চার তরুণ সাংবাদিকের মানবিকতার গল্প

প্রকাশ | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৯:১৩ | আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৯:৩৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

বনানীতে একটি অগ্নিকাণ্ডের খবর সংগ্রহ শেষে রাতদুপুরে অফিসে ফিরছিলেন চারটি টিভি চ্যানেলের চার সাংবাদিক। পথে দেখলেন গাড়ি দুর্ঘটনায় সড়কে পড়ে কাতরাচ্ছেন বেশ কয়েকজন। দুর্ঘটনার ভয়াবহতা দেখে অফিসে ফেরার বদলে আহতদের উদ্ধার ও দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে এগিয়ে গেলেন তারা। রাস্তায় অ্যাম্বুলেন্স থামিয়ে আহত চারজনকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।

ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে। দুর্ঘটনায় দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া প্রাইভেটকারের চালকসহ চারজন গুরুতর আহত হন। তখন গভীর রাত বলে সড়কে গাড়ি বা লোকজনের তেমন আনাগোনা ছিল না। আহতদের হাসপাতালে পাঠাতে অ্যাম্বুলেন্স পেতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছিল। শেষ পর‌্যন্ত দুই দফায় দুটি অ্যাম্বুলেন্সে করে চারজনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। আশপাশে থাকা কয়েকজন লোক তাদের সহয়োগিতা করেন।

পরে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে বনানী থানার এসআই মো. ইয়াসিন ও শাহীন আলী ঘটনাস্থলে আসেন।

আহতদের উদ্ধারে এগিয়ে যাওয়া চার সাংবাদিক হলেন- চ্যানেল আইয়ের আখতার হোসেন, যমুনা টেলিভিশনের রাব্বী সিদ্দিকী, সময় টেলিভিশনের আহমেদ সালেহীন ও আরটিভির সাকিবুর রহমান।

ঢাকা টাইমসকে তারা বলেন, মানুষ মানুষের জন্য। যুবকদের কাতরাতে দেখে মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দিই। চেষ্টা করেছি তাদের যাতে দ্রুত চিকিৎসা হয় সেই ব্যবস্থা করতে।

উদ্ধারের সময়কার একাধিক ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে অনেকে তাদের ধন্যবাদ জানান। কেউ কেউ বলছেন, এভাবেই মানুষের পাশে মানুষকে দাঁড়াতে হবে। এটাই মানবিকতা।

সময় টেলিভিশনের আহমেদ সালেহীন ঢাকা টাইমসকে বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে বনানীতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা রাত দুইটার দিকে সরাসরি সম্প্রচার শেষ করে অফিসের দিকে যাচ্ছিলাম। মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনে এলে একটি ফোন পাই। আমাদের অফিসের গাড়িচালক বাবুল আলী ফোনে জানান, বনানী চেয়ারম্যান বাড়ির প্রধান সড়কে গাড়ি দুর্ঘটনা হয়েছে। ইউটার্ন করে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি ভয়ংকর দৃশ্য। দুর্ঘটনায় দুমড়ে-মুচড়ে গেছে টয়োটার লেটেস্ট ব্রান্ডের একটি নোহা ভক্সি মডেলের মাইক্রোবাস। সেখানে আরেক সহকর্মী আখতার হোসেনসহ আরও কয়েকজনকে পেলাম। তারা আশঙ্কাজনক অবস্থায় তিনজনকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। কিন্তু তখনো আহত একজন কাতরাচ্ছেন।

সালেহীন বলেন, তাকে একটি সিএনজিতে করে আমরা ঢাকা মেডিকেলে পাঠাই। কিন্তু সিএনজি চালক তাকে নিয়ে ভুল করে কুর্মিটোলা হাসপাতালে চলে যান। আহত ব্যক্তির অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যেতে বলেন সেখানকার চিকিৎসকরা। পরে আবার বনানী ফিরে আসে সেই সিএনজি। এরপর আরেকটি অ্যাম্বুলেন্স থামিয়ে তাকেও ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়।

রাতে লোকজন কম থাকলেও যারা ছিলেন তাদের দু-একজন ছাড়া বাকিরা ঝামেলা এড়াতে শুরুতে এগিয়ে আসেননি বলে জানান আহমেদ সালেহীন।

শুরু থেকে উদ্ধারকাজে অংশ নেয়া সাংবাদিক আখতার হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, `কখনো কখনো কাজের চেয়ে কর্তব্য বড় হয়ে দাঁড়ায়। দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি লোকটি রাস্তায় কাতরাচ্ছে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে। হাসপাতালে পাঠানোর জন্য দুয়েকজন অন্যদের সহযোগিতা চাচ্ছে। কেউ আগাচ্ছে তো কেউ দাঁড়িয়ে দেখছে। ঘটনার আকস্মিকতায় মনে হলো মানুষটিকে বাঁচানোই এখন বড় কর্তব্য। নিউজ হয়তো পরেও করা যাবে। তাদের সঙ্গে হাত লাগালাম। এর মধ্যে অন্য চ্যানেলের সংবাদকর্মীরাও ঘটনাস্থলে ছুটে এসেছেন। সবাই মিলে অ্যাম্বুলেন্সে করে দ্রুত ঢাকা মেডিকেলে পাঠানোর ব্যবস্থা হলো।’

আখতার দেখলেন, অচেনা একজন সিএনজি ড্রাইভারের ভাড়া মিটালেন। পথচারী দু-একজন আহতদের সঙ্গে হাসপাতালেও গেলেন। তিনি বলেন, `মানবতা এভাবেই টিকে থাক। যারা শুধুই দাঁড়িয়ে দেখলেন তাদের কথা বাদ। কিন্তু যারা কালবিলম্ব না করে সাত-পাঁচ না ভেবে বিপদগ্রস্তের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা।’

(ঢাকাটাইমস/১৮সেপ্টেম্বর/বিইউ/মোআ)