লজিস্টিক ব্যবস্থাপনায় পিছিয়ে বাংলাদেশ: ডিসিসিআই

অর্থনৈতিক প্রতিবদেক
 | প্রকাশিত : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৭:৩৬

অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং অবকাঠামো খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করলেও বাংলাদেশ লজিস্টিক ব্যবস্থাপনায় বেশ পিছিয়ে রয়েছে বলে মনে করে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। যার কারণে আমদানি-রপ্তানিতে সময় বেশি লাগছে। এতে অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে। এ জন্য দেশের কাঙ্খিত অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিতকল্পে লজিস্টিক নীতিমালা প্রণয়ন, সংশ্লিষ্ট সকল স্টেকহোল্ডার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য একক সংস্থা গঠন চায় সংগঠটি।

মঙ্গলবার ঢাকা চেম্বার আয়োজিত ‘লজিস্টিকস: বাংলাদেশের আন্তঃবাণিজ্যের বর্তমান প্রেক্ষিত ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।

ডিসিসিআইর সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, লজিস্টিক ব্যবস্থাপনা আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম নিয়ামক, যেটি বৈশ্বিক বাণিজ্যে সময়মত এবং কম খরচে পণ্য ও সেবা সরবরাহ নিশ্চিতকল্পে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

তিনি বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং অবকাঠামো খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করলেও বাংলাদেশ লজিস্টিক ব্যবস্থাপনায় বেশ পিছিয়ে রয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারির সময়ে অপর্যাপ্ত লজিস্টিক সুবিধার অভাবে চলতি বছরে আমাদের রপ্তানি প্রায় ১৭ শতাংশ কমে গেছে। যেখানে বৈশ্বিক বাণিজ্যে এর পরিমাণ প্রায় ২৮ শতাংশ।

বৈশ্বিক লজিস্টিক সূচক ২০১৮’ অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান ১০০ এবং এক্ষেত্রে আমাদের প্রতিযোগী এশিয়ার অন্যান্য দেশসমূহের তুলনায় বাংলাদেশে বেশ পিছিয়ে রয়েছে বলে তিনি জানান।

ডিসিসিআই জরিপের তথ্য তুলে ধরে ডিসিসিআইর সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, দেখা যায়, কোভিড মাহামারির কারণে ৪২ শতাংশ মনে করেন, ফ্যাক্টরি থেকে সমুদ্র বন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ১৫ দিনের বেশি সময় প্রয়োজন হয় এবং ৬২ শতাংশ উদ্যোক্তার সমুদ্র বন্দর থেকে কারখানা পর্যন্ত পণ্য আমদানিতে ১৫ দিনের বেশি সময় লেগেছে বলে মত প্রকাশ করেন।

ডিসিসিআই সভাপতি উল্লেখ করেন, বিশ্বব্যাংক-এর তথ্য মতে রাস্তাঘাটে যানজট নিরসন ও লজিস্টিক ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা উন্নয়ন করা গেলে ব্যবসা পরিচালনায় প্রায় ৭-৩৫ শতাংশ ব্যয় হ্রাস করা সম্ভব। তিনি জানান, বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রায় ৯০ শতাংশ সমুদ্রবন্দরের উপর নির্ভরশীল হলেও আমাদের বন্দরসমূহ এখনও পুরোনো প্রযুক্তি এবং ব্যবস্থাপনার উপর নির্ভরশীল।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি দেশের কাঙ্খিত অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিতকল্পে দেশের বন্দরসমূহে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স প্রক্রিয়ার অটোমেশন সহ বন্দরে কন্টেনার ধারণ সক্ষমতা বৃদ্ধি, গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপন, লজিস্টিক নীতিমালা প্রণয়নে সরকারি সংস্থা, বন্দর কর্তৃপক্ষ ও বেসরকারিখাতের মধ্যকার সমন্বয় বাড়ানো, উন্নতদেশসমূহের ন্যায়, লজিস্টিক ও ওয়ারহাউস পার্ক’ স্থাপন এবং আমদানিকৃত কাঁচামাল সংরক্ষণে বন্ডেড ওয়ারহাউস স্থাপনের উপর গুরুত্বারোপ করেন।

বিজিএমইএর সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সেবা নিশ্চিতকরণে আমাদের একটি নিজস্ব মানদণ্ড থাকতে হবে এবং প্রতিনিয়ত তা নজরদারির আওতায় রাখতে হবে।

ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সানেমর নির্বাহী পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের ‘লজিস্টিক পারফ্যামেন্স সূচক”-এর প্রধানত কাস্টমস, অবকাঠামো, আন্তর্জাতিক শিপমেন্ট, লজিস্টিক মান ও দক্ষতা, ট্রাকিং অ্যান্ড ট্রেসিং এবং সময় উপযোগিতা-এ ছয়টি বিষয়টিকে বিবেচনা করা হয়।

তিনি বলেন, লজিস্টিক সেবা প্রদানে বাংলাদেশ প্রতিযোগী দেশগুলোর চেয়ে বেশ পিছিয়ে রয়েছে এবং লজিস্টিক সুবিধা প্রাপ্তির অভাবে আমাদের রপ্তানি বহুমুখীকরণ প্রক্রিয়া মারাতœকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

নির্ধারিত আলোচনায়বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট-এর অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার সামির সাত্তার, পলিসি এক্সচেঞ্জ-এর চেয়ারম্যান ড. এম মাশরুর রিয়াজ, পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউট (পিআরআই)-এর চেয়ারম্যান ড. জায়েদী সাত্তার, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি-এর সভাপতি মাহবুবুল আলম, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ-এর সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. জাফর আলম এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর ফার্স্ট সেক্রেটারি (কাস্টম অ্যান্ড ভ্যাট) মো. আকবর হোসেন অংশগ্রহণ করেন।

মুক্ত আলোচনায় বিল্ডের চেয়ারম্যান এবং ঢাকা চেম্বারের প্রাক্তন সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, লজিস্টিক সেবা প্রদানে একটি স্বতন্ত্র সংস্থা স্থাপন এবং একটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে সকল সংস্থার অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণে সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়ন করা প্রয়োজন। এছাড়াও তিনি ‘লজিস্টিক’ কে একটি থ্রাস্ট সেক্টর হিসেবে ঘোষণা করার প্রস্তাব করেন। আবুল কাসেম খান আরো বলেন,ভিয়েতনামের মত ‘গ্লোবাল ডিস্ট্রিবিউশন সেন্টার’-এর আদলে কমন বন্ডেড ওয়ারহাউজিং’ স্থাপন করা যেতে পারে যা আমাদের ছোট ছোট দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল প্রাপ্তিতে সহায়ক হবে।

(ঢাকাটাইমস/২২সেপ্টেম্বর/জেআর/ইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অর্থনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অর্থনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :