গণতান্ত্রিক আন্দোলন ছাড়া কেউ রক্ষা পাবে না: ফখরুল

প্রকাশ | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৬:৩০

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
ফাইল ছবি

বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষাপটে ‘গণতান্ত্রিক আন্দোলন’ ছাড়া কেউই রক্ষা পাবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শনিবার দুপুরে এক ভার্চুয়াল আলোচনায় ফখরুল বলেন, ‘এই ভার্চুয়াল আলোচনার মধ্য দিয়ে এই ম্যাসেজটা সবাইকে আপনারা (সাংবাদিকরা) দিতে পারেন যে, এখন থেকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ছাড়া দেশকে, গণতন্ত্রকে, সাংবাদিকতাকে - কাউকেই রক্ষা করা যাবে না, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকেও রক্ষা করা যাবে না। আমি একটা কথাই বলব, অবস্থা বদলে দেয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। বদলে দেয়ার একটাই পথ, আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এই ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট যে সরকার, এই সরকারকে সরাতে হবে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনই হচ্ছে আমাদের একমাত্র পথ।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই অবস্থা থেকে যদি মুক্তি পেতে হয় আমাদের ঐক্য দরকার হবে। যেটা আমরা চেষ্টা করছি সবসময়। একটা ঐক্য সৃষ্টি করেই আমাদেরকে এগুতে হবে। আসুন গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার সবাই সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালাই, সব রাজনৈতিক দলগুলোকে একখানে আনার চেষ্টা করি এবং জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে আমাদের যে অধিকার, আমরা ১৯৭১ সালে যেটার জন্য যুদ্ধ করেছিলাম একটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য, গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য সেটাকে ফিরিয়ে আনার জন্য লড়াই করি সামনের দিকে এগিয়ে যেতে।’

গণমাধ্যমের ওপর সরকারের নিপীড়ন-নির্যাতনের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে যে অবস্থায় পড়েছি এটা নিঃসন্দেহে সবচেয়ে খারাপ সময়, সবচেয়ে কঠিন সময়। এখানে এমন একটা অবস্থা তৈরি করে ফেলা হয়েছে বিশেষ করে ভয়-ভীতি ও ত্রাস সৃষ্টি করে যে আজকে কেউ সাহস করছে না।’

ফখরুল বলেন, ‘আজকে আমার মনে হয় যে, যত সাংবাদিক এখন বেকার আছেন, এত বেকার বোধহয় কখনো ছিল না। পঁচাত্তর সালে বাকশাল করার পর চারটি পত্রিকা রেখেছিল, বাকিগুলো চলে গিয়েছিল। আজকে কিন্তু পরোক্ষভাবে ওইরকমই একটা অবস্থা তৈরি হয়েছে। তাদের কথা যারা বলবে, তাদের পক্ষে যারা থাকবে তাদের পত্রিকা চলবে, তাদের চ্যানেল চলবে, তাদের গণমাধ্যমগুলো চলবে। অন্য যারা আছে তাদেরগুলো তারা চলতে দেবে না।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি জানি, আপনারা অনেক ভুক্তভোগী, আপনারা অনেক কষ্ট করছেন, অনেকের চাকরি নেই, অনেকে জেল-জুলুমের মামলার মধ্যে পড়েছেন। সাগর-রুনি থেকে শুরু করে অনেকে খুন হয়ে গেছেন, অনেকে গুম হয়ে গেছেন, অনেককে হত্যা করা হয়েছে। তারপরেও আপনাদেরকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। কারণ আপনারাই হচ্ছেন গণতন্ত্রের মূলভিত্তি। মুক্ত সাংবাদিকতা বা মুক্ত সংবাদমাধ্যম না থাকলে গণতন্ত্র কখনোই প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। গণতন্ত্রের মূল বিষয়টাই হচ্ছে গণমাধ্যম সব দেশে, সব যুগে, সব কালে সাংবাদিকরা একটা প্রধান একটা ভূমিকা পালন করে। আপনারা চেষ্টা করছেন, সব সময় করেছেন।’

বিএফইউজের (একাংশ) সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, ‘আমাদের প্রবীণ সম্পাদক আবুল আসাদ গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘদিন কারাগারে আছেন, তিনি জামিন পাচ্ছেন না, কোনো জামিন নেই। জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল দিগন্ত টিভি, চ্যানেল ওয়ান বন্ধ, আমার দেশ পত্রিকার বন্ধ। লেখার তো কোনো স্বাধীনতা নেই, ক্ষমতা নেই। এভাবে আইন করেছে যে, আপনি কিছুই করতে পারবেন না। বলে কী করবি, হেইঠাও করতে পারবি না। এই অবস্থায় আমরা আছি।’

সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ‘সাধারণ মানুষের বাক স্বাধীনতার ক্ষেত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মূর্তিমান আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করার মধ্য দিয়ে এই আইন সাংবাদিকদের কলমকে, মানুষের মুখকে বন্ধ রাখার চক্রান্ত হচ্ছে, ভিন্নমত দমনে এই আইন বড় হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে। এটা একটি জঙ্গি আইন। এটা কোনো সভ্য সমাজে কিংবা কোনো সভ্য কল্যাণকর রাষ্ট্রে থাকতে পারে না, এটা সংবিধানবিরোধী আইন। আমরা এই আইনটির অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।’

‘মুক্ত সাংবাদিক অন্তর্ধান’ দিবস উপলক্ষে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের উদ্যোগে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলামের সঞ্চালনায় ভার্চুয়াল এই আলোচনায় জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া মো. গোলাম পারোয়ার, বিএফইউজের মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, ডিইউজের বাকের হোসাইন, আবদুল আউয়াল ঠাকুর, নুরুল আমিন রোকন, বাছির জামাল, রাশেদুল হক, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোরসালীন নোমানী, ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সা্বেক সভাপতি একেএম মহসিন বক্তব্য দেন।

(ঢাকাটাইমস/১৯সেপ্টেম্বর/বিইউ/জেবি)