ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারে কুবি কর্মকর্তাদের অসন্তোষ

মাহফুজ কিশোর, কুবি
| আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৪:২৩ | প্রকাশিত : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৪:১৫

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) স্থায়ী রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা থাকা সত্ত্বেও একজন অধ্যাপককে রেজিস্ট্রার পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়েছে প্রশাসন। বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ড. এমরান কবির চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পরপরই ২০১৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি কর্মরত রেজিস্ট্রার মুজিবুর রহমান মজুমদারকে সরিয়ে তৎকালীন শিক্ষক সমিতির সভাপতি, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবু তাহেরকে রেজিস্ট্রার পদে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরবর্তীতে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেলে তাকে রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত) পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

সাধারণত, বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগের জন্য অ্যাডিশনাল রেজিস্ট্রার বা ডেপুটি রেজিস্ট্রার বা সমমানের পদে ৪-৫ বছরের কাজের অভিজ্ঞতাসহ বিশ্ববিদ্যালয়/সরকারি/স্বায়ত্তশাসিত/স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানে ১২-১৫ বছরের প্রশাসনিক কাজের অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়। অথচ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন অধ্যাপককে প্রশাসনিক কাজের অভিজ্ঞতা ছাড়াই এই পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনিক কাজের অভিজ্ঞতা ছাড়া প্রশাসনিক কার্যক্রম চালানোয় বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের। তাছাড়া প্রশাসনিক পদে শিক্ষককে বসিয়ে দেয়ায় নিজেদের ক্যারিয়ার নিয়েও হতাশা আছে অনেক সিনিয়র কর্মকর্তার মাঝে।

সম্প্রতি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী রেজিস্ট্রার নিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন-ইউজিসি’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ।

গত ১৩ সেপ্টেম্বর দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে ২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে রেজিস্ট্রার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বেশকিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার দিয়ে কাজ চালিয়ে নিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের উচিত দ্রুত স্থায়ী রেজিস্ট্রার নিয়োগ দেওয়া।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সিনিয়র প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন, ‘কর্মজীবনে সবারই লক্ষ্য থাকে নিজ ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে বড় জায়গায় যাওয়া। কিন্তু শিক্ষক এসে প্রশাসনিক পদ দখল করলে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সেই সুযোগ নষ্ট হয়। পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক যদি প্রশাসনিক কর্মকর্তা বনে যান তাহলে দিন শেষে ক্ষতিগ্রস্ত হবে শিক্ষার্থী আর বিশ্ববিদ্যালয়। আর একজন রেজিস্ট্রার পদে আছেন কিন্তু তার সার্ভিস নেওয়া হচ্ছে না, বেতন ঠিকই দেওয়া হচ্ছে, এটি রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয়।’

এদিকে প্রাক্তন রেজিস্ট্রার মুজিবুর রহমান মজুমদার নিজের বদলি ও কর্মজীবন প্রসঙ্গে বলেন, ‘উপাচার্য স্যার নিয়োগ পাওয়ার পরপরই আমাকে পদসহ বদলির আদেশ দিয়ে লাইব্রেরিতে যোগদান করতে বলা হয়। অথচ আমি রেজিস্ট্রার পদে স্থায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। আমাকে সরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে সঠিক কোনো কারণ বা অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে ছিলো না। আমি লাইব্রেরিয়ান না, আমার সে বিষয়ে জ্ঞান নেই, তবুও আমাকে পদসহ সেখানে বদলি করা হলো। এটি কিভাবে যৌক্তিক হয় তা আমার জানা নেই।’

রেজিস্ট্রার পদে থাকলে নিজের পছন্দের শিক্ষকদের পদ, প্রমোশন, বিদেশ যাত্রার সুবিধা করে দিয়ে শিক্ষক রাজনীতি করাটা সহজ হয় বলে অনেক শিক্ষকের এই পদের দিকে নজর থাকে বলেও উল্লেখ করেন এই কর্মকর্তা।

এদিকে মুজিবুর রহমানকে লাইব্রেরিয়ান হিসেবে বদলি করায় পদোন্নতি হচ্ছে না ডেপুটি লাইব্রেরিয়ান মহি উদ্দিন তারিক ভূঁইয়ার। অথচ প্রমোশনের জন্য যেসব যোগ্যতা প্রয়োজন সেগুলো তার রয়েছে বলে তিনি দাবি করেছেন। তার জুনিয়র কর্মকর্তাদের ডেপুটি লাইব্রেরিয়ান পদে প্রমোশন হচ্ছে কিন্তু লাইব্রেরিয়ান পদে একজনকে দায়িত্ব দিয়ে রাখায় তিনি পদোন্নতি পাচ্ছেন না।

তারিক ভূঁইয়া বলেন, ‘আমার কারো প্রতি অভিযোগ নেই। আমি আমার কাজের প্রতি আন্তরিক। সে কাজের জন্য যেমন মূল্যায়ন পাওয়ার কথা সেটি না পেলে নিজের মাঝে অনেক সময় হীনম্মন্যতা কাজ করে।’

এ বিষয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক সৈয়দুর রহমান বলেন, ‘যদি প্রাক্তন রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ থাকতো, তবে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করা যেত। তা না করে তাকে সরিয়ে লাইব্রেরিতে দেওয়া হলো, যেখানে তার কোনো কাজ নেই। আর যাকে রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব দেয়া হলো, সেই অধ্যাপক তো বেতন পান অধ্যাপনার জন্য, প্রশাসনিক কাজের জন্য না। আমি মনে করি এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষতি, এটা কখনো হওয়া উচিত না।’

এ বিষয়ে প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তারাই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ প্রসঙ্গে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়শনের সভাপতি জিনাত আমান বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমিও বিব্রত। আমি উপাচার্য স্যারকে বেশ কয়েকবার কর্মকর্তাদের অভিযোগের বিষয়টি জানিয়েছি। এটি একটি বাজে প্রবণতা, যা চালালে চলতেই থাকবে। উপাচার্য স্যার আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন বিষয়টি তিনি দেখবেন।'

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এমরান কবির চৌধুরী বলেন, 'স্থায়ী রেজিস্ট্রার নিয়োগের সিদ্ধান্তের লিখিত নোটিস না আসা পর্যন্ত এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারবো না। অনেক কথাই তো এরকম মুখে শুনি। মুখের কথা আর লিখিত সিদ্ধান্ত তো এক জিনিস না।'

একজন স্থায়ী রেজিস্ট্রারকে সরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিভাগের অধ্যাপককে রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে উপাচার্য বলেন, 'তার বিরুদ্ধে (সাবেক রেজিস্ট্রার) তো কতো অভিযোগ! সেজন্যই তাকে সরিয়ে নতুন একজনকে দায়িত্ব দিয়েছি এবং কাজে গতি এসেছে। আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। ধীরে ধীরে পূরণ হবে সব।'

বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী রেজিস্ট্রার নিয়োগের কোনও পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, 'দেখা যাক। এটা অবস্থা বুঝে, আপাতত আমাদের কাজ ভালো হচ্ছে। বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয়েই অস্থায়ী রেজিস্ট্রারে কাজ চালানো হচ্ছে। সব জায়গায় নেগেটিভিটি খুঁজতে যেও না।'

ঢাকাটাইমস/২১সেপ্টেম্বর/পিএল

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :