শেখ হাসিনা: জাতির পথ প্রদর্শক

প্রকাশ | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৯:৩৮

সৈয়দ আরিফ হোসেন

৭৪ বছরের একজন দেশপ্রেমিক স্বপ্ন দেখেন আমাদের নিয়ে। স্বপ্ন দেখেন একদিন বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফুটবে, বাংলার মানুষ ক্ষুধা এবং দারিদ্রমুক্ত হয়ে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে তিনি সকল প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে দিনরাত নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। রাজ্যের এই শত ব্যস্ততার মাঝেও তিনি অটিস্টিক শিশুকে ভিডিও কল দিয়ে চমকে দেন, টুঙ্গিপাড়ায় নিজ হাতে রান্না করে দলের নেতাকর্মীদের খাওয়ান, নাতি-নাতনিদের সঙ্গে খেলাধুলা করেন, অতি আপনজন হয়ে মিশে যান পরিবার পরিজন, বন্ধু-বান্ধুবীদের সঙ্গে। ভ্যানে চড়ে ঘুরে বেড়ান কোনো প্রটোকল ছাড়াই, সাধারণ পর্যটক হয়ে পা ভেজান সমুদ্রের নোনাজলে। তিনিই আমাদের প্রধানমন্ত্রী, আমাদের নেত্রী, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অতন্দ্র প্রহরী, জাতির পিতার সোনার বাংলা বিনির্মাণের সবচেয়ে দক্ষ কারিগর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আমাদের আশা দিয়েছেন, ভরসা দিয়েছেন, সাহস যুগিয়েছেন, মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শিখিয়েছেন। ২০০৮ এ দিন বদলের শপথ নিয়ে আজও পথ চলছেন সময়ের সবচেয়ে দক্ষ, প্রাজ্ঞ এবং সৃজনশীল নেতৃত্ব হয়ে। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্ব রাজনীতিতেও তিনি অনুসরণীয়, অনুকরণীয় নেতা। তিনি সাহসী এবং মানবতাবাদী নেতৃত্বের রোল মডেল।

বঙ্গবন্ধুকন্যা, জননেত্রী শেখ হাসিনার শুরুর পথটা ছিল ভয়ানক কন্টকাকীর্ণ। তাঁর দেশে ফেরা নিয়েও স্বাধীনতাবিরোধী চক্ররা ধারাবাহিকভাবে অপপ্রচার চালিয়েছিল। শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বলা হলো, বাকশালীরা বিদেশি শক্তির তল্পিবাহক, ভারতীয় গোলাম। বাকশালীরা ভারতের সহায়তায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ক্ষমতায় বসতে চায়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যার ইস্পাত-দৃঢ় মনোভাবে তাদের মানসিক পরাজয় হয়। বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আদর্শের ক্ষেত্রে আমাদের কোনো দৈন্য নেই। কারণ, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের মানুষ দীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমে যে আদর্শ প্রতিষ্ঠা করেছে, তাই আমাদের দিক-নির্দেশক। সেই পথ ধরেই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কর্মকাণ্ড সফল করে তুলবো।’ (দৈনিক সত্যযুগ, কলকাতা, ২৬ এপ্রিল, ১৯৮১)

প্রায় ছয় বছর পরে ১৯৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধুকন্যা, জননেত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণের জন্য ঢাকায় পদার্পণ করেন। সেদিন বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে এক নজর দেখার কিশোর, তরুণ, যুবক, বৃদ্ধ নির্বিশেষে অগনিত মানুষ বাস, ট্রাক, লঞ্চ, স্টিমার ও ট্রেনযোগে দূর দূরান্ত থেকে ঢাকায় এসে মিলিত হয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগের গগনবিদারী স্লোগান এবং লক্ষ লক্ষ জনসাধারণ প্রাণঢালা অভ্যর্থনার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে বরণ করে নেয়। গণসংবর্ধনায় শেখ হাসিনা কান্নাজর্জরিত কন্ঠে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ঘোষিত দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আমি জীবন উৎসর্গ করে দিতে চাই। আমার আর কিছু পাবার নেই। সব হারিয়ে আমি এসেছি আপনাদের পাশে থেকে বাংলার মানুষের মুক্তির সংগ্রামে অংশ নেয়ার জন্য।’

আজ জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৭৫ পরবর্তী অপরাজনীতি আর দু:শাসনের বাংলাদেশে আজ সুস্থ ধারার রাজনীতি এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পরপরই তিনি জাতির পিতার হত্যাকারী এবং ৭১ এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেন এবং পরবর্তীতে বিচারের রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেন। বাংলাদেশের জনগণ ফিরে পেয়েছে গণতন্ত্র এবং বাক-স্বাধীনতা। আর্থ-সামাজিক খাতে অভূতপূর্ব অগ্রগতিতে আমরা পেয়েছি মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা। সাহায্যগ্রহীতা নয়, আমরা এখন সাহায্যদাতা দেশ। বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু আমাদের দিয়েছেন স্বাধীনতা, আর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দিয়েছেন মুক্তি। জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রায়শই বলে থাকেন, ‘আমি ক্ষমতার জন্য রাজনীতিতে আসিনি, এসেছিলাম একটি হারানো স্বপ্ন উদ্ধার এবং একটি রক্তাক্ত আদর্শের পতাকা আবার তুলে ধরার জন্য। কোন কিছু পাওয়ার জন্য আমি জেল-জুলুম ও গুলির মুখে বুক পেতে দেইনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে যে ৩০ লাখ ভাই-বোন শহীদ হয়েছেন, সেই বীর শহীদদের স্বপ্নের ফসল হায়েনারা ঘুরে তুলতে দেয়নি। সেই বীর শহীদদের স্বপ্ন সফল করা এবং বাঙালি জাতির স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে উদ্ধার করার লড়াইয়ে আমি নিজেকে উৎসর্গ করেছি।’

শুধু রাজনীতি নয়, ব্যক্তিগত জীবনেও প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা সফল। পিতা বঙ্গবন্ধু মুজিবের একজন আদর্শ সন্তান হিসেবে তিনি সমধিক পরিচিত। পিতা-মাতার প্রতি কীভাবে সম্মান দেখাতে হয়, সেক্ষেত্রে অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব হবেন শেখ হাসিনা। তিনি একজন আদর্শ বোন। ভাই বোনদের প্রতি তাঁর যে মমত্ববোধ, তা যেকোনো সমাজের জন্যই এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। একজন রত্নগর্ভা মা হিসেবেও তিনি খ্যাতির চূড়ায়। তাঁর দুই সন্তান- সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সায়মা ওয়াজেদ পুতুল তাঁদের কর্মক্ষেত্রে বিশ্ব পরিচিত। তিনি রাষ্ট্র পরিচালনার পাশাপাশি লেখালেখি এবং সাহিত্য চর্চাও করেন। ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’, ‘ওরা টোকাই কেন?’, ‘বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম’, ‘দারিদ্র্য বিমোচন, কিছু ভাবনা’, ‘আমার স্বপ্ন, আমার সংগ্রাম’, ‘আমরা জনগণের কথা বলতে এসেছি’, ‘সামরিকতন্ত্র বনাম গণতন্ত্র’, ‘সাদা কালো’, ‘সবুজ মাঠ পেরিয়ে’, ‘Miles to Go, The Quest for Vision-2021’(two volumes)সহ বেশ কিছু গ্রন্থের রচিয়তা জননেত্রী শেখ হাসিনা। রাজনীতির বাইরে তিনি একজন সমাজ সংস্কারক। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা, মৌলবাদ, কুসংস্কার এবং দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে তিনি তাঁর ভাবনাগুলো রাজনৈতিক কর্মসূচির আওতাধীন করেছেন। জননেত্রী শেখ হাসিনা ‘‘জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’’ এর মাধ্যমে অসংখ্য এতিম শিশুর পড়াশুনার ব্যবস্থা করেন, পাশাপাশি গরিব মানুষের যথাযথ চিকিৎসার খরচ যোগান। এই জনহিতকর কাজগুলি তাঁর রাজনীতির আড়ালে লুকিয়ে থাকে।

আজ আমাদের মহান নেত্রীর ৭৪তম জন্মদিন। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত ছাত্রলীগের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের পক্ষ থেকে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এবং কৃতজ্ঞতা।

লেখক: সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ

কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ।