলিখিত গুণাবলী বিকশিত করার সুযোগ সৃষ্টি হয়

নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি পায়

দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়

নারীরা তাদের নিজ নিজ সম্প্রদায়, পরিবারকে সহায়তা করতে পারে

পরিবারের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মতো গঠনমূলক কর্মকাণ্ডে অবদান রাখতে পারেন

তাদের উদ্ভাবনী শক্তি বিকশিত করতে পারে

অর্থনৈতিক স্বাধীনতার পথ প্রশস্ত হয়

নারীদের নেতৃত্বদানের গুণাবলী বিকশিত হয়

সমাজে নিজেদের স্বনির্ভর করে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন

দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারেন

নারী উদ্যোক্তাদের চ্যালেঞ্জসমূহ

সামাজিক প্রতিবন্ধকতা ও পারিবারিক প্রতিবন্ধকতা নারীদের উদ্যোক্তা হিসাবে নিজেদের আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বড় বাঁধা।

শিক্ষার সুযোগ নারীদেরকে তার পেশাগত জীবন উন্নয়ন করতে এবং উদ্যোক্তা হিসাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। আমাদের দেশে কর্মমুখী শিক্ষা গ্রহণে নারীরা পুরুষের তুলনায় অনেক পিছিয়ে আছে।

আমাদের প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থায় নারীদের উদ্যোক্তা কার্যক্রম বা আর্থিক বিষয়গুলোকে খুব নগণ্যভাবে উপস্থাপন করা হয়। ঐতিহ্যগতভাবে মনে করা হয় যে, নারীর দ্বারা উদ্যোক্তা বা আর্থিক কার্যক্রম সম্ভব নয়।

সরকারের গৃহীত অনেক নীতিমালা এবং প্রারম্ভিক তহবিল বরাদ্দ জেন্ডার সংবেদনশীল নয়। তাই নারী উদ্যোক্তারা তাদের পুরুষ সহকর্মীকে সাথে নিয়ে উচ্চতর আর্থিক সংস্থাগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। এই সুবিধা পেতে নারী উদ্যোক্তাকে পুরুষের তুলনায় বেশি পরিশ্রম করতে হয়।

নীতি নির্ধারক ও বাস্তবায়নকারী গুণগত মান নিশ্চিতকরণের জন্য দায়বদ্ধতার অভাব।

অনুকূল নীতিমালা প্রণয়ন এবং নিয়ন্ত্রণমূলক পরিবেশের অভাব।

নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসায় মালিকানা রেজিস্ট্রেশন এবং করের জন্য নিবন্ধন প্রক্রিয়া জটিলতা।

বিভিন্ন নতুন ও অপ্রচলিত খাতে নারী উদ্যোক্তাদের আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও যথাযথ প্রশিক্ষণ ও কারিগরি জ্ঞানের অভাব।

বিশ্বব্যাপী নারী উদ্যোক্তা, ক্ষমতায়ন এবং আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে পুঁজি বিনিয়োগ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নারীরা অর্থ ও ঋণ প্রাপ্তিতে আইনি বাঁধার সম্মুখীন হয়। যেমন- আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আগ্রহী ঋণগ্রহীতার নিকট থেকে অন্যান্য সম্পদের প্রমাণপত্র বন্ধকী দাবি করে যা নারী উদ্যোক্তাদের পক্ষে অনেক ক্ষেত্রে প্রদাণ করা সম্ভব হয় না, যা তাদের ঋণ প্রাপ্তিতে একটি বড় বাঁধা।

নতুন নারী উদ্যোক্তাদের যথাযথ সরকারি সহায়তা ও বিশেষ প্রণোদনার অভাব ও এ সংক্রান্ত জটিলতা।

নারী উদ্যোক্তাদের উন্নয়ন নীতিমালার কার্যকারিতা নিশ্চিতকরণের জন্য প্রস্তাবিত নীতিমালার বিভিন্ন স্তরের সমন্বয় ও কৌশলগত উন্নয়ন অগ্রগতির মধ্যে যথোপযুক্ত পর্যালোচনার অভাব।

নারী উদ্যোক্তাদের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে করণীয়

সামাজিক ও পারিবারিক প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি।

পাঠ্যক্রম নীতিমালা ও কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা সম্প্রসারণের মাধ্যমে নারীদের শিক্ষিত করে তোলা যার মাধ্যমে পরবর্তী জীবনে তারা আত্মকর্মসংস্থানে উদ্যোগী হতে পারে।

নারীরা যাতে ঘরে বসেই আয় উপার্জনের মাধ্যমে স্বনির্ভরতা অর্জন করতে পারে এজন্য নারীদের আইসিটি বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান ও নারী উদ্যোক্তাদের তাদের উৎপাদিত পণ্য ও সেবা অনলাইন প্লাটফর্মে কেনাবেচার সুযোগ সৃষ্টি করা।

নারী উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণ ও অর্থ প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণের জন্য বর্তমানে প্রচলিত নীতিমালার ধারাসমূহ আরও সহজীকরণ ও জেন্ডার সহিষ্ণু করে তোলা।

ব্যবসার জন্য একটি অনুকূল ব্যবসা আইন ও নীতিমালা তৈরি।

সরকারের গৃহীত নারী উন্নয়ন নীতিমালা বাস্তবায়নে আমলাতন্ত্রিক জটিলতা নিরসন করা। নিয়ন্ত্রক সীমাবদ্ধতা এড়ানোর জন্য প্রশাসনিক জটিলতা কমানো।

নারী উদ্যোক্তাদের জন্য জাতীয় উদ্যোক্তা নীতি ও পরিকল্পনা পদ্ধতিকে সংঘবদ্ধ করা প্রয়োজন।

নারী-পুরুষ উভয় উদ্যোক্তাদের জন্য অর্থের সমান সুযোগ নিশ্চিত করা। এক্ষেত্রে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য কার্যকর নীতিমালা প্রণয়ন করার জন্য নীতি নির্ধারকদের জাতীয় উদ্যোক্তা উন্নয়ন কৌশল বিশ্লেষণ করতে হবে এবং সেই সাথে নারীর অবস্থান, আইসিটি, অবকাঠামোর উন্নয়ন ও বাজার উদারীকরণ করা।

নারী এবং পুরুষ উভয়ের জন্য আর্থিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ, মূল্যায়ন এবং পরামর্শ সেবাদানের ব্যবস্থা করা।

উদ্যোক্তা উন্নয়ন কর্মসূচি নিরীক্ষণ ও মূল্যায়ন করতে হবে। নীতি নির্ধারক এবং বাস্তবায়নকারী গুণগত মান নিশ্চিত করার জন্য দায়বদ্ধ হতে হবে। বিশেষত একটি উদ্যোক্তা কর্মসূচির কর্মক্ষমতা পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের ক্ষেত্রে কিছু সাধারণ সূচক অন্তর্ভূক্ত করা উচিত; যেমন- স্টার্টআপের মোট সংখ্যা এবং অর্জনের হার কত। অর্থনৈতিক সূচক যেমন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মোট মূল্য সংযোজন পরিমাপ, দারিদ্র হ্রাস সম্পর্কিত সামাজিক কারণ এবং নারীর ক্ষমতায়ন অন্তর্ভূক্ত করা উচিত।

ইসক্যাপ এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অনেক দেশে নারী উদ্যোক্তা নিয়ে গবেষণা করে একটি জেন্ডার বান্ধব ন্যায়সঙ্গত, ব্যবসা নীতি ও নিয়ন্ত্রণ কাঠামো নিশ্চিত করার জন্য নিম্নলিখিত সুপারিশ করেছে।

সরকারি আর্থিক কর্মসূচিগুলোতে সমান সুযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জেন্ডার বান্ধব বাজেট তৈরি, লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ এবং সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরি।

জেন্ডার বান্ধব বাজেট পরিকল্পনা অনুযায়ী নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আর্থিক সহায়তা বিষয়ক প্রকল্প চালু এবং সেই প্রকল্পে যেন নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয় সেজন্য মূল্যায়ন সমন্বয়করণ।

ব্যবসা উন্নয়নের জন্য পুনঃবিনিয়োগের অর্থ নিশ্চিত করা এবং সেই সাথে কাজের মূলধন, আধুনিকায়ন, উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিতকরণ।

‘ওয়ান স্টপ’ ঋণ কেন্দ্র স্থাপন করুন যেখান থেকে ঋণ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য ও সহায়তা প্রদান করা।

নারী ঋণ আবেদনকারীদের জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমঅধিকার এবং অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিতকরণ।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সেবাসমূহ বিভিন্ন প্রচার মাধ্যম যেমন: পোস্ট অফিস, রেডিও, অনলাইন, পোস্টাল এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে নারীদেরকে সক্ষম করে গড়ে তোলা।

যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রদান করে সে সব প্রতিষ্ঠানকে স্বাভাবিকের চেয়ে কম কর পরিশোধের সুযোগ প্রদান।

নারী উদ্যোক্তারা যাতে স্বাধীনভাবে সহজে ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রিতা হ্রাসকরণ।

ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে অলংকার বা অন্যান্য সম্পদ জামানত রাখার পরিবর্তে জামানত বিহীন ঋণ প্রদানের জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে উৎসাহিত করা।

নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিতকরণের জন্য সরকারের গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিল্পনীতি ২০১০ এ প্রদত্ত কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সংজ্ঞার আলোকে বাংলাদেশের সকল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনুসরণের জন্য কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোগের সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার ভিত্তিতে এসএমই সেক্টরের আওতাভুক্ত প্রতিষ্ঠান নিরুপন সহজতর হয়েছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে ক্ষুদ্র ও মাঝারি এন্টারপ্রাইজগুলোর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা অনস্বীকার্য। এ খাতটি শ্রমঘন এবং উৎপাদন সময়কাল স্বল্প হওয়ায় জাতীয় আয় বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে দ্রুত অবদান রাখতে সক্ষম। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ (এসডিজি) বিশেষ করে চরম দারিদ্র ও ক্ষুধা নির্মূল করা এবং নারী-পুরুষের সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নে এ খাত ব্যাপক ভূমিকা রাখতে সক্ষম। এশিয়ার বেশ কিছু সমৃদ্ধিশালী দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এসএমই খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোও এসএমই এর ওপর ব্যাপক গুরুত্বারোপ করছে। তাদের দৃষ্টিতে এসএমই হচ্ছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, আয় বৈষম্য কমিয়ে আনা, দারিদ্র্য বিমোচন প্রভৃতি লক্ষ্য অর্জনের হাতিয়ার হিসাবে তারা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়নকে বেছে নিয়েছে। বর্তমান সরকারও এসএমই খাতের উন্নয়নে শিল্পায়নের চালিকাশক্তি হিসাবে গ্রহণ করে এ খাতকে অগ্রাধিকার খাত হিসাবে চিহ্নিত করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অর্থায়ন সংক্রান্ত নীতিমালা, দিক-নির্দেশনা অনুসরণ করে নিজস্ব অর্থায়নে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ব্যাংক এসএমই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ২০০৯ সাল থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকগুলো স্বতন্ত্র এসএমই ডিভিশন প্রতিষ্ঠা করেছে। এসএমই কার্যক্রমের সাথে পারিবারিক আবহে পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে পরিচালিত কুটির শিল্পকে এসএমই কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসে। বাংলাদেশ ব্যাংক সিএমএসই কার্যক্রম বাস্তবায়নে দিক নির্দেশনা প্রদান করে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সিএসএমএমই নীতিমালার মাধ্যমে বড় বড় ঋণের তুলনায় অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের ঋণ বিতরণে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছে। এসএমই ঋণ যেহেতু অপেক্ষাকৃত ছোট উদ্যোক্তাদের দেয়া হয়, এজন্য উক্ত ঋণ খেলাপি হওয়ার সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে কম থাকে। এক্ষেত্রে নারী ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের এসএমই ঋণ পাওয়ার মাধ্যমে তাদের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার শিল্পনীতি ২০১০ অনুযায়ী যদি কোনো নারী ব্যক্তিমালিকানাধীন বা প্রোপ্রাইটরি অংশীদারী প্রতিষ্ঠান বা জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে নিবন্ধিত প্রাইভেট কোম্পানির পরিচালক বা শেয়ার হোল্ডারগণের মধ্যে অনূন্য ৫১ শতাংশ অংশের মালিক হন তাহলে তিনি নারী শিল্পোদ্যোক্তা হিসাবে পরিগণিত হবেন। বাংলাদেশের জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী। দেশের অধিকাংশ নারীই এখনো অর্থনৈতিকভাবে পুরুষদের উপর নির্ভরশীল। দেশের এই বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর পরনির্ভরশীলতা অর্থনীতির জন্য একটা বড় বোঝা। যোগ্যতা অনুযায়ী নারীদের কর্মসংস্থান তথা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলা অত্যন্ত জরুরি। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় হচ্ছে আত্মকর্মসংস্থান তথা স্বনির্ভরতা। দেশের শিক্ষিত বেকার, যুব সমাজকে উদ্বুদ্ধকরণ, প্রশিক্ষণ ও অর্থায়নের মাধ্যমে উদ্যোক্তায় রূপান্তর করা গেলে অর্থনীতির এই সংকট উত্তরণ সম্ভব। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যে প্রয়োজন কর্মে উদ্যোগী গুণাবলী সম্পন্ন ব্যক্তিদের শিল্প, ব্যবসায় প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থান নির্ধারণ তথা স্বনির্ভরতা অর্জনে সহায়তা করে।

টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে অর্থনীতির মূল স্রোতে নারীদের অংশগ্রহণ একান্তভাবে অপরিহার্য। দেশের দ্রারিদ্রহ্রাসকরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সাথেও বিষয়টি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক অর্থনৈতিক খাতে নারীদের অংশগ্রহণের মাত্রা এখনও অপ্রতুল এবং নারী উদ্যোক্তাদের হার পুরুষের তুলনায় এখনও অনেক কম। অর্থনীতির মূল স্রোতে নারীদের অংশগ্রহণ বেশ কিছু বাধা বিরাজমান রয়েছে। আমাদের নারী সমাজের নিষ্ঠা, মনোনিবেশ, উদ্ভাবন শক্তি ও শ্রম নিপুনতা আমাদের বিস্মিত করে। বাংলাদেশের অর্থনীতির বিকাশে নারী উদ্যোক্তাদের এসএমই খাতে অধিকতর অংশগ্রহণ অপরিহার্য। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগে (এসএমই) নারী উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে আর্থিক সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদ্যমান এসএমই নীতিমালার আলোকে জামানত ছাড়াই পুরুষ উদ্যোক্তাদের পাঁচ লাখ টাকা এবং নারী উদ্যোক্তাদের দশ লাখ টাকা পর্যন্ত এসএমই ঋণ প্রদানের সুযোগ রয়েছে এবং আর্থিক কর্মকাণ্ডে নারীদের অংশগ্রহণ উৎসাহিত করার জন্য নারী উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে সুদের হার কম রাখা হয়েছে। এসএমই খাতে বাজেটের ১০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিতরণের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। নতুন (নারী উদ্যোক্তাসহ) উদ্যোক্তা বাছাই কল্পে বিভিন্ন মহিলা অধিদপ্তর, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, এসএমই ফাউন্ডেশন এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্বাচিত প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানসমূহ হতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত উদ্যোক্তাদের তালিকা সংগ্রহ করে তাদেরকে এসএমই ঋণ প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নারীদের মাঝে এসএমই ঋণ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, ব্যাংকের বিদ্যমান এসএমই ঋণের সুবিধাসমূহ ব্যাপকভাবে প্রচারের লক্ষ্যে এসএমই মেলা, সেমিনার, প্রশিক্ষণ, রোড শো আয়োজন, স্টাফ কলেজের ট্রেনিং কর্মসূচিতে এসএমইকে গুরুত্বারোপসহ অন্যান্য কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ হতে অর্থায়ন পেতে হলে সাধারণত দুই বছরের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা, ট্রেড লাইসেন্স ও প্রযোজ্য জামানত থাকতে হয়। তবে উদ্যোগ গ্রহণকারীর ব্যবসায়িক জ্ঞান, প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান ও প্রকল্পের সফলতার সম্ভাবনা বিবেচনায় নিয়ে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান একেবারে নতুন উদ্যোগেও অর্থায়ন করে যাচ্ছে। সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের অঙ্গীকারাবদ্ধ। দিন বদলের অর্থনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়নে কুটির শিল্প, অতি ক্ষুদ্র (মাইক্রো), ক্ষুদ্র ও মাঝারি সিএমএসএমই খাতে অগ্রাধিকার খাত হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখেই রূপকল্প ২০২১ এর আওতায় বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে (সিএমএসএসই) খাত দেশের শিল্পায়নের বিকল্প ও সম্প্রসারণে ভূমিকা পালন করছে। এর মধ্যে দিয়ে নারীর আর্থিক নিরাপত্তা সুদৃঢ় হবে, পরিবার ও সমাজে লৈঙ্গিক বৈষম্য দূর হবে, নারীর ক্ষমতায়ন ত্বরান্বিত হবে। সঠিক পরিকল্পনা ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় নারী উদ্যোক্তা আরো ইতিবাচক ও ফলপ্রসু ভূমিকা পালন করবে যদি নারী উদ্যোক্তাদের উচ্চতর প্রবৃদ্ধি খাত, রপ্তানি, আর্থিক ব্যবস্থাপনা, ক্ষমতার বিকাশ, নেটওয়ার্ক স্থাপন, উদ্যোক্তা শিক্ষা ও আইসিটির ব্যবহার প্রভৃতি নিশ্চিত করা যায়।

অর্থনীতির চাকাকে আরও গতিশীল করার মাধ্যমে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নারী উদ্যোক্তারাই হয়ে উঠতে পারে পৃথিবীতে এক অনন্য রোল মডেল। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার পথকে আরও প্রসারিত করার ক্ষেত্রে এদেশের নারী উদ্যোক্তারাই সুদূর প্রসারী ভূমিকা রাখতে পারে।

লেখক: ব্যবস্থাপনা পরিচালক, লানুশ অ্যাপারেলস লিমিটেড।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :