ভরা মৌসুমেও তেঁতুলিয়ায় ইলিশের আকাল

প্রকাশ | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৫:৫৪ | আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৫:৫৬

বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

ইলিশের অভয়ারণ্য পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার তেঁতুলিয়া নদীতে এখন ইলিশের আকাল। ভরা মৌসুমেও নদীতে দিন-রাত জাল ফেলে শূন্য হাতে ফিরে আসছেন জেলেরা। গত কয়েক বছর ধরে তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশ না পাওয়ায় কম পুঁজির দরিদ্র জেলেরা হতাশায় ভুগছেন।

তেঁতুলিয়ায় ইলিশ না পাওয়ার কারণ হিসেবে জেলেরা দুষছেন নদীর নাব্য সংকটকে।

ভোলার চরভেদুরিয়া থেকে রাঙ্গাবালির চররুস্তম পর্যন্ত শতাধিক কিলোমিটার ইলিশ প্রজনন ক্ষেত্রের মধ্যে উপজেলার তেঁতুলিয়া নদীর রয়েছে প্রায় ৪০ কিলোমিটার নদীপথ। সুস্বাদু পানির এই নদীর মাছের খ্যাতি দেশজুড়ে রয়েছে। অথচ এই তেঁতুলিয়ায় এখন ইলিশের আকাল।

তেঁতুলিয়ায় ইলিশের আকাল কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে উপজেলার চরবেষ্টিত চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের প্রবীন জেলে বাদশা মাঝি বলেন, এক সময় এই নদীর ওপর নির্ভরশীল ছিল জেলে অধ্যুষিত চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের কম পুঁজির সহস্রাধিক জেলে পরিবার।

এসব জেলের সাগরে যাওয়ার সামর্থ্য না থাকায় তারা ছোট নৌকা ও জাল নিয়ে তেঁতুলিয়ায় মাছ শিকার করতেন। কিন্তু খরস্রোতে তেঁতুলিয়ার সেই রূপ আর এখন নাই। যেখানে সেখানে ডুবোচর সৃষ্টি হওয়ায় ইলিশের বিচরণ কমে গেছে। এ কারণেই তেঁতুলিয়ায় এখন ইলিশের আকাল।

খরস্রোতে তেঁতুলিয়া নদীর নাব্য সংকটের কারণ খুঁজতে গিয়ে জেলে ও নৌ পরিবহন পেশার সঙ্গে যুক্ত এলাকার এমন কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ করলে তারা জানান, নদীর অব্যাহত ভাঙন, নদীর বুকে যেখানে সেখানে পানির গতি প্রবাহ বাধা সৃষ্টি করে ঝাউপেতে মাছ শিকার, অপরিকল্পিত ড্রেজিং ব্যবস্থার কারণে নাব্য সংকট হচ্ছে।

চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের দরিদ্র জেলে মাহবুব রহমান বলেন, সারা বছরই তেঁতুলিয়া নদীর ওপর নির্ভরশীল ছিল তার পরিবার। কিন্তু কয়েক বছর ধরে তেমন কোনো মাছ ধরা না পড়ায় ধারকর্য করে চলতে হয়েছে। কিন্তু কোনোভাবেই তেঁতুলিয়ায় ইলিশ শিকার না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত বড় মহাজন (যারা শিপিং বোর্ড নিয়ে সাগরে যায়) জেলেদের সঙ্গে সাগরে যাই সিজন চুক্তিতে। এভাবেই কোনো রকম সংসার চলে।

এ চিত্র উপজেলার অধিকাংশ জেলের। আবার কোনো জেলে পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশায় চলে গেছেন।

উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, বাউফলে প্রায় নিবন্ধিত জেলে রয়েছে প্রায় আট হাজার। কিন্তু বেসরকারি  হিসাব মতে এই সংখ্যা দ্বিগুণ।

জেলে ও জেলে পরিবারের জীবন মান উন্নয়ন নিয়ে কাজ করা কোডেক নামে একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা অরুন কান্তি বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের যেসব নদীতে ইলিশ পাওয়া যায় তার মধ্যে তেঁতুলিয়া নদীর ইলিশ সবচেয়ে সুস্বাদু। তবে দুঃখের বিষয় এই নদীতেই এখন ইলিশের আকাল। এ নদীতে আবার ইলিশের বিচরণ বাড়াতে হলে সরকারের মৎস্য দপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সমন্বিত পরিকল্পনা করতে হবে।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) জমিস উদ্দিন বলেন, নদীতে ঝাউপেতে মাছ শিকার অবৈধ। শুধু ঝাউ নয়। নদীর গতিপথ বাধাগ্রস্ত হয় এমন কোনো কিছুই বৈধ না। এ ধরনের সব কিছুই অপসারণ করা হবে আগামী ১৪ অক্টোবরের প্রজনন সময়ের আগে।

(ঢাকাটাইমস/২২সেপ্টেম্বর/কেএম)