এক টাকাও বিতরণ করেনি ৯ ব্যাংক

করোনাকালে কৃষিঋণ বিতরণ ও আদায় বেড়েছে

প্রকাশ | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১১:৫২ | আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১২:০১

রহমান আজিজ, ঢাকাটাইমস

করোনাভাইরাস মহামারীর (কোভিড-১৯) সময়ে কৃষিঋণ বিতরণ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর একই সময়ে যে পরিমাণে কৃষিঋণ বিতরণ হয়েছিল করোনাকালীন তার প্রায় দ্বিগুণ বিতরণ হয়েছে। অন্যদিকে আদায়ের হারও বেড়েছে গতবারের চেয়ে। তবে নয়টি ব্যাংক এখনো এক টাকাও বিতরণ করেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে জুলাই-আগস্ট দুই মাসে কৃষি ঋণ বিতরণ হয়েছে তিন হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ১৩ দশমিক ১৫ শতাংশ। এ বছর কৃষিঋণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২৬ হাজার ২৯২ কোটি টাকা। অন্যদিকে গত বছরের একই সময়ে বিতরণ হয়েছিল এক হাজার ৯৭০ কোটি টাকা। যা বছরের মোট লক্ষ্যমাত্রার ৮ দশমিক ১৭ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে কৃষিঋণ বিতরণে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৪ হাজার ১২৪ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে কৃষি ঋণ বিতরণে তদারকি বৃদ্ধির কারণে কৃষিঋণ বিতরণ ও আদায় দুইই বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, দুই মাসে কৃষিঋণ বিতরণ ইতিবাচক ধারাতে থাকলেও একক ব্যাংক হিসাবে ৯ বাণিজ্যিক ব্যাংক ঋণ বিতরণই শুরু করেনি। এ সব ব্যাংক হলো  বেসরকারি বাণিজ্যিক বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, সীমান্ত ব্যাংক ও ইউনাইটেড কমাশিয়াল ব্যাংক। বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি ব্যাংকের মধ্যে সিটি ব্যাংক এনএ, এইচএসবিসি, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া এবং উরি ব্যাংক। অন্যদিকে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এগিয়ে থাকা ব্যাংকগুলো হলো-কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন, হাবিব ব্যাংক, শাজালাল ইসলামী ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক ও উত্তরা ব্যাংক।  টাকার অংকের সর্বোচ্চ ৮৬৯ কোটি টাকার বিতরণ করে এগিয়ে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এবং ২৬৪ টাকা বিতরণ করে এগিয়ে আছে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। 

জানা গেছে, করোনা মহামারীর কারণে পুরো অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্থ হলেও কৃষি সচল ছিল। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যবেক্ষণ ছিল। এর ফলে কৃষিতে যেমন উৎপাদন হয়েছে, আবার বাজারজাতও হয়েছে। বন্যা ও করোনার কারণে দেশব্যাপি সাধারণ ছুটির কারণে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হলেও উৎপাদন ও বাজারজাত ইতিবাচক ধারাতে ছিল, সরকারের বিভিন্ন প্রনাদনা ছিল। এ কারণে কৃষকরা যেমন ঋণ গ্রহণ করেছে, আবার মেয়াদ শেষের ঋণ ফেরতও দিয়েছে। এ সময়ে ঋণ বিতরণে ব্যাংকের বিরুদ্ধে অভিযোগও ছিল।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, কৃষি ঋণ বিতরণের পাশাপাশি আদায়েও ইতিবাচক ধারায় চলমান আছে। দুই মাসে কৃষিঋণ আদায় হয়েছে চার হাজার ১১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। যা বিতরণকৃত ঋণের ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ।  আগের বছর একই সময়ে আদায় হয়েছিল দুই হাজার ৬৮৪ কোটি ৯৪ লাখ টাকা এবং মোট বিতরণকৃত ঋণের  ৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ। 

জানা গেছে, কৃষিঋণ বিতরণে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বাধ্য বাধকতা আছে। মোট বিতরণ করা ঋণের ২ শতাংশ কৃষিখাতে বিতরণ করতেই হবে। এবং সুদ হার কোনভাবেই ৯ শতাংশের উপরে রাখা যাবে না। কোন ব্যাংকের পল্লী অঞ্চলে কৃষিঋণ বিতরণের জন্য শাখা না থাকলে তাকে ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থার মাধ্যমে বিতরণ করতে হবে। এবং গ্রাহক পর্যায়ে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথোরিটি নির্দেশিত সুদ হার সর্বোচ্চ ২৪ শতাংশ প্রয়োজ্য হবে।  যদি কোন ব্যাংক কৃষিঋণ বিতরণে ব্যর্থ হয় তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংকে থাকা ওই বাণিজ্যিক ব্যাংকের কারেন্ট একাউন্ট থেকে টাকা কর্তন করা হবে। এ ধরণের শাস্তিমূলক ব্যবস্থার ফলে অন্যান্য ঋণ বিতরণের পাশাপাশি প্রতিবছর কৃষিঋণ বিতরণ বাড়ছে। ২০০৯ সালে বিতরণ করা কৃষিঋণের পরিমান ছিল ১০ হাজারের কাছাকাছি। চলতি বছরে যা ২৯ হাজার ২৯২ কোটি টাকাতে ঠেকবে।

ঢাকাটাইমস/২৩সেপ্টেম্বর/আরএ/ডিএম