কুবির লাইব্রেরি আধুনিকায়নে উপাচার্যের নানা উদ্যোগ বাস্তবায়ন

প্রকাশ | ০১ অক্টোবর ২০২০, ২২:৩৪ | আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২০, ২২:৪০

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

দীর্ঘদিনের সংকট আর নানা সমস্যায় জর্জরিত ছিল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি। পর্যাপ্ত বইয়ের সংকট, আসন সংকট, আধুনিক সুযোগ-সুবিধার অভাবসহ নানা সমস্যা বিদ্যমান ছিল। ফলে এখানে পড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। এই সংকট সমাধানে শিক্ষার্থীরা দাবি জানালেও কোনো সমাধান হচ্ছিল না। অবশেষে তাদের সেই আক্ষেপের অবসান ঘটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিকে আধুনিকায়নে নানামুখী উদ্যোগ নিয়ে সেগুলো বাস্তবায়নও করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী।

২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেন অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী। যোগদানের পরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির লাইব্রেরিকে প্রত্যাশিত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উন্নীত করার লক্ষ্যে বিগত যেকোনো সময়ের তুলনায় অধিক গুরুত্ব দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির জন্য বই, জার্নাল, রিপোর্ট, ই-রিসোর্স বৃদ্ধি করার পাশাপাশি অন্যান্য আধুনিক সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে লাইব্রেরিমুখী করতে ২০১৮ সাল থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নিয়ে তা বাস্তবায়নও করেছেন।

লাইব্রেরির বইয়ের সংকট সমাধানে ২০১৮ এবং ২০১৯ সালের শুরুতেই বই কেনার উদ্যোগ নেন উপাচার্য। গত দুই বছরে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে প্রায় ২৪ লাখ টাকার বই কেনা হয়। পাশাপাশি লাইব্রেরিতে বিদ্যমান ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’কে সমৃদ্ধ করার জন্য উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ‘মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু’ বিষয়ক বই সংগ্রহ করা হয়েছে।

জানা যায়, প্রতি বছরের বই কেনার ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় বর্তমানে লাইব্রেরিতে প্রায় ৩০ হাজার বই রয়েছে। ফিজিক্যাল বইয়ের পাশাপাশি লাইব্রেরিকে ই-রিসোর্স দিয়ে সমৃদ্ধ করার জন্যে ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অধীনে ইউনিভার্সিটি ডিজিটাল লাইব্রেরী (UDL) এর সদস্যপদ নবায়ন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে

ACM, Wiley, Emerald, JStore, IEEE নামক বিখ্যাত প্রকাশকদের ই-রিসোর্স সাবস্ক্রিপশানের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যা ইতোমধ্যে লাইব্রেরি থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা ব্যবহার করতে পারছেন। ই-রিসোর্সগুলো সঠিকভাবে ব্যবহারের স্বার্থে ২০১৯ সালের ৫ই জানুয়ারি উপাচার্য লাইব্রেরিতে একটি ‘ই-রিসোর্স সেন্টার’ স্থাপন করেন। পাশাপাশি ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে রাজস্ব খাত থেকে প্রায় ২২ লাখ টাকা ব্যয় করে লাইব্রেরিকে সম্পূর্ণ শীতাতপকরণের ব্যবস্থা করা হয়।

শুধু তাই নয়, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিকে ডিজিটাল ও অটোমেটেড করার উদ্যোগ নিয়েছেন উপাচার্য। তারই অংশ হিসেবে সম্প্রতি কোহা (KOHA) নামক অনলাইন বেসড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার (কাস্টোমাইজ) করা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় ডাটা সার্ভার ক্রয় করা হয়েছে। বর্তমানে লাইব্রেরিতে মজুত সকল রিসোর্স সমূহের ডাটা এন্ট্রির কাজ চলছে এবং শেষ পর্যায়ে আছে। এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্র-শিক্ষকরা বিশ্বের যেকোন জায়গা থেকে লাইব্রেরিতে কি কি তথ্য আছে তা সহজেই খুঁজে নিতে পারবেন এবং বই ইস্যূ-রিটার্নের কাজগুলো সনাতন পদ্ধতির পরিবর্তে অটোমেটেড পদ্ধতিতে সম্পাদন করতে পারবেন।

এদিকে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি লাইব্রেরিকে পরিপূর্ণ অটোমেটেড করতে বিশ্ববিদ্যাল প্রশাসন কাজ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে RFID (Radia frequency Identification Technology) প্রযুক্তি সংযোজন এবং এই প্রযুক্তি ব্যবহারের আনুষাঙ্গিক বিষয়ে উপাচার্য ঢাকা থেকে বিশেষজ্ঞ এনে সকল বিভাগীয় প্রধানদের উপস্থিতিতে ভার্চুয়াল প্রেজেন্টেশান দেখেছেন।

এছাড়া বই পড়া ও জ্ঞানার্জনের জন্য ছাত্র-ছাত্রীদেরকে উৎসাহিত করতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রত্যেক বছর ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস’ যথাযথভাবে উদযাপন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা এবং সকলের দাবিতে একটি স্বতন্ত্র লাইব্রেরি ভবন করার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে, যা ১ হাজার ৬৫৫ কোটি ৫০ লাখ টাকার মেগা প্রকল্পের যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে করা হবে।

লাইব্রেরির উন্নয়নে নানামুখী পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ হচ্ছে লাইব্রেরি। এটি ভালো না হলে শিক্ষার আলো জ্বলবে কি করে। অথচ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্ব নেয়ার সময় এখানের লাইব্রেরিকে অত্যন্ত শোচনীয় অবস্থায় দেখলাম। তারপর নানামুখী উদ্যোগ নিয়ে লাইব্রেরির আধুনিকায়নে কাজ করেছি।  শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল সন্ধ্যার পরও লাইব্রেরি খোলা রাখা। তাদের সে দাবিও রেখে রাত ৮ টা পর্যন্ত লাইব্রেরি খোলা রাখার ব্যবস্থা করলাম। শিক্ষার্থীদের কল্যাণে ‘ই লাইব্রেরি’ করেছি। সেখানে দেশ -বিদেশের খ্যাতনামা বইগুলো স্থান পেয়েছে।

উপাচার্য আরও বলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে  নতুন মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। সেখানের ১০ তলা ভবনের ১-৫ তলা লাইব্রেরীর জন্য রাখা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের কল্যাণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সবসময় পাশে থাকবে বলে জানান তিনি।

ঢাকাটাইমস/০১অক্টোবর/ইএস