সৈয়দ হককে নিয়ে অপপ্রচারের জবাব

প্রকাশ | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৮:১৪ | আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৯:০৭

স্বকৃত নোমান

সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় কি পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বনকারী বা রাজাকার ছিলেন? মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি কোথায় ছিলেন? মুক্তিযুদ্ধে তাঁর ভূমিকা কী? এবং তিনি কি স্বৈরশাসক এরশাদ সরকারের কাছ থেকে গুলশানের বর্তমান বাড়িটি উপহার নিয়েছিলেন?―এই চারটি প্রশ্নকে ঘিরেই আমার এই লেখা। আবারও বলছি, এ চার প্রশ্নের বাইরে এই লেখা নয়। কেউ যদি এ চার প্রশ্নের বাইরে অন্য কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করেন, নিজ দায়িত্বে করবেন। দয়া করে আমার কাছে উত্তর না খুঁজলে আনন্দিত হবো।
গতকাল ছিল সৈয়দ শামসুল হকের প্রয়াণ দিবস। এই উপলক্ষ্যে তাঁর উপন্যাস নিয়ে ফেসবুকে একটি লেখা পোস্ট করেছিলাম। ওই পোস্টে দেশব্যাপী পরিচিত এক মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এসে প্রশ্ন করলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে সৈয়দ শামসুল হকের অবদান কী?’ আমি তাঁকে সবিনয়ে বললাম, ‘দেখুন, এই লেখা সৈয়দ হকের কয়েকটি উপন্যাস নিয়ে, মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদান নিয়ে নয়।’ পাল্টা কমেন্টে তিনি একটু রূঢ় শব্দ ব্যবহার করে সব কটি কমেন্ট ডিলিট করে দিলেন।
সন্ধ্যায় দুজন ‘বামপন্থি’র (বিভ্রান্ত মার্কসবাদী) দুটি পোস্ট দেখলাম ফেসবুকে। দুজনই লিখলেন, ‘সৈয়দ শামসুল হক ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় পাকিস্তানের পক্ষে ছিলেন। যুদ্ধের বড় সময় সৈয়দ হক পশ্চিম পাকিস্তানে ছিলেন।’ একজনের পোস্টে আমি কমেন্ট করলাম, ‘সৈয়দ হক যে একাত্তরে পাকিস্তানের পক্ষে ছিলেন এবং যুদ্ধের বড় সময় যে পশ্চিম পাকিস্তানে ছিলেন, এর প্রমাণ কী? কোনো প্রমাণ আছে, নাকি এই পোস্ট দেখেই অন্ধভাবে বিশ্বাস করে নিতে হবে?’ বামপন্থি বন্ধুটি প্রমাণ তো দিলেনই না, উল্টো আমাকে একটু হেয় করে বললেন, প্রমাণ যেন আমি বের করে নিই।
কিন্তু নিয়ম কী বলে? নিয়ম বলে, আমি যার বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ করছি সেই অভিযোগের পক্ষে সাক্ষ্য-প্রমাণ আমাকেই দাখিল করতে হবে। তা না করে চোরকে যদি বলা হয়, ‘তুমি চোর নও, তা তুমি প্রমাণ করো’―এটা আইন সম্মত নয়। এটা হাস্যকর। আদালতেও এমন অভিযোগ গ্রহণযোগ্য হয় না। সৈয়দ শামসুল হক যে পাকিস্তানের পক্ষে ছিলেন, মুক্তযুদ্ধের বড় সময় যে পশ্চিম পাকিস্তানে ছিলেন―এ অভিযোগ যিনি উত্থাপন করবেন তিনিই প্রমাণ করবেন―এটাই দস্তুর। কিন্তু ‘বামপন্থি’ বন্ধুটি তা না করে আমার ওপর প্রমাণ খুঁজে বের করার দায় চাপিয়ে দিলেন এবং আমাকে রূঢ় ভাষায় তিরস্কার করতেও ছাড়লেন না। কিন্তু বিষ্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি বন্ধুটির ফেসবুক ওয়ালে সেই পোস্টটি নেই। ডিলিট করে দিয়েছেন বা ‘অনলি মি’ করে দিয়েছেন। অর্থাৎ সৈয়দ হকের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ যে তিনি প্রমাণ করতে পারবেন না, এটা তিনি বুঝে গেছেন, তাই পোস্ট সরিয়ে নিয়েছেন। এখানে একটি প্রশ্ন, যে অভিযোগ প্রমাণ করা যাবে না, হে বিভ্রান্ত বিপ্লবী, ফেসবুকের মতো একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই অভিযোগ কেন তোলা? কেন প্রজন্মের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানো? বিভ্রান্তি ছড়িয়ে কেন আবার তা সরিয়ে নেওয়া?
শুধু তাই নয়, সৈয়দ হকের মৃত্যুর পর তাঁর জন্ম ও প্রয়াণ দিবসে ফেসবুকে এসব অভিযোগ একাধিকবার উত্থাপিত হয়েছে। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, আর কেউ কেউ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিয়ে দিয়েছেন যে, সৈয়দ হক পাকিস্তানের পক্ষে ছিলেন, রাজাকার ছিলেন, স্বৈরশাসকের কাছ থেকে বাড়ি উপহার নিয়েছেন। প্রশ্ন করা ভালো। প্রশ্নহীন সমাজ মৃত সমাজ। প্রাশ্নিক মানুষ না থাকলে সমাজ অগ্রসর হয় না। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অধ্যায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের কোন অগ্রজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, কে রাজাকার ছিল, কে পাকিস্তানের সমর্থক ছিল, কে ভারতে বা পৃথিবীর অন্য কোথাও আশ্রয় নিয়েছিলেন, তা অবশ্যই আমাদের জানা থাকা প্রয়োজন। সৈয়দ শামসুল হকের মতো একজন গুরুত্বপূর্ণ লেখককে আমরা প্রশ্নহীন ছেড়ে দেব কেন? তাই প্রাশ্নিকদের নিয়ে আমার কোনো প্রশ্ন নেই। প্রশ্ন সেসব আত্মঘাতী বিভ্রান্তদের নিয়ে, যারা সাক্ষ-প্রমাণ ছাড়া ফেসবুকে অবলীলায় বলে দিচ্ছেন, সৈয়দ হক ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষে ছিলেন, যুদ্ধের বড় সময় তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে ছিলেন এবং সৈয়দ হক স্বৈরশাসক এরশাদের কাছ থেকে গুলশানের বর্তমান বাড়িটি উপহার নিয়েছেন।
প্রথমে আলোচনায় আসা যাক সৈয়দ হক মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বনকারী বা রাজাকার ছিলেন কিনা? এক কথায় উত্তর―না, ছিলেন না। কিন্তু মুখে বললে তো হবে না, প্রমাণ কী? প্রমাণ আমি বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কবি শামসুর রাহমানের কাছ থেকে নিচ্ছি। তাঁর আত্মজীবনী ‘কালের ধুলোয় লেখা’ গ্রন্থে তিনি লিখেছেন, “যতদূর মনে পড়ে ২৩ কিংবা ২৪ মার্চ আমরা অনেকে তোপখানা রোডে লেখক শিবিরের দপ্তরে আহমদ ছফার উদ্যোগে আয়োজিত একটি সভায় যোগদান করি। সেই সভায় উপস্থিত বেশ ক’জন প্রবীণ ও নবীন শিল্পী, সাহিত্যিক বর্তমান পরিস্থিতিকেন্দ্রিক আলোচনায় অংশগ্রহণ করি। আলোচনা শেষে আমাদের একটি বিবৃতি সংবাদপত্রের দপ্তরে পাঠানো হয়। পঁচিশে মার্চ সেই প্রতিবাদী, তদানীন্তন পরিস্থিতিকেন্দ্রিক বিবৃতিটি ছাপা হয়। পঁচিশে মার্চের আগে ‘দৈনিক পাকিস্তান’-এর সম্পাদকীয় পাতায়, যতদূর মনে পড়ছে, পর পর তিন দিন সিকান্দার আবু জাফর, সৈয়দ শামসুল হক এবং আমার একটি করে তখনকার পরিস্থিতিকেন্দ্রিক প্রতিবাদী কবিতা ছাপা হয়। সম্ভবত সিকান্দার আবু জাফরের কবিতার শিরোনাম ছিল ‘তোমরা বাংলা ছাড়ো’, সৈয়দ হক এবং আমার কবিতার শিরোনাম মনে পড়ছে না। তখন মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ ‘গর্বিত পিতার মুখ’ নামে একটি কবিতা লিখেছিলেন।”―(দ্র. কালের ধুলোয় লেখা, শামসুর রাহমান, পৃষ্ঠা ২৬১, অন্যপ্রকাশ ২০০৪)।
খেয়াল করা দরকার, শামসুর রাহমান লিখেছেন, একাত্তরের মার্চের সেই উত্তাল সময়ে (৯ মার্চ) ‘দৈনিক পাকিস্তান’-এর মতো একটি বহুল পঠিত পত্রিকার সম্পাদকীয় পাতায় তাঁর, সিকান্দার আবু জাফর এবং সৈয়দ শামসুল হকের তিনটি কবিতা ছাপা হয়। তিনি তাঁর ও সৈয়দ হকের কবিতার শিরোনাম মনে করতে পারছেন না। কবিতাটির শিরোনাম আমাদের জানাচ্ছেন সদ্য প্রয়াত শিল্পী মুর্তজা বশীর। ২০১৪ সালে বেঙ্গল পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত তাঁর আত্মজীবনী ‘আমার জীবন ও অন্যান্য’ গ্রন্থের ২৭৯ পৃষ্ঠায় তিনি লিখেছেন, ৯ মার্চ দৈনিক পাকিস্তানের সম্পাদকীয় পাতায় প্রকাশিত সৈয়দ শামসুল হকের সেই কবিতাটির শিরোনাম ছিল, ‘পহেলা মার্চ ১৯৭১’। শামসুর রাহমান ও মুর্তজা বশীরের কথা যদি কারো অবিাশ্বাস হয়, তবে তিনি ‘দৈনিক পাকিস্তান’-এর সেই সংখ্যাটি দেখে নিতে পারেন। বাংলা একাডেমির লাইব্রেরীতে পত্রিকাটি রয়েছে।
পুরো কবিতাটি তুলে দিচ্ছি :
“দ্যাখো, আমি নিরস্ত্র। কিন্তু
আমার আছে সেই অস্ত্র যা নিঃশোষিত হয় না,
প্রতি ব্যবহারে তীক্ষ্ণ থেকে তীক্ষ্ণতর হয়ে ওঠে―
আমার প্রাণ।
আমার তো একটিই প্রাণ নয়, কোটি কোটি প্রাণ।
দ্যাখো, আমি পতাকাহীন। কিন্তু
আমার আছে সেই পতাকা
যা দাম্ভিকের দ- থেকে উত্তোলিত হয় না―
আমার পতাকা আমার মায়ের মুখ।
আমার তো একটিই মা নয়, কোটি কোটি মা।
দ্যাখো, আমি শৃংখলিত। কিন্তু
কী আমার শৃঙ্খল, আমার এই বহু,
আমার কোটি কোটি বাহু।
এই শৃঙ্খলে আমরা পরস্পরের সঙ্গে আবদ্ধ।
মায়ের গর্ভে আমি তিলে তিলে তার রক্ত দিয়ে নির্মিত;
তার প্রাণ-বিদ্যুতে স্পন্দিত আমার হৃদয়;
তার দুঃসহ শোক থেকে উত্থিত আমার শরীর।
মা, তোমারই জন্য আজ আমি
প্রত্যার্পণ করছি আমার রক্ত, আমার প্রাণ,
যেন শোকের শেষে,
আবার তুমি কোটি কোটি সন্তানের মা হতে পারো ॥”
[সূত্র : ১. দৈনিক পাকিস্তান, ৯ মার্চ ১৯৭১। ২. ‘প্রতিধ্বনিগণ’, সন্ধানী প্রকাশনী, ১৯৭৪। নতুন সংস্করণ,  মাওলা ব্রাদার্স  ২০২০]
সৈয়দ হক যে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলেন, তার আরেকটি প্রমাণ দিচ্ছি। শিল্পী মুর্তজা বশীরের আত্মজীবনী ‘আমার জীবন ও অন্যান্য’ গন্থের ২৮২ পৃষ্ঠায় তিনি লিখেছেন, “১২ মার্চ কবি-সাহিত্যিকরা বাংলাদেশের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করে ‘লেখক সংগ্রাম শিবির’ নামে একটি কমিটি গঠন করেন। তারা স্বৈরাচারী ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে কঠোর নিন্দা জ্ঞাপন করে কৃষক-শ্রমিক, ছাত্র-জনতার মুক্তিসংগ্রামে একাত্মতা ঘোষণা করেন। হাসান হাফিজুর রহমানকে আহ্বায়ক করে সংগ্রাম কমিটির অন্য সদস্যরা ছিলেন সিকানদার আবু জাফর, ডক্টর আহমদ শরীফ, শওকত ওসমান, শামসুর রাহমান, বদরুদ্দীন উমর, রণেশ দাসগুপ্ত, সাইয়িদ আতীকুল্লাহ, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, রোকনুজ্জামান খান, ফজল শাহাবুদ্দিন, সৈয়দ শামসুল হক, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, ফরহাদ মজহার, বেগম সুফিয়া কামাল, জহির রায়হান, আবু কায়সার, রপিক, নওশাদ, শাহনুর খান, মুহম্মদ নূরুল হুদা, রফিক কায়সার, সায্যাদ কাদির, আহমেদ হুমায়ুন, আবদুল গণি হাজারী, আহমদ ছফা, এখলাসউদ্দিন আহমদ, লায়লা সামাদ, আহমদ মাসুদ।...১৪ মার্চ ড. আহমদ শরীফের সভাপতিত্বে বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে ‘লেখক সংগ্রাম শিবির’-এর এক সভা হয়। সেই সভায় এক প্রস্তাবে বাংলার স্বাধীনতা আন্দোলনকে যে শ্রমিক-কৃষক, ছাত্র-জনতা রক্ত দিয়ে উদ্দীপ্ত করে গেছেন, তাদের জন্য একটি ‘স্মৃতি সমাধিক্ষেত্র’ নির্মাণের দাবি জানানো হয়। এই সমাধিক্ষেত্রে শহীদদের নাম এবং আন্দোলনের ইতিহাস সংরক্ষিত থাকবে।”
অপরদিকে, ২৫ শে মার্চ পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর অভিযান শুরু হওয়ার আগে ‘লেখক সংগ্রাম শিবির’ ২২ শে মার্চ তারিখে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে, সেখানে স্বাধিকারে পক্ষে, পশ্চিম পাকিস্তানের নির্যাতন-নিপড়িনের বিরুদ্ধে বিপ্লবী কবিতা পাঠ ও গণনাট্য মঞ্চস্থ হয়। ড. আহমদ শরীফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় কবিতাপাঠে অংশ নেন আহসান হাবীব, শামসুর রাহমান, হাসান হাফিজুর রহমান, সৈয়দ শামসুল হক, মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, ফজল শাহাবুদ্দিন, আলাউদ্দিন আল আজাদ, হুমায়ুন কবির, শাহনুর খান, আখতার হুসেন, মাসুদ আহমেদ, রফিক নওশাদ মাহবুব সাদিক, সালেহ আহমেদ, দাউদ হায়দার, মাকিদ হায়দার, মেহেরন্নেসা প্রমুখ। (দ্র : ১. বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, দলিলপত্র : ২য় খণ্ড, সম্পাদক : হাসান হাফিজুর রহমান, তথ্য মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, প্রথম প্রকাশ নভেম্বর ১৮২, পৃ. ৭৭৮। ২. মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু ও বাংলা একাডেমি , পিয়াস মজিদ, পৃষ্ঠা ৩২, বাংলা একাডেমি, প্রকাশকাল : ফেব্রুয়ারি ২০২০)। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, এখানে সৈয়দ শামসুল হক স্বয়ং উপস্থিত থেকে বিপ্লবী কবিতা পাঠ করেছেন।
কবি শামসুর রাহমান ও শিল্পী মর্তুজা বশীরের সাক্ষ্যমতে, সৈয়দ শামসুল হক মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলেন তো বটেই, মুক্তিযুদ্ধকালীন ‘লেখক সংগ্রাম শিবির’-এর একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। যে কবি ’৭১-এর মার্চে ‘দৈনিক পাকিস্তা’ন-এর মতো প্রথম শ্রেণীর একটি বহুল পঠিত পত্রিকার সম্পাদকীয় পাতায় পশ্চিম পাকিস্তানের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কবিতা লিখলেন, যিনি যুদ্ধকালীন ‘লেখক সংগ্রাম শিবির’-এর একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন, তিনি কেমন করে পাকিস্তানের সমর্থক হতে পারেন? তিনি কেমন করে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে দাঁড়াতে পারেন? প্রতিবাদী কবিতা লিখে এবং সংগ্রাম শিবিরের সদস্য হয়ে তিনি তো শত্রুপক্ষের কাছে চিহ্নিত হয়ে গেলেন। শত্রুরা কি তাকে আর তাদের দোসর হিসেবে গ্রহণ করবে? প্রশ্নই আসে না। একাত্তরে যে একবার হানাদারদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, হানাদাররা কোনোভাবেই তাকে আর গ্রহণ করার কথা নয়। করেনি। ইতিহাস তা বলে না। সুতরাং প্রমাণিত হলো, সৈয়দ শামসুল হক পাকিস্তানের পক্ষে ছিলেন না, রাজাকার ছিলেন না, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলেন এবং তা সক্রিয়ভাবেই।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে, মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি কোথায় ছিলেন? উত্তর, তিনি ’৭১-এর ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢাকাতেই ছিলেন। তখন তাঁর বাসা ছিল গ্রীণ রোডে। ভাড়া বাসা। তাঁর স্ত্রী আনোয়ারা সৈয়দ হক ১৯৬৭ সালে আর্মির চিকিৎসক হিসেবে চাকরিতে জয়েন করেন। তাঁর মা ক্যান্সার রোগী। চাকরিতে জয়েন করার সময় শর্ত ছিল পাঁচ বছরের আগে চাকরি ছাড়া যাবে না। শর্ত মোতাবেক তিনি চাকরি করে যাচ্ছেন। না করলে তাকে প্রাণ হারাতে হবে অথবা দেশ ছাড়তে হবে। ক্যান্সার রোগী মাকে নিয়ে তিনি কোথায় যাবেন? তাই বাধ্য হলেন চাকরি করতে। ২৫ মার্চ গণহত্যা সংগঠিত হলো। ২৭ মার্চ সৈয়দ হক ছুটে গেলেন সাংবাদিক শফিক রেহমানের ইস্কাটনের বাসায়। আশ্রয় চাইলেন। কিন্তু শফিক রেহমান জানালেন যে, তারা নিজেরাই বিপদে, সৈয়দ হককে কী করে আশ্রয় দেবেন? (শফিক রেহমান এখনো জীবিত। যে কেউ তাঁর কাছ থেকে এই ঘটনার সত্যতা যাচাই করে নিতে পারবেন)।
সৈয়দ হক বাসায় ফিরে এলেন। স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি হয়ে পড়লেন। বাসা থেকে একদম বের হন না। কবিতা লেখেন। তাঁর ‘প্রতিধ্বনিগণ’ কবিতার বইটির অধিকাংশ কবিতা এই সময়ে রচিত। কিন্তু জুন মাসে তিনি দেখলেন তাঁর পক্ষে দেশে থাকা আর সম্ভব নয়। সম্পূর্ণ অনিরাপদ। তাই তিনি দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। কীভাবে দেশ ছাড়বেন? তাঁর বন্ধু শাহেদ করিম, নাসিম করিম প্রমুখকে ধরে তিনি একজন ‘লেদার মার্চেন্ট’ বা ‘চামড়ার ব্যবসায়ী’ হিসেবে লন্ডনের ভিসা নিলেন। ২২ সেপ্টেম্বর রওনা হলেন লন্ডনের উদ্দেশে। তাঁর পাসপোর্টে লেখা ছিল ‘লেদার মার্চেন্ট’। ব্যবসায়ী পরিচয়ের কারণে দেশ ছাড়তে পাকিস্তানিরা ঝামেলা করেনি। সেই পাসপোর্ট আনোয়ারা সৈয়দ হকের কাছে সংরক্ষিত আছে। চাইলে যে কেউ তাঁর কাছ থেকে দেখে নিতে পারবেন।
লন্ডনে গিয়ে সৈয়দ হক কী করলেন? যোগ দিলেন বিবিসিতে। বিবিসি বাংলার ৭০ বছর উপলক্ষে ২০১১ সালে প্রকাশিত স্মরণিকায় সৈয়দ হকের একটি লেখা ছাপা হয়েছিল। সেখানে তিনি লিখেছেন, “আমার ধারণা ছিলো মুক্তিযুদ্ধ দীর্ঘদিন ধরে চলবে, হয়তো বছর তিনেক লেগে যাবে। শরীর ভেঙে পড়েছিল বন্দী স্বদেশে। ভেবেছিলাম, শরীর খানিকটা ঠিক হলেই ভারতে ফিরে আসবো, সরাসরি যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করবো। লন্ডনে আসবার পরপরই বন্ধুরা আমাকে বিবিসিতে নিয়ে এলেন আর সেখানে পরদিন থেকেই খবর ও খবর-ভাষ্য প্রচারে লেগে গেলাম। প্রায় প্রতিদিনই বেতারে কণ্ঠ দিচ্ছি আর, স্বজন প্রিয়জন আর সিলেট অঞ্চলের অজানা অনেক মানুষের কল্যাণে থাকা খাওয়া চলছিলো। তাদের সেই অনুগ্রহ আর যত্নের কথা সারাজীবন আমি ভুলবো না।
এরই মধ্যে যুদ্ধের খবর স্থানীয় লন্ডনবাসীদের জানাবার জন্যে প্রতিদিন রেডিও লন্ডন থেকেও সংবাদ প্রচারিত হতে লাগল সন্ধ্যেবেলায়। সে  বেতার প্রচারেও নিয়মিত অংশ নিচ্ছি। দেশের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। স্বজনেরা, আমার স্ত্রী পুত্রকন্যা কেমন আছে, কোনো খবর পাচ্ছি না। সেই সময়টার কথা মনে করলে আজও আমার মন উৎকণ্ঠিত হয়ে ওঠে। এরই মধ্যে বিজয় এলো মুক্তিযুদ্ধে। একাত্তরের ষোলোই ডিসেম্বর পাকিস্তান বাহিনী ঢাকায় আত্মসমর্পণ করলো মিত্রবাহিনী অর্থাৎ সম্মিলিত ভারতীয় সেনা ও মুক্তিবাহিনীর কাছে। আমার বেতার-জীবনের শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত : আত্মসর্মপণের খবরটি আমি পাঠ করেছিলাম সেদিন বিবিসি বাংলা খবরে।
দেশ তো স্বাধীন হলো, বিবিসি সিদ্ধান্ত নিলো বাংলা সম্প্রচারের সময় বৃদ্ধি করবে। আর, আমাকেও বিবিসি প্রস্তাব করলো যেন বেতার-সম্প্রচারক হিসেবে যোগদান করি। যোগ দিলাম বাহাত্তর সালের তেসরা আগস্ট তারিখে। আমাদের অংশ নিতে হতো খবর পাঠ ছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালায়। তার একটি অনুষ্ঠান শিল্পসাহিত্য সম্পর্কে―তার দায়িত্ব দেয়া হলো আমাকে। অনুষ্ঠানের নামটিও আমাকে দিতে হলো―শিল্পপ্রাঙ্গণ। প্রতি সপ্তাহে শুক্রবারে পনেরো মিনিটের জন্যে সে অনুষ্ঠান।... সেই সত্তর দশকে লন্ডনে শিল্পপ্রাঙ্গণ অনুষ্ঠান এবং বিশেষ করে নাটক করবার মতো বাঙালিজন খুব কমই পাওয়া যেত। যাঁরা ছিলেন, তাঁদের গড়েপিটে নিয়ে যে অনুষ্ঠানগুলো করি তার জন্যে আজও আমি গর্ব অনুভব করি। অনেকের মধ্যে অজিত বন্দোপাধ্যায়, নরেশ বন্দোপাধ্যায়, নুরুস সোবহান, এঁদের কথা বিশেষ করে মনে পড়ে। কী ধৈর্য ধরেই না তাঁরা আমার নির্দেশ মেনে কাজ করেছেন। আরো কত জন, যাঁদের কথা এই দূরত্বে আর আলাদা করে মনে পড়ছে না। কিন্তু তাঁরা ছিলেন প্রত্যেকেই নিবেদিত প্রাণ শিল্পী। শিল্পপ্রাঙ্গণ অনুষ্ঠানে যে ক’টি সাক্ষাৎকার আমি প্রচার করি, তা বেতার-প্রচারের ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে আছে। কবি জসিমুদ্দিন, কবীর চৌধুরী, উৎপল দত্ত, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন―এঁরা বিভিন্ন সময়ে লন্ডন সফরে আসেন, শিল্পপ্রাঙ্গণে তাঁদের সাক্ষাৎকারগুলো যদি আজও বিবিসি আর্কাইভে যদি থেকে থাকে। জানিনা আছে কিনা। বিশেষ করে জয়নুল আবেদিনের সাক্ষাৎকারটি। এসেছিলেন তিনি গলায় ক্যানসার নিয়ে, চিকিৎসার জন্যে। জীবনের ও শিল্পের বিষয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা তিনি বলেছিলেন সেদিন।...সাতটি বছর একটানা কাজ করেছি বিবিসি বাংলা বিভাগে। সে শুধু আমার চাকুরি করাই ছিলো না। শুধু অর্থ উপার্জনই ছিল না। ছিল, দেখা ও শোনার এক মহাপার্বণ। আমি সমৃদ্ধ হয়েছি অনেকদিক থেকে। তার ভেতরে একটি তো এই যে, আমি নাট্যরচনায় উদ্বুদ্ধ হয়েছি। আজ আমার নাট্যরচনায় যদি কিছু সুকৃতি থেকে থাকে তবে তার পেছনে রয়েছে বিবিসি বাংলাবিভাগে নাটক করবার অভিজ্ঞতা। সে কী কেবল বেতার মারফতেই? তা নয়। দর্শক সমুখেও একাধিক নাটক করেছি লন্ডনে বিবিসির বাংলা বিভাগের বিশেষ শ্রোতা-দর্শক সমাবেশে অনুষ্ঠানে।”
সৈয়দ শামসুল হক যে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলেন তার আরো একটি প্রমাণ দিচ্ছি। বশীল আল্হেলাল রচিত ‘বাংলা একাডেমির ইতিহাস’ গ্রন্থের ২৬৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ : ১৯৭২-এর ১৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় বাংলা একাডেমিতে ‘মুক্তিসংগ্রামের আলেখ্য’ শীর্ষক একটি প্রদর্শনী হয়। সেদিন অপরাহ্নে অনুষ্ঠিত হয় কবিতা পাঠের আসর। বশীর আল্হেলাল লিখেছেন, “দ্বিতীয় পর্যায়ে অপরাহ্নে বেগম সুফিয়া কামালের সভাপতিত্বে স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর হয়। কবিতা পড়েন শামসুর রাহমান, মো. মনিরুজ্জামান, মহাদেব সাহা, সুব্রত বড়–য়া, ফরহাদ মজহার, ফজল শাহাবুদ্দীন, হুমায়ুন কবির, শাহনূর খান, নির্মলেন্দু গুণ, জিনাত আরা রফিক, মাসুদ আহমেদ মাসুদ, মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা প্রমুখ প্রবীণ নবীন কবি। সৈয়দ শামসুল হক লন্ডন থেকে তাঁর কবিতার টেপ পাঠিয়েছিলেন, তা সভায় বাজিয়ে শোনানো হয়।’
(দ্র. ১. বাংলা একাডেমির ইতিহাস, বশীর আল্হেলাল, প্রথম পুনর্মুদ্রিত সংস্করণ : ত্রৈ ১৪২৪/মার্চ ২০১৮। ২. ‘একাডেমির কথা’, বাএ. পত্রিকা, ১৬শ বর্ষ, ৪র্থ সংখ্যা, মাঘ-চৈত্র, ১৩৭৮)
যে কবি স্বাধীনতার পর পরই লন্ডন থেকে মুক্তিযুদ্ধকে বিষয় করে লন্ডন থেকে কবিতা টেপ রেকর্ড করে পাঠালেন, এবং সেই কবিতা বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধান প্রধান কবিদের সামনে বাজিয়ে শোনানো হলো, সেই কবি পাকিস্তানের সমর্থক ছিলেন? তা কী করে সম্ভব? তিনি পাকিস্তানের সমর্থক হলে তো এই কবিতা লিখতেন না এবং সেদিনের অনুষ্ঠানে কবিরা তাঁর কবিতাটি টেপ রেকর্ডারে বাজিয়ে শোনাতেন না, ঘৃণাভরে ছুঁড়ে ফেলতেন। সুতরাং প্রমাণিত হলো সৈয়দ শামসুল হক পাকিস্তানপন্থি ছিলেন না, পাকিস্তানের সমর্থক ছিলেন না, রাজাকার ছিলেন না। তিনি দেশ স্বাধীনের পক্ষে ছিলেন এবং লন্ডন থেকে স্বাধীনতার খবরটি বিবিসিতে তিনিই পাঠক করেন।
এখন আসা যাক সৈয়দ হকের গুলশানের বর্তমান বাড়িটি প্রসঙ্গে। প্রায়ই একথা শোনা যায় যে, এই বাড়িটি তিনি স্বৈরশাসক এরশাদের কাছ থেকে উপহার হিসেবে নিয়েছিলেন। খেলায় সাফল্যের জন্য একজন ক্রিকেটারকে রাষ্ট্র যদি ফ্ল্যাট উপহার দিতে পারে, একজন লেখককে রাষ্ট্র একটি বাড়ি উপহার দিতেই পারে। এতে আমি দোষের কিছু দেখি না। হ্যাঁ, দোষ হতে পারে সেই বাড়িটি যদি বিএনপি-জামাত বা স্বৈরশাসকের আমলে উপহার হিসেবে নেওয়া হয়। কিন্তু সৈয়দ হক তো গুলশানের বর্তমান বাড়িটি এরশাদের কাছ থেকে উপহার নেননি। এই বাড়ি তাঁর কেনা। ১৯৬৮ সালে আনোয়ারা সৈয়দ হক ও তিনি জায়গাটির বায়নাপত্র করেন। ১৯৭৬ সালে ভূমি অফিসে এই জায়গার রেজিস্ট্রেশন হয়। ১৯৭৯ সালে এখানে বাড়ি নির্মাণ শুরু হয় এবং ১৯৮১ সাল থেকে সেই বাড়িতে সৈয়দ হক ও তাঁর পরিবার বসবাস শুরু করেন। তখন এরশাদ সরকার ক্ষমতায় আসেনি।
কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেন, আমার এই কথাগুলোর প্রমাণ কী? এই ক্ষেত্রে আমার পাল্টা প্রশ্ন, আপনারা যে অভিযোগ করছেন বাড়িটি এরশাদ সরকারের কাছ থেকে উপহার নেওয়া, তার প্রমাণ কী? অভিযোগ যেহেতু করছেন, প্রমাণ তো আপনাদেরই দিতে হবে। বাড়িটি তাঁকে উপহার দেওয়া হলে তো তার রেকর্ড ‘রাজউক’-এ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসে রয়েছে? অবশ্যই আছে। না থাকার কোনো কারণ নেই। কেউ কি দেখাতে পারবেন সেই রেকর্ড? আমি নিশ্চিত দেখাতে পারবেন না। কারণ যা নেই, তা কেমন করে দেখাবেন? অপরপক্ষে, জায়গাটি যে ’৭৬ সালে রেজিস্ট্রেশন করা সেই রেকর্ড রয়েছে সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসে। চাইলে যে কেউ ভূমি মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে বা সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসে খোঁজ নিতে পারেন। প্রমাণ পেয়ে যাবেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন এবং তিনি নজরুলের কবিতা মেরে দিয়ে নোবেল পেয়েছিলেন―এ দুটি মিথ্যা প্রচার বহু বাঙালির মগজ থেকে মোছা যাচ্ছে না। এই অবিকশিত জাতির মগজে এখন সৈয়দ হক সম্পর্কেও বিষ ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। একজন সম্মানীয় লেখক সম্পর্কে, তাও সৈয়দ শামসুল হকের মতো একজন গুরুত্বপূর্ণ লেখক, যিনি বাংলা সাহিত্যকে নানাভাবে সমৃদ্ধ করেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে যখন আমরা কোনো অভিযোগ করি, তার পক্ষে অবশ্যই তথ্য-উপাথ্য সাক্ষ-প্রমাণ থাকা প্রয়োজন। তা না করে মনগড়াভাবে যত্রতত্র এসব গুরুতর অভিযোগ প্রচার করা একটি সামাজিক অপরাধ। একজন সৈয়দ হক বছর বছর বছর জন্মায় না, এমন একজন লেখকের জন্য বহু বছর অপেক্ষা করতে হয়। কেন আমরা তাঁর বিরুদ্ধে মনগড়া অভিযোগ করে বেড়াচ্ছি? কেন তাঁকে দিগম্বর করতে চাচ্ছি? কেন তাঁকে টেনে নামাতে চাইছি? চাঁদের আলো কি আমাদের সহ্য হয় না? কেনে কোনো মহীরুহকে আমরা সহ্য করতে পারি না? আত্মঘাতী প্রবণতা থেকে কি কখনো আমাদের মুক্তি ঘটবে না? কোনোদিন কি আমাদের বুদ্ধির মুক্তি ঘটবে না?
আপনাদের কল্যাণ হোক।

লেখক, কথা সাহিত্যিক