উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছের ফাঁদ

কৃষকের কাজে আসছে না সেই রেগুলেটর

এম. আর রিয়াদ, নোয়াখালী
 | প্রকাশিত : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৮:৫২

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় কৃষি উৎপাদন আরও অধিক বৃদ্ধি ও জলাবদ্ধতা দূর করতে ২০০৫ সালে ১৯ কোটি ৪৪ লাখ ৭৪ হাজার টাকা ব্যয়ে ২৩ ভেন্টের মুছাপুর রেগুলেটর নির্মাণ করা হয়েছিল। রেগুলেটরটি বর্তমানে কৃষকের উপকারে না এসে প্রভাবশালীদের বাণিজ্যিকভাবে মৎস্য শিকারের ফাঁদে পরিণত হয়েছে। রেগুলেটর এলাকায় উন্মুক্ত জলাশয়ে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে মাছ ধরার ফাঁদ তৈরি করে মাছ শিকার করায় এর সুফল তারা ছাড়া আর কেউ ভোগ করতে পারছেন না। রেগুলেটরের ভেতরে-বাইরে মাছ শিকারের ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করা অসংখ্য জাল অপসারণ করা না হলে এবং রেগুলেটরের ডালাগুলো খোলা-বন্ধের নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাতে নেয়া না হলে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চলে কৃষিতে বিপর্যয় নেমে আসবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন কৃষি বিষয়ে অভিজ্ঞজন।

জানা গেছে, বাণিজ্যিক মৎস্যলোভী একটি চক্র তাদের প্রভাব খাটিয়ে পুরো রেগুলেটরের দায়িত্ব নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। রেগুলেটর এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দায়িত্বপ্রাপ্ত লোক তাদের নির্দেশ মোতাবেকই রেগুলেটরের দরজা খোলা ও বন্ধের কাজটি করে থাকেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। এ চক্রটি পানি উন্নয়ন বোর্ডে স্থানীয় এবং জেলার কর্মকর্তা কর্মচারীদের ম্যানেজ করেই নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নে মাছ শিকার ও বিক্রি করছেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। রেগুলেটরের ভেতরে ১৫-২০টি বড় ধরনের জাল এবং বাইরে ৫-৮টি জাল বসিয়ে মাছ শিকার করার ফলে ডিম ছাড়ার জন্য মা মাছ চলাচল করতে পারে না। অন্যান্য সকল প্রজাতি মাছের প্রজননও ব্যাহত হচ্ছে।

অপরদিকে রেগুলেটরের গেইটগুলো তাদের ইচ্ছে মত খোলা-বন্ধের কারণে জলাবদ্ধতা ও লোনা জোয়ারের পানিতে যেমন ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি পানি না থাকলে সেচের অভাবে বিভিন্ন ফসলেরও ক্ষতি হচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে, গত বছর রেগুলেটরের গেইট বন্ধ রাখার ফলে অতিরিক্ত জলাবদ্ধতায় পানিতে শত শত হেক্টর জমির আমন ও রবি ফসল নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। কৃষকরা অনেক দেন-দরবার করেও কোন লাভ হয়নি। রেগুলেটরের ভেতরে-বাইরে জালের বেড়া দিয়ে মাছ শিকার করার ফলে কৃষকরা পানি সেচ দিয়ে চাষাবাদ করতে পারেন না। যে সকল গরিব ভূমিহীন কৃষক জাল দিয়ে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতেন, তারাও ওই দুর্বৃত্ত চক্রের কারণে এখন আর মাছ শিকার করতে পারেন না।

স্থানীয় কৃষক নুর ইসলাম ও শিকদার জানান, রেগুলেটরের ভেতরে-বাইরে অনেক জাল পেতে রাখার কারণে ভেতরের মাছ বাইরে যেতে পারে না, বাইরের মাছ ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না। রেগুলেটরের জোয়ার-ভাটা সুবিধা ও সেচ সুবিধা কৃষকরা পায় না। এ এলাকায় আউশ আমন, ইরি-বরো ধান আবাদের পাশাপাশি রবি ফসলেও আশানুরূপ ফলন হয়। কোন সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া কুচক্রী মহলের ইঙ্গিত ইশারায় রেগুলেটরের গেইট খোলা বন্ধের কাজটি করলে সব ধরনের ফসলের উৎপাদন হ্রাস পাবে।

স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, রুহুল আমিন ছাদু ও রাজনৈতিক প্রভাবশালী তার কয়েক সহযোগী মুছাপুর রেগুলেটরের ভেতরে-বাইরে অসংখ্য জাল বসিয়ে বাণিজ্যিকভাবে মাছ শিকার ও বিক্রি করে আসছে।

অভিযুক্ত রুহুল আমিন ছাদু জাল পেতে মাছ শিকারের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে জানিয়ে আমরা এ মাছ শিকার করছি। তবে মৎস্য দপ্তরের বা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোন অনুমতি আছে কিনা জিজ্ঞেস করা হলে তিনি এর কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সহকারি মৎস্য কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন খন্দকার বলেন, রেগুলেটর এলাকায় যারা বাণিজ্যিকভাবে মাছ শিকার করেন- তাদের বৈধ কোন অনুমতি নেই। প্রভাব খাটিয়ে তারা এ কাজটি করে আসছেন।

নোয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন রেগুলেটরের দরজাগুলো স্থানীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করে বলেন, মুছাপুর রেগুলেটরের দরজাগুলো মার্চ-অক্টোবর পর্যন্ত খোলা থাকে। বছরের অন্য সময়ে নিয়মানুযায়ী বন্ধ রাখা হয়। রেগুলেটরের দরজাগুলো বন্ধ এবং খোলার দায়িত্বে আমাদের একজন ফোরম্যান দায়িত্বে রয়েছেন। এছাড়াও আমাদের কর্মকর্তারা সবসময় এর তদারকি করেন। স্থানীয় প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি রেগুলেটরের ভেতরে ও বাইরে জাল বসিয়ে মাছ স্বীকার করে থাকেন। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলেও জানান এ কর্মকর্তা।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জিয়াউল হক মীর বলেন, বিষয়টি সরেজমিনে খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৮সেপ্টেম্বর/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :