পার্বত্য শান্তিচুক্তিতে স্মরণীয় হাসানাত আবদুল্লাহ

প্রকাশ | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৪:১৯ | আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৪:৪০

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

চট্টগ্রামের পার্বত্যাঞ্চলে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের ইতিহাস বেশ দীর্ঘ ছিল। পাহাড়ের জনগোষ্ঠী এবং বাঙালিদের মধ্যে এই সংঘাতময় পরিস্থিতি ছিল যুগের পর যুগ। স্বাধীন বাংলাদেশে উত্তপ্ত পাহাড়ি অঞ্চল নিয়ে উদ্বেগ, শঙ্কা, উৎকণ্ঠার শেষ ছিল না। রক্তক্ষয়ী সেই সংঘাতময় পরিস্থিতির ইতিটানে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি। ১৯৯৭ সালের ঐতিহাসিক ওই চুক্তিতে অসামান্য অবদান রেখেছিলেন আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা তিনি। বারবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য।

পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তিতে অগ্রণী ভূমিকা রেখে দেশের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ ছিলেন আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। মন্ত্রী পদমর্যাদায় পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন তিনি। আর সেই পদে থেকে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর শান্তিচুক্তির স্মারকে স্বাক্ষর করে ইতিহাস গড়েন। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে ছিলেন আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি হিসেবে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির প্রধান সন্তু লারমা। এ চুক্তি স্বাক্ষরের সময় তৎকালীন এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন। তাঁর হাতেই অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছিলেন সন্তু লারমার বাহিনী। কোনো তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই এবং কোনো বিদেশি শক্তিকে যুক্ত না করেই এ শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন হয়েছিল, যা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। এই চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে অবসান ঘটে তৎকালীন সশস্ত্র গ্রুপ শান্তি বাহিনীর দীর্ঘ প্রায় দুই দশকের সংগ্রামের।

দেশের পার্বত্যাঞ্চলের সঙ্গে সরকারের এই শান্তিচুক্তি অনেক সমস্যারই সমাধান করেছে। যার পেছনে পূর্ব অবদান রেখেছেন আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। পার্বত্যাঞ্চলেও এই শান্তিচুক্তির কারণে বেশ সম্মানিত এবং প্রশংসিত বরিশাল-১ (গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া থানা) আসনে বারবার নির্বাচিত এই সংসদ সদস্য। এছাড়া কোনো তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই এত বড় চুক্তির জন্য দেশবাসীর কাছেও সমাদৃত তিনি।

শান্তিচুক্তির শর্তানুযায়ী বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে ভারত থেকে প্রত্যাগত ১২ হাজার ২২৩টি পরিবারের মোট ৬৪ হাজার ৬১২ জন শরণার্থীকে পুনর্বাসন করেছে। চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে ৪৮টি সম্পূর্ণরূপে এবং বাকি ধারাগুলোর ১৫টি ধারা আংশিক বাস্তবায়নসহ কিছু ধারার বাস্তবায়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

চুক্তি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিভাগে বিষয়টি তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এসব বিভাগে লোকবল নিয়োগে চুক্তির শর্তানুযায়ী ক্ষুদ্র জাতিসত্তার সদস্যদের প্রাধান্য দেওয়ায় স্থানীয়ভাবে তাদের বিপুল কর্মসংস্থান হয়েছে।

চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, পার্বত্য চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত একটি ব্রিগেড এবং প্রায় আড়াইশ অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প গুটিয়ে নেওয়া হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/৩০সেপ্টেম্বর/কারই/এইচএফ)