শেখ হাসিনা: আধুনিক বাংলাদেশের আলোকবর্তিকা

প্রকাশ | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৫:২৬

কাওসার রহমান

রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। দেশের কল্যাণ কামনায় যিনি থাকেন সবসময় অতন্দ্র প্রহরী। দেশের যেকোন সমস্যায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে। টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন হয়ে দূরদর্শী নেতৃত্বে দেশকে অকল্পনীয় উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। এক যমুনা নদীর ওপর সেতু তৈরির সিদ্ধান্ত নিতে আগের সরকারগুলোর লেগেছে প্রায় দুই দশক। আর সেখানে ১১ বছরেই ১০ মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে অর্ধেকেরও বেশি বাস্তবায়নও করে ফেলেছেন। তার আগে দুই দশকে চেষ্টা করে নেয়া সেই যমুনা সেতুর নির্মাণ কাজও সম্পন্ন করতে হয়েছে শেখ হাসিনাকেই।

এদেশের মানুষের ভালবাসায় সিক্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে চার মেয়াদে রাষ্ট্রক্ষমতায় আছেন। আর যে দলের হয়ে তিনি এই দেশকে সমৃদ্ধিও পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এদেশের সেই ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন গত ৩৯ বছর ধরে। দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব গ্রহণের পর থেকে দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে দলকে সুসংগঠিত করেন এবং ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো সরকার গঠন করেন। এরপর ২০০৮ সালে দ্বিতীয়, ২০১৪ সালে তৃতীয় এবং ২০১৮ সালে চতুর্থ বারের মতো নির্বাচনে জয়লাভ করে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্টিত হয়ে মাত্র ৫ বছরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসকে স্বমহিমায় উদ্ভাসিত করেছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্ত্রের ঝনঝনানি তিনি বন্ধ করেছেন ‘শান্তি চুক্তি’ করে। এরমধ্য দিয়ে যুগ যুগ ধরে চলা পার্বত্য অঞ্চলের রক্তাক্ত অধ্যায়ের অবসান হয়েছে। প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে পদ্মা নদীর পানি বন্টনে ঐতিহাসিক চুক্তি করে মৃতপ্রায় নদীটিকে আবার জীবন্ত করেছেন।   

২০০৯ সালে পুনরায় রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্টিত হয়ে সাময়িক ছেদ কাটিয়ে উঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে আরো প্রস্ফুটিত করেছেন, প্রজ্জ্বলিত করেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুদীর্ঘ ২৪ বছরের লড়াই সংগ্রাম আর মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন স্বার্বভৌম বাংলাদেশের প্রকৃত ইতিহাস বর্তমান প্রজন্ম জানতে পারছে, অনুধাবন করতে পারছে। 

একবিংশ শতাব্দীতে বিশ্বের আর কোনো দেশ উন্নতির এমন অসাধ্য সাধন করতে পারেনি, যেমন পেরেছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ। একটি স্বল্পোন্নত দেশ থেকে, নিম্ন মধ্যম আয়ের পথ পেরিয়ে উন্নত বাংলাদেশে পরিণত হওয়ার দিকে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলার কা-ারি দেশরতœ শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার সরকার নিজস্ব অর্থায়নে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর মূল কাজের উদ্বোধনের মাধ্যমে দেখিয়ে দিয়েছে বাঙালি সবই পারে, আমরাও পারি। এই সেতুটি নির্মাণ করতে গিয়েও সরকারকে অনেক দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হয়েছে। ইতোমধ্যে সেতুর প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। যোগাযোগ ক্ষেত্রে সারা দেশের চিত্রই পাল্টে গেছে। ঢাকায় প্রবেশের ক্ষেত্রে সব মহাসড়কই চার লেনে উন্নীত করা হয়েছে। পিছিয়ে নেই অভিবাসন ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে। ইন্টারনেট ব্যবহারে সহজলভ্যতা, বিদ্যুৎ উৎপাদনে অভাবনীয় সাফল্য, দুর্যোগ মোকাবেলা, কৃষি উন্নয়ন, শিক্ষার হার বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া হয়েছে। শুধু কী তাই, দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা সমুদ্রসীমা নির্ধারণে আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিজয়ও বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতিকে করে তোলে অপরিসীম গৌরবান্বিত। ভারতের সঙ্গে অনিষ্পন্ন ছিটমহল বিনিময় চুক্তি করে নিজেকে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন শেখ হাসিনা। আজ তারই হাত ধরে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ও যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসিতে ঝোলানোর মধ্য দিয়ে দেশ দায়মুক্ত, কলঙ্কমুক্ত হতে পেরেছে।

কোন একটি দেশ তখনই এগিয়ে যায়, যখন ওই দেশটির নেতৃত্বদানকারী নেতা ও সরকারের ‘ভিশন’ থাকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সেই ভিশন নিয়েই দেশ পরিচালনা করছেন। তার বর্তমান ভিশন হলো ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করা। শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্ব সেই পথেই এগিয়ে চলছে দেশ।  

তাঁর নেতৃত্বে দেশের মানচিত্র দ্বিগুণ হয়েছে। বেড়েছে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ। বাড়ছে অর্থনৈতিক সক্ষমতা। হ্রাস পেয়েছে দেশের দারিদ্রতা। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে দেশ। ফিরে এসেছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। জঙ্গি দমনে সফলতা এসেছে। এখন কঠোর মনোভাব নিয়ে দুর্নীতি দমনে কাজ করে যাচ্ছেন। ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়ার মতো প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর মতো সুসম্পর্ক বজায় রেখে কুটনৈতিকভাবে নজর কাড়া সাফল্য দেখিয়েছেন তিনি।

মাথাপিছু গড় আয় ও আয়ু ও বৈদেশিক রিজার্ভ ব্যবস্থায় সর্বকালের নজরকাড়া উন্নয়ন হয়েছে। মাথাপিছ গড় এখন ২ হাজার মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৯-২০ শেষে দেশের মানুষের মাথাপিছু গড় আয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৪ ডলার। গড় আয়ু এখন ৭২.৬ বছর। গত এক দশকে বাংলাদেশ ৫ শতাংশের বৃত্ত ভেঙ্গে ৬, ৭ এবং ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ।  আর করোনার মধ্যেও বাংলাদেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ। 

‘দ্য স্পেক্টেটর ইনডেক্স’-এ প্রকাশিত বিশ্বের ২৬টি শীর্ষ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশের তথ্যের ভিত্তিতে দেখা যায় বাংলাদেশ জিডিপিতে (মোট দেশজ উৎপাদন) অর্জন করেছে বিশ্বের সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি। ২০০৯ সাল থেকে শুরু করে ২০১৯ পর্যন্ত এ দেশের সবচেয়ে সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের ১১ বছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ছিল সারা বিশ্বে সবার ওপরে। 

যে সোনার বাংলার স্বপ্ন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু দেখেছিলেন, যে অর্থনৈতিক মুক্তি চেয়েছিলেন মানুষের, যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ গড়তে চেয়েছিলেন সবার জন্য, তাঁরই সুযোগ্য কন্যা সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার দূরদর্শী  নেতৃত্বে সে পথেই তর তর করে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ‘দ্য ওয়ার্ল্ড ইন ২০৩০ : আওয়ার লং টার্ম প্রজেকশনস ফর ৭৫ কান্ট্রিজ’ শিরোনামের রিপোর্টে দেখানো হয়েছে, ২০১৮ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে অবস্থানের দিক থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতি ১৬ ধাপে উন্নীত হবে, যা অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় অধিক। হংকং সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশনের (এইচএসবিসি) সর্বশেষ গ্লোবাল রিসার্চে বলা হয়েছে, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) নিরিখে বিশ্বের ২৬তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। 

যেমন বেড়েছে দেশের অর্থনীতির আকার, তেমনই বিস্তৃত হয়েছে বৈদেশিক বাণিজ্য। বৈদেশিক পণ্য রফতানি আয়ে অর্জিত হয়েছে নতুন মাইলফলক। এ সরকারের আমলে গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পণ্য রফতানি হয়েছে ৪০ বিলিয়ন বা চার হাজার কোটি মার্কিন ডলার, যা এখন পর্যন্ত দেশের সর্বোচ্চ পণ্য রফতানি আয়। 

ছোট অর্থনীতির এই দেশটির বাজেট আজ পাঁচ লাখ কোটিকেও ছাড়িয়ে গেছে। ছোট্ট অর্থনীতির দেশটি আজ পরিচিতি পেয়েছে এশিয়ার ‘টাইগার ইকোনমি’ হিসেবে। দারিদ্র্যের হার কমে অর্ধেক হয়ে গেছে। মেয়েদের অর্থনৈতিক কর্মকা-ে অবদানের হার দ্রুত বেড়েছে। জনসংখ্যা, গড় আয়ু, শিশুমৃত্যুর হার, মেয়েদের স্কুলে পড়ার হার, সক্ষম দম্পতিদের জন্ম নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা গ্রহণের হার ইত্যাদি সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ সমপর্যায়ের উন্নয়নশীল অন্যান্য দেশ, এমনকি প্রতিবেশী ভারতকেও পেছনে ফেলতে সমর্থ হয়েছে। যে পাকিস্তানের হাত  থেকে স্বাধীন হয়েছে বাংলাদেশ, সেই পাকিস্তানিরা আজ বিস্মিত নয়নে তাকিয়ে দেখে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা। 

আওয়ামী লীগ যখন ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রথমবার দেশের ক্ষমতায় আসেন, তখন দেশের বিদ্যুত খাতের অবস্থা ছিল শোচনীয়। দৈনিক ৮-১০ ঘন্টা করে লোড শেডিং হতো। সেই অবস্থা উত্তোরণে তিনি দ্রুত উদ্যোগ নেন। ফলে দেশের বিদ্যুত উৎপাদন ব্যবস্থায় একটি স্বস্তি ফিরে আসে। কিন্তু ২০০১ সালের পর বিদ্যুত উৎপাদনের সেই ধারাবাহিকতা ব্যাহত হয়। ফলে বাংলাদেশ আবার বিদ্যুতহীন হয়ে পড়ে। ওই সময় দেশে বিদ্যুতের লোডশেডিং আবার মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। দৈনিক ১০-১২ ঘন্টা পর্যন্ত লোডশেডিং করা হয়। দেশে বিদ্যুত যেন সোনার হরিণ হয়ে দাড়ায়। ২০০৯ সালে দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের মানুষকে বিদ্যুতের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দানের উদ্যোগ নেন। দ্রুত স্বল্প মেয়াদী বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে পরিস্থিতি উত্তরণের পদক্ষেপ নেন। সেই সঙ্গে চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশে বিদ্যুত উৎপাদ করার জন্য মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। সেই মহাপরিকল্পনা অনুয়ায়ী এখন দেশে চলছে বিদ্যুতের উৎপাদ। আর দেশবাসী এখন ভূলতে বসেছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতা গ্রহণ করে বিদ্যুৎ গ্রাহক ছিল ১ কোটি ৮ লাখ। আজকে সেখানে প্রায় ৩ কোটি ৮২ লাখ। আর বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা দাড়িয়েছে ২৩ হাজার ৫৪৮ মেগাওয়াট। ৯৭ শতাংশ জনগোষ্ঠি বিদ্যুতের আওতায় চলে এসেছে। ফলে এখন বলা যায়, দেশের প্রায় সব মানুষই বিদ্যুতের আওতায়। চরাঞ্চলের কিছু গ্রাম বিদ্যুতের বাইরে রয়েছে। সেসব চরে সরকার বিনামুল্যে সোলার প্যানেল বসিয়ে এখন বিদ্যুত দিচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে তারা বিদ্যুতের আওতায় চলে আসবে। ফলে মুজিববর্ষেই দেশের সব মানুষ বিদ্যুতের আওতায় চলে আসবে। বিদ্যুত পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৩১ সালে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা গিয়ে দাঁড়াবে ৩৭ হাজার মেগাওয়াট। এ সময় বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা থাকবে ২৯ হাজার মেগাওয়াট। ফলে ৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতই অলস পড়ে থাকবে। আর এসব সম্ভব হবে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলেই । 

নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়নে চমকে দিয়েছেন। অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে দৃশ্যমান। বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সক্ষমতাও বাড়ছে। পদ্মা সেতুর মতো মেগা প্রজেক্ট নিজেদের টাকায় করার মতো দুঃসাহস এখন বাংলাদেশ দেখাতে পারে। আকাশে উড়িয়েছে নিজস্ব স্যাটেলাইট। নিজস্ব স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত ছবি দিয়েই চলছে দেশের সম্প্রচার কার্যক্রম। তথ্য-প্রযুক্তি খাতেও বাংলাদেশের অগ্রগতি ঈর্ষণীয়। 

দেশের অবকাঠামোগত অগ্রগতির সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার দেওয়া আট মেগা প্রকল্প। এর মধ্যে অগ্রগতি বিচারে সবার চেয়ে এগিয়ে রয়েছে পদ্মা বহুমুখী সেতু। সবশেষ জুলাই মাসের হিসাব বলছে, প্রকল্পটির মূল সেতুর নির্মাণ কাজের অগ্রগতি ৮৯ দশমিক ২৫ শতাংশ। তবে সার্বিকভাবে প্রকল্পটির ৮১ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে এরই মধ্য। করোনাভাইরাসের আঘাত মোকাবিলা না করতে হলে এই অগ্রগতির হার আরও বেশি হতো।

স্বপ্নের পদ্মাসেতু ছাড়াও বাকি মেগা প্রকল্পগুলোর কাজও এগিয়ে চলেছে। ধীরে ধীরে বাস্তবায়নের মুখ দেখতে যাচ্ছে এসব প্রকল্প। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, মেট্রোরেল, এলএনজি টার্মিনাল ও গ্যাস পাইপ লাইন স্থাপন, পদ্মাসেতুতে রেল সংযোগ, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি ঘুমধুম পর্যন্ত সিংগেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প। এসব প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতিও প্রায় ৫০ শতাংশের কাছাকাছি। করোনাভাইরাসের কারণেই মুলত প্রকল্পগুলোতে গত কয়েক মাসে স্থবিরতা এসেছিল। তবে করোনার প্রভাব কাটিয়ে প্রকল্পগুলো ফের গতি পেতে শুরু করেছে। 

শুধু এই আট মেগা প্রকল্পই নয়, শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়নে আরও সাহসী পদক্ষেপ হিসাবে নিয়েছেন কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মানের বিশাশ কর্মযজ্ঞ। নদীর তলদিয়ে টানের নির্মাণ এদেশের মানুষ কখানো কল্পনাও করতে পারেনি। কারণ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যেও কোন নদীর তলদেশে টানেল নেই। সেই প্রথম কাজটি করার পদক্ষেপ নিয়েছেন শেখ হাসিনা। বিশাল কর্মযজ্ঞে চলছে কর্ণফুলি নদীর তলদেশে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ নিমার্ণের কাজ। ইতোমধ্যে অর্ধেকের বেশি অর্থাৎ ৫৬ শতাংশ কাজ। 

শেখ হাসিনার উন্নয়নের গল্প এখানেই শেষ নয়। তার সর্বশেষ পদক্ষেপ হচ্ছে মাতারবাড়িতে একটি গভীর সমুদ্র বন্দও নির্মাণ। ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বড় বড় জাহাজ যাতে সরাসরি সমুদ্র বন্দরে ভীড়তে পারে সেজন্য তিনি সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এই গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের। এতে যেমন ব্যবসায়ীদের পণ্য আমদানি রফতানি খরচ কমবে, তেমনি সময়ও বাঁচবে অনেক। গতি আসবে দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে। 

শেখ হাসিনার সর্বশেষ সফলতা হলো-অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে বৈশি^ক মহামারি করোনা কোভিড-১৯ ভাইরাস মোকাবেলা। কোভিড মহামারির কারণে পুরো বিশ^ই স্থবির হয়ে পড়ে। দেশে দেশে হাজার হাজার মানুষ মারা যায়। এই ভাইরাস মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর সামনে প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত এবং কর্মহীন মানুষকে বাঁচিয়ে রাখা। দ্বিতীয় পর্যায়ে তার সামনে চ্যালেঞ্চ এসে দাড়াল দেশের মানুষকে বাঁচানোর পাশাপাশি অর্থনীতিকে সচল করা। সেই চ্যালেঞ্জ তিনি দক্ষতার সঙ্গেই মোকাবেলা করেছেন। 

করোনা মহামারি থেকে মানুষের জীবন বাঁচাতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা, জনগণকে সচেতন করা এবং ক্ষতিগ্রস্থ মানুষকে অর্থ ও খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি চাঙা রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন তিনি। গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন নির্দেশনার পাশাপাশি কোভিড-১৯ মহামারি থেকে মানুষের জীবন বাঁচাতে এবং জীবিকা নিশ্চিত করতে এখন পর্যন্ত মোট ১ লাখ ১২ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকার (জিডিপির ৪ দশমিক ৩ শতাংশ) ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যার কারণে স্থবির হয়ে পড়া দেশের অর্থনীতি আবার ঘুরে দাড়িয়েছে। রেকর্ড পরিমান রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়ে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন সর্বকালের সেরা অবস্থানে রয়েছে।  

এখনও করোনাভাইরাসের ঝুঁকির নিয়ে মহামারির মধ্যে দেশ ও মানুষের কল্যাণে দিনরাত নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি প্রতিটি বিষয়ের সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখছেন এবং সে অনুযায়ী প্রতিনিয়ত বিভিন্ন নির্দেশনা দিচ্ছেন। নিজের জীবনের চেয়ে দেশ ও দেশের জনগণকে তিনি বড় মনে করেন। তাই ঝুঁকি থাকা সত্তে¦ও তিনি জনগণের জীবন ও জীবিকা নিশ্চিত করতে দিনরাত নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

শেখ হাসিনার নেতৃত্ব আজ বাংলাদেশ ছাড়িয়ে বহির্বিশ্বেও সমাদৃত। এখানে পৌঁছতে তাকে অনেক চ্যালেঞ্জ আর বন্ধুর পথ অতিক্রম করতে হয়েছে। তার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র হয়েছে। তিনি একাধিকবার গ্রেফতার হয়েছেন, কারাগারে থেকেছেন। ২৪ বার তার প্রাণনাশের চেষ্টা করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা, যাতে নারীনেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন ঘটনাস্থলে প্রাণ হারিয়েছেন আর আহত হলেন শত শত। 

শেখ হাসিনা শুধু আমাদের দেশ বা আমাদের এই অঞ্চলেরই নন, গোটা বিশ্বেরই একজন বিশিষ্ট রাষ্ট্রনেতা হিসেবে দেশে-বিদেশে স্বীকৃতি লাভ করেছেন। লি কুয়ান ইউ ধারাবাহিকভাবে তিন দশক সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে উন্নতির শীর্ষে তার দেশকে পৌঁছে দিয়েছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে প্রবল প্রতিকূলতার সম্মুখীন হলেও একপা-ও তিনি পিছু হটেননি। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ তাকে বিশ্বখ্যাতি এনে দিয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রশ্নে বিশ্ব এক মমতাময়ী রূপ দেখেছে। তাইতো তিনি ভূষিত হয়েছেন ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ হিসাবে। 

চার দফা প্রধানমন্ত্রীত্বের সময় দক্ষতার সঙ্গে সরকার পরিচালনার কারণে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সম্মানসূচক ডিগ্রী, পদক ও স্বীকৃতি দিয়ে শেখ হাসিনার অসামান্য অবদানকে সম্মানিত করা হয়েছে। সর্বশেষ, টিকা দান কর্মসূচিতে বাংলাদেশের অসামান্য সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরুপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মর্যদাপূর্ণ ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী থেকে তিনি হয়েছেন রাষ্ট্রনায়ক। এদেশে প্রথম রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তারপর দীর্ঘ বিরতি। এই দীর্ঘ সময়ে পদ্মা-মেঘনা-যমুনায় অনেক পানি গড়িয়েছে। অনেকে প্রেসিডেন্ট হয়েছেন, হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, কিন্তু কেউ রাষ্ট্রনায়ক হতে পারেননি। জাতি আবার একজন রাষ্ট্রনায়ক পেয়েছে, তিনি জননেত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৯৬ বা এমনকি ২০০৯-এও তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। কারণ, রাষ্ট্রনায়ক হবার কতগুলো সোপান থাকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেইসব উৎরে গেছেন। বঙ্গবন্ধু’র সময় বিশ্ব পরিস্থিতি অন্যরকম ছিলো। তিনি তখন ছিলেন সংগ্রামী নেতা, যিনি একক নেতৃত্বে একটি দেশ এনেছেন, বাঙালি জাতিকে দিয়েছেন একটি মানচিত্র। কিন্তু শেখ হাসিনার জন্য পরিস্থিতি ছিল আরো প্রতিকূল। বার বার সামরিক শাসনের যাতাকলে তিনি পেয়েছেন একটি ভঙ্গুর বিশৃংখল দেশ। বাংলাদেশ সৃষ্টির সঙ্গে একটি বেমানান রাজনীতির তিনি মুখোমুখি হন দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনে। ফলে তাকে ১৯৯৬-২০০১ -এর শাসনামলে তাঁকে ঠেকে ও ঠকে অনেক কিছু শিখতে হয়েছে। ২১ বছরের দু:শাসন এবং স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী রাজনীতি তাকে মোকাবেলা করতে হয়েছে।  

এক-কেন্দ্রিক বিশ্বে  বাংলাদেশের মত একটি দেশ থেকে একজন সরকার প্রধানের রাষ্ট্রনায়ক হতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। বিশেষত: পরপর দুইটি নির্বাচন  নিয়ে বিরোধী পক্ষের বিতর্ক সামলে রাষ্ট্রনায়ক হয়েছেন তিনি।  দোষে গুণেই মানুষ। কিন্তু একের পর এক নানা সমস্যা সামলে বাংলাদেশকে তিনি বিশ্ব-পরিম-লে যে অবস্থানে এনে দাঁড় করিয়েছেন, এ কৃতিত্ব তাকে দিতেই হবে। এজন্যেই তিনি রাষ্ট্রনায়ক। দেশকে এগিয়ে না নিলে রাষ্ট্রনায়ক হওয়া  যায়না। এজন্য তাকে বেশি কিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। 

বঙ্গবন্ধুর আজন্ম লালিত স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা। সেই সোনার বাংলার আধুনিক রূপ হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শান্তি সুখের দেশ গঠনে শেখ হাসিনা সরকার বদ্ধপরিকর। 

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু আমাদেরকে একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছেন। আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসেবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। নির্যাতিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। তিনি বেঁচে থাকলে অনেক আগেই সুখী সমৃদ্ধ সোনার বাংলার কাঙ্খি গন্তব্যে পৌঁছে যেত দেশ। তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা ৩৭ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করে দেশকে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে মুক্ত করেছেন। মানবতার নেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। শুধু উন্নয়নই নয় সুশাসন প্রতিষ্ঠায়ও তার নিরলস প্রচেষ্ঠা উন্নত দেশের কাংখিত গন্তব্যে পৌছে দেবে বাংলাদেশকে। 

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সোমবার ৭৪তম বছরে পদার্পন করবেন। শুভ জন্মদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা আমরা আপনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক