মহামারির ভয় কাটিয়ে সেবা চলছে নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র, মাতৃসদনে

প্রকাশ | ০৪ অক্টোবর ২০২০, ১০:১০

কাজী রফিক, ঢাকাটাইমস

কোভিড-১৯ মহামারির কারণে মাতৃত্বকালীন সেবা, সন্তান প্রসব এবং নবজাতকের সেবা পেতে সমস্যা পোহাতে হয়েছে অনেক হাসপাতালে। সে সময় সেবা দিতে ব্যস্ত সময় পার করেছে ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মাতৃসদন কেন্দ্রগুলো। করোনাকালের শুরুতে দুই সিটির স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে রোগীর পরিমাণ কমে গেলেও মাতৃত্বকালীন সেবার পরিমাণ ছিল স্বাভাবিক। করোনা ভীতিতে অনেকে নগর ছেড়ে যাওয়ায় এবং টেলিমেডিসিন সেবার কারণে নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে সে সময় রোগীর পরিমাণ কম ছিল। তবে জুন মাস থেকে রোগীর পরিমাণ স্বাভাবিক হয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি), ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় পাঁচটি করে মোট ১০টি মাতৃসদন কেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া উত্তর সিটিতে ২২টি এবং দক্ষিণে ২৮টি নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে।

বেশ কিছু স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং মাতৃসদন ঘুরে জানা গেছে, করোনাকালের শুরুতে হঠাৎ করেই রোগীর পরিমাণ কমে যায়। তবে মাতৃত্বকালীন সেবা এবং সন্তান প্রসবের জন্য রোগীরা মাতৃসদনে এসেছেন নিয়মিত। আর এসব মাতৃসদন থেকেও সেবা দেওয়া হয়েছে আগত রোগীদের।

করোনা ভাইরাসের কারণে চলমান সাধারণ ছুটিতে মাতৃত্বকালীন সেবা ছাড়া সাধারণ রোগীদের পরিমাণ নামমাত্র ছিল ডিএনসিসি অধিভুক্ত মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের মাতৃসদনটিতে। গর্ভবতী মায়েরা এবং নবজাতকরা সে সময়েও সেবা নিয়েছেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোও সেবা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন মাতৃসদনটির ক্লিনিক ব্যবস্থাপক তাসলিমা খানম।

ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘এপ্রিলের দিকে রোগীদের সংখ্যা কমে গেছে। আমরাও একটু বুঝে উঠতে সমস্যা হয়েছিল। এরমধ্যে আমাদের এক সহকর্মী কোভিড আক্রান্ত হয়। সে সময় হাসপাতাল লকডাউন হয়ে যায়। মে মাসের ১ তারিখ থেকে রোগী বুঝে বুঝে সেবা দেওয়া হতো। কারো ক্ষেত্রে কোভিডের উপসর্গ দেখা গেলে তাদেরকে প্রথমে কোভিড পরীক্ষা করার জন্য আমরা পাঠাতাম। তারপর সেবাটা প্রদান করতাম। এক্ষেত্রে জ্বর, কাশি থাকলে তাদেরকে সেবা দিতে একটু বিলম্ব হয়েছে, এখনো কিছুটা হচ্ছে। কিন্তু বিলম্ব হলেও আমরা সবাইকে সেবা দিচ্ছি।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার হাজারীবাগ নগর মাতৃসদন থেকে পাওয়া তথ্য মতে, মাতৃসদনটিতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুতে চলা সাধারণ ছুটিতে রোগীর পরিমাণ অর্ধেকে নেমে গিয়েছিল। তবে জুন মাসের শুরু থেকে পুনরায় স্বাভাবিক হয়েছে।

মাতৃসদনটি থেকে পাওয়া তথ্য মতে, মার্চ মাসে দুই হাজার ১৮৪ জন রোগীকে তারা সেবা দিয়েছেন। মার্চের ২৬ তারিখ থেকে লকডাইন শুরু হলে এপ্রিলে রোগীর পরিমাণ কমে দাঁড়ায় এক হাজার ১৮৫ জনে। একই অবস্থা ছিল মে মাসে। রোগীর পরিমাণ ছিল এক হাজার ২২৬ জন। জুন মাসে এসে আবার স্বাভাবিক হয়েছে রোগী আনাগোনা। জুনে দুই হাজার ৪৮২ জন। জুলাইয়ে দুই হাজার ৩১৬ জন এবং আগস্টে এ মাতৃসদন থেকে সেবা নিয়েছেন দুই হাজার ৪৭০ জন। 

এদিকে হাজারীবাগের কালুনগরের অপর একটি নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র, লালবাগ, শহীদ নগর, বকশীবাজার, আজিমপুর ও ইসলামবাগ এলাকায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণের শুরু থেকে সাধারণ ছুটি চলাকালে নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র সেবা প্রত্যাশীদের ভিড় ছিল অনেকটা কম। তবে জুনের শেষ থেকে সে ভিড় স্বাভাবিক হতে থাকে বলে জানিয়েছেন আরবান প্রাইমারি হেলথকেয়ার হাজারীবাগ-লালবাগ এলাকার প্রজেক্ট ব্যবস্থাপক মাহফিদা দিনা রুবাইয়া।

ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে যদি বলি, মার্চের ২৬ তারিখ থেকে। এপ্রিলে রোগী কম ছিল। তবে ডেলিভারি রোগীরা ওই সময় এসেছে। আমাদের ডেলিভারি সেবাটা চালু ছিল। আশপাশে হাসপাতাল বা ক্লিনিকগুলো রয়েছে, তার অনেকগুলো বন্ধ ছিল। তাই আমাদের এখানে ডেলিভারি রোগী বেশি ছিল।’

২৬ মার্চ থেকে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি চলাকালে অনেক মানুষ ঢাকা ছেড়ে যায়। যারা রাজধানীতে অবস্থান করেছেন তাদের মধ্যে অনেকেই টেলিমেডিসিন সেবায় ঝুঁকেছিলেন। ফলে নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে সেবা প্রত্যাশীদের ভিড় ছিল না বললেই চলে। তবে জুন মাস থেকে সে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটেছে।

মাহফিদা দিনা রুবাইয়া বলেন, ‘এপ্রিল, মে, জুন এই তিন মাস আমাদের প্রাইমারি হেলথকেয়ার সেন্টারগুলোতে তুলনামূলকভাবে রোগী কম ছিল। এলাকাতেও হয়ত কর্মজীবী মানুষ কম ছিল। আমাদের যে নগর মার্তৃসদন, সেগুলোতে রোগী নিয়মিত ছিল। শহীদ নগরের সেন্টারে রোগীর পরিমাণ কম ছিল। লালবাগে কম ছিল। জুলাই থেকে রোগী নিয়মিত হয়েছে। এখন স্বাভাবিক আছে।’

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নূরজাহান রোডের নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে রোগীর পরিমাণ আশাহতভাবে কম গিয়েছিল। এপ্রিলে কেন্দ্রটিতে রোগী গিয়েছে মাত্র ৩৯ জন। মে মাসে ১৩৩ জন। জুন থেকে রোগী আসার পরিমাণ স্বাভাবিক হতে শুরু করে। জুনে এ কেন্দ্রটিতে রোগীর সংখ্যা ছিল ৫০০ জন। জুলাইয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে রোগী আসার পরিমাণ স্বাভাবিক হয়েছে। স্যাটেলাইট সেবা মিলিয়ে জুলাইয়ে কেন্দ্রটি থেকে সেবা নিয়েছেন মোট ৯২৩ জন। আগস্ট মাসে সেবা নিয়েছেন ৬৩১ জন। সেপ্টেম্বরে সে সংখ্যার আরও বেশি হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির ক্লিনিক ম্যানাজার ডা. রোকেয়া রব।

ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘করোনাকালে আমাদের ফিল্ড বন্ধ ছিল। তবে তারা কেন্দ্রে এসেছে। কিন্তু কেন্দ্রে যারা আমরা আছি, তারা নিয়মিত এসেছি। সে সময় সেবা প্রত্যাশীরা আসেনি। সবার মধ্যে একটা ভয় ছিল। মার্চ-এপ্রিলে অনেক ক্লাইন্ড ছিল। মে মাসের পর থেকে আবার ক্লাইন্ড বাড়তে শুরু করে। এখন প্রতিদিন ৪০ জনের বেশি রোগী থাকে। রবিবার ও বুধবার বাচ্চাদের টিকা দেওয়ার দিন। সে দিনগুলোতে ৮০ থেকে ১০০ জন রোগীও থাকে।

(ঢাকাটাইমস/০৪অক্টোবর/ডিএম/জেবি)