অ্যাপের বাইরে ভাড়ায় গেলেই বিপদ!

প্রকাশ | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৯:০৬ | আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৯:৩২

আল-আমিন রাজু, ঢাকাটাইমস
ফাইল ছবি

রাজধানী ঢাকায় চলাচলরত অ্যাপভিত্তিক রাইডারদের একটি অংশ বিভিন্ন সময়ে অ্যাপের বাইরে যাত্রী পরিবহন করে থাকে। একটু বাড়তি আয়ের আশায় অ্যাপের নির্ধারিত ভাড়ার বাইরে তারা এ পথে ঝুঁকে থাকেন। অ্যাপভিত্তিক রাইডারদের এই সুযোগটি কাজে লাগাচ্ছে একটি চক্র।

অ্যাপের বাইরে সরাসরি কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে যাত্রীবেশে গাড়িতে করে নিজেদের পূর্ব নির্ধারিত পথে নিয়ে যায়। এরপর সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে চালকের কাছ থেকে গাড়ি ছিনিয়ে নেওয়া হয়। অনেক সময় চালকের প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। এরপর সীমান্ত এলাকায় নিয়ে গাড়ির নম্বর প্লেট পরিবর্তন করে ভারতীয় চোরাই গাড়ি হিসেবে দেখিয়ে কাস্টম কর্মকর্তার স্বাক্ষর নকল করে নিলামের জাল কাগজ বানিয়ে অন্য কারো কাছে বিক্রি করা হয়।

এমনই একটি চক্রের এক সদস্যকে সম্প্রতি রাজধানীর রামপুরা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে খুলনার বাগেরহাটের চিলমারী উপজেলা থেকে আরেকজনকে গ্রেপ্তার ও ছিনতাই হওয়া মোটরসাইকেল উদ্ধার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের উত্তরা জোনের একটি দল। চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে এমন কাজ করছিলো বলে জানিছে পুলিশ। গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ছিনতাই চক্রের সদস্যরা হলেন, ইমরান হোসেন ও মাসুম মোল্লা।

উদ্ধার হওয়া মোটরসাইকেলের সঙ্গে একটি ভুয়া নিলামের কাগজ পাওয়া যায়। যেখানে ছিনতাই হওয়া মোটরসাইকেলটির নম্বরপ্লেট ফেলে দিয়ে ভারতীয় টিবিএস কোম্পানির স্ট্রাইকার ১২৫ মডেলের গাড়িটি বেনাপোল কাস্টমস থেকে নিলামের মাধ্যমে মশিউর রহমান নামে একজন কিনেছেন এমন একটি ছাড়পত্র লাগানো হয়। এছাড়া নিলামে কেনার কারণে কাস্টমস থেকে একটি নাম্বার দেয়া হয় যা সম্পূর্ণই ভুয়া।

এছাড়া নিলামের ছাড়পত্রের সঙ্গে গাড়ির চেসিস ও ইঞ্জিন নম্বরের সঙ্গে কোনো মিল নেই। ফলে চক্রটি এভাবে মোটরসাইকেল ছিনতাই করে ভুয়া নিলামপত্র দেখিয়ে অন্যত্র বিক্রি করে আসছিল। এরই ধারাবাহিতকায় গত ২১ আগস্ট উত্তরা থেকে ছিনতাই হওয়া ঢাকা মেট্রো-হ-৫৪-৮৫০৭ গাড়িটি বিক্রি করে দেয়। তবে কত টাকায় বিক্রি করা হয়েছে সেটি এখনো জানাতে পারেনি পুলিশ।

উদ্ধার হওয়া মোটরসাইকেলের বিষয়ে অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া ডিএমপি উত্তরা জোনের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার বদরুজ্জামান জিল্লুর ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এই চক্রটি মূলত ঢাকার মধ্যে মোটরসাইকেল ছিনতাই করে আসছিল। এরা দুই বছর ধরে ছিনতাই করছিল। চক্রের সদস্যরা জোড়ায় জোড়ায় থাকে। এখন পর্যন্ত ঢাকার মধ্যে কতটি ছিনতাই করেছে বা কোনো হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে কি না এখনো জানা যায়নি। এই বিষয়টি জানতে আমরা আাদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করবো। তাদের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমরা তদন্ত করছি।’

এদিকে ছিনতাই শিকার মোটরসাইলের মালিক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমার বড় ভুল ছিল অ্যাপের বাইরে গাড়িতে যাত্রী তোলা। আমি মূলত উপকার করতে গিয়ে ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছি। ছিনতাই চক্রের একজন আমার কাছে এসে বললো উত্তরায় তার একটি জরুরি মিটিং আছে। একটু দ্রুত যেতে বললো। পরে উত্তরার ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির গলিতে নিয়ে যায়। সেখানে আরেকজনের সঙ্গে দাঁড়িয়ে আমার বাইকে থাকা যাত্রী কথা বলে। আমি তখনই খারাপ কিছু একটা বুঝতে পেরে বাইক ঘুরিয়ে চলে আসার সময়ে আমার গলায় অস্ত্র ধরে। পরে আমি জীবন বাঁচাতে বাইক দিয়ে দিই।

অ্যাপের বাইরে যাত্রী তোলার বিষয়ে রাইডারদের নিরুৎসাহিত করার বিষয়ে অ্যাপসভিত্তিক রাইড কোম্পানি পাঠাওয়ের জন সংযোগ কর্মকর্তা নাদিয়া মাহবুব ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা এই বিষয়ে রাইডারদের কাছে এসএমস, ভয়েস বা বিভিন্ন অফার দিয়ে অ্যাপ ব্যবহারে উৎসাহ দিয়ে থাকি। আমরা পুলিশের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগও নিচ্ছি।’

নাদিয়া মাহবুব বলেন, ‘অ্যাপের বাইরে যাত্রা করা গাড়ির চালক ও যাত্রী দুজনের জন্যই বিপজ্জনক। এখানে যে কেউ বিপদে পড়তে পারেন। যে কারণে আমরা সবসময় রাইডারদের নিরুৎসাহিত করি।’

(ঢাকাটাইমস/২০সেপ্টেম্বর/ডিএম/জেবি)