দিনাজপুরের বনাঞ্চল গিলে খাচ্ছে করাতকল!

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর
 | প্রকাশিত : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৬:১৩

দিনাজপুরে বনাঞ্চল গিলে খাচ্ছে করাতকল। বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ। জেলায় চার শতাধিক করাতকলের মধ্যে ১২০টির লাইসেন্স রয়েছে। বাকি পৌনে চার শতাধিক করাতকল চলছে অবৈধভাবে। করাতকলের উপর আরোপিত সরকারি নির্দেশনা প্রয়োগ না হওয়ায় একদিকে যেমন সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চল, বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ।

পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি নীতিমালা উপেক্ষা করে যত্রতত্র গড়ে ওঠায় বায়ু ও শব্দদূষণ বাড়াচ্ছে করাতকল। এতে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে। এ নিয়ে বৈধ করাতকল কর্তৃপক্ষরাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

দিনাজপুর সামাজিক বন বিভাগের হিসাবে জেলায় করাতকলের সংখ্যা ৩৫৩টি। এর মধ্যে অননুমোদিত মাত্র ১২০টি। সরকারি হিসাবেই অনুমোদন নেই এমন করাত কলের সংখ্যা ২৩৩টি। তবে বাস্তবে জেলায় করাতকলের সংখ্যা প্রায় ৪০০। জেলার সামাজিক ও সংরিক্ষত বন থেকে চোরাই পথে আনা বিভিন্ন বয়সের গাছ অবাধে চিরানো ও বিক্রি হচ্ছে এসব করাতকলে।

লাইসেন্স না নিয়ে অবৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বৈধ করাতকল মালিকরা। সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত করাতকল চালানোর নিয়ম থাকলেও রাতদিন চলছে কাঠ চিরানো।

সরকারি বিধিমালা অমান্য করে আবাসিক এলাকা, হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে গড়ে উঠায় জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশকে হুমকিতে ফেলছে করাতকলের শব্দ ও বায়ুদূষণ। এমনটাই অভিযোগ, বিশিষ্ট আইনজীবী সলিমুল্লাহ সেলিম, নাট্যকর্মী তুষার, ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক আযমসহ অনেকের।

দিনাজপুরে সরকারি বনাঞ্চলের গাছ পাচারে যুক্ত বন বিভাগের এক শ্রেণির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। তাদের যোগসাজশেই সংরক্ষিত বনের কাছে গড়ে উঠেছে অবৈধ করাত কল। উচ্ছেদ অভিযানে থামানো যাচ্ছে না স্থানীয় প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের অবৈধ কাঠের ব্যবসা। কাঠ পাচারের পথ সহজ করতে নীতিমালা উপেক্ষা করে সংরক্ষিত বনের কাছে অবৈধ করাতকল গড়ে তুলেছেন প্রভাবশালীরা। ছোট-বড় গাছ নিমিষেই কাঠে পরিণত হয়ে চলে যাচ্ছে সারাদেশে। বিপন্ন হচ্ছে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জের আশুরা, ভাদুরিয়া, আফতাবগঞ্জ, বিরামপুর রেঞ্জ, চরকাই রেঞ্জ, পার্বতীপুরের মধ্যপাড়া, বিরলের ধর্মপুর বিট, বীরগঞ্জের শিংড়া ও শালবনের মতো সংরক্ষিত বনাঞ্চল।

জেলার বনাঞ্চল বিপন্ন হওয়ার পেছনে বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের সঙ্গে অবৈধ করাতকল মালিকদের যোগসাজসের অভিযোগ রয়েছে। সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও প্রত্যন্ত এলাকায় রাস্তার দুই ধার থেকে বিভিন্ন ধরনের গাছ উধাও হয়ে যাচ্ছে। ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে গাছ পাচার সিন্ডিকেটের কঠোর শাস্তি ও অবৈধ করাতকল উচ্ছেদের দাবি জানিয়েছেন পরিবেশকর্মীরা।

দিনাজপুর নাগরিক উদ্যোগের সভাপতি ও পরিবেশবাদী আজাদ আবুল কালাম, পরিবেশকর্মী ও সংগঠক মুকিদ হায়দার, উদ্ভিদবিদ ও সমাজকর্মী মোসাদ্দেক হোসেন এবং বিরল প্রেসক্লাবের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস জানান, করাতকল বিধিমালা ২০১২ তে বলা আছে, কোনো সরকারি অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বিনোদন পার্ক, উদ্যান এবং জনস্বাস্থ্য বা পরিবেশের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করে এমন স্থান থেকে কমপক্ষে ২০০ মিটার এবং সরকারি বনভূমির সীমানা থেকে কমপক্ষে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে করাত কল স্থাপন করা যাবে না। কিন্তু এই নিদের্শনা মানছে না কেউ। বিধিবহির্ভুতভাবে যত্রতত্র বসানো হয়েছে করাতকল। এর ফলে প্রতিনিয়ত শব্দ দূষণের শিকার শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ।

বিশিষ্টজনরা বলেন, শহরের রাস্তাগুলোর দুই পাশ দখল করে করাতকল ব্যবসা পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে। শহরের করাতকলগুলোতে প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে গাছ এনে রাস্তার দুই পাশ দখল করে স্তূপ করে রাখে। তাছাড়া ট্রাক ও ট্রলি করাতকলের সামনে থামিয়ে মাল উঠানামা করায় এবং দুইপাশে গাছ রাখায় যানবাহন আটকে চরম ভোগান্তিতে পড়ে মানুষ।

দিনাজপুরে কিছু অসাদু প্রভাবশালী ব্যক্তি পরিচালনা করছে এসব লাইসেন্সবিহীন অবৈধ করাতকল। বনাঞ্চলের কাছে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব করাত কলে দিনরাত কাঠ চিরাই চলছে। এছাড়াও এসব করাতকলের আশপাশে মজুত রয়েছে প্রায় কয়েক লাখ ঘনফুট গাছ।

দিনাজপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, করাতকল মালিকরা যেকোনো বয়সের গাছ কেটে বন উজাড় করছে। প্রতিটি করাতকলে বিপুল সংখ্যক কাঠ মজুদ রয়েছে। সরকারি নিয়মে সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত করাতকল চালানোর নিয়ম থাকলেও অবৈধ করাতকলের মালিকরা তা মানছেন না। রাতদিন চলছে কাঠ চিরাই।

দিনাজপুর সামাজিক বন বিভাগ কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছেন, অবৈধ করাতকলের দাপটের কথা। তবে অবৈধ করাতকলগুলো উচ্ছেদের ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানিয়েছেন দিনাজপুর সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবদুর রহমান। তিনি বলেন, অবৈধ করাতকলের তালিকা করে আমরা ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসক বরাবরে দিয়েছি। এগুলো পর্যায়ক্রমে উচ্ছেদের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি উচ্ছেদ করাসহ জরিমানাও করা হয়েছে।

তবে অভিযোগ রয়েছে, করাতকলের মালিকরা বন বিভাগের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই পরিচালনা করছেন এসব অবৈধ করাতকল।

সরজমিনে দেখা গেছে, যেখানে সেখানে গড়ে তোলা এসব করাতকলের কড়াল গ্রাসে শুধু বনাঞ্চলেই উজাড় হচ্ছে না, বিনষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। তাই বনাঞ্চল ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় শুধু কাগজ-কলমে নয়, বাস্তবে নীতিমালার আলোকে এসব করাতকল স্থাপন এবং অবৈধ করাতকলগুলো উচ্ছেদের দাবি জানিয়েছেন পরিবেশবিদ ও প্রকৃতি প্রেমিরা।

(ঢাকাটাইমস/২৫সেপ্টেম্বর/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

ফেসবুক আইডি ক্লোন করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, যুবক গ্রেপ্তার

ফরিদপুর প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পুলিশ সুপারের মতবিনিময়

পতেঙ্গায় ফিশিং বোটের ইঞ্জিন বিস্ফোরণে ৪ জন দগ্ধ

চট্টগ্রামে ঈদকে সামনে রেখে জালনোট চক্রের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার

বরিশালে নামাজের সময় মসজিদের এসি বিস্ফোরণ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দ্রুতগতির লেনে যাত্রী নামানোর অপরাধে ৩৩ যানবাহনকে মামলা 

বরগুনা প্রেসক্লাব দখলের মামলায় ৭ জন কারাগারে  

পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে তাহিরপুরের শহীদ সিরাজ লেক

ঝিনাইদহে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু

ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :