নরসিংদীতে পাঁচ মাস ধরে নিখোঁজ পরিবহন ব্যবসায়ী

প্রকাশ | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২১:২৬

নরসিংদী প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

নরসিংদীতে ব্যবসায়িক লেনদেনের বিরোধের জের ধরে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যাওয়ার পর পাঁচ মাস ধরে নিখোঁজ রয়েছেন শাহ আলম সিকদার (২৯) নামে এক পরিবহন ব্যবসায়ী। শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী নিখোঁজ শাহ-আলম সিকদার নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার বরপা গ্রামের আবু সাঈদ সিকদারের ছেলে। তিনি নরসিংদী সদর উপজেলার শীলমান্দি এলাকায় স্ত্রীসহ শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন।

নিখোঁজের ঘটনায় শাহ আলমের মা জাবেদা বেগম প্রথমে নরসিংদী সদর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি ও পরে অপহরণ করে গুম করার অভিযোগ এনে ছয়জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগ করেছেন। আদালত সদর মডেল থানাকে অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করার নির্দেশ দেয়।

মামলার আসামিরা হলেন- নরসিংদী শহরের তরোয়া এলাকার মামুন, খাজা, আল-আমীন কাজী, সদর উপজেলার শীলমান্দী এলাকার আব্দুল মালেক, ফালাইন্না ও রায়পুরা উপজেলার মরজাল এলাকার জাহাঙ্গীর। এ ঘটনায় পুলিশ মামলার এজহারভুক্ত ফালাইন্না নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

নিখোঁজ শাহ আলমের মা জাবেদা বেগমের অভিযোগ, মামলার বিবরণ ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার শীলমান্দিতে শ্বশুরবাড়িতে বসবাস করে পণ্য পরিবহনের কাজে দুটি পিক-আপভ্যান (মিনিট্রাক) ভাড়া দিয়ে সংসার চালাতো শারীরিক প্রতিবন্ধী শাহআলম। পরিবহন ব্যবসার সূত্র ধরে মামুন, খাজা, আল-আমীন কাজী, আব্দুল মালেক, ফালাইন্না ও জাহাঙ্গীরের সাথে পরিচয় হয় শাহ আলমের।

পরে ব্যবসায়িক লেনদেন নিয়ে তাদের সাথে বিরোধ সৃষ্টি হয় প্রতিবন্ধী শাহ-আলমের। এই বিরোধের জের ধরে গত ৫ মে সন্ধ্যায় শাহ আলমকে তার শ্বশুরবাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় আব্দুল মালেক। এসময় আগে থেকেই সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে অপেক্ষা করছিল সহযোগী মামুন। তারা প্রতিবন্ধী শাহ আলমকে সিএনজিতে উঠিয়ে নিয়ে যায় এবং অন্যান্য সহযোগীরা অপর একটি সিএনজি করে পিছু নেয়। শাহ আলমকে উঠিয়ে নেয়ার পর আর বাড়িতে ফিরে আসেনি ব্যবসায়ী শাহ আলম। বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও ছেলের সন্ধান করতে পারেননি তার বৃদ্ধা মা।

নিখোঁজের ঘটনায় শাহ আলমের মা জাবেদা বেগম ১৪ মে সদর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও ছেলের কোন সন্ধান না পেয়ে এবং থানায় মামলা গ্রহণ না করায় গত ১০ আগস্ট নরসিংদীর অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ছয়জনকে আসামি করে অপহরণ করে গুম করার অভিযোগ করেন। আদালত নরসিংদী সদর মডেল থানাকে মামলাটি নথিভুক্ত করার নির্দেশ দেয়। পরে আদালতের নির্দেশে ১ সেপ্টেম্বর সদর মডেল থানায় মামলাটি নথিভুক্ত করে পুলিশ। নিখোঁজের পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও ছেলের সন্ধান না পেয়ে পাগল প্রায় তার বৃদ্ধা মা ও স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যরা। ছেলেকে ফিরে পেতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পদক্ষেপ কামনা করেন তারা।

শাহ আলমের মা জাবেদা বেগমের অভিযোগ, দীর্ঘ চারটি মাস পেরিয়ে গেলেও ছেলের কোন সন্ধান পাইনি। পরে বাধ্য হয়ে ছয়জনের নাম উল্লেখ করে ছেলেকে অপহরণ করে গুমের অভিযোগ করি আদালতে। আমার একমাত্র ছেলেটাকে তারা অপহরণ করে গুম করে ফেলেছে।আমি আমার ছেলেকে ফেরত চাই।

মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী নুরুল হক তালুকদার বলেন, আমরা আদালতে অপহরণ করে হত্যা ও গুম মামলার আবেদন করলে আদালত অপহরণ করে গুমের মামলাটি আমলে নিয়ে সদর মডেল থানাকে মামলাটি নথিভুক্ত করার নির্দেশ প্রদান করে। এজাহারভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তার করলেই নিখোঁজ প্রতিবন্ধী শাহ আলমের হদিস পাওয়া যাবে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক সেতাব আলী খান বলেন, মামলাটি ১ সেপ্টেম্বর থানায় রেকর্ড করা হয়েছে এবং তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ভিক্টিম উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত কোন কিছু বলা যাচ্ছে না। নিখোঁজ শাহ আলমের পিক-আপ চালক ফালাইন্নাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সে কিশোর হওয়ায় তাকে গাজীপুর কিশোর অপরাধ সংশোধনী কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।পলাতক বাকি আসামিদের গ্রেপ্তার করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার দত্ত চৌধুরী বলেন, মামলাটি নেওয়া হয়নি বাদীর এই অভিযোগটি মিথ্যা। আমরা শাহ আলমের নিখোঁজ ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি করেছি, পরে আদালতের নির্দেশে অপহরণ করে গুম করার অভিযোগের মামলাটি নথিভুক্ত করেছি।

(ঢাকাটাইমস/২৪সেপ্টেম্বর/এলএ)