‘লালজমিন’ আমার কাছে অপার্থিব আনন্দের: মোমেনা চৌধুরী

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৬:৩২

মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে এক নারীর সংগ্রামী জীবনের গল্প। চতুর্দশী কিশোরীর লাল পদ্মের প্রতি প্রেম দিয়ে শুরু সেই গল্প। কৈশোরেই যে কি-না বাবা-মায়ের মধ্যরাতের গুঞ্জন শুনে তার মন ও মস্তিষ্কে তুলে নেয় দু’টি শব্দ─ ‘মুক্তি ও স্বাধীনতা’।

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সেই কিশোরীর বাবা চলে যায় লড়তে─ দেশমাতৃকার মুক্তির সংগ্রামে। সকলের অগোচরে কিশোরীও নানা কৌশলে যুদ্ধে যাবার আয়োজন করে। সশস্ত্র সেই যুদ্ধ। কিন্তু বয়স তাকে অনুমোদন দেয় না।

এবার কিশোরীর সেই ছায়া-প্রেম সম্মুখে দাঁড়ায়। কিশোরী তার সেনাপতিকে চিনতে পারে। তারপর শুরু তার যুদ্ধযাত্রা...। লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগেই পুরুষ যোদ্ধারা কেউ শহীদ হন আর কেউ নদীর জলে হারিয়ে যান।

পাঁচ যুবতীসহ যুদ্ধযাত্রী এই কিশোরীর জীবনে ঘটে নানা অভিজ্ঞতা। চৌদ্দ বছরের কিশোরীর ধবধবে সাদা জমিন যুদ্ধকালীন ৯ মাসে রক্তরাঙা হয়ে ওঠে। ‘লালজমিন’ হলো সেই কিশোরীর রক্তরাঙা অভিজ্ঞতার মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধোত্তর এক নারীর সংগ্রামী জীবনের নাট্যপ্রকাশ।

‘লালজমিন’ রচনা করেছেন মান্নান হীরা। নির্দেশনা দিয়েছেন সুদীপ চক্রবর্তী। কিশোরী থেকে সংগ্রামী হয়ে ওঠা সেই নারীর ভূমিকায় একক অভিনয় করছেন মোমেনা চৌধুরী। তিনি শূন্যন রেপার্টরি থিয়েটারের প্রধান নির্বাহী।

মোমেনা চৌধুরী ৩৭ বছর ধরে মঞ্চ ও টেলিভিশনে সগৌরবে অভিনয় করে চলেছেন। তরুণ প্রজন্মের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ‘লালজমিন’ সারাদেশে ২৩১তম মঞ্চায়ন হয়েছে। এমনকি নাটকটি মঞ্চস্থ হয়েছে খোদ বঙ্গভবনেও।

আলোচিত এই নাটকটির নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন এই গুনী অভিনেত্রী। শোনান ২০১১ সালের ১৯ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটমণ্ডলে প্রথম মঞ্চস্থ হওয়ার পর ‘লালজমিন’ নিয়ে তার এগিয়ে যাওয়ার গল্প। একে একে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ও বিদেশের মাটিতে মঞ্চস্থ হয়েছে এই নাটক।

মোমেনা চৌধুরী বলেন, “দর্শকের অর্থাৎ মানুষের আবেগ অনুভূতি আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। তাদের ভালোবাসা ‘লালজমিন’কে এগিয়ে নিয়ে গেছে। আমাদের পথচলাকে করেছে গতিময়।”

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একক অভিনীত কোনও নাটকের ২৩১তম প্রদর্শনী হওয়া তার কাছে অপার্থিব আনন্দ উল্লেখ করে মোমেনা চৌধুরী বলেন, ‘৩৭ বছর অভিনয় জীবনে এ আমার পরম পাওয়া।’

‘লালজমিন’ নাটকটি সারা দেশে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ২০১৭ সালে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় নাটকটির প্রযোজনা সংগঠন শূন্যন রেপার্টরি থিয়েটারকে ১১ লাখ টাকা অনুদান দেয়। সেসময়ের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর শূন্যন রেপার্টরি থিয়েটারের প্রধান নির্বাহী মোমেনা চৌধুরীর হাতে অনুদানের চেক তুলে দিয়েছিলেন।

এ বিষয়টি উল্লেখ করে মোমেনা চৌধুরী বলেন, ‘সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় শূন্যন রেপার্টরি থিয়েটারের প্রথম প্রযোজনা লালজমিনকে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এবং বিদেশে মঞ্চায়ন করতে অনুদান দিয়েছিল। সরকারের এই সহায়তা আমাদের উৎসাহ বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এজন্য বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপির কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।’

‘এছাড়া বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রকে আমাদের এই যাত্রায় পাশে পেয়েছি। আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের উদ্যোগে বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে মঞ্চায়নের সুযোগ হয়েছে। পুলিশের গর্ব ডিআইজি হাবিবুর রহমান বিপিএম (বার) পিপিএমকেও অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই। তিনি বাংলাদেশ পুলিশ লাইনে লালজমিন মঞ্চায়নের সুযোগ করে দেন।’

২০১৯ সালের ১৬ এপ্রিল ‘লালজমিন’ বঙ্গভবনেও প্রদর্শনের সুযোগ লাভ করে শূন্যন রেপার্টরি থিয়েটার। এজন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মোমেনা চৌধুরী বলেন, ‘গত বছরের ১৬ এপ্রিল বঙ্গবভনে লালজমিন প্রদর্শনের সুযোগ দেয়ায় মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে আমাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।’

‘সর্বোপরি আরণ্যক নাট্যদল, দেশের সকল জেলা প্রশাসক, পুলিশ লাইন ও শিল্পকলা একাডেমি, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের কাছেও আমি কৃতজ্ঞ। আর অবশ্যই সবার ওপরে আমাদের সকল দর্শককে লালজমিন নিয়ে তাদের আবেগ-অনুভূতির জন্য রক্তিম শুভেচ্ছা জানাই।’

লালজমিন নাটকের নেপথ্য ভূমিকায় রয়েছেন সুব্রত, মামুন, সাজিদ, নভেরা রহমান, তানভীর সানি, জুলফিকার চঞ্চল, রামিজ রাজু, জুয়েল মিজি, জিহাদ বাসার, মাহাবুব, আলমগীর ও লিমন।

(ঢাকাটাইমস/২৯সেপ্টেম্বর/এসকেএস/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিনোদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :