ভাসানচর নিয়ে ‘উভয়সংকটে’ রোহিঙ্গারা

নজরুল ইসলাম ও সৈয়দ আলম, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৮:৪৯

ভাসানচরের সুবিধাদি দেখে ভালো লেগেছে রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের। কিন্তু ফিরে এসে নানা মহল থেকে হুমকি পাচ্ছেন সেখানে যাওয়ায়। কোনো মহল ক্যম্প ছাড়তে নিরুৎসাহিত করছে। এক পক্ষ ভাসানচরে যেতে চায়, তবে যাতায়াত নিয়ে শঙ্কিত তারা। আর এক পক্ষ অনাগ্রহী। তারা মিয়ানমার যাবে, তবু ভাসানচর নয়। এ নিয়ে উভয় সংকটে রোহিঙ্গা নেতারা।

করোনা মহামারির শুরুর দিকে সাগর থেকে উদ্ধার করা ৩০৬ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর ভাসানচরে পাঠানো হয়। তারা সেখানে ভালো আছে। তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে চলতি বর্ষা মৌসুম শেষে রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে ভাসানচরে স্থানান্তরের কথা ভাবছে সরকার।

সেই লক্ষ্যে ভাসানচরে ‘গো অ্যান্ড সি’ প্রকল্পের অধীনে চলতি মাসের শুরুর দিকে ৪০ জন রোহিঙ্গা নেতাকে চার দিনের সফরে ভাসানচর দেখাতে নিয়ে যাওয়া হয়। ভাসানচরে পরিদর্শন করে আসা রোহিঙ্গা নেতাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় ঢাকা টাইসের।

রোহিঙ্গা নেতারা জানান, ভাসানচরের পরিবেশ নিয়ে তাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে বর্ষা মৌসুমে সাগরে ভাসানচর যাওয়া-আসা নিয়ে তাদের মনে আতঙ্ক রয়েছে। তাছাড়া তাদের ধারণা, ভাসানচরে গেলে কক্সবাজারের রোহিঙ্গাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেন। এ ছাড়া তাদের সেখানে যেতে বিভিন্ন মহল থেকে বাধা রয়েছে।

সরকার অবশ্য আগেই বলেছে, রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরে কোনো জোর খাটানো হবে না। তারা যদি স্বেচ্ছায় সেখানে যেতে চায় তবেই তাদের সেখানে পাঠানো হবে। তবে সরকারের চেষ্টা থাকবে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরের ওপর চাপ কমাতে কিছু রোহিঙ্গাকে অনুপ্রেরণার মাধ্যমে ভাসানচরে স্থানান্তর করা।

ভাসানচরে ঘুরে আসা টেকনাফের বাহারছড়া শামলাপুর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হেড মাঝি আবুল কাশেম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘শামলাপুর ক্যাম্প থেকে আমরা চারজন ভাসানচরে যাই। ভাসানচর আমাদের ভালো লেগেছে। তবে সেখানে যাওয়া নিয়ে একটু দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছি। কারণ সেখানে কিছু সুবিধা থাকলেও বর্ষার দিনে যাতায়াত ঝুঁকিপূর্ণ।’

ভাসানচর ঘুরে আসা আরেক রোহিঙ্গা নেতা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে জানান, ক্যাম্প থেকে যেতে চাইলে নিজ দেশ মিয়ানমারেই ফিরে যাবেন, ভাসানচরে নয়। তিনি বলেন, ‘ক্যাম্প থেকে চলে গেলে আমাদের অন্যান্য লোকজন থেকে বিচ্ছিন্ন হতে হবে।’

শামলাপুর রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের ব্লক মাঝি নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘ভাসানচর পরিদর্শনে যাওয়ায় আমাদের বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। আবদুর শুক্কুর ওরফে হুজুর পরিচয় দিয়ে আমাকে একজন সেখানে গেলাম কেন সেজন্য অনেক গালিগালাজ করেছে।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে তৈরি করা আবাসন ব্যবস্থা বসবাসের উপযোগী কি না তা দেখতে গত ৫ সেপ্টেম্বর চার দিনের সফরে দুই নারীসহ ৪০ জন রোহিঙ্গা নেতাকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার খাদ্য গুদাম, থাকার ঘর, আশ্রয় সেন্টার, মসজিদ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, স্কুল, খেলার মাঠ ও কবরস্থানসহ মাছ চাষের পুকুর পরিদর্শন করেন রোহিঙ্গা নেতারা। এ ছাড়া সেখানে বিভিন্ন ধরনের সবজির বাগান এবং সাগরের তীরে কেওড়া বাগান দেখে তারা মুগ্ধ।

তবে সেখান থেকে ফেরার পর রোহিঙ্গা নেতারা ভাসানচরে যাওয়া নিয়ে বোল পাল্টান বলে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ আসে।

রোহিঙ্গা নেতারা ভাসানচরে ঘুরে আসার প্রায় ২১ দিন হতে চলল। এই সময়ের মধ্যে সেখানে যাওয়া নিয়ে রোহিঙ্গা নেতারা কোনো মতামত দিয়েছেন কি না জানতে চাইলে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ সামসুদ্দৌজা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারব না। এটা নিয়ে কথা বলার অনুমতি আমার নেই।’

প্রত্যাবাসন নিয়ে কাজ করা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের বিষয়ে ‘গো অ্যান্ড সি’ প্রকল্পের আওতায় জাতিসংঘ প্রতিনিধি, বিভিন্ন মানবাধিকারকর্মী ও গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়ে যাওয়া হবে। প্রয়োজনে অন্য রোহিঙ্গাদের ভাসানচর পরিদর্শনে নেওয়া হবে।

এদিকে গত ২৩ ও ২৪ সেপ্টেম্বর দুই দিনের সফরে কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা। সেই প্রতিনিধিদলে থাকা ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত রেনজে তিরিঙ্ক ভাসানচরে সরকারের ‘গো অ্যান্ড সি’ প্রকল্পের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া একটি ভালো উদ্যোগ ছিল।

দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একটি অংশকে নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তরে চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। কিন্তু জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর আপত্তির কারণে সরকার রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।

ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে সরকারের সরে আসার বিষয়টি প্রথম আলোচনায় আসে যখন অবকাঠামো নির্মাণ পরিস্থিতি দেখতে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সেখানে যান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এরপরই ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তর থেকে সরকার আপাতত সরে আসছে বলে আলোচনার শুরু হয়।

পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এটা নিয়ে কথা বলেন। এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গারা সেখানে না যেতে চাইলে আমাদের দেশের অসহায় মানুষকে সেখানে রাখা হবে।’

রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে দুই হাজার ৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচরের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে সরকার। জোয়ার–জলোচ্ছ্বাস থেকে এই চরের ৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা রক্ষা করতে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ তৈরি করেছে। এক লাখ রোহিঙ্গার জন্য সেখানে ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার মিলিটারির নির্যাতনের শিকার হয়ে সাড়ে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। আগে থেকে অবস্থান করছে চার লাখের মতো। বর্তমানে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে।

এ সমস্যা সমাধানের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমার চুক্তি করলেও মিয়ানমারের অনাগ্রহের কারণে এই চুক্তি বাস্তবায়িত হয়নি। পরপর দুবার প্রত্যাবাসনের খুব কাছাকাছি গিয়েও একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে পাঠানো যায়নি মিয়ানমারের কারণে।

(ঢাকাটাইমস/৩০সেপ্টেম্বর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

চার অঞ্চলে সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে

বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি কিশোর নিহত হওয়ার ঘটনায় বিএনপির নিন্দা 

কারওয়ান বাজারের কাঁচাবাজার ব্যবসায়ীদের গাবতলিতে স্থানান্তর করা হবে

বিএনপি নয়, আওয়ামী লীগই পরাজিত হয়েছে: মজনু

বোনের পর চলে গেল শিশু তাওহিদও, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১১

রাজধানীতে কিশোর গ্যাংয়ের লিডারসহ ২০ সদস্য আটক, অস্ত্র উদ্ধার

‘আর সহ্য করতে পারছি না’ বলেই সাত তলা থেকে লাফিয়ে তরুণের মৃত্যু

এনএসআই’র নতুন পরিচালক সালেহ মোহাম্মদ তানভীর

বাংলাদেশে রপ্তানির জন্য ১৬৫০ টন পেঁয়াজ কিনবে ভারত সরকার

যারা আমার মায়ের হাতে খাবার খেত, তারাই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে: প্রধানমন্ত্রী

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :