বগুড়ার প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়নের ৩৩ কোটি টাকা নয়ছয়

প্রকাশ | ০৫ অক্টোবর ২০২০, ১৭:২০ | আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২০, ২০:১৩

এনাম আহমেদ, বগুড়া

বগুড়ায় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়নের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থে ব্যাপক অনিয়ম এবং দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে বিভিন্ন খাতে প্রায় ৩৩ কোটি টাকার মতো বরাদ্দ এলেও জেলার অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে কাজ করা হয়নি কিছুই। উপজেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা সহকারি শিক্ষা অফিসার, প্রধান শিক্ষক এবং উপজেলা প্রকৌশলী বরাদ্দকৃত এই অর্থের ‘নয় ছয়’ করার তথ্য ঢাকাটাইমসের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।  

২০১৯-২০ অর্থ বছরে জেলায় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচী (পিইডিপি-৪), বৃহৎ মেরামত, রুটিন মেইনটেন্যান্স, স্লিপ (বিদ্যালয় ভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা), শিশু শ্রেণীর জন্য প্রায় ৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এর মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচী (পিইডিপি-৪) এর আওতায় বগুড়া জেলার ৭৭০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য বরাদ্দ আসে ১৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা, বৃহৎ মেরামত কাজের জন্য ৭৪টি বিদ্যালয়ে বরাদ্দ আসে ৩ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা, রুটিন মেইনটেন্যান্স বাবদ ৭৮০টি বিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ আসে ৩ কোটি ১২ লাখ টাকা, স্লিপ (বিদ্যালয় ভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা) এর জন্য ১৬০১টি বিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ আসে ৯ কোটি ৬০ লাখ ৬০ হাজার টাকা এবং শিশু শ্রেণীর উন্নয়নের জন্য ১৬০২টি বিদ্যালয়ে বরাদ্দ দেয়া হয় ১ কোটি ৬০ লাখ ২০ হাজার টাকা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রকল্পগুলোর মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচী (পিইডিপি-৪) এর আওতায় জেলার ১৬০৩টি বিদ্যালয়ের মধ্যে যে ৭৭০টি বিদ্যালয়ের মেরামতের কথা ছিলো সেগুলোর কাজ কোন উপজেলাতেই এখনও সম্পন্ন করা হয়নি। যে সকল বিদ্যালয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলা হচ্ছে সেসকল বিদ্যালয়ে নামমাত্র কাজ হয়েছে । এই প্রকল্পে ৭৭০টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ৫৪২টি বিদ্যালয়ে ২ লাখ টাকা করে এবং ২২৮টি বিদ্যালয়ে দেড় লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রকল্পের মেয়াদ ছিলো গত ৩০ জুন পর্যন্ত। নতুন অর্থ বছরের সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে এলেও কোন উপজেলাতেই কাজ শেষ করা হয়নি। তবে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই প্রতিটি উপজেলায় কাগজে কলমে কাজ সম্পন্ন দেখিয়ে টাকা উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কাজ সম্পন্ন হওয়া বিদ্যালয়গুলোতে ভালো কাজ হয়েছে দাবি করলেও সরেজমিনে গিয়ে বিদ্যালয়গুলোয় রংয়ের কাজ ছাড়া দৃশ্যমান কোন কাজ চোখে পড়েনি। এসব কাজ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির (এসএমসি) মাধ্যমে করার কথা থাকলেও অধিকাংশ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতিসহ অন্য সদস্যরা বরাদ্দের ব্যাপারে জানেন না। উপজেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা প্রকৌশলী এবং প্রধান শিক্ষক এই ক্ষুদ্র মেরামত কাজ প্রকল্প নিয়ন্ত্রণ করেছেন।   

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, এই প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে অধিকাংশ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাই প্রতিটি বিদ্যালয় থেকে ১৫ হাজার টাকা, উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তাদের নির্ধারিত ক্লাস্টার অনুযায়ী প্রতিটি বিদ্যালয় থেকে ১০ হাজার টাকা করে রেখেছেন এছাড়া অধিকাংশ প্রকৌশলী বিদ্যালয় কাজের মান ভালো হয়েছে এমন প্রত্যায়ন দেয়ার জন্য টাকা নিয়েছেন। যার ফলে বরাদ্দের অর্থ কমে যাওয়ায় অধিকাংশ জায়গাতেই কাজের মান ভালো হয়নি।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের ক্ষুদ্র মেরামতের কাজ জেলায় ৮৪.৫৮% সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৯৫%, কাহালুতে ৮০%, নন্দীগ্রামে ৮০%, গাবতলীতে ৮০%, ধুনটে ৮০%, সোনাতলায় ৯০%, শাজাহানপুরে ৯৫%, শেরপুরে ৯৫%, আদমদীঘিতে ৭৫%, দুপচাঁচিয়ায় ৮০%, শিবগঞ্জে ৯৫% এবং সারিয়াকান্দিতে ৭০% বিদ্যালয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। 

সারিয়াকান্দি উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাস্তার ধারে হাতে গোনা কয়েকটি বিদ্যালয়ে কাজ ভালো হলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলের কাজগুলো হয়েছে নি¤œমানের। এছাড়া গাবতলী, কাহালু, শেরপুর, বগুড়া সদরসহ অন্যান্য উপজেলার অধিকাংশ বিদ্যালয়ের চিত্র একই রকম।

এদিকে রুটিন মেইনটেন্যান্সের জন্য জেলার ৭৮০টি বিদ্যালয়ে ৪০ হাজার টাকা করে মোট ৩ কোটি ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এই টাকা দিয়ে বিদ্যালয় ভবন এবং টয়লেটের ক্ষুদ্র সমস্যাগুলোর সমাধান করার কথা ছিলো। কিন্তু এই টাকার কোন কাজ না করে এই কাজগুলো দেখানো হয়েছে স্লিপ এবং ক্ষুদ্র মেরামতের কাজে। স্লিপ (বিদ্যালয় ভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা) এর কাজের জন্য জেলার ১৬০১টি বিদ্যালয়ে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৯ কোটি ৬০ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এই প্রকল্পে তিনটি ক্যাটারিতে বিদ্যালয়গুলোতে বিভিন্ন পরিমাণ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। যে সকল বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা ২শ’ সেসকল বিদ্যালয়ে বরাদ্দ দেয়া হয় ৫০ হাজার টাকা, ২০১ থেকে ৩শ’ শিক্ষার্থীর বিদ্যালয়ে দেয়া হয় ৭০ হাজার টাকা এবং ৩০১ থেকে সাড়ে তিনশ’ শিক্ষার্থীর বিদ্যালয়ে বরাদ্দ দেয়া হয় ১ লাখ টাকা। এই বরাদ্দ শিখন-শিখানো ও শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়নের মাধ্যমে শিক্ষার সামগ্রিক মানোন্নয়নের জন্য দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এই টাকাগুলো দিয়ে বেশির ভাগ সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আসবাবপত্র (টেবিল-বেঞ্চ) ক্রয়ে ব্যয় দেখিয়েছেন। অভিযোগ আছে বরাদ্দ পাওয়ার পর কোন কাজ না করে একই কাজ বার বার দেখিয়ে বরাদ্দকৃত অর্থের টাকা লোপাট করা হয় এই খাতে।

এছাড়া বৃহৎ মেরামতের জন্য জেলার ৭৪টি বিদ্যালয়ে বরাদ্দ আসে ৩ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা। এই বৃহৎ এবং ক্ষুদ্র মেরামতের ক্ষেত্রে জেলার অধিকাংশ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা উপজেলা প্রকৌশলী যোগসাজস করে কাজের প্রাক্কলন সংক্ষিপ্ত করে ৫০ ভাগ টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে শিশু শ্রেণীর জন্য জেলায় ১৬০২টি বিদ্যালয়ের কক্ষ সজ্জিতকরণ এবং উপকরণ ক্রয় বাবদ প্রতিটি বিদ্যালয়ে ১০ হাজার টাকা করে মোট ১ কোটি ৬০ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয় মন্ত্রণালয় থেকে। এই খাতেরও ৫০ শতাংশ টাকা লোপাট করা হয় বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

অন্যদিকে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার গাড়ীদহ ইউনিয়নের চন্ডিজান পল্লীমঙ্গল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একমাত্র ভবনটি ১ লাখ ১৪ হাজার টাকায় নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। গত ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ভবনটি ভাঙ্গা শুরু হয়েছে। অথচ এই বিদ্যালয়ের ভবন মেরামতের জন্য দুই মাস পুর্বে ২ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। বরাদ্দপ্রাপ্ত বিদ্যালয়ে মেরমাতের প্রয়োজন না থাকলে বরাদ্দপ্রাপ্ত অর্থ সমপর্ণ করার নিয়ম থাকলেও এক্ষেত্রে তা মানা হয়নি।

সরেজমিনে শেরপুর উপজেলার শেরপুর সরকারি প্রাথমিক, খামারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুবলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাশিয়াবালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গাবতলী উপজেলার নিশিন্দারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মহিষাবান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মহিষাবান পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গাজারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চকরাধিকা সরকারি বিদ্যালয়, সারিয়াকান্দি উপজেলার চর মাছিরপাড়া, চরভেড়ামারা, চরদলিকা, চরঘাগুড়া মোল্লাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, মেরামতের দুই লাখ টাকা দিয়ে দৃশ্যমান কোনো কাজই করা হয়নি।

শেরপুর উপজেলার খানপুর কয়েরখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, মেরামতের জন্য দুই লাখ টাকার মধ্যে ২৬ হাজার টাকা ভ্যাট কাটা হয়েছে। এ ছাড়া প্রকৌশল অফিসে প্রাক্কলন তৈরির জন্য পাঁচ হাজার টাকা খরচ দিতে হয়েছে। বাকি টাকা দিয়ে প্রাক্কলন মোতাবেক স্কুলের জলছাদ মেরামত এবং শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে।

শেরপুরের সুবলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহমুদা খাতুন রাখী বলেন, বন্যার কারণে ৩০ জুনের মধ্যে বিদ্যালয়ের মেরামত কাজ করা যায়নি।

শেরপুরের কেল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, কিছুদিন আগে বিদ্যালয়ের পুরনো ভবনের বাইরের অংশে রং করা হয়েছে। এ ছাড়া আর কী কাজ করা হয়েছে, বলতে পারব না।

বাগড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি আব্দুল গফুর বলেন, স্কুলের মেরামতের জন্য দুই লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে শুনেছি, কিন্তু কাজের ব্যাপারে আমি কিছু জানি না।

শেরপুরের খানপুর কয়েরখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি রেজাউল করিম রেজা বলেন, প্রধান শিক্ষক শুধু আমাদের কাছ থেকে কাগজে সই নেন। কী কাজ করেন তা তিনিই ভালো বলতে পারবেন।

গাবতলীর ধলিরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুল ইসলাম বলেন, আমার বিদ্যালয়ে ক্ষুদ্র মেরামতের কাজ আসেনি। তবে স্লিপ এবং রুটিন মেরামতের জন্য ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। স্লিপের বরাদ্দ দিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য স্লিপার বানিয়েছি। রুটিন মেরামতের বরাদ্দ দিয়ে টয়লেটের দরজার বানানো হয়েছে। হোয়াইট বোর্ড লাগানো হয়েছে।

গাবতলী উপজেলার মহিষাবান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি শাজাহান আলী বলেন, এই বিদ্যালয়ের দুটো ভবন। পুরাতন ভবনের সংস্কার কাজ করার কথা। তবে এর সঙ্গে আমি সম্পৃক্ত নই। প্রধান শিক্ষক তার কাছে থেকে কাজ হবে বলে শুধু স্বাক্ষর নিয়েছেন। এই কাজ প্রধান শিক্ষক আর উপজেলা শিক্ষা অফিস এবং উপজেলা প্রকৌশল অফিস থেকে করা হয়েছে। দুই লাখ টাকা বরাদ্দ থেকে ২৬ হাজার টাকার মতো ভ্যাট কাটা হয়েছে উপজেলা প্রকৌশলী অফিস থেকে। বিদ্যালয় দেখেছি। কাজ আরো বাকি আছে।

মহিষাবান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিউর রহমান বলেন, বিদ্যালয়ের কাজ ঈদের আগে শেষ করা হয়েছে। বিদ্যালয়ে জলছাদ, রিপিয়ারিং এবং রংয়ের কাজ করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের দুটি ভবন। তারমধ্যে একটি ভবনের তিনটি রুম মেরামতের স্টিমেড করা ছিল। সেখানে আমি পাঁচটি রুমের মেরামত করেছি।

সারিয়াকান্দি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (টিও) গোলাম কবির ঢাকাটাইমসকে বলেন, বন্যার কারণে আমার উপজেলায় কাজ এখনও সম্পন্ন করতে পারিনি। যে কয়টি বিদ্যালয়ের কাজ হয়েছে সবগুলোই ভালো হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে কোনরূপ টাকা পয়সা নেয়া হয়নি। এছাড়া স্লিপ এর কাজে তিনি বলেন, একই কাজ বার বার দেখানো হয় এটা সঠিক। কিন্তু যে আসবাবপত্র বার বার দেখানো হয় সেগুলো তো আর আজীবন চলতে পারে না। সেগুলোতে মেরামত করতে হয়। মেরামত করা হয় সেগুলোয় দেখানো হয়।

শেরপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (টিও) মিনা পারভীন বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বরাদ্দপ্রাপ্ত সব টাকাই বিধি মোতাবেক ব্যয় করা হয়েছে। তবে উপজেলার কালিয়াকৈর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মেরামতের জন্য দুই খাতে বরাদ্দ আসায় একটি ফেরত দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ক্ষুদ্র মেরামত কাজে কোনো অনিয়ম হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।

গাবতলী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (টিও) নাহিদা আক্তার ঢাকাটাইমসকে বলেন, করোনার কারণে স্কুল ছুটি যে কারণে কাজ শেষ এখনও যায়নি। ক্ষুদ্র মেরামতের কাজ শেষ করতে আমাদের আরো ১৫ দিনের মতো লাগবে। অন্যান্য খাতের কাজ সম্পর্কে তিনি বলেন, সবগুলো কাজ এক সাথেই করা হচ্ছে। টাকা লেনদেনের বিষয়ে তিনি বলেন, অনেকেই তো মুখে অনেক কথা বলেন। এটার সত্যতা কী?

সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (টিও) জোবায়দা রওশন জাহান ঢাকাটাইমসকে বলেন, আমরা প্রতিদিনই বিদ্যালয় পরিদর্শনে বের হচ্ছি। আমার ডিপার্টমেন্টে কাজ ভালো হয়েছে আমি তো সেটা বলবোই। আপনারাও একটু খোঁজ খবর নেন। আমাদের বলেন। নিউজ করুন। তাহলে আরো ভালো কাজ হবে। স্লিপের কাজগুলো পরিকল্পনা অনুযায়ীই করা হয়।

দুপচাঁচিয়া উপজেলা প্রকৌশলী রবিউল আলম ঢাকাটাইমসকে বলেন, কোথায় থেকে কি শুনেছেন সেটা তো আর আমি জানি না। কাজ মোটামুটি ভালো হয়েছে। সমস্যা নেই আমরা দেখছি। যেটাতে সমস্যা আছে সেটা ঠিক করে দেবো।

শেরপুর উপজেলা প্রকৌশলী নূর মোহাম্মদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, বিদ্যালয় পরিদর্শন করে যেগুলোতে প্রত্যয়ন দেয়ার মতো সেগুলোতে প্রত্যয়ন দেয়া হয়েছে। কিছু বিদ্যালয়ে ত্রুটি থাকায় প্রত্যয়ন দেয়া হয়নি।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাহমিনা খাতুন ঢাকাটাইমসকে বলেন, বরাদ্দগুলো মন্ত্রণালয় থেকে সরাসরি উপজেলা পর্যায়ে আসে। অনেক স্কুলের কাজ অনেক ভালো হয়েছে। কিছু স্কুলের কাজ দুর্বল আমরা বলে দিয়েছি যাতে আরো ভালো করে করা যায়। অফিসারদের বলে দেয়া হয়েছে কাজগুলো করিয়ে নেয়ার জন্য। সেগুলো চলমান আছে। তবে দ্রুত কাজ শেষ করে ফেলার জন্য বলা হয়েছে।

তাহমিনা খাতুন বলেন, কাজ ভালোমত নির্ভর করেছে আমাদের শিক্ষকদের আন্তরিকতা এবং সক্ষমতার উপর। যেসব শিক্ষক খুব আন্তরিক এবং কাজ বুঝে সেসব স্কুল যতই প্রত্যন্ত এলাকায় হোক না কেন সেখানেও কাজ ভালো হয়েছে। কিছু জায়গায় মাঝারি মানের কাজ হয়েছে। আমরা প্রতি সপ্তাহে মিটিং করছি। যেসব স্কুলের কাজ মাঝারি মানের হয়েছে সেগুলো ভালো করার ব্যাপারে বলা হয়েছে। এই মুহূর্তে ৮৫% এর মতো জেলার কাজ হয়ে গেছে।

স্লিপ, রুটিন মেরামতের কাজে একই কাজ বার বার দেখানো হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, এগুলো সংখ্যায় খুবই কম। আসলে অনেক স্কুলের কাজ। আমাদের অগোচরে যদি এরকম হয়ে থাকে। পরবর্তীতে আমরা সেগুলো সংশোধনের জন্য বলি। সবগুলো বিদ্যালয়ই আমাদের নজরদারিতেই আছে। আমাদের সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাষ্টার অনুযায়ী স্কুলের সংখ্যা তো খুব বেশি হবে। ২৫-৩০টি করে। কাজের চাপে হয়তো তাদেরও দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। এটাও আমাদের শিক্ষকদের সক্ষমতার অভাবেই হয়েছে। আসলে সবাই তো এরকম নয়।

আমাদের সব ধরনের গাইডলাইন সবগুলো স্কুলেই আছে উল্লেখ করে তাহমিনা বলেন, অনেকেই পড়ে, আবার অনেকেই শুনে শুনে কাজ করে। যে কারণে সমস্যাগুলোর সৃষ্টি হয়। তারপরেও যেসব জায়গা থেকে অভিযোগ পেয়েছি সেগুলোতে পুনরায় কাজ করিয়ে নিতে বলেছি।

এই কর্মকর্তা বলেন, বরাদ্দ থেকে শিক্ষা কর্মকর্তারা টাকা নিয়েছেন- এমন কোনো অভিযোগ আমার কাছে কেউ করেনি। আর একটি টাকাও যেন এদিক সেদিক না হয় এই বিষয়টিতে আমরা খুব কঠোর অবস্থানে আছি। তবে নামমাত্র কাজের সঙ্গে আমি দ্বিমত পোষণ করছি। আমরা টাইম টু টাইম খবর নিচ্ছি। হয়তোবা যেখানে ৮০%, ৯০% কাজ হওয়ার কথা সেখানে হয়েছে ৬০%। আর আমাদের কাজ তো এখনও প্রসেসিংয়ের মধ্যেই আছে। 

(ঢাকাটাইমস/৫অক্টোবর/কেএম)