ওটস খেলে ওজন কমে

প্রকাশ | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৫:১৭ | আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৫:২১

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

ওটস একটি দানা জাতীয় শস্য । ওটসের বৈজ্ঞানিক নাম অ্যাভিনা সাটিভা। ধান/গম পরিবারের অন্তর্ভুক্ত শস্য, মূলত  শীতপ্রধান এলাকায় জন্মায়। ওটস খুব উপকারি। খাদ্য হিসাবে যেমন রয়েছে অনেক গুণাগুণ  তেমনি প্রসাধন সামগ্রীতেও  এর জুড়ি মেলা ভার।

প্রাচীনকালে নিজেদের খাবারের জন্য এবং গৃহপালিত  পশুদের খাবারের চাহিদা পূরণের জন্য মানুষ প্রায় ৪০০০ বছর ধরে ওটস চাষ করে আসছে । খামারের পশুদের খাওয়ানোর জন্য ব্যবহার করা হত। যেহেতু ফাইবার প্রচুর থাকে, গৃহপালিত পশুদের পেট ভরানোর জন্য এটি ছিল উপাদেয়। পরে ক্রমশ এর গুণে মুগ্ধ হয়ে ওটসকে পছন্দের খাবারের তালিকায় নিয়ে আসেন স্কটল্যান্ডের বাসিন্দারা। ব্রেকফাস্ট টেবিলে জায়গা করে নেয় ওটস। ক্রমশ তা ছড়িয়ে পড়ে গোটা ইউরোপ ও আমেরিকায়।

ওটস আমাদের দেশে উৎপাদিত হয় না। এর কোনো বাংলা নাম নাই। ওটস নামেই সবাই জানে। ওটস একটি খাদ্যশস্য, জমিতে উৎপন্ন হয়। তারপর মিল বা কলে প্রসেস করা হয়। বিভিন্ন দেশে ওটস বেশ কয়েকটি ক্যাটাগরিতে পাওয়া যায়। বাজারজাতকৃত যেসব ধরন আমরা দেখি সেগুলো স্টিল কাট ওটস, রোলড ওটস, ইনস্ট্যান্ট ওটস ইত্যাদি।

ওটসের অনেক ভাগ আছে। এই শস্য তুলে তা ছাঁটাই করা হয়। আর এই কাটের উপরেই নির্ভর করে ওটসের টেক্সচার ও স্বাদ। তাই কাটের উপরে ভিত্তি করে এর নামও দেওয়া হয়েছে। খেত থেকে তোলার পরে এ শস্য অনেকটা পাকা ধানের মতো দেখতে হয়। হালকা সোনালি রঙের। আর এত গুণ থাকায় একে গোল্ডেন গ্রেন বা সোনালি শস্যও বলা হয়ে থাকে।

এই শস্য তুলে খোসা ছাড়িয়ে বিভিন্ন কাট দেওয়া হয়। গোটা ওটস অনেক সময় লাগে রাঁধতে। তাই স্টিল কাট বা রোলড ওটসের চাহিদাই বেশি। সাধারণত মেটাল ব্লেড দিয়ে এক-একটা শস্য দানা দু’তিন ভাগে কেটে নেওয়া হয়। একে বলে স্টিল কাট ওটস। এই ওটস সিদ্ধ হতে কুড়ি মিনিট মতো সময় লাগে। তবে এতে টেক্সচার বজায় থাকে।

মেটাল ব্লেড দিয়ে কাটার পরিবর্তে স্কটিশরা পাথর দিয়ে এই শস্য গুঁড়িয়ে নিতেন। এতে যেমন সূক্ষ্ম দানাও থাকত, মোটা দানাও থেকে যেত। ফলে রান্না করলে ভাল টেক্সচার পাওয়া যেত। এই ধরনের ওটস দিয়ে সাধারণত পরিজ তৈরি করেই খাওয়া হত। একে বলে স্কটিশ ওটমিল।

আর আছে রোলড ওটস। ধান থেকে যেভাবে চাল তৈরি করে, সেভাবেই এ শস্য স্টিম করে নেওয়া হয়। তার পরে রোল করে ফ্লেকসের আকার দেওয়া হয়। এই ওটস ফ্লেকসই রোলড ওটস নামে পরিচিত। এই প্রসেসড ওটস আবার ওটমিল নামেও পরিচিত।

যেহেতু রোলড ওটস ঝটপট রান্না করে খাওয়ার জন্য তৈরি করা যায়, তাই একে ওটমিলও বলে। আর বেশি সময় ধরে স্টিম করে পাতলা ফ্লেকস বানিয়ে তৈরি হয় ইনস্ট্যান্ট ওটস। এই ধরনের ওটস বিক্রিও হয় বেশি। পাওয়া যায় ওটসের ময়দা, যা দিয়ে ব্রেড, কুকিজ়ও তৈরি করা হয়।

 

ওটস কেন খাবেন

 

ডায়াটিশিয়ানের মতে, ‘১০০ গ্রাম ওটসে ৩৮৯ ক্যালরি, ১৬.৯ গ্রাম প্রোটিন, ৬৬.৩ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১০.৬ গ্রাম ফাইবার, ৬.৯ গ্রাম ফ্যাট পাওয়া যায়। এ ছাড়াও জ়িঙ্ক, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, কপারের মতো মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টসে ভরপুর এই শস্য। ফলে এর গুণ অনেক।’

একে তো প্রচুর ফাইবার থাকে। তাই কোষ্ঠ পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। তাই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে ওটস কাজে দেবে। তা ছাড়া পেট ভরায়, ওজনও নিয়ন্ত্রণে রাখে।

ওটস গ্লুটেনফ্লি। শারীরিক সমস্যার জন্য যাদের গ্লুটেন খাওয়ায় বিধিনিষেধ আছে, তারা ওটস খেতে পারেন স্বচ্ছন্দে।

রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে ওটস। আর টাইপ-টু ডায়াবিটিসের রিস্কও কমাতে সাহায্য করে। এর হাই ফাইবার আর কমপ্লেক্স কার্বস গ্লাইকোজেনেসিস পদ্ধতি মন্থর করে। এতে বিটা-গ্লুকেন থাকে, যা রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

এটি লিপিড প্রোফাইল নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে কোলেস্টেরল লেভেল ঠিক রাখতেও ওটস খুব কার্যকর। হৃদ্রোগে আক্রান্ত হলে তারাও নিয়মিত ওটস খেতে পারেন।

ওটসে যেহেতু ফাইবার বেশি, কার্বস ও ফ্যাটের পরিমাণ কম, তাই ওজন কমাতেও ওটস সিদ্ধহস্ত। তাই ওবেসিটির রোগীরা ডায়েটে রাখতেই পারেন ওটস। তবে তা খেতে হবে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে।

 

কোন ওটস খাবেন ও কীভাবে রাঁধবেন

 

বাজারে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় ইনস্ট্যান্ট বা কুইক ওটস। স্টিল কাট বা রোলড ওটস খাওয়াই সবচেয়ে ভাল। আর ওটস কী ভাবে খাবেন, তার উপরেও এর পুষ্টিগুণ নির্ভর করে। পরিজ বা খিচুড়ির মতো রেঁধে খেলেই এর পুষ্টি পুরোটা বজায় থাকে। টক দইয়ের মধ্যে ফলের কুচি ও ওটস দিয়েও খাওয়া যায়।

ওটসে অনেক তেল, ঘি দিয়ে বিরিয়ানি তৈরি করে খেলে খুব উপকার নেই। বরং খিচুড়ি করে খেতে পারেন। ওটসের ময়দা দিয়ে রুটি তৈরি করেও খাওয়া যায়। 

ওটস কেনার সময়ে তা কোন দেশের, সেটাও দেখা দরকার । সাধারণত কাশ্মীরের আপেলের স্বাদ আর পশ্চিমবঙ্গে কৃত্রিম আবহাওয়া তৈরি করে তাতে যে আপেল উৎপাদন হয়, তার স্বাদ ও পুষ্টি এক নয়। ওটসের ক্ষেত্রেও তাই। পশ্চিমের শীতল আবহাওয়া ওটসের ফলনে সহায়ক। আমাদের দেশে এখন ওটস চাষ হচ্ছে। কিন্তু অনুকূল আবহাওয়া নেই। তাই আইরিশ বা স্কটিশ ওটসের স্বাদ বা গুণ এ দেশে উৎপন্ন ওটসের তুলনায় অনেক বেশি। তবে আমাদের দেশেও কিন্তু এমন গুণী-শস্য কম নেই। ওটসের বদলে আমাদের দেশজ ফসল জোয়ার, বাজরা, অমরন্থও সমান উপকারী। তবে সব খাবারের মধ্যে ওটসও রাখতে পারেন রোজকার আহারে। এতে খাদ্যতালিকা সমৃদ্ধ হবে বইকি।

শুধু খাদ্যগুণই নয়। ত্বক ভাল রাখতেও ওটস প্রিয় বন্ধু হয়ে উঠতে পারে। তাই খাওয়ার মাঝেই সপ্তাহে এক দিন দুধ, মধু ও ওটস দিয়ে প্যাক বানিয়ে মুখে মেখে নিতে পারেন। এতে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস থাকায় তা ত্বকে বলিরেখা পড়া রোধ করে। যৌবন ধরে রাখে ত্বকের। শরীর ও ত্বক, এই দুইয়েরই বন্ধু হয়ে উঠতে পারে ওটস।

অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তার কারণে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমাতে প্রতিদিনের ডায়েটে রাখুন খাদ্যশস্য ওটস। মন খারাপ থাকলে ওটস খেতে পারেন। এতে রয়েছে বিশেষ প্রাকৃতিক উপাদান যা মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। খানিকটা মধু দিয়ে ওটস সকালের নাশতা হিসেবে দারুণ।

(ঢাকাটাইমস/১৯ সেপ্টেম্বর/আরজেড/এজেড)