নারীর পদে পদে ভয়ের তাড়া

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৯:৫৩

স্বামীর সঙ্গে সিলেট এমসি কলেজে বেড়াতে গিয়ে একদল যুবকের ধর্ষণের শিকার হন সদ্য বিবাহিতা এক নারী। এই ঘটনায় সিলেটের স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ছয় ছাত্রলীগ কর্মীসহ নয়জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। তবে এই ঘটনায় এখনো কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। ধর্ষকদের গ্রেপ্তারের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে এমসি কলেজ।

শুক্রবারের এই মর্মান্তিক ঘটনায় সারাদেশে সমালোচনা মধ্যে খোদ রাজধানীতে এক প্রতারকের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়েছে আরেক নারী। মুমূর্ষু স্বামীকে বাঁচাতে পাগলপ্রায় স্ত্রীকে রক্ত জোগাড় করে আশ্বাস দিয়ে মিরপুরের একটি বাসায় নিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন অভিযুক্ত মো. মনোয়ার হোসেন ওরফে সজীব। আর তাকে সহায়তা করেন মাশনু আরা বেগম ওরফে শিল্পী নামের এক নারী। এই দুজনকেই গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

দেশে প্রতিনিয়ত ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। তবে নারীর প্রতি এমন নিষ্ঠুরতার ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে বেড়েছে। এ নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন অপরাধ ও সমাজ বিশ্লেষকরা। দিনের পর দিন এমন ঘটনা বৃদ্ধির কারণে নারীর মধ্যে এক ধরনের ভয় তাড়া করছে বলেও মনে করছেন তারা।

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও শালিস কেন্দ্র শনিবার খাগড়াছড়িতে এক নারী ও এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ধর্ষণসহ নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা চরম উদ্বেগ আর নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করছে। পূর্বের ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধী শাস্তি না পাওয়ায় নারীর প্রতি সহিংসতা দিন দিন বেড়েই চলছে। খাগড়ছড়ির ঘটনায় এরইমধ্যে সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

ধর্ষণের ঘটনা বাড়তে থাকায় নারীদের মধ্যে উদ্বেগ যেমন বাড়ছে তেমনি বিদেশেও দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে বলে মনে করেন সাবেক আইনমন্ত্রী ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শফিক আহমেদ। প্রয়োজনে আইন সংশোধন করে হলেও ধর্ষকদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিতের দাবি করেছেন তিনি।

শফিক আহমেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সমাজে এমন বিশৃঙ্খল পরিবেশ সহ্য করা যায় না। সরকারকে বলবো কোনো ধরনের শৈথিল্য না দেখিয়ে ধর্ষণের মামলা দ্রুত তদন্ত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন দ্রুত চার্জশিট দিয়ে দেয়।’

জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী বলেন, ‘আর বিচার প্রক্রিয়া শুরুর পর তা স্থগিত করার যে একটি বিষয় থাকে সেটাও বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে আইন সংশোধন করে হলেও দ্রুততম সময়ে ধর্ষণের বিচার শেষ করতে হবে। তা না হলে নারীদের ভয় নিয়েই থাকতে হবে। পদে পদে তাদের ভয় তাড়া করবে। এটা কারো জন্যই সুখকর হবে না।’

যেভাবে রক্ত যোগাড়ের আশ্বাস দিয়ে ধর্ষণ

সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রবাসে ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে সমালোচনার মধ্যে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে মুমূর্ষু স্বামীর জন্য রক্ত জোগাড় করতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হন এক গৃহবধূ। এ ঘটনায় অভিযুক্ত মো. মনোয়ার হোসেন ওরফে সজীব ও ধর্ষণে সহায়তার অভিযোগে মাশনু আরা বেগম ওরফে শিল্পীকে গত শুক্রবার রাত ৮টার দিকে রাজধানীর মিরপুরে মনিপুরীপাড়ায় শিফা ভিলা নামের একটি ফ্ল্যাট থেকে র‌্যাব-২ এর একটি বিশেষ দল তাদের গ্রেপ্তার করে।

র‌্যাব-২ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) এএসপি মো. আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, শুক্রবার বিকাল ৪টার দিকে ভুক্তভোগী নারী অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে মেডিসিন বিভাগের ভর্তি করান। দায়িত্বরত চিকিৎসক স্বামীর জন্য রক্ত প্রয়োজন এবং জরুরিভাবে রক্তের ব্যবস্থা করার পরার্মশ দেন।

তিনি বলেন, ভুক্তভোগী নারী হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার ব্লাড ব্যাংকের সামনে গিয়ে তিন-চারজন পুরুষকে বসা দেখতে পেয়ে রক্তের বিষয়ে জানতে চাইলে মনোয়ার হোসেন ওরফে সজীব রক্তের ব্যবস্থা করে দেবেন বলে জানান। পরে দুপুর দেড়টার দিকে ওই নারীকে কৌশলে রক্তের ব্যবস্থা করে দেয়ার নাম করে মিরপুরে শিল্পীর বাসায় নিয়ে যান। ওই বাসায় নিয়ে শিল্পীর সহযোগিতায় তাকে ধর্ষণ করে মনোয়ার।

এএসপি মো. আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, ভুক্তভোগী নারী লোকলজ্জার ভয়ে ও স্বামীর অসুস্থতার কারণে ধর্ষণের বিষয়টি গোপন রাখেন। কিন্তু ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তার স্বামীর মোবাইলে কল করে তারা রক্তের ব্যবস্থা হয়েছে জানিয়ে তার স্ত্রীকে হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় পাঠাতে বলেন। তখন ওই নারী পুনরায় ধর্ষিত হওয়ার ভয়ে স্বামীকে বিষয়টি খুলে বলেন। পরে অভিযোগ পেয়ে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধর্ষণের কথা সজীব স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

মানসিকভাবে বিপর্যস্ত সিলেটের ভুক্তভোগী নারী

সিলেটে স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে শুক্রবার রাতে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন আরেক গৃহবধূ। রাত সাড়ে নয়টার দিকে টিলাগড় এলাকার কলেজটির ছাত্রাবাসে এ ঘটনা ঘটে। ওই গৃহবধূকে ক্যাম্পাস থেকে তুলে ছাত্রাবাসে নিয়ে ধর্ষণ করা হয় বলে পুলিশ জানায়। এ ঘটনায় নির্যাতিতার স্বামী বাদী হয়ে নগরীর শাহপরাণ থানায় মামলা করেন। এতে ছাত্রলীগের ছয় কর্মী ও অজ্ঞাতনামা আরও তিনজনকে আসামি করা হয়। যদিও এখনো আসামিদের কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।

এদিকে করোনায় প্রতিষ্ঠান বন্ধের মধ্যে ছাত্রাবাস খোলা রাখায় কলেজের অধ্যক্ষের অপসারণ চেয়েছে ধর্ষকদের গ্রেপ্তারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে ধর্ষণের ঘটনায় উত্তাল পরিস্থিতির মধ্যে ছাত্রাবাস বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে দুই নিরাপত্তাকর্মীকে।

(ঢাকাটাইমস/২৭সেপ্টেম্বর/ডিএম/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :