আগাম আলু চাষে কৃষকদের কপালে ভাঁজ!

প্রকাশ | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৯:৪৪

কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে আশ্বিনা বৃষ্টিতে আগাম আলু চাষিদের স্বপ্ন ভঙ্গ। রোপণ করা আগাম আলু গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে তলিয়ে যাওয়ায় ক্ষেত থেকে বীজ তুলে নিয়েছেন অনেক কৃষক। অনেকে বীজ পরিচর্যা, হাল চাষ ও সার প্রয়োগ করে জমি তৈরি করে আগাম আলু রোপণের প্রস্তুতি নিলেও অতিবৃষ্টির কারণে তৈরিকৃত জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় আগাম আলু লাগাতে পারেনি। ফলে এ বছর বৈরি আবহাওয়া ও আশ্বিনী বৃষ্টি কেড়ে নিয়েছে আগাম আলু চাষীদের স্বপ্ন।

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলা আলু চাষের জন্য বিখ্যাত। এক সময়ের বালু মাটিগুলো চাষাবাদের ফলে উর্বর মাটিতে পরিণত হয়েছে। আগাম ও নমলা আলু চাষাবাদের পাশাপাশি এ জমিগুলোতে ফলছে চার ফসল। এ এলাকার জমিগুলো সোনা ফলা মাটিতে রূপ নিয়েছে। আগাম আলু হয়েছে এ এলাকার কৃষকের দিন বদলের ফসল।

এখানকার আলু এলাকার চাহিদা পূরণ করে ঢাকা, চট্রগ্রাম, খুলনা, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো করা হয়। দেশের সর্বপ্রথম এ এলাকার আলু বাজারে উঠে। কৃষকরা ভালো দামও পায়। কৃষকের পরিবারে ফুটে হাসি। কাড়ি কাড়ি টাকা পায়। এর ফলে জীবন যাত্রায় এসেছে পরিবর্তন। আগাম আলু চাষ করে এ এলাকার মানুষ তাদের ভাগ্য বদল করেছে। কিন্তু এ বছর অনেকে আগাম আলু রোপণ করে আশ্বিনা বৃষ্টিতে জমি তলিয়ে যাওয়ায় জমি থেকে আলু বীজ তুলে নিয়েছে।

অন্যদিকে আগাম আলু রোপণের জন্য তৈরিকৃত জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সঠিক সময়ে কৃষকরা বীজ রোপন করতে পারছে না। পানি শুকিয়ে যাওয়ার পর আবারও ওই জমিগুলো সার ও চাষ দিয়ে প্রস্তুত করতে হবে। এতে চাষাবাদে ব্যয়ও বাড়বে। আবার বৈরি আবহাওয়ার কারণে অনেক কৃষক আগাম আলু রোপণে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। এর ফলে এ বছর নতুন আলু বাজারে আসতে দেরি হবে। দাম কম পাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। ফলে এ এলাকার ভাগ্য বদলের ফসলটি এ বছর কৃষকদের মুখের হাসি কেড়ে নিতে পারে। বৈরি আবহাওয়ার কারণে ফলনও কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেক কৃষক।

বাহাগিলী ইউনিয়নের উত্তর দুরাকুটি গ্রামের কৃষক এজাবুল হক লালবাবু সম্প্রতি এক একর জমিতে আগাম জাতের আলু রোপণ করেন। ওই দিন থেকে টানা বর্ষণে তার আলু খেতটি প্লাবিত হয়। ফলে বীজ পচনের আশঙ্কায় সোমবার আলু খেতে পানির নিচ  থেকে বীজ উত্তোলন করে বাড়িতে রাখেন।

এই কৃষক বলেন, ‘দামের আশায় আগাম আলু রোপণ করেছি। কিন্তু টানা বর্ষণ সে স্বপ্ন কেড়ে নিল। হাল চাষ, সার ও শ্রমিকসহ এক লাখ টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছি।’

ওই গ্রামের আর এক কৃষক বেলাল হোসেন জানান, বাজার দর বেশি পাওয়ার আশায় ৩০ শতাংশ জমিতে আলু রোপণ করেছি। কিন্তু অতিবৃষ্টির কারণে খেতে পানি জমায় বীজ পচেঁ যাওয়াসহ ফলন কম হবে আশঙ্কা করছি।

উপজেলা কৃষি অফিসার হাবিবুর রহমান বলেন, চলতি বছরে উপজেলায় আগাম জাতের আলু চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে চার হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে। আমার জানা মতে কয়েকজন কৃষক আগাম আলু রোপণ করেছেন। অতিবৃষ্টির কারণে জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বীজগুলো জমি থেকে তুলে রেখেছেন। আবহাওয়া ভালো হলে আবার রোপণ করবেন।

তিনি বলেন, খুব দ্রুতই আবারও আলু রোপণের ধুম পড়বে এ এলাকায়। এ বছর আগাম আলু রোপণে বিলম্ব হলেও উৎপাদন ও বাজার দর স্বাভাবিক পাবে বলে মনে করছি। এছাড়া বৈরি আবহাওয়ার কারণে আমরা আবহাওয়া দেখে কৃষকদের আগাম আলু রোপণের পরামর্শও দিচ্ছি।

(ঢাকাটাইমস/২৯সেপ্টেম্বর/কেএম)