কৃষি প্রদশনী প্লটে নয়-ছয়, বঞ্চিত হচ্ছে কৃষকরা

শেখ খলিলুর রহমান, শরীয়তপুর প্রতিনিধি
 | প্রকাশিত : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৭:৪০

শরীয়তপুর সদর উপজেলায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিভিন্ন প্রকল্পের ফসলের প্রদর্শনী প্লটে ‘নয়-ছয়’ করার অভিযোগ উঠেছে। প্রদর্শনী প্লটগুলোতে সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সুবিধা সম্পর্কে কৃষকদের কিছুই জানানো হয় না বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা। নামমাত্র কিছু বীজ সার দিয়ে দায় শেষ করেন কৃষি কর্মকর্তারা। প্রদর্শনী প্লটের বেশিরভাগ খরচ বহন করতে হচ্ছে কৃষকদের। এতে কৃষকদের মাঝে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

শরীয়তপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানান ২০১৯-২০ অর্থ বছরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজস্ব প্রকল্পের আওতায় ১৫০টি, ন্যাশনাল এগ্রিক্যালচারাল টেকনোলজি প্রোগ্রাম (এনএটিপি-২) প্রকল্পের আওতায় ১২০টি, আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের ধান, গম ও পাট বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্পের আওতায় ১৫টি, আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের ডাল, তেল ও মশলা বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্পের আওতায় ১২০টি এবং সাত জেলা প্রকল্পের আওতায় ১৫০টি প্রদর্শনী প্লট বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজস্ব খাতের অর্থায়নে রোপা আমন ব্রিধান-৭২ এর প্রদর্শনী প্লট দেয়া হয় রুদ্রকর গ্রামের কৃষক আ. গনি মিয়াকে। স্থানীয় চররোসুন্দি ব্লকের ৩৩ শতাংশ জমিতে এ প্রদর্শনী প্লটটি বাস্তবায়ন করেন তিনি। প্রথমে তাকে পাঁচ কেজি ব্রি ধান-৭২ জাতের বীজ দিয়েছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।

এরপর সম্প্রতি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ে ডেকে পাঁচ কেজি টিএসপি, ১৫ কেজি ইউরিয়া, পাঁচ কেজি পটাস, ৫০০ গ্রাম দস্তা ও দুই কেজি জিপসাম সার ও একটি প্রদর্শনী প্লটের সাইন বোর্ড দেয়া হয়েছে।

একই ইউনিয়নের রুদ্রকর ব্লকের কৃষক মোতালেব বেপারীকে একই প্রকল্পের রোপা আমন প্রদর্শনীর বিপরীতে পাঁচ কেজি টিএসপি, ১২ কেজি ইউরিয়া, চার কেজি পটাস, আড়াই গ্রাম দস্তা ও চার কেজি জিপসাম সার ও একটি প্রদর্শনী প্লটের সাইন বোর্ড দেয়া হয়েছে।

ন্যাশনাল এগ্রিক্যালচারাল টেকনোলজি প্রোগ্রাম (এনএটিপি-২) এর রোপা আমন খরিফ-২ ব্রিধান- ৪৯ জাতের একটি ফলন পার্থক্য কমানো প্রযুক্তি প্রদর্শনী দেয়া হয় রুদ্রকর গ্রামের কৃষক আইয়ুব আলী সরদারকে।

রুদ্রকর ব্লকের ৪৫ শতাংশ জমিতে এ প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করেন তিনি। প্রদর্শনীর শুরুতে ১০ কেজি ধান দিয়েছে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়। পরে সম্প্রতি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ের ডেকে ২০ কেজি টিএসপি, ১৮ কেজি ইউরিয়া, ১০ কেজি পটাস, চার কেজি জিপসাম সার ও একটি সাইন বোর্ড দিয়েছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।

আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের ধান, গম ও পাট বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্পের আওতায় রোপা আমন বীজ উৎপাদন প্রদর্শনী দেয়া হয়েছে। রুদ্রকর ব্লকে রুদ্রকর রোপা আমন বীজ উৎপাদনকারী দলের মাধ্যমে পাঁচ একর জমিতে এ প্রদর্শনীটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ প্রদর্শনীতে ৫০ কেজি ধান বীজ আর মাত্র তিন বস্তা ইউরিয়া, ৭০ কেজি টিএসপি, ৭০ কেজি পটাস, ৪০ কেজি জিপসাম সার দেয়া হয়ছে।

এসব প্রকল্প বাস্তবায়কারী কৃষকদের অভিযোগ, বন্যার কারণে অফিস থেকে ধানের বীজ নষ্ট হয়ে গেছে। এখন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে নগদ টাকা দিয়ে বিভিন্ন বাজার থেকে ধানের চারা কিনে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন তারা। এতে তাদের অনেক টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া, প্রদর্শনী প্লটের জন্য উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা আমাদের বাড়িতে গিয়ে নানা সুযোগ সুবিধার কথা বলে প্রদর্শনী প্লট দেয়।

কৃষকরা বলেন, কিন্ত এ প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করার জন্য সরকারের কী কী সহায়তা আমাদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে- তা আমাদেরকে জানানো হয়না। অফিসাররা বলে সার, বীজ, ঔষধ কোন কোন প্রকল্পে নগদ টাকাও দেয়া হবে। কিন্তু যে পরিমান সার তারা দেয়- তাতে কিছুই হয় না। তার চেয়ে দুই/তিন গুন সার আমাদের কিনতে হয়। কোনো প্রদর্শনীর জন্য কি দেয়া হবে তার কোনো তালিকাও আমাদের কাছে দেয়া হয় না। তারা যখন যা দেয়- তাই নিয়ে আমাদের সন্তুষ্ট থাকতে হয়।

আমরা বুঝতেও পারিনা, আমার প্রকল্পের জন্য কী বরাদ্দ ছিল- আমি পুরোটাই পেলাম না কম পেলাম। যে সাইন বোর্ড সরবরাহ করা হয়, তাতে কৃষককে সরকারের দেয়া সহায়তার বিবরণ থাকে না। তাই আমাদের দাবি, প্রকল্পের বরাদ্দ অবশ্যই সব প্রদর্শনী প্লট বাস্তবায়নকারী কৃষকদের লিখিত আকারে সরররাহ করত হবে। যাতে আমরা সব কিছু সর্ম্পকে স্পষ্ট জানতে পারি।

শরীয়তপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, প্রদর্শনী প্লটে সার, বীজ, ঔষধ-সহ প্রদর্শনী বাস্তবায়নের সকল খরচ আমরা বহন করি। যদি কোন প্রদর্শনী প্লট বাস্তবায়ন শেষে টাকা উদ্বৃত্ত থাকে তাহলে ওই কৃষককে আমরা ফেরত দিয়ে দেই। আমরা শতভাগ স্বচ্ছতার সাথে কাজ করি। আমরা কোন প্রদর্শনীতে নয়-ছয় করি না।

শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহাবুর রহমান শেখ বলেন, প্রদর্শনী বাস্তবায়নকারী কৃষককে অবশ্যই তার বরাদ্দ সর্ম্পকে সুস্পষ্টভাবে জানানো উচিৎ। এটা ওই কৃষকের অধিকারের মধ্যে পরে। যেহেতু বিষয়টি নিয়ে কথা উঠেছে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সাথে কথা বলে কৃষকের অধিকার নিশ্চিতের ব্যবস্থা করবো। আর যদি সরকারী বরাদ্দ বিতরণের ক্ষেত্রে কোন অনিয়ম থেকে থাকে তদন্ত স্বাপেক্ষে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৬সেপ্টেম্বর/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :