একজন শেখ হাসিনা-জাতির পিতার রেখে যাওয়া সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ

প্রকাশ | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৪:৪১

ফাহিম রহমান খান রনি

স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ষড়যন্ত্র শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে এদেশের রাজনীতি থেকে নিশ্চিহ্ন করার। কিন্তু বঙ্গবন্ধু-কন্যা, বাংলার কোটি মানুষের প্রাণপ্রিয় নেত্রী, আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা; স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে দীর্ঘ নির্বাসন শেষে ৮১ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের মাটি স্পর্শ করে আওয়ামী লীগের পতাকা হাতে তুলে নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ তথা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সমুন্নত রেখে অর্থনৈতিক মুক্তির দায়িত্বভার গ্রহণ করে উন্নীত করেছেন বাংলাদেশকে আজ অনন্য উচ্চতায়।

কোনো প্রধানমন্ত্রী সৎ ও আন্তরিক থাকলে যে দেশের উন্নয়ন হয় তার প্রমাণ জাতির পিতার কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। শুধু আন্তরিকতা বা সততায় শেখ হাসিনার শক্তি না। তিনি বিশ্বাস করেন আমরা পারি, বাঙালিরা পারে। শেখ হাসিনা বারবার একটি কথা বলেন, ‘আমরা যেহেতু মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিজয় অর্জন করেছি তাই কোনো বিজয়ী জাতি কখনো মাথা নত করে থাকতে পারে না। ‘

এই একটি মন্ত্রই দেশরত্ন শেখ হাসিনার হয়তো মূলমন্ত্র। তাই তো আমরা দেখি যুদ্ধাপরাধী, যারা বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাই শুধু করেনি, হত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুট ও ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধ করেছিল তাদের বিচার করেছেন তিনি। আর এই বিচার বাধাগ্রস্ত করতে বিএনপি-জামায়াতসহ দেশি-বিদেশি নানা মহল দেশরত্ন শেখ হাসিনার ওপর প্রভাব বিস্তার করতে চেয়েছিল। কিন্তু শেখ হাসিনার দৃঢ়তায় সেটা সম্ভব হয়নি।

দেশ ও জাতিকে রক্ষায় করোনাকালে অবিচল, দৃঢ়চেতা নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা একাই লড়াই করে যাচ্ছেন। তবে এই একা লড়াই তার জীবনে প্রথম নয়। বরং সারা জীবন দলে ও দলের বাইরে তাকে মূলত একাই লড়তে হয়েছে। আর এই লড়াইয়ের শুরু তার ছাত্ররাজনীতির জীবন থেকেই। শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবন ছাত্রী অবস্থা থেকেই শুরু। দেশে তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ছাত্রলীগের সম্মেলনে শেখ হাসিনা দুঃখ করে বলেছিলেন, তিনি অনুরোধ করা সত্ত্বেও তার সময়ের ছাত্রলীগ নেতৃত্ব তাকে ছাত্রলীগের কমিটিতে একটি সদস্যপদ দেননি। পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সে সময়ে আওয়ামী লীগের অঘোষিত একক নেতা। তিনি ছাত্ররাজনীতিতে সক্রিয় স্কুলজীবন থেকেই। আর যখন সদস্যপদ চেয়েছিলেন তার আগেই ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ মহিলা কলেজটির সংসদের ভিপি হিসেবে নির্বাচিত হয়ে তার ছাত্ররাজনীতির যোগ্যতা প্রমাণ করে এসেছেন। তাই ছাত্ররাজনীতিতে তাকে এগোতে হয়েছিল পদ-পদবি ছাড়াই। ছাত্ররাজনীতি শেষে সক্রিয় রাজনীতি থেকে তাকে দূরে থাকতে হয়েছিল কিছুদিন স্বামীর উচ্চশিক্ষার কারণে।

সে সময়েই তার এবং জাতির জীবনে আসে সবচেয়ে বড় বিপর্যয়। সপরিবারে নিহত হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রবাসে বসে এ ভয়ানক দুঃসংবাদটি পান বঙ্গবন্ধু-কন্যা। অত্যন্ত বেদনাদায়ক হলেও ভেঙে পড়েননি শতভাগ। আজ ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সে সময়েও তিনি দেশ ও জাতির জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সে সময়ে বাংলাদেশের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেনকে প্রবাসেই শেখ হাসিনা অনুরোধ করেছিলেন আপনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে একটি বিবৃতি দেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে যে সরকার গঠিত হয়েছে তা অবৈধ।

কিন্তু ড. কামাল কথা রাখেননি। সে সময়ে পৃথিবীর অনেক বড় নেতাই বঙ্গবন্ধুর হত্যাকে মেনে নিতে পারেননি। তারা চাচ্ছিলেন বাংলাদেশের সরকারের ভেতর থেকে এবং সরকারি দলের ভেতর থেকে এর একটা প্রতিবাদ হোক। তাছাড়া বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ উঠলে ইউরোপের গণতান্ত্রিক দেশগুলোর নেতা ও জনগণ অবশ্যই সে প্রতিবাদকে সমর্থন করতো, সমর্থন মিলতো আমেরিকার গণতন্ত্রকামী জনগণেরও।

১৯৮১ সালের ১৭ মে পর্যন্ত এই প্রবাস জীবনে শেখ হাসিনা কখনো রাজনীতি থেকে দূরে থাকেননি। বরং তিনি তখনই যুক্ত হতে চেয়েছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় রাজনীতির সঙ্গে। যদি এটা করা হতো তা হলে আরও ২-৩ বছর আগেই শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে দেশে ফিরতে পারতেন। আজ ইতিহাস পর্যালোচনা করে বলা যায়, নেত্রী আরও আগে দেশে ফিরলে ইতিহাস ভিন্ন হতে পারতো। গণআন্দোলনের ভেতর দিয়ে যেমন এরশাদের পতন ঘটেছিল, এই পতনটি খুনি জিয়ারও হতো।
৭৯ সালে প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতির ভিত্তি শক্তিশালী করার আগে যদি সামরিক সরকারকে গণআন্দোলনের মাধ্যমে উৎখাত করা সম্ভব হতো তা হলে বাংলাদেশে প্রতিক্রিয়াশীলরা আজ এভাবে শক্তিশালী হতে পারতো না।

সেদিন আওয়ামী লীগের অনেক বড় বড় নেতা চাননি বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হোক। বরং বঙ্গবন্ধু-কন্যার ইচ্ছা তার নেতা-কর্মীদের কাছে প্রকাশ পাওয়ায় পরিস্থিতি বদলে যায়। অন্যদিকে দলের ভাঙনের বদলে শেখ হাসিনার ইচ্ছাকেই সেদিন বড় নেতাদের মেনে নিতে হয়েছিল। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক রাজনীতি এখানে একটি বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছিল। সেদিন পৃথিবীর প্রগতিশীল অংশ চেয়েছিল আওয়ামী লীগের শক্তিশালী নেতৃত্ব। আর ততদিনে প্রমাণিত হয়ে গেছে বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা ফিরে এসে নেতৃত্ব নেওয়া ছাড়া আওয়ামী লীগে কোনো শক্তিশালী নেতা নেই।
১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনার দেশে ফেরায় বাংলাদেশে একটা পরিবর্তন শুরু হয়। প্রকাশ্যে যা ঘটেছিল তা ছিল জনসমাগম। প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে সেদিন ঢাকার রাজপথে যে মানুষ নেমে এসেছিল তা একটি গণঅভ্যুত্থান ঘটানোর জন্য যথেষ্ট ছিল। এর আগে কখনোই ঢাকায় এত জনসমাগম হয়নি। ওই বিশাল জনসভায় জনগণ শুধু একটি সুরই তুলেছিল; শেখ হাসিনা, শেখ হাসিনা। এর ভেতর দিয়ে চিহ্নিত হয়ে যায় আওয়ামী লীগের কর্মী, সমর্থক এবং স্বাধীনতার পক্ষের মানুষের নেতা আজ থেকে বঙ্গবন্ধু-কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা।

খুনি জিয়ার আশঙ্কা ছিল বঙ্গবন্ধু-কন্যা বিপুল মানুষকে আজই যেকোনো সংগ্রামের দিকে ঠেলে দিতে পারেন। এই ভয়ে জিয়া পূর্বঘোষিত সব প্রোগ্রাম বাতিল করে ক্যান্টনমেন্টে লুকিয়ে ছিলেন। সকলে বুঝতে পেরেছিলেন জনতা তাদের নেতাকে বরণ করে নিয়েছে। নেতা এবং জনতার মাঝখানে আর কোনো অবস্থান নেই। অন্যদিকে জিয়া আশঙ্কা করেছিলেন- বঙ্গবন্ধু-কন্যা জনতাকে সহিংস পথে ঠেলে দেবেন, তিনি তা করেননি। জানিয়ে দিয়েছিলেন ‘শোককে শক্তিতে পরিণত করুন‘।

প্রথম দিনেই এককভাবে তিনি বাংলাদেশের রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ যেমন হাতে উঠিয়ে নিলেন, তেমনি তার গুণগত পরিবর্তনও করলেন। বঙ্গবন্ধু-কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার এ রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন করা তৎকালীন সরকার মিলে তিনটি শ্রেণি মেনে নিতে পারেনি। এক. দলের ভেতর থাকা হঠকারী গ্রুপ, দুই. স্বার্থবাদী গ্রুপ, তিন. যে অপশক্তি বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ভেতর দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছিল তারা।

২০০৭ সালের ১/১১-এ সামরিক বাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে যখন দেশকে বি-রাজনীতিকরণের চেষ্টা করে ওই সময় একমাত্র জননেত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া সকল রাজনৈতিক নেতাই তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। তখন দেশের মানুষ চাক্ষুষ প্রমাণ পায় বাংলাদেশে একমাত্র সাহসী ও আপসহীন রাজনৈতিক নেতা শেখ হাসিনা।

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলার মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু-কন্যা টানা তৃতীয় মেয়াদে বাংলার মানুষের ম্যান্ডেট নিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত। বাংলার মানুষের কাছে বঙ্গবন্ধু-কন্যার ইমেজ তার প্রতি এ জাতির আস্থা-বিশ্বাস বিশ্বের যেকোনো জনপ্রিয় নেতাকেই হার মানিয়েছে। আস্থা-বিশ্বাসের সঙ্গে সর্বস্তরের জনসাধারণের শ্রদ্ধা-ভক্তি অর্জন অনেক বেশিই অমূল্য যা শুধুমাত্র ইতিহাসের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুই অর্জন করতে পেরেছিলেন।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, জয়তু প্রাণপ্রিয় নেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা।

লেখক: সদস্য, মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ