ছাত্রীকে যৌন হয়রানি: চাকরি হারাচ্ছেন বগুড়া বিয়ামের দুই শিক্ষক

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৫:০২

প্রাক্তন দুই ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে চাকরি হারাচ্ছেন বগুড়া বিয়াম মডেল স্কুল ও কলেজের প্রাক্তন দুই শিক্ষক। তারা হলেন- বাংলা বিভাগের শিক্ষক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ ও ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক আবদুল মোত্তালিব।

জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে বিয়াম মডেল স্কুল ও কলেজ পরিচালনা পর্ষদের এক সভায় দুই শিক্ষককে চাকরিচ্যুতির সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষ করতোয়ায় প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো. জিয়াউল হক।

জেলা প্রশাসনের তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মাসুম আলী বেগ। তিনিও পর্ষদের সভায়ও উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে নেয়া সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে মাসুম আলী বেগ বলেন, তদন্ত কমিটি বাংলা বিভাগের শিক্ষক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ ও ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক আবদুল মোত্তালিবের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে। ছাত্রীদের সঙ্গে ওই দুই শিক্ষকের আচরণ শিক্ষাসুলভ ছিল না। তদন্ত কমিটি দুই শিক্ষককে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদানের সুপারিশ করে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। গতকাল পরিচালনা পর্ষদের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আমলে নিয়ে ওই দুই শিক্ষককে চূড়ান্ত বরখাস্ত বা চাকরিচ্যুত করার লিখিত সুপারিশ বিয়াম ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালকের কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আবদুল মোত্তালিবের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনেন প্রাক্তন এক ছাত্রী। ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন বেসরকারি মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নরত ওই ছাত্রী। তার অভিযোগ, যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করায় তাকে ফোন করে হুমকি দেন ওই শিক্ষক। ওই ফোনালাপের অডিও এবং অশ্লীল প্রস্তাবের ম্যাসেঞ্জারের স্ক্রিনশট ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ায় পর তোলপাড় শুরু হয়।

ওই ছাত্রীকে যৌন হয়রানির ঘটনা নিয়ে ফেসবুকে তোলপাড়ের মধ্যেই একই প্রতিষ্ঠানের আরেক শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন প্রাক্তন আরেক ছাত্রী। ওই মেয়েটিও এ নিয়ে গণমাধ্যমে মুখ খোলেন।

মেয়েটির অভিযোগ, গত জানুয়ারি মাসে আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে গেলে প্রতিষ্ঠানটির বাংলা বিভাগের প্রভাষক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ তাকে যৌন হয়রানি ও শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। পরে তিনি অধ্যক্ষের কাছে বিচার দাবি করেন। কিন্তু কোনো আশ্বাস পাননি। ফলে ২২ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। কিন্তু বিচারের বদলে উল্টো অভিযোগ প্রত্যাহারের চাপ শুরু হয়। শিক্ষকেরা নানাভাবে ভয়ভীতি দেখান। মাসখানেক পর অধ্যক্ষের কক্ষে ডাকা হয় মেয়েটিকে। সেখানে মৌখিকভাবে শিক্ষক ক্ষমা চান। বিষয়টি মীমাংসা করতে মেয়েটিকে বাধ্য করা হয়।

প্রাক্তন দুই ছাত্রীকে যৌন হয়রানির বিষয়টি গণমাধ্যমে জানতে পেরে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি তা তদন্তের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালককে নির্দেশ দেন। মাউশির রাজশাহী অঞ্চলের পরিচালক কামাল হোসেনের নেতৃত্ব তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করা হয়। কমিটি সরেজমিন তদন্তে এসে অভিযোগের সত্যতা পায়।

অন্যদিকে, জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে গঠন করা হয় আলাদা একটি তদন্ত কমিটি। তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মাসুম আলী বেগকে। এই কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুর রহমান এবং বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান।

ঢাকাটাইমস/১৮সেপ্টেম্বর/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :