করোনাকে ভয় নয়, সাহস দিয়ে জয় করুন

লীনা পারভীন
 | প্রকাশিত : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৩:৫৪

করোনা একটি মানসিক আতঙ্কের নাম। আমি হলফ করে বলছি প্রথম থেকে যদি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নামক ঠুঁটো জগন্নাথ মার্কা কোম্পানি করোনাকে নিয়ে এত ভীতি তৈরি না করতো তাহলে গোটা বিশ্ব আজকে থমকে যেত না। এই ভীতি এখনও চলছে এবং এর প্রভাব থেকে একমাত্র দেশ বাংলাদেশ যে কিছুটা হলেও বের হতে পেরেছে।

কেন বলছি? আমি ও আমার পরিবার করোনায় আক্রান্ত। একদম প্রথম যখন আমি কিছু শারীরিক সিগন্যাল পেলাম তখন থেকেই নিজেকে একদম হালকা করে ফেলেছিলাম। গা-হাত-পা ব্যথা দিয়ে শুরু। যেদিন স্বাদ-গন্ধ চলে গেল সেদিন আমি কনফার্ম হয়ে গিয়েছিলাম। পরীক্ষাটা ছিল কেবল অফিসিয়াল একটা বিষয়। কিছুই না।

প্রথম থেকে আমার একটা ইচ্ছা ছিল যে গ্লাসে গ্লাসে গরম পানি আর গাদা গাদা খাবার না খেলে কী হয় দেখার। এটা ছিল একদমই একটা পরীক্ষামূলক বিষয়। আমার মধ্যে এমন পাগলামি কিছুটা আছে। আমি সবসময় ট্র্যাডিশনের বিপরীতে যেতে পছন্দ করি। আমরা খাইনি তা নয় কিন্তু যা খেয়েছি সেগুলো একদম নর্মাল খাবার। হয়তো অন্যসময় রুটিন করে প্রতিদিন খাওয়া হয় না। করোনার কারণে বাসায় ছিলাম বলে প্রতিদিন খাচ্ছি এই যা পার্থক্য।

তবে গ্লাসে গ্লাসে গরম পানি আমি গিলিনি। প্রতিদিনের যা ডায়েট সেটাই খেয়েছি। দুধ-ডিম হয়তো আমি প্রতিদিন খেতাম না, সেটা প্রতিদিন খেয়েছি। আর এগুলো করেছি কেবল পারিবারিক চাপে। না খেলে কী হয় সেটা দেখার প্রবল ইচ্ছাকে দমন করতে হয়েছিল।

ওষুধ খেতে হবে একদম ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এবং প্রয়োজন অনুযায়ী। করোনা হলেই অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে এটি ভুল, কারণ আমাকে ডাক্তার কোনো অ্যান্টিবায়োটিক দেয়নি। কারণ সিম্পটমের ভিত্তিতে মেডিসিন। আপনি পরামর্শ নিতে হবে অভিজ্ঞ কোনো ডাক্তার থেকে যিনি গড়পড়তা মেডিসিনে বিশ্বাস করেন না।

আমি এখানে কোনো প্রেসক্রিপশন দিতে আসিনি। তবে এটুকু বলি, করোনাকে যদি একদম প্রথমেই আপনি জানিয়ে দেন যে সে আপনার জন্য প্রাণঘাতক তাহলে আপনি সেদিনই কাবু হয়ে গেলেন। কাবু মানে একদম কাবু হয়ে যাবেন।

এটুকু শুধু বলব, সাবধানে থাকা আর আতঙ্কিত হওয়া এক নয়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন বা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা আমাদের যেকোনো শারীরিক সুস্থতার জন্য দরকার। কেবল করোনাকে এতটা প্রধান অতিথি টাইপ প্রায়োরিটি দেয়াটা মনে হয় অ-দরকারি একটা বিষয়।

আবারও বলি, করোনা বাস করে আমাদের মানসিক জগতে আর কোথাও নয়। এর জন্য দায়ী একমাত্র স্টুপিড ‘হু’ বা আন্তর্জাতিক মানসিকভাবে অস্বাস্থ্য সংস্থা।

আমি নিজেও করোনার শুরু দিকে দারুণ আতঙ্কিত ছিলাম। সেই সময় যদি আমার করোনা হতো তাহলে নিশ্চিত আমি মারা যেতাম। বেঁচে আসতাম না। আমার আজকের যে এই সাহস এর জন্য সকল কৃতিত্ব দিতে চাই শেখ হাসিনাকে। বিশ্বাস করেন, তিনি যদি দেশের পরিস্থিতি এতটা স্বাভাবিক না করতেন তাহলে আমি ব্যক্তিগতভাবে বা আমার পরিবারের কেউই এতটা হালকা থাকতে পারতাম না করোনাকে নিয়ে। আর গোটা দেশে মৃত্যুর হার হতো এর চেয়ে আরও অনেক অনেকগুণ বেশি।

একটাই অনুরোধ সবার কাছে, করোনা কিছুই না। আগুন লাগলে যেমন কেবল আতঙ্কের কারণে আমরা উলটাপালটা লাফ- ঝাঁপ দিয়ে মারা যাই ঠিক তেমনি করোনা হলেই যেন আমরা আতঙ্কিত না হই বা কী হবে কী হবে বলে মরার আগেই মরে না যাই।

মানসিকভাবে প্রস্তুতি রাখবেন যে করোনা আপনারও হতে পারে আর তা মোকাবেলায় আপনি ও আপনার পরিবার একদম প্রস্তুত আছেন। ব্যস, আর কিছু না। আমার ছেলেরা একদম পাত্তা দিচ্ছে না করোনাকে। তারা দিব্বি ভালো আছে। মানুষ তো ক্যানসারকেও আজকাল জয় করছে সহজে তাই না? আর করোনা তো তার চেয়ে ভয়ংকর কিছু না।

করোনা হলে মানসিক শক্তির পাশাপাশি যে বিষয়টা সবচেয়ে বেশি দরকার তা হচ্ছে একজন ভালো ডাক্তারের টাচে থাকা পরিস্থিতিকে সামাল দেয়ার জন্য। বাকি কাজটা আপনি নিজেই জানেন।

করোনাকে ভয় নয়, সাহস দিয়ে জয় করুন। আপনি করোনাকে ভয় পাবেন কেন? বরং করোনা যেন আপনাকে ভয় পায় সেই প্রস্তুতি রাখুন।

লেখক: কলামিস্ট

ঢাকাটাইমস/৩০সেপ্টেম্বর/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :