প্রধানমন্ত্রীর নথি জালিয়াতি: ছাত্রলীগ নেতাসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

প্রকাশ | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১০:৪৬ | আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১১:১৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি তরিকুল ইসলাম মুমিন (ফাইল ছবি)

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নথি বের করে জালিয়াতির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত বদলে দেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি তরিকুল ইসলাম মুমিনসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ।

সম্প্রতি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তেজগাঁও থানার পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন চার্জশিট জমা দিয়েছেন, যা মঙ্গলবার জানা গেছে।

চার্জশিটভুক্ত অপর আসামিরা হলেন- প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মচারী ফাতেমা খাতুন, নাজিম উদ্দিন, রুবেল, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফরহাদ হোসেন ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালের সাবেক কোষাধ্যক্ষ অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমোডর এম আব্দুস সালাম আজাদ।

আসামিদের মধ্যে এম আবদুস সালাম পলাতক করেছেন। তদন্ত কর্মকর্তা তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছেন। অপর আসামিরা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। তরিকুল ইসলামসহ চারজন দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোষাধ্যক্ষ পদে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম এনামুল হক, বুয়েটের প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. আব্দুর রউফ এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস-এর সাবেক কোষাধ্যক্ষ অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমোডর এম আবদুস সালাম আজাদের নাম প্রস্তাব করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি সার সংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়।

এই নথি প্রধানমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপন করার পর তিনি অধ্যাপক ড. এম এনামুল হকের নামের পাশে টিক চিহ্ন দেন। পরে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য নথিটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর প্রস্তুতি পর্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অফিস সহকারী ফাতেমার কাছে এলে তিনি এম আবদুস সালাম আজাদ অনুমোদন পাননি-গোপনীয় এ তথ্য ফোনে ছাত্রলীগ নেতা তরিকুলকে জানিয়ে দেন।

এরপরেই তরিকুলের পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত ১ মার্চ নথিটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে কৌশলে বের করে ৪ নং গেটের সামনে আসামি ফরহাদের হাতে তুলে দেন ফাতেমা। এ কাজের জন্য ফাতেমাকে আসামিরা ১০ হাজার করে বিকাশে মোট ২০ হাজার টাকা দেয়।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, এরপরেই সেই নথিতে আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে ড. এম এনামুল হকের নামের পাশে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া টিক চিহ্নটি ‘টেম্পারিং’ করে সেখানে ক্রস চিহ্ন দেয়। একইভাবে অধ্যাপক মো. আব্দুর রউফের নামের পাশেও ক্রস চিহ্ন দিয়ে এয়ার কমোডর এম আবদুস সালাম আজাদের নামের পাশে টিক চিহ্ন দেয়। পরে আসামিরা গত ৩ মার্চ তারিখে নথিটি রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠায়। এসব ঘটনা নিয়ে ভাটারা এলাকার সানফ্লাওয়ার রেস্টুরেন্টে আসামি নাজিমের সাথে তরিকুল ও ফরহাদ শলাপরামর্শ করে। তবে তাদের জালিয়াতিটি ধরা পড়ে যায়।

জালিয়াতির এই ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক-৭ মোহাম্মদ রফিকুল আলম বাদী হয়ে গত ৫ মে তরিকুল, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অফিস সহকারী ফাতেমা ও ফরহাদ নামে তিনজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করে পুলিশ।

মামলার পরবর্তীতে ছাত্রলীগ নেতা তরিকুলকে ভোলা এবং আসামি ফরহাদকে নোয়াখালী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়াও আসামি ফাতেমা, রুবেল ও নাজিমকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর তরিকুলকে ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়।

ঢাকাটাইমস/২২সেপ্টেম্বর/এএ/এমআর