তেঁতুলিয়া গিলে খাচ্ছে বাউফলের ধুলিয়া

প্রকাশ | ০৩ অক্টোবর ২০২০, ১৮:০৩ | আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২০, ১৮:০৬

বাউফল (পটুয়াখালী) ঢাকাটাইমস

এক তেঁতুলিয়াই গিলে খাচ্ছে পুরো ইউনিয়ন, বিগত বছরে এ নদীর ভাঙনে গৃহহীন হয়েছেন সহস্রাধিক পরিবার। আবাদি জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বসতিঘর, ও নানা স্থাপনাসহ প্রায় ১৬ হাজার একর জমি তেঁতুলিয়া গ্রাস করেছে। পুরো ইউনিয়নে চলছে এখন ভাঙন আতঙ্ক। এমন একটি ইউনিয়নের নাম ধুলিয়া ইউনিয়ন। ধুলিয়া পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার সীমান্তবর্তী প্রমত্তা তেঁতুলিয়ার কোল ঘেষে অবস্থিত।

সরজমিনে দেখা গেছে, ধুলিয়া ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া তীরবর্তী গ্রামগুলোতে ভাঙনের ক্ষত চিহ্ন। ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন কেউ কেউ, কেউবা আবার অস্থায়ীভাবে নদীর অদূরে ছাপরা দিয়ে কোন রকমভাবে বসবাস করছেন। ধুলিয়া লঞ্চঘাট এলাকার বাজার ভাঙনের চিত্র আরো ভয়াবহ। গত চব্বিশ ঘণ্টায় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ প্রায় শতাধিক স্থাপনা বিলীন হয়ে গেছে। বিলীন হয়ে গেছে ক্ষেত খামার।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবি) পটুয়াখালী জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙন রোধে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার ধুলিয়া ইউনিয়ন থেকে পাশের পাশের বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপাশা পর্যন্ত এলাকা রক্ষায় একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে ৭১২ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি ২০২০ সালে জুন মাস থেকে ২০২৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত তিন বছর মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য চলতি বছরের ১৮ আগস্ট একনেক অনুমতি দিয়েছে।

ধুলিয়া লঞ্চঘাট এলাকার বাসিন্দা মহিবুল আলম বলেন, ধুলিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের আবাদি জমি, বসতবাড়ি, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভেঙে নদীতে বিলীন হওয়ার দৃশ্য আমি দেখেছি। দেখেছি এ সকল মানুষের ভিটে মাটিসহ সর্বস্ব হাড়ানোর বুক ফাটা আর্তনাদ। যা দেখলে যে কারো কান্না আসবে। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজের বাস্তবায়ন চাই। আর না হয় একদিন জানতে পারবেন বাউফলের মানচিত্র থেকে বিলীন হয়ে গেছে ধুলিয়া নামের একটি ইউনিয়ন।

লঞ্চঘাট এলাকার আরেক বাসিন্দা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউঞ্চিলের সাবেক কমান্ডার মো. আব্দুল বারেক হাওলাদার বলেন, তেঁতুলিয়া আমার বাড়ি-জমি সকটুকুই গিলে নিয়েছে। তাতে যতটুকু কষ্ট না পেয়েছি তার চেয়েও বেশি কষ্ট পেয়েছি মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতাবিরোধীরা মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করে যেখানে গণকবর দিয়েছিলেন, সেই গণকবরও গ্রাস করেছে তেঁতুলিয়া। তেঁতুলিয়ার ভাঙনে যে কত পরিবার নিঃস্ব হয়েছেন তার কোন হিসাব নাই।

ধুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনিচুর রহমান বলেন, স্থানীয় সাংসদ সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ধুলিয়া রক্ষায় গত ১৮ আগস্ট একনেকে যে প্রকল্পটি অনুমোদন হয়েছে তার দ্রুত বাস্তবায়ন দাবি করছি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, প্রকল্পটি যাতে দ্রুত বায়বায়ন হয় এর জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা করা হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবি) পটুয়াখালী জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্দ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, প্রকল্পটি যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করা যায় সেই প্রক্রিয়া চলছে।

(ঢাকাটাইমস/৩অক্টোবর/এলএ)