আটকে থাকা পেঁয়াজের বেশির ভাগই পচন ধরেছে

প্রকাশ | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২০:৩০ | আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২১:৪৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

ভারতের রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্তের পর বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের এলসি করা যেসব পেঁয়াজ পাঁচ দিন সীমান্তে আটকে ছিলো তার অধিকাংশই পচে গেছে। ভারতীয় বন্দরে আটকে থাকা পেঁয়াজবোঝাই যেসব ট্রাক গত শনিবার বিকালে বাংলাদেশে ঢুকেছে সেসব ট্রাকের পেঁয়াজে পচন ধরেছে।

এদিকে ভারত-বাংলাদেশ স্থলবন্দরগুলোতে পেঁয়াজের শতশত ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় থাকলেও তা বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে না ভারত। তীব্র গরমে দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষামাণ এসব ট্রাক ভর্তি পেঁয়াজে কয়েকদিন আগেই পচন ধরেছে।

রবিবার বিভিন্ন স্থলবন্দরে পেঁয়াজ ভর্তি ট্রাক অপেক্ষমাণ থাকলেও তা প্রবেশের অনুমতি দেয়নি ভারত। এর আগে শনিবার তিন স্থলবন্দর দিয়ে ৫০ ট্রাক পেঁয়াজ বাংলাদেশে প্রবেশ করে। প্রতি ট্রাকে ২৫ টন হারে ৫০ ট্রাকে পেঁয়াজের পরিমাণ এক হাজার ২৫০ মেট্রিক টন। এসব পেঁয়াজের অধিকাংশই পচে গেছে।

রবিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের বেশিরভাগই পচা। শিবগঞ্জের আড়তগুলোতে ফ্যান দিয়ে পেঁয়াজে বাতাস দেয়া হচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন বলে জানিয়েছেন। গত শনিবার এলসির টেন্ডার করা আটটি পেঁয়াজভর্তি ট্রাক সোনামসজিদ স্থলবন্দরে প্রবেশ করে। এতে প্রায় ২৪০ টন পেঁয়াজ ছিল।

সোনামসজিদের ব্যবসায়ীরা জানান, আমদানি করা পেঁয়াজের অধিকাংশ পচে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে তারা আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।

সোনামসজিদ স্থলবন্দরের সঙ্গনিরোধ কীটতত্ত্ববিদ অফিসের কর্মকর্তা তারেক ও পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজার মাইনুল ইসলাম জানান, আমদানি করা পেঁয়াজের অধিকাংশই পচে নষ্ট হয়েছে।

সোনামসজিদ স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুর রহমান বাবু জানান, গত ১৪ সেপ্টেম্বরের আগে খোলা এলসির বিপরীতে আটকেপড়া মহদীপুর স্থলবন্দরে পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে প্রায় ২৪০ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে।

ভারতের ওপারে মহদীপুর স্থলবন্দরে আটকেপড়া পেঁয়াজের গাড়িগুলো পরবর্তী এলসিতে আসার অপেক্ষায় আছে। কিন্তু ভারতীয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি না পাওয়া ও পেঁয়াজ পচে যাওয়ার কারণে গাড়িগুলো ফিরে যাচ্ছে।

মহদীপুর স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শ্রী ভূপতি মণ্ডল জানান, অনুমতি না পাওয়ায় ও পেঁয়াজ নষ্ট হওয়ার কারণে প্রায় ৩০০ ট্রাক এরই মধ্যে ফেরত গেছে। এখনও প্রায় ১০০ পেঁয়াজভর্তি ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। ট্রাকগুলো কবে নাগাদ সোনামসজিদ স্থলবন্দরে প্রবেশ করবে তা বলা যাচ্ছে না।

এদিকে ভোমরা স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীদের মতে, আমদানি করা পেঁয়াজের প্রায় ৪০ শতাংশ পচা। পরিমাণের হিসেবে ৫০০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ পচে গেছে। এর ফলে বিপুল পরিমাণ ক্ষতির মুখে পরেছেন আমদানিকারকরা। শনিবার সাতক্ষীরা জেলার ভোমরা স্থলবন্দরের ওপাড়ে ১৬৫টি পেঁয়াজ ভর্তি ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য অপেক্ষামাণ ছিল। এর মধ্যে মাত্র ৩১টি ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি পায়। বাকি ট্রাকগুলো এখনো অপেক্ষমাণ। তবে অপেক্ষামাণ ট্রাকগুলো আদৌ বাংলাদেশে প্রবেশ করবে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কিছুই বলতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা।

সাতক্ষীরার ব্যবসায়ীরা বলছেন, ১৩ দিন আগে ট্রাক বোঝাই করা হয়েছিল এসব পেঁয়াজ। পেঁয়াজে পচন ধরায় তা রাস্তার ধারে ঢেলে ফেলা হয়েছে। আর বাংলাদেশে প্রবেশ করা ৩১ ট্রাক পেঁয়াজের মধ্যে অর্ধেকই পচা। পঁচা পেঁয়াজ নিয়ে এসে আরও এক ঝামেলায় পড়তে হবে। এ কারণে পেঁয়াজ আমদানিকারকরা ঘোজাডাঙা থেকে ট্রাকগুলো ভারতের অভ্যন্তরে আবার ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছেন।

বন্দর সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পেঁয়াজ বোঝাই যে সমস্ত গাড়ির কাগজপত্র পূবের্ই জমা দেওয়া ছিল কেবলমাত্র সেগুলি ছাড় পেয়েছে। শনিবার সন্ধ্যা নাগাদ মোট ৩১টি গাড়িতে ৭২০ টন পেঁয়াজ ভোমরা বন্দরে এসেছে। রবিবার আর কোনও গাড়ি বন্দরে আসেনি।

ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান নাসিম জানান, ভোমরা বন্দর দিয়ে শনিবার রাত পর্যন্ত ৩১টি পেঁয়াজের ট্রাক দেশে প্রবেশ করেছে। দেশে আসা ট্রাকগুলোর অধিকাংশ পেঁয়াজে পচন ধরেছে। এই মুহূর্তে আর কোনো ট্রাক বন্দর দিয়ে প্রবেশের কোনো নির্দেশনা নেই বলে জানান তিনি।

হিলি স্থলবন্দর দিয়ে রবিবার বাংলাদেশে কোনো পেঁয়াজের ট্রাক প্রবেশ করেনি। এই বন্দর দিয়ে শনিবার ১১ ট্রাক পেঁয়াজ বাংলাদেশে এসেছে, যার অধিকাংশই পচা। এই ধরনের পেঁয়াজ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। অতিরিক্ত গরমে পচে যাওয়া এসব পেঁয়াজ আড়তের সামনে পড়ে আছে। বিকট দুর্গন্ধে ছড়াচ্ছে পচা পেঁয়াজ। এতে শুধু ব্যবসায়ী নয়, পেঁয়াজ পঁচার গন্ধে অতিষ্ঠ পথচারী ও এলাকাবাসী। ব্যবসায়ীরা এসব পেঁয়াজ প্রতিবস্তা ৫০ থেকে একশ টাকা দরে বিক্রি করে দিচ্ছে। এতে চরম লোকসানের মুখে পড়েছে তারা।

দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি ও হাকিমপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ জানান, গত ১৩ সেপ্টেম্বর যেসব পেঁয়াজ এলসি করা হয়েছিলো, সেই ১১ ট্রাক পেঁয়াজ রবিবার ভারত হিলি স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়েছে। বাকি আরো প্রায় দুইশত ট্রাক পেঁয়াজ এখনো ভারতের রাস্তায় আটকা পড়ে আছে।

পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের বন্দর ব্যবস্থাপক মাইনুল ইসলাম জানান, আমদানিকৃত পেঁয়াজের অধিকাংশই পচে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। ভারতের ওপারে মোহদীপুর স্থলবন্দরে আটকে পড়ে পেয়াজের গাড়িগুলো পরবর্তী এলসিতে আসার অপেক্ষায় আছে। যদিও ভারতীয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি না পাওয়ায় বেশিরভাগ গাড়িই আবার ফিরে যাচ্ছে পেঁয়াজগুলো পচে যাওয়ায় কারনে।

এদিকে, বন্দরে পেঁয়াজের গাড়ি প্রবেশের খবরে স্থানীয় বাজারে কেজি প্রতি ১০ টাকা কমে গেছে পেঁয়াজের দাম। তবে গতকালও দেশের খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। আর ভারতীয় পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন ঢাকা টাইমসের সাতক্ষীরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও হিলি (দিনাজপুর) প্রতিনিধি।]

(ঢাকাটাইমস/২০সেপ্টেম্বর/কেআর/ডিএম)