পেঁয়াজের অস্থিরতার আড়ালে চালে কারসাজির চেষ্টা!

নজরুল ইসলাম, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১২:২৯

বৃহস্পতিবার বিকালে বাজারে চালের দাম জিজ্ঞেস করে গিয়েছিলেন হাতিরপুলের বাসিন্দা বশির জামাল। তিনি সেই মতো টাকা নিয়ে বাজারে এসেছিলেন এক বস্তা চাল নেবেন বলে। এসে শোনেন আরও ১০০ টাকা লাগবে। তবে এই দোকান থেকে নিয়মিত কেনাকাটা করেন বলে তার কাছ থেকে ৫০ টাকা কম রেখেছেন দোকানি।

বশির জামালের মতে, ‘বাজারে আমরা অসহায়। যখন-তখন দাম বাড়িয়ে দেয় ব্যবসায়ীরা। আমাদের কিছু করার নেই। কোনো একটা ছুতো পেলেই কারসাজি করে দাম বাড়ায়। পেঁয়াজের অস্থিরতার সুযোগে চালে দাম বাড়ানোর সুযোগ নিল ব্যবসায়ীরা।’

হঠাৎ প্রতিবেশী দেশ ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণায় গত কয়েক দিন ধরে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। পেঁয়াজ নিয়ে অস্থিরতার মধ্যে এই কারসাজি চলছে চালের বাজারে। রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম বস্তাপ্রতি বেড়েছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা।

চালসমৃদ্ধ উত্তরাঞ্চলের জেলা নওগাঁর ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, সপ্তাহ খানেক আগে ধানের দাম মণপ্রতি ৭০ থেকে ৮০ টাকা বাড়লেও সেখানে চালের দামে তার কোনো প্রভাব পড়েনি।

নওগাঁ ধান-চাল আড়তদার সমিতির সভাপতি নিরোধ বরণ জানান, সেখানকার পাইকারি বাজারে চালের দাম গত এক সপ্তাহ ধরে অপরিবর্তিত আছে। ঢাকায় কেন বাড়ল তা তিনি জানেন না।

নিরোধ বরণের দেওয়া তথ্যমতে, নওগাঁয় ৫০ কেজি মিনিকেট চাল প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৪৫০ থেকে ২ হাজার ৫৫০ টাকা। শম্পা কাটারি বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২৫০ থেকে ২ হাজার ৩৫০ টাকা। তবে ধানের দাম গত এক সপ্তাহে প্রতিমণে ৭০-৮০ টাকা বেড়েছে বলে জানান এই আড়তদার সমিতির সভাপতি।

গতকাল রাজধানীতে চালের দাম বস্তাপ্রতি এক শ থেকে দেড় শ টাকা বেড়েছে জানিয়ে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলেন, ৫০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা গুটিস্বর্ণা চাল বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২৫০ টাকা। আগের দিন এ চাল বিক্রি হয়েছে ২১৫০ টাকায়।

মোটা চালের মধ্যে আটাশ চালের দাম এখন প্রতি বস্তা ২ হাজার ৩০০ টাকা। এর আগে এ চাল বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ২০০ টাকা। মিনিকেট প্রতি বস্তা ২ হাজার ৫৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আর নাজিরশাইল মানভেদে ২ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ৯০০ টাকা।

কাওরান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী শাহ আলম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘গতকাল (বৃহস্পতিবার) আমরা যে টাকায় চাল আনছি, আজ (শুক্রবার) প্রতি বস্তায় সেটা কৃষি মার্কেট থেকে বাড়তি ১০০ টাকা দিয়ে আনা লাগছে। কী কারণে তারা দাম বাড়াইছে, সেটা বলতে পারছি না।’

কাঁঠালবাগান বাজার ও হাতিরপুল বাজারের খুচরা চাল ব্যবসায়ীরা জানান, চিনিগুঁড়া চাল ছাড়া অন্য সব ধরনের চালে বস্তাপ্রতি এক শ থেকে দেড় শ টাকা বেড়েছে। সে কারণে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চালে দুই টাকা বেশি রাখা হচ্ছে।

দিন চারেক আগে ভারতে পেঁয়াজের দাম তিন গুণ বেড়ে যাওয়ায় দেশটি বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। আর ভারতের রপ্তানি বন্ধের ঘোষণার রাতেই রাজধানীর বাজারগুলোতে পেঁয়াজের দাম একলাফে কেজিতে বেড়ে যায় ৪০ টাকা। সেই বেড়ে যাওয়া দামে এখনো পেঁয়াজের দামে অস্থিরতা বিরাজ করছে।

রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে শুক্রবার দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ১০০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ কেজিতে ৮০ টাকা করে রাখা হচ্ছে। তবে ভালো মানের দেশি পেঁয়াজের পাইকারি মূল্য দুই দিন আগেই প্রতিকেজি ১০০ টাকা থেকে ৮০ টাকায় নেমেছে। কিন্তু তার প্রভাব নেই খুচরা বাজারে।

কোরবানির ঈদের পর থেকে সবজির বাজার চড়ে বসার পর প্রায় মাসখানেক পার হলেও এখন সেই চওড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি। সরেজমিনে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সবজির মধ্যে এক পেঁপে ছাড়া সব সবজি ৫০ টাকা বা তার চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

হাতিরপুল বাজারের বিক্রেতা আনোয়ার বলেন, ‘বাজারে সবজি কম আছে সেটা বলা যাবে না। কিন্তু দাম আগের মতোই আছে। করোনা করোনা বলে যে দাম বাড়ছে আর নামার কোনো অবস্থা দেখছি না।’

(ঢাকাটাইমস/১৯সেপ্টেম্বর/ মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :