দেয়ালে পিষ্ট জীবন নিয়ে দশ বছর বিছানায় আল আমিন

কাজী রফিক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৪ অক্টোবর ২০২০, ১৪:৫৬ | প্রকাশিত : ০৪ অক্টোবর ২০২০, ০৮:৩৩

২০১০ সালের অক্টোবর। বাবার সঙ্গে ভ্যানগাড়ি চালিয়ে ক্লান্ত শরীরে বাসায় ফিরেছিলেন ১৬ বছরের কিশোর আল আমিন। বাসায় ফিরে গোসল করতে যান রাজধানীর তুরাগ নদের তীরে। নদের গোসল করে তুরাগ হাউজিং এলাকায় একটি দেয়ালের পাশে বসেছিলেন তিনি। তার এক বন্ধু দেয়ালে বসতেই তা ভেঙে পড়ে পড়ে আল আমিনের ওপর। আহত অবস্থায় তাকে নেওয়া হয় হাসপাতালে।

চিকিৎসকরা জানান, আল আমিনের মেরুদণ্ড এবং পা সম্পূর্ণই ভেঙে গেছে। সেই থেকে ভাঙা মেরুদণ্ড নিয়ে চলচ্ছক্তিহীন আল আমিন পড়ে আছে বিছানায়। অর্থাভাবে তার অসহায় পরিবারের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না এরইমধ্যে যুবক হয়ে ওঠা আল আমিনের চিকিৎসা করা।

ঢাকা টাইমসের সঙ্গে আলাপকালে আল আমিন সে দুর্ঘটনার বর্ননা দেন। বলেন, ‘দেয়াল ভেইঙা পড়ার পর এক ঘণ্টা আমি অজ্ঞান ছিলাম। এক ঘণ্টা পর যখন আমার জ্ঞান ফেরে তখন অনেক মানুষ গোল হইয়া আমার পাশে দাঁড়াইয়া ছিল। কিন্তু কেউ ধরে নাই। আমি মারে-বাবারে বইলা চিল্লাইতে ছিলাম। পা দুইডা তখনই ভাইঙা গেছে। পা দিয়ে রক্ত বাইর হইতেছিল। এক বন্ধু পাশে ছিল, ওর থেকে গামছা নিয়া পা বানছি। এক ঘণ্টা পরে আমারে পঙ্গু হাসপাতালে নিয়া গেছে। ওইখানে আমার পায়ে ব্যান্ডেজ করে। ডাক্তাররা বইল্লা দিল, ওরে বাসায় নিয়া যান, যা খাইতে চায় খাওয়ান। বেশি দিন বাঁচব না।’

সকল সম্পদ ও আত্মীয়দের সহযোগিতায় চিকিৎসা হয় আল আমিনের। আল আমিন বলেন, ‘একজন লোক কইল সাভারের সিআরপি হাসপাতাল আছে। ওইখানে পঙ্গুদের ভাল চিকিৎসা হয়। আমরা ওইখানে গেলাম। জায়গা-জমি বেইচা, খালারা, আত্মীয়স্বজনরা সবাই টাকা পয়সা দিল। সেইটা দিয়া অপারেশন করাইলাম। তখন তারা বইল্লা দিছিল, এই প্লেটের মেয়াদ পাঁচ বছর। পাঁচ বছর পর এই প্লেট খোলা লাগব।’

১৬ বছর বয়সে দুর্ঘটনার শিকার হন আল আমিন। এখন তার বয়স ২৬ বছর। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে শারীরিক নানা সমস্যাও। পাঁচ বছর মেয়াদী প্লেটটি তার শরীরে রয়েছে ১০ বছর ধরে। এজন্য তার অনেক সমস্যার হচ্ছে বলে জানান আল আমিন।

তিনি বলেন, ‘আমার পিঠে বসানো প্লেটটা খুলতে পারি নাই। টাকা নাই। এখন অনেক সমস্যা দেখা দিছে। অনেক ব্যথা হয়। আমি ব্যথায় চিল্লাই। আমি সহ্য করতে পারি না। ওষুধ না খাইলে ঠিক থাকতে পারি না। একটা ব্যথার ওষুধের দাম ১৪ টাকা। আমার পায়খানা হয় না। আমি ওষুধ খাইয়া পায়খানা করি। এখন ঘা হইয়া গেছে।’

সমাজের বিত্তবান এবং সরকারের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন ১০ বছর ধরে পঙ্গু জীবনযাপন করা আল আমিন। বলেন, ‘আমি সবার কাছে আবেদন করি, আমার চিকিৎসাটা করে দেন। আমি সুস্থ থাকতে চাই। আমি ব্যথা সহ্য করতে পারি না।’

আল আমিনের বাবা আজহার উদ্দিন ভ্যানগাড়ি চালিয়ে কোনোভাবে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। ষাটোর্ধ এই অসহায় পিতা এরইমধ্যে জীবনের ভারে নুয়ে পড়েছেন। শারীরিকভাবে অসুস্থ হলেও পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হলেও তিনি এখন ভ্যান নিয়ে বের হবেন সেই উপায়ও নেই। ফলে অভাব-অনটনে গোটা পরিবারটি এখন দিশাহারা।

আজাহার উদ্দিন ঢাকা টাইমসকে জানান, ছেলের চিকিৎসা করাতে অনেক ছুটোছুটি করতে হয়েছে তাকে। সহায়সম্বল যা ছিল সবই ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে শেষ। বর্তমান সম্বল বলতে শুধু একটি রিকশাভ্যান। তার আয়ের ওপরই নির্ভর করে স্বামী-স্ত্রী, এক মেয়ে এবং পঙ্গু ছেলের খাওয়া ও চিকিৎসা। কিন্তু নিজে অসুস্থ হয়ে পড়ায় কোনো কাজ করতে পারছেন না। ফলে পারছেন না সংসার চালাতে, পারছেন না অসুস্থ ছেলের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে।

নিজের অসহায়ত্বের বর্ননা দিতে গিয়ে কান্নাভেজা কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমি আমার ছেলেডারে নিয়া খুবই সমস্যার ভিতরে আছি। আমারে ছেলেডারে চিকিৎসা করাইতে দশ-বারো লাখ টাকা লাগে। আমি ভ্যানচালক। আমি আমার সংসার চালাইতে পারি না। ঘর ভাড়া দিতে পারি না। আপনারা দয়া কইরা আমার ছেলেডারে চিকিৎসা কইরা দেন। আমি নামাজ পইড়া আপনাগো লইগা দোয়া করমু। আপনারা ছেলেডা সারা রাইত (রাত) কান্দে। ও চিৎকার করে, আমরা খালি দেখি, কিছু করতে পারি না। আপনারা দয়া করেন।’

মাদারীপুর জেলার কালকিনী উপজেলার বাসিন্দা আজাহার উদ্দিন। যদিও এখন আর গ্রামে কোনো সম্পদ নেই বলে জানিয়েছেন তিনি। বর্তমানে মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান এলাকার ডি ব্লকের একটি বাসায় ভাড়া থাকেন তারা। সেখানে প্রায় ষাট হাজার টাকা বাসা ভাড়া বকেয়া হয়েছে তাদের। ভাড়া পরিশোধ না করতে পারায় বাড়ি মালিকেরও অনেক কটুকথা শুনতে হয় বলে জানালেন আল আমিনের বাবা আজাহার উদ্দিন এবং মা বিউটি বেগম।

বাড়ি মালিক ইয়াসমিন আনোয়ার ঢাকা টাইমসকে জানান, তিন বছর ধরে এই পরিবারটি তার বাসায় ভাড়া থাকে। এরমধ্যে বিভিন্ন মাসে ভাড়া দিতে পারেনি পরিবারটি। বাসা ভাড়া বকেয়া হতে হতে তা প্রায় ৬০ হাজারে গিয়ে ঠেকেছে।

ইয়াসমিন আনোয়ার বলেন, ‘ভাড়ার জন্য অনেক সময় অনেক কিছুই বলি। কিন্তু আবার এই ছেলেটার (আল আমিন) দিতে তাকালে মায়া লাগে। প্রায়ই ব্যথায় চিৎকার করে। এসব দেখে আর ভাড়া চাইতে পারি না। আমি নিজেও মাঝেমধ্যে তাদের সাহায্য করার চেষ্টা করি।’

আল আমিনকে সহযোগিতা করতে যোগাযোগ করুন। আজাহার উদ্দিন (আল আমিনের বাবা)- ০১৭৩০৬১৪৫৫২ (বিকাশ)।

(ঢাকাটাইমস/০৪অক্টোবর/ডিএম/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :