আজারবাইজানের পক্ষে সিরীয়দের প্রেরণ

'লড়ো নয়তো জেল'

প্রকাশ | ০১ অক্টোবর ২০২০, ২২:৩১

ঢাকাটাইমস ডেস্ক

'আমি জানতাম না আমরা যুদ্ধ করতে যাচ্ছি'- মেসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে বিবিসিকে বলছিলেন আবদুল্লা (ছদ্মনাম)। ‘আমাকে ওরা বলেছিল আজারবাইজানে যেতে হবে এবং সীমান্তের চৌকি পাহারা দিতে হবে। আমি দুই হাজার ডলার পাব। তখন কোনো যুদ্ধ চলছিল না, আমরা কোনো সামরিক প্রশিক্ষণও পাইনি।'

এই সিরীয় তরুণ জানতেন না এর এক সপ্তাহের মধ্যেই তাকে যুদ্ধে লড়াই করতে হবে, যে যুদ্ধ সম্বন্ধে তার কোনো ধারণা নেই এবং যে দেশে সে কখনো যায়নি। বিবিসি প্রতিবেদন।

উত্তর সিরিয়ার অধিকাংশ বাসিন্দার মতো আবদুল্লার পরিবারও দরিদ্র এবং যুদ্ধক্লান্ত। সম্প্রতি চালানো এক জরিপে ওই অঞ্চলের উত্তরদাতাদের ৮১ শতাংশ বলেছে তাদের ৫০ ডলারের কম মাসিক বেতনে জীবন চালাতে হয়।

কাজেই আবদুল্লাকে গত সপ্তাহে যখন তার ৪০ গুণ বেশি বেতনের প্রস্তাব দিয়ে বলা হলো এর বিনিময়ে তাকে আজারবাইজান সীমান্তে গিয়ে ‘সেনা চৌকি পাহারা দিতে’, সে তা লুফে নিয়েছিল।

‘তখন তো কোন যুদ্ধ চলছিল না। আমাদের উত্তর সিরিয়া থেকে হউর কেলস নামে এক গ্রামে নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানে বিরোধী সিরিয়ান ন্যাশানাল আর্মি আমাদের সব জিনিসপত্র নিয়ে নিলো, অর্থ, ফোন, জামাকাপড় সব। যাতে আমাদের পরিচয় কেউ ধরতে না পারে।’

আবদুল্লা কিছু সময় পরে তার ফোনটা উদ্ধার করতে পেরেছিলেন। ‘এরপর আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো দক্ষিণ তুরস্কে এন্টেপ বিমানবন্দরে। সেখান থেকে এক ঘন্টা ৪০ মিনিটের ফ্লাইটে আমরা পৌঁছলাম ইস্তানবুল বিমানবন্দরে, সেখান থেকে আজেরি এয়ারলাইন্সের বিমানে আজারবাইজানে পৌঁছে আমাদের সীমান্তে একটা সেনা চৌকিতে নিয়ে যাওয়া হলো। আমাদের কিন্তু কোনো রকম সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়নি।’

আবদুল্লাকে নিয়ে যাওয়া হলো নাগোর্নো-কারাবাখ এলাকায়, যে বিতর্কিত এলাকায় কয়েক দশক ধরে সংঘাত চলছে। পাহাড়ি ছিটমহলটা আজারবাইজানের অংশ হিসাবে স্বীকৃত, কিন্তু এলাকাটা নিয়ন্ত্রণ করে জাতিগত আর্মেনীয়রা।

দুই দেশ ১৯৮০-এর দশকের শেষে এবং ৯০ দশকের গোড়ায় এই এলাকার দখল নিয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করেছে। হাজার হাজার মানুষ সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছে, প্রায় দশ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়েছে।

দুই পক্ষ যদিও একটা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিল, কিন্তু তারা কখনই একটা শান্তি চুক্তিতে একমত হয়নি। ফলে এলাকায় থেকে থেকেই উত্তেজনা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে।

গত ২৭ সেপ্টেম্বর, আবদুল্লা তখন শিবিরে আছে এক সপ্তাহের মতো। তার মতো আরও সিরিয়ান ওই শিবিরে ছিল, সবাই সেখানে গেছে অর্থের লোভে, যুদ্ধ করতে নয়। হঠাৎ তাদের বলা হলো তাদের খুব দ্রুত সেখান থেকে চলে যেতে হবে। আবদুল্লা খুবই অবাক হয়েছিলেন, ‘ওরা আমাদের তুলল সৈন্য বহন করার ট্রাকে। আমরা আজারবাইজানি ইউনিফর্ম পরেছিলাম, আমাদের প্রত্যেকের হাতে একটা করে কালাশনিকভ রাইফেল ছিল।’

‘গাড়ি থামল যেখানে, অবাক হয়ে দেখলাম সেটা সম্মুখ রণাঙ্গন। আমরা যুদ্ধক্ষেত্রে। কিন্তু আমরা এমনকি জানতাম না শত্রু কোথায়। এমন সময় বোমাবর্ষণ শুরু হলো, সবাই ভয়ে কাঁদতে শুরু করল, বাড়ি ফিরে যেতে চাইল। আমাদের ঠিক পাশেই একটা গোলা এসে পড়ল। চারজন সিরীয় মারা গেল আর তিনজন আহত হলো।’

পরে ‘আরও ৭০ জন সিরীয় আহত হয়,’  বলেন আবদুল্লা, ‘এবং তাদের কোনোরকম চিকিৎসাসেবাও দেয়া হয়নি।"

আর্মেনিয়া অভিযোগ করছে, চার হাজারের মতো সিরীয়কে আজারবাইজানে লড়াই করতে পাঠানো হয়েছে। তবে তুরস্ক এই দাবি জোরের সাথে প্রত্যাখান করেছে।

আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট, ইলহাম আলিয়েভ বলেছেন যে আর্মেনিয়ার সাথে তাদের লড়াইয়ে তুরস্ক জড়িত নেই। তুরস্ক শুধু তাদের নৈতিক সমর্থন দিচ্ছে।

তবে তুরস্কের মধ্যে দিয়ে ও তাদের সহযোগিতায় সিরীয় যোদ্ধাদের যে এই প্রথমবারের মতো তাদের স্বদেশভূমির বাইরে লড়াই করতে পাঠানো হয়েছে, তা কিন্তু নয়।

গত মে মাসে জাতিসংঘের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা গেছে যে, উত্তর সিরিয়া থেকে তুরস্কের মধ্যে দিয়ে সিরীয়দের লিবিয়া পাঠানো হয়েছে দেশটির গৃহযুদ্ধে লড়াই করার জন্য।

ত্রিপলিতে সিরীয় যোদ্ধাদের ভিডিও ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দেয় এবং তুরস্কের বিরুদ্ধে লিবিয়ার গৃহযুদ্ধে উস্কানি দেবার অভিযোগ আনা হয়।

সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউমান রাইটস নামে একটি মানবাধিকার সংস্থার পরিচালক রামি আবদুল রহমান বলছেন, আজারবাইজানে যোদ্ধা পাঠানো নিয়ে সিরিয়ার সশস্ত্র বিরোধীদের মধ্যে বিভক্তি তৈরি হয়েছে।

তুর্কমেনি শিকড় আছে এমন কিছু উপদল তুরস্কের অনুরোধে যোদ্ধা পাঠানোর ব্যাপারে আগ্রহী।

কিন্তু হমস্ এবং ঘওটাসহ অন্য উপদলগুলো এই সংঘাতে জড়াতে চায় না। তারা এই সংঘাতকে দেখে শিয়া মুসলিম প্রধান আজারবাইজানী ও আর্মেনীয় খ্রিস্টানদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব হিসাবে। সিরিয়ার বিরোধী বাহিনীর যোদ্ধারা প্রধানত সুন্নি মুসলিম।

(ঢাকাটাইমস/১অক্টোবর/মোআ)