ঋতু পরিবর্তনের এই সময়ে জ্বর-সর্দি-কাশি হলে করণীয়

স্বাস্থ্য ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০১ অক্টোবর ২০২০, ১২:৩৯ | প্রকাশিত : ০১ অক্টোবর ২০২০, ১২:২০

ঋতু পরিবর্তনে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের মানুষের মধ্যেও ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লু'তে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। বিশেষ করে এই সময়ে হাসপাতালে ফ্লুয়ের উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হতে দেখা যায়। ফ্লু এবং করোনাভাইরাসের উপসর্গ একই রকম হওয়ায় ফ্লু'য়ের উপসর্গ দেখা দেয়ার পর মানুষের মধ্যে কিছুটা আতঙ্কও দেখা যাচ্ছে।

ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লু একটি ভাইরাসজনিত রোগ। করোনাভাইরাসের মতো এই রোগেও শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণ হয়ে থাকে এবং এর উপসর্গও সর্দি-জ্বরের উপসর্গের মতোই।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের তথ্য অনুযায়ী প্রতিবছর বিশ্বের জনসংখ্যার শতকরা প্রায় ৯ ভাগ মানুষ ফ্লু'তে আক্রান্ত হয়। অর্থাৎ বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় একশো কোটি মানুষ সংক্রমণের শিকার হয়, যাদের মধ্যে ৩০ থেকে ৫০ লাখ মানুষের সংক্রমণের মাত্রা তীব্র হয়ে থাকে।

আর ফ্লু'তে আক্রান্ত হয়ে প্রতিবছর সারাবিশ্বে তিন থেকে পাঁচ লাখ মানুষ মারা যায়। ঋতু পরিবর্তনের সময় অনেকেই সর্দি-কাশিতে ভোগেন।

সর্দি-জ্বর ও ফ্লু'র উপসর্গ একইরকম হওয়ায় মানুষ অনেক সময় দুটির পার্থক্য করতে পারে না।

ফ্লু হলে সাধারণ সর্দি জ্বরের মতই মাথা ব্যাথা, গলা ব্যাথা, মাংসপেশিতে ব্যাথা, হাঁচি, শুকনো কাশি, জ্বর, স্বাদ ও ঘ্রাণের অনুভূতি কমে আসার মত উপসর্গ দেখা দেয়।

তবে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এনএইচএস'এর তথ্য অনুযায়ী সাধারণ সর্দি-জ্বর ও ফ্লু'য়ের প্রধান পার্থক্য দু'টি।

একটি হলো ফ্লু'য়ের উপসর্গ খুব কম সময়ের মধ্যে দেখা দেয়। অর্থাৎ হঠাৎ করে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তীব্র জ্বর আসার মত উপসর্গ দেখা দেয়। অন্যদিকে সর্দি-জ্বরের ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত ধীরে জ্বর বাড়তে থাকে।

আর ফ্লু'তে আক্রান্ত হলে মানুষ হঠাৎ করে শারীরিকভাবে অত্যন্ত দুর্বল বা ক্লান্ত বোধ করে, যা সাধারণ সর্দি-জ্বরের ক্ষেত্রে হয় না।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতে, ইনফ্লুয়েঞ্জা হলে হালকা থেকে মাঝারি জ্বরের সঙ্গে গা ম্যাজম্যাজ, সর্দিভাব, নাক দিয়ে পানি পড়া বা নাক বন্ধের মতো উপসর্গ থাকে। কাশিও হচ্ছে কারও কারও। তবে এমন যদি হয়, কফ তোলার জন্য কাশি, কিন্তু কফ উঠছে না, এ অবস্থায় চিন্তার কিছু নেই। বিশ্রামে থাকতে হবে। গরম জলের ভাপ নিতে হবে। হালকা খাবার ও পর্যাপ্ত জল খেতে হবে।

জ্বর বাড়লে প্যারাসিটামল খেতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে। মাল্টিভিটামিনও খেতে পারেন। মাস্ক পরে বাড়ির অন্যদের থেকে দূরে থাকতে হবে আলাদাভাবে। কারণ ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রভাবে শরীরের প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায় বলে পরিবারের অন্য কারও সূত্রে করোনা এলে সবার প্রথমে আপনারই বিপদের আশঙ্কা। জ্বর ও শারীরিক ব্যথা মোটামুটি ২-৩ দিন থাকে। তারপর কমতে শুরু করে। কিন্তু যদি ৪-৫ দিন পরও জ্বর থাকে, বাড়তে শুরু করে, রোগী দুর্বল হয়ে পড়েন, সঙ্গে সঙ্গে করোনা পরীক্ষা করা উচিত। বুকে চাপ বা শ্বাসকষ্ট শুরু হলে এই পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক।

চিকিৎসকরা বলেন, সব ক্ষেত্রে দরকার নেই। কারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা হলে এমনিই শরীর দুর্বল হয়ে যায়। তার উপর হাসপাতালে লাইনে দাঁড়িয়ে পরীক্ষা করাতে গেলে সেখান থেকে রোগ এসে যেতে পারে। রিপোর্টেরও আবার ফলস পজিটিভ, ফলস নেগেটিভ আছে, সংক্রমণের প্রথম অবস্থায় বিশেষ করে। তাছাড়া কো-মর্বিডিটি না থাকলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কোভিড এত হালকাভাবে থাকে যে প্যারাসিটামল ও আরও দু-চারটে ওষুধ খেলে, বিশ্রামে থাকলেই সুস্থ হয়ে উঠবেন রোগী।

ইনফ্লুয়েঞ্জা হলে তো সাধারণ মানুষ বেশি সতর্ক হন না। কাজেই তার সঙ্গে যদি কোভিড হয়, যাঁরই সংস্পর্শে আসবেন, সবারই হওয়ার সম্ভাবনা।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতে, পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, তাতে সাবধান না হলে এমনিও সবার কোভিড হবে। কাজেই বাড়িতে কারও জ্বর হলে, সে ইনফ্লুয়েঞ্জা হোক কি কোভিড, তাঁকে আলাদা করে দিন। রোগী ও পরিবারের সবাই ত্রিস্তরীয় মাস্ক পরুন। বার বার হাত ধুতে থাকুন। ইনফ্লুয়েঞ্জাও যথেষ্ট ছোঁয়াচে। তা ছাড়া যে কোনও একটি সংক্রমণ কিন্তু অন্য সংক্রমণকে ডেকে আনতে পারে। কাজে এই পরিস্থিতিতে ইনফ্লুয়েঞ্জা হল মানে কোভিডের আশঙ্কাও বাড়ল। কাজেই সাবধানতার কোনও বিকল্প নেই।

চিকিৎসকরা বলে, জ্বরের সঙ্গে যদি শুকনো কাশি, ঢোঁক গিলতে কষ্ট, বুকে হালকা চাপ বা শ্বাসকষ্ট থাকে এবং তিনি যদি কনটেইনমেন্ট জোনের এক থেকে দুই কিলোমিটারের মধ্যে থাকেন, করোনা পরীক্ষা করা জরুরি। তবে মানুষ যেভাবে মেলামেশা শুরু করেছেন, তাতে তিনি কোথায় থাকছেন, সেটা এখন গুরুত্বহীন হয়ে গেছে। উপসর্গ থাকলেই পরীক্ষা হচ্ছে।

জ্বর হলেই দুশ্চিন্তা করবেন না। তাতে শরীর আরও দুর্বল হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দু-তিন দিনে সমস্যা কমে যাবে। কাজেই সাবধানে থাকুন। জ্বর হলেই নিজেকে আলাদা করে নিন। উপসর্গের গতিপ্রকৃতির দিকে নজর রাখুন ও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন।

(ঢাকাটাইমস/০১ অক্টোবর/আরজেড/এজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

স্বাস্থ্য এর সর্বশেষ

করোনায় ধূমপায়ীদের মৃত্যু হার ৩ গুণ বেশি: গবেষণা

বিদায়ী উপাচার্যের অনিয়ম-দুর্নীতির প্রশ্নে যা বললেন ডা. দীন মোহাম্মদ

বিএসএমএমইউতে নতুন উপাচার্যকে বরণ করতে ব্যাপক প্রস্তুতি  

অ্যানেস্থেসিয়ায় হ্যালোথেন ব্যবহার বন্ধ করতে বললো স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, কেন এ নির্দেশ?

হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায় বাদাম!

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ইনসাফ বারাকাহ হাসপাতালে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প

বিশ্ব যক্ষ্মা দিবসে জানুন সংক্রামক এ রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত

মৃগী রোগ সম্পর্কে কতটা জানেন? এর লক্ষণ আর চিকিৎসাই বা কী?

এক যুগ আগেই জানা যাবে আপনি মূত্রাশয়ের ক্যানসারে আক্রান্ত কি না

কীভাবে চিনবেন প্রাণঘাতী অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার? বাঁচতে হলে জানুন

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :