আল্লামা শফীর বর্ণাঢ্য জীবন

প্রকাশ | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৯:৪২ | আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২১:০৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
ফাইল ছবি

বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগলেও একাধিকবার হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে আবার সুস্থ হয়ে ফিরেছেন। বেশ কয়েকবার মারা গেছেন এমন গুঞ্জনও ছড়িয়ে পড়ে। তবে এবার সত্যি সত্যিই সবাইকে ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন দেশবরেণ্য আলেম ও হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী।

সারাদেশের আলেম-উলামার কাছে অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে বিবেচিত আল্লামা শাহ আহমদ শফীর জন্ম চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পাখিয়ারটিলা গ্রামে। তার বাবার নাম বরকম আলী, মা মোছাম্মাৎ মেহেরুন্নেছা বেগম। আহমদ শফী দুই ছেলে ও তিন মেয়ের জনক।

তার দুই ছেলের মধ্যে আনাস মাদানী হেফাজতে ইসলামের প্রচার সম্পাদক। তিনি হাটহাজারী মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে কর্মরত থাকলেও সম্প্রতি এক ছাত্র বিক্ষোভের মুখে সে পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়। অন্যজন মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ পাখিয়ারটিলা কওমি মাদ্রাসার পরিচালক।

আল্লামা শফীর শিক্ষাজীবন শুরু হয় রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা মাদ্রাসায়। এরপর পটিয়ায়র আল জামিয়াতুল আরাবিয়া মাদ্রাসায় (জিরি মাদ্রাসা) লেখাপড়া করেন। ১৯৪০ সালে তিনি হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায় ভর্তি হন। ১৯৫০ সালে তিনি ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসায় যান, সেখানে চার বছর লেখাপড়া করেন। ১৯৮৬ সালে হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক পদে যোগ দেন আহমদ শফী। এরপর থেকে টানা ৩৪ বছর ধরে তিনি ওই পদে ছিলেন। ছাত্র বিক্ষোভের এক পর্যায়ে বৃহস্পতিবার তিনি অসুস্থতার কারণে মহাপরিচালক পদ থেক নিজেই অব্যাহতি নেন। তবে তাকে আমৃত্যু সদরুল মুহতামিম বা উপদেষ্টা হিসেবে রাখার সিদ্ধান্ত হয়।

চট্টগ্রামের হাটহাজারীর ‘বড় মাদ্রাসা’ নামে পরিচিত আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসা দেওবন্দের পাঠ্যসূচিতে পরিচালিত বাংলাদেশের অন্যতম বড় এবং পুরনো কওমি মাদ্রাসা। সাত হাজারের বেশি শিক্ষার্থী সেখানে অধ্যয়ন করে।

দেশের আলেমদের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র আহমদ শফী বাংলায় ১৩টি এবং উদুর্তে নয়টি বইয়ের রচয়িতা। মূলত ২০১৩ সালে গণজাগরণ আন্দোলন শুরুর পর তার বিরোধিতায় হেফাজতে ইসলামকে নিয়ে মাঠে নেমে আলোচনায় উঠে আসেন আহমদ শফী।

জীবদ্দশায় হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালকের পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশেরও (বেফাক) সভাপতি পদে ছিলেন। এছাড়া কওমি মাদ্রাসাগুলোর সমন্বিত বোর্ড আল হাইয়াতুল উলয়ার তিনি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছিলেন। তার নেতৃত্বেই ২০১৭ সালে সরকার কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্স সমমান দেয়।

করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে কিছু দিন বন্ধ থেকে মাদ্রাসা খোলার পর গত বুধবার আকস্মিকভাবে কয়েকশ’ শিক্ষার্থী বিক্ষোভ শুরু করে। তারা আহমদ শফীর অব্যাহতি এবং তার ছেলে আনাস মাদানীর বহিষ্কার দাবিতে বিভিন্ন কক্ষে ভাঙচুরও চালায়।

পরে বুধবার মাদ্রাসার শূরা কমিটি বৈঠক করে আনাস মাদানীকে অব্যাহতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপরও বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ হলে সরকার কওমি মাদ্রাসাটি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। ওই চিঠি পাওয়ার পর সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে রাতে আহমদ শফীর নেতৃত্বে বৈঠকে বসে মাদ্রাসার শূরা কমিটি। সেখানে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে মহাপরিচালকের পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন আল্লামা শফী। এসময় তিনি মাদ্রাসা পরিচালনা ও নতুন মুহতামিম মনোনয়নের দায়িত্ব শূরা কমিটিকে দিয়ে দেন।

বার্ধক্যজনিত কারণে অনেক দিন ধরে শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন আহমদ শফী। গত কয়েক বছরে তাকে বেশ কিছু দিন হাসপাতালে কাটাতে হয়েছে। মাঝে ভারতেও চিকিৎসা নিয়ে আসেন তিনি। গত ১১ এপ্রিল হজম এবং অন্যান্য শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়ায় নগরীর বেসরকারি সিএসসিআর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল আহমদ শফীকে। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তিন দিন পর তাকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় নিয়ে গিয়ে গেন্ডারিয়ার আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সুস্থ হয়ে গত ২৬ এপ্রিল তিনি চট্টগ্রামে ফেরেন। আবার অসুস্থ হলে সেই হাসপাতালে আনার পরই না ফেরার দেশে চলে গেলেন আল্লামা শফী।

(ঢাকাটাইমস/১৮সেপ্টেম্বর/বিইউ/জেবি)